
শেখ মুজিব বছরের প্রথম দিনে কি করতেন?
আজ সোম বার। ১ তারিখ। বছরের প্রথম দিন। শাহেদ জামালের আজ অনেক কাজ। অথচ সে এখনও বিছানা থেকে নামেনি। কারন, গতকাল সে ডায়না হেডেন কে স্বপ্নে দেখেছে। সুন্দর স্বপ্ন। স্বপ্নটা এই রকমঃ চিত্রা নদী। নদীতে সুন্দর বজরা নৌকা। বেশ চওড়া নৌকা। শাহেদ জামাল একটা বালিশে হেলান দিয়ে কাঁত হয়ে শুয়ে আছে। মাথার উপর বিশাল স্বচ্ছ নীল সাদা আকাশ। চারিদিকে শীতল হাওয়া বইছে। নৌকার পাটাতনে চুন্ডি শাড়ি পরে বসে আছে ডায়না হেডেন! ডায়নার সহজ সরল রুপ দেখে শাহেদ জামাল মুগ্ধ! কি সুন্দর করে শাড়িটা পরেছে ডায়না। শাড়ির রঙটাও সুন্দর। হালকা নীল আর সাদা। আবার নীলের মধ্যে ছোট ছোট নীল সাদা ফুল আঁকা। ডায়নাকে দেখে মনে হচ্ছে- যেন এক টুকরো আকাশ নিচে নেমে এসেছে!
নৌকা চালাচ্ছে জালাল মাঝি। জালালের বয়স বেশি না।
বয়সে তরুন। কিছুদিন আগে সে যয়তুন নামে এক বালিকাকে বিয়ে করেছে। যয়তুনের বাড়ি নবগঙ্গা নদীর কাছে। তখন জালাল নবগঙ্গা নদীতে নৌকা বাইতো। বিয়ের পর সে চিত্রা নদী বাইছে। জালাল নৌকা ভালো চালায়। শাহেদ জামালের প্রায় ঘুম এসে যাচ্ছে। সামনে ডায়না বসে আছে বলে সে ঘুমাতে পারছে না। সুন্দর একটা মেয়ের সামনে ঘুমিয়ে যাওয়া ভালো কথা নয়। ডায়না খুব লজ্জা পাচ্ছে। সে মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে আছে। বাতাসে শাড়ির আচল সামলাতে তার বেগ পেতে হচ্ছে। অজানা অচেনা একটা ছেলের সামনে এভাবে বসে থাকা সহজ কোনো কর্ম নয়। অথচ তাকে বসে থাকতে হচ্ছে। যদি ভালোয় ভালোয় শাহেদ তাকে পছন্দ করে ফেলে! বিয়ে উপলক্ষ্যে সম্পূর্ন অচেনা অপরিচিত লোকের সামনে বসে থাকা অস্বস্তিকর।
চিত্রা নদীর সৌন্দর্য শাহেদ জামালকে মুগ্ধ করে।
এজন্য সে ঘুরে ফিরে বারবার নড়াইল শহরে আসে। বাধাঘাট এলাকায় তার ছোট খালার বাসা।। শহরের পাশেই চিত্রা নদী। নদীর কাছে বাড়ি ভানু খালার। ভানু খালা শাহেদ জামালের বিয়ে দিতে চান। অথচ শাহেদ বিয়ে করবে না। কারন সে নীলাকে ভালোবাসে। যদিও নীলার বিয়ে হয়ে গেছে। আমেরিকাতে সে এখন স্বামী সন্তান নিয়ে হয়তো সুখেই আছে। ভানু খালার ইচ্ছায় শাহেদ এখন চিত্রা নদীর মাঝখানে অবস্থান করছে। ডায়নাকে দেখে সে ভিমরি খেয়েছে। সে কি বলবে ডায়নাকে? শাহেদ জামালের কিছু বলতে হলো না, ডায়না'ই বলল- চা খাবেন? ভানু খালা ফ্লাক্সে করে চা দিয়েছেন। আপনার নাকি খুব চা খাওয়ার অভ্যাস? শাহেদ জামাল মেয়েটার কথা শুনে হাসলো। বলল, আপনার কন্ঠস্বর মীরা ম্যাডামের মতো। মীরা ম্যাডাম আমাদের কেমিষ্টি পড়াতেন।
বাংলাদেশ হচ্ছে সব সম্ভবের দেশ।
ঠিক তেমনি স্বপ্নে সব কিছু সম্ভব। জালাল মাঝি নৌকা থেকে লাভ দিলো নদীতে। লাফ দেওয়ার আগে সে বলে গেলো, আমি এখন যয়তুনের কাছে যাবো। যয়তুন না খেয়ে বসে আছে। দুপুরে আমরা দুজন একসাথে খাবো। এদিকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। এখন নৌকায় শাহেদ আর ডায়না। নৌকা খুব দুলছে। সমুদ্রের মতো ঢেউ হচ্ছে চিত্রা নদীতে। শাহেদ বলল, ডায়না আমি তো শেষ। এই নৌকা ডুববে। আমি সাঁতার জানি না। চিত্রা শোনো, আমি ডুবে মরতে চাই না। আমাকে বাঁচাও। প্লীজ। ডায়না বলল, ভুলভাল বকছেন ক্যান? আমার নাম ডায়না, চিত্রা নয়। চিত্রা হচ্ছে নদীর নাম। শাহেদ বলল, স্যরি। স্যরি। মাথা আউয়ালে গেছে। মাঝি নাই, এদিকে ঝড় আসছে। জানি না সাঁতার। আমার কিছু কাজ বাকি আছে, মৃত্যুর আগে সেসব শেষ করে যেতে চাই।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ফযরের আযান শুরু হবে।
তাই স্বপ্নটা দ্রুত শেষ করতে হবে। তাছাড়া সুন্দর একটা স্বপ্ন ভালো থেকে মন্দ দিকে চলে যাচ্ছে। এটা হতে পারে না। স্বপ্ন চলবে, যে স্বপ্ন দেখছে ইচ্ছা মতো। শাহেদ জামাল ডান থেকে বাম পাশ ফিরলো। আকাশ আরো বেশি কালো হয়েছে। বাতাস বইছে তীব্র বেগে। ডায়না বলল, শাহেদ আপনি চুপ করে বসুন। বসে বসে চা খান। এতো অস্থির হওয়ার কিছু হয় নাই। আমি গ্রামের মেয়ে, আমি তো সাঁতার জানি না। ধরুন, আমার হাত ধরুন। কোনো ভয় নেই। মরতে যদি হয়- দুজন একসাথেই মরবো। শাহেদ জামাল ডায়নার হাত ধরলো। বলল, তুমি হাত ধরার পর থেকেই মনে হচ্ছে আমরা মরবো না। ঝড় থেমে যাবে। নদী শান্ত হবে। আমরা পাড়ে ফিরে যাবো। শাহেদ জামালের ঘুম ভাঙল। সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে আর কি আশ্চর্য, ঠিক তখন মসজিদ থেকে ভেসে এলো আযানের ধ্বনি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



