
গতকাল রাত্রি দ্বিপ্রহরে শুইতে গিয়াছিলাম।
স্ত্রী পাশে নাই। অথচ শীতের রাত্রি। স্ত্রীর সন্তান হইবে। প্রথম সন্তান নহে। আরো তিনখানা রহিয়াছে। আমি আর সন্তানাদি চাহিনি। কিন্তু স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে লইতে হইয়াছে। স্ত্রীলোক শুধু চায় আর চায়। গহনা চায়, শাড়ি চায়, সন্তান চায়। আদর ভালোবাসা চায়। আজিব মাইয়ালোক। এখন আমি এই শীতের রাত্রিতে এপাশ ওপাশ করিতে চলিতেছে। অসম্ভব রাগ হইতেছে। কার উপর রাগ হইতেছে জানি না। লাথথি দিয়া কোলবালিশখানা মেঝেতে ফালাইয়া দিলাম। তাতে রাগ কিছুটা প্রশমিত হইলো। আমার জমিদারি নাই। জমিদারি থাকিলে নর্তকী অবধারিতভাবেই থাকিত। থাকিলে তাহার সহিত গান বাজনা করিয়ে রাত্রিযাপন করিয়া দিতাম। মদ্যপানের অভ্যাস থাকিলেও ভালো হইতো। কিশোর বয়সে দেবদাসের শেষ পরিনতি দেখিয়া মদ্যপান করিতে রুচি হয় নাই।
মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙ্গিলো।
বিছানা থেকে নামিয়া মনে হইলো আমি ভুল করিতেছি। মোরগ ভুল ডাকিয়াছে। মাথা নষ্ট মোরগ। রাত বিরাতে হঠাৎ ডাকিয়া ওঠে। মোরগের উপর বিশ্বাস নাই। হাত ঘড়িতে চাহিয়া দেখি ভোর হইতে ম্যালা দেরী। মনে মনে একটা কুৎসিত গালি দিলাম মোরগটারে। সভ্য সমাজে এই গালি দেওয়া যায় না। বয়স হইলে অনেক কিছুর লাগাম থাকে না। মুখের ভাষা, ক্ষুধা এবং জিদ। আরেকটা জিনিসেরও লাগাম নেই। তাহা হইলো পিসাব। চাপ আসার আগেই হইয়া যায়। নিজের কন্টোলে থাকে না। বুড়া বয়সে শুধুই জ্বালা। স্ত্রী কাছে থাকিলে একটা বল ভরসা পাওয়া যায়। ঠিকাদার জলিল সরদার ঠিকই বলেছে, পুরুষের নারী ছাড়া গতি নাই, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। জলিল সরদার আমার বাল্য বন্ধু। তিনখানা বিবাহ করিছে।
বেলা দ্বিপ্রহর বোধকরি।
কোমরের বেথা বেদনার কারনে নামাজ বাদ দিয়েছি। মসজিদের ইমাম বলিয়াছেন, নামাজ কিছুতেই বাদ দেওয়া চলিবে না। পুর শরীর অবশ হুইয়া গেলেও। বদমাইশ ইমাম। চ্যাংড়া ইমাম গুলো ফাজিল হয়। বলে কিনা ইশারায় হইলেও নামাজ পড়িতে হইবে। ইশারা কোনো ভালো জিনিস নহে। কিশোর বয়সে ললিতা'রে একবার ইশারা দিতে গিয়ে মহা বেঝালে পড়িয়াছিলাম। চ্যাংড়া ইমামের কপাল ভালো আমার জমিদারি নাই। জমিদারি থাকিলে ব্যাটারে মজিবরের পুশকনিতে চুবাইতাম। শেফালির মা খাবার দিয়া গেছে। শেফালির মা চেহারা সুন্দর না। প্যাচামুখী। তয় শেফালি চেহারা অতি মনোরম। একদম বেদানার মতো। টকটকে। শেফালির মা মরিয়া গেলেই আমার পথ উন্মুক্ত হইবে। তখন বউ সারা বছর নায়র গেলেও সমস্যা কিছু নাহি। শেফালির মার রান্না ভালো। কাইকা মাছটা বেগুন দিয়ে রাধে ভালো। কৈ মাছও মটরশুটি আর টমেটো দিয়ে দারুন রাধে।
নিখিল মাস্টার আসিলো বৈকালে।
মাথায় টাক। টাক মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি দিয়া ভরা। জর্দা ছাড়া কাচা সুপারি দিয়া একখানা পান মুখে দিয়া বলিল, একটা সরস নারীর সন্ধান পাইয়াছি। শহর বন্দরে এই নারীর চাহিদা অনেক। অনেক বুঝাইয়া সুঝাইয়া তাহাকে রাজী করিয়াছি আপনার জন্য। নামটি তাহার কমলা রানী। নিখিল মাস্টারের কথা শুনিয়া আমি মনে মনে শয্যা সাজাইতে শুরু করিয়াছি। যেন আজ আমার প্রথম বাসর। ফুল দিয়া বাসর আমাকেই সাজাতে হইবে। এই বাসর সাজাইতে আমার কষ্ট নাই। নিখিল চলিয়া গেলো। তাহাকে অর্থ দিলাম। সে দুই হাত কচলিয়ে চলিয়া গেলো। নগদ কিছু অর্থ পাইয়া সে মহাখুশি। এরকম খুশি তাহাকে প্রায়ই আমি করিয়া থাকি। এই নিখিল মাস্টার ছাত্রছাত্রীদিগকে কি শিক্ষা দেয় তা মস্ত বড় বিস্ময়। দিন শেষে মন্দ লোকেরাই ভালো থাকে।
আমার বিশ্বাস হইতেছে না। মোটেই বিশ্বাস হইতেছে না।
কমলা সুন্দরী আমার ঘরে। আহা কি রুপ তাহার! কি গায়ের রঙ! কি মায়া ভরা চোখ! চিবুকের কাছে তিলটা তো আমার মন কেড়ে নিয়াছে। যৌবনে ইহাকে কেন পাইলাম না! বিবাহের পর যাহাকে দেখি তাহাকেই মনে ধরে। এ আমার কেমন অসুখ হইলো চন্দ্র? পরনারীকে শুধু ভালো লাগে। বয়স বাড়িতেছে, ভালো লাগার পরিমানও পাল্লা দিয়া বাড়িতেছে। আজিব! বড়ই জ্বালা হইলো। ইচ্ছা তো হয় কিন্তু পারি না। থামিয়া যাই মাঝপথে। অপরপক্ষ তখন বিরক্ত হইয়া যায়। বিরক্ত হইয়া যাওয়াই স্বাভাবিক। বিজ্ঞানের আবিস্কার ব্যবহার করিয়াও ফয়দা পাই না। জ্বালা জ্বালা জ্বালা। বড় জ্বালা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



