
মিরপুর দশ নম্বর রাতের বেলা জমজমাট হয়।
স্টেডিয়ামের পুরো ফুটপাত জুড়ে যেন উৎসব শুরু হয়। লোকজন দল বেধে গাড়ি নিয়ে আসে। ফুটপাতে নানান রকম খাবার পাওয়া যায়। খিচুড়ি, গরুর মাংস, হাসের মাংস, ভাত, পোলাউ ইত্যাদি। কেউ কেউ চুইঝাল গরুর মাংস, চুইঝাল হাসের মাংস বিক্রি করছে। চুইঝাল একটা ফালতু জিনিস। অযথাই লোকজন 'চুইঝাল' শুনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যাইহোক, অনেকের কাছে শুনেছি মিরপুরে দশ নম্বরের খাবারের কথা। অনেক দূর থেকেও নাকি লোকে এখানে খেতে আসে। আমার বাসা থেকে মিরপুর অনেক দূর। জ্যাম থাকলে মিরপুর যেতে সময় লাগে দুই ঘন্টা। জ্যাম না থাকলে যেতে সময় লাগে ২৫ মিনিট। একদিন আমিও দল বেধে মিরপুর গেলাম।
রাত তখন একটা। ফুটপাতে প্রচণ্ড ভিড়।
গাড়ি পার্কিং করার জায়গা নেই। আরো অনেক গাড়ি পাকিং এর জন্য জায়গা খুজছে। আমরা মোট তিনটা গাড়িতে ১১ জন। যাইহোক, অলরেডি অনেক দোকানের খাবার শেষ। তবে তারা বলেছে, এক ঘণ্টা অপেক্ষা করলে খাবার ব্যবস্থা করে দিবে। আমরা অন্য দোকানের সন্ধান পেলাম। ওদের কাছে পর্যাপ্ত সব রকমের খাবার আছে। ১১জন খেতে বসে গেলাম। কেউ হাসের মাংস, কেউ মূরগী, কেউ গরুর মাংস অথবা কেউ খাসীর মাংস দিয়ে পোলাউ/খিচুড়ি খেতে শুরু করেছে। রান্নার মান এভারেজ। ফুটপাতে চেয়ার বিছয়ে দিয়েছে। টেবিল নেই। খাবার প্লেট হাতে নিয়ে খেতে হচ্ছে। রাস্তায় ভিড়। লোকজন গায়ের উপর দিয়ে যাচ্ছে। খাওয়া শেষে কোক খেলাম। আমাদের টোটাল বিল হলো ৩৩শ' টাকা। ওরা বিকাশ, নগদ এবং ক্যাশ সব ভাবেই বিল নেয়।
১১ জন বাসায় ফিরে গেলাম।
পরের দিন সকালে শুনি একজন অসুস্থ। ভয়াবহ অসুস্থ। ফুড পয়জনিং। জমে মানুষ টানাটানি অবস্থা। শেষমেষ তাকে হাসপাতালে ভরতি হলো। তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হলো। কথা হচ্ছে দশজনের কিছু হলো না। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন কেন? সবাই তো একই খাবার একসাথেই বসে খেলাম। অসুস্থ আরশাদ ভাইকে একদিন হাসপাতালে দেখতে গেলাম। বেচারা দুদিনেই শুকিয়ে গেছেন। বললাম, আপনার জন্য কমলা এনেছি। ছিলে দিবো খাবেন, এখন? আরশাদ ভাই কিছু বললেন না। আসলে তার সেদিন এত রাতে মিরপুরে খাওয়ার ইচ্ছা ছিলো না। আমিই তাকে জোর করে নিয়ে গিয়েছি। উনি আমাকে বলেছিলেন, বাইরের খাবার আমি খাবো না। আমার সহ্য হয় না। আমি বলেছি, ফুটপাতের খাবার হলেও মান ভালো। ধনীরা এসব খাবার আগ্রহ নিয়ে খায়।
খাবার মানুষকে সুস্থ রাখে, বাঁচিয়ে রাখে।
আবার এই 'খাবার'ই মানুষ অসুস্থ করে দেয়। আসলে ত্রিশ বছর পার করার পর খাবার হিসেব করে খাওয়া দরকার। পরিমিত খাবার খেলে মানুষ দীর্ঘদিন সুস্থ থাকতে পারে। আমার শ্বশুরকে দেখেছি খুব হিসাব করে খাবার খান। একদম অল্প। অল্প খাবার টুকুই সময় মতো খান। তিনি ভালো আছেন। সুস্থ আছে। এখনও প্রচুর পরিশ্রম করতে পারেন। তার সামনে হাজার রকমের খাবার দিলেও তিনি ছুঁয়েও দেখবেন না। খুব হিসাব করে বুঝে খান। এটা খুবই ভালো লক্ষন। খাবার হিসেব করে খেতে অনেকেই পারেন না। তারা দিনরাত সমানে খেতেই থাকেন। বুড়িয়ে যান, মুটিয়ে যান। ফলাফল ডাক্তারের কাছে দৌড়াতে হয়। সারা বছর ওষুধ খেতে হয়। ডাক্তারের কাছে যাওয়া মানেই নানান রকম টেস্ট করাতে হবেই। কোনো ছাড় নেই।
আমি ত্রিশ বছর অনেক আগেই পার করে ফেলেছি।
আমি ডাক্তারের কাছে যাই না। ডাক্তারের কাছে গেলেই ডাক্তার নানান বিধিনিষেধ দিয়ে দিবেন। নানান টেস্ট ফেস্ট দিবেন। এটা খাওয়া যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না। ইত্যাদি বলে দিবেন। জীবন হয়ে যাবে আমার সঙ্কুচিত। বিষাদময়। আনন্দহীন। এজন্য আমি ডাক্তারের কাছে যাই নাই গত ১৮ বছর। কিন্তু যাওয়া উচিত ছিলো। আমার ধারনা ডায়বেটিকস সমস্যা আমার শুরু হয়ে গেছে। আব্বারও ছিলো। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তো আমার আছেই। বহুদিন ধরে। সেই সাথে মাথা ব্যাথা ও পা চাবানো তো বংশগত ভাবেই পেয়ে গেছি। এদিকে আমার বয়স বাড়ছে, সেই সাথে আমি খাওয়ার পরিমান বাড়িয়ে দিয়েছি। গরুর মাংস, রোস্ট, পোলাউ, চিংড়ি ফ্রাই। জালি কাবাব। পায়েস, সেমাই, কোক। মিষ্টি। চকলেট। প্রচুর পরিমানে খাচ্ছি। অপরাধ বোধ হয়। এজন্য অনেকখানি পথ হাটাহাঁটি করি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



