
নবীজি মারা যাওয়ার প্রায় ৭০০ বছর পরের ঘটনা।
সময়টা তখন ১০৭৬ সাল। জ্ঞান বিজ্ঞানে বিশ্বের অগ্রগতি অতি সামান্য। ধর্ম নিয়ে অশান্তি বিশ্বের অনেক দেশেই চলছিলো। নবীজির ইসলাম ধর্ম প্রায় কোনঠাসা হয়ে গেছে। কথিত আছে, মহান আল্লাহ ইসলাম রক্ষার জন্য যুগে যুগে অনেক নবী রাসূল, অলি-আউলিয়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছেন। আমাদের নবীজি বলে গেছেন, আমার পরে দুনিয়াতে আর কোনো নবী দুনিয়ায় আসিবে না। এদিকে মূর্তি পূজা বেড়েই চলেছে। ইসলাম যায় যায় অবস্থা। তখন আল্লাহপাকের ইচ্ছায় ইরাকের বাগদাদ শহরে এক অলির জন্ম হয়। নাম তার আব্দুল কদের। জন্মের প্রথম দিনই তিনি রোজা রাখেন। জন্মের পর ভোরবেলা দুধ খান। এরপর সারাদিন পার হয়ে যায়, আব্দুল কাদের দুধ মুখে দেননি। মাগরিবের নামাজের পর তিনি দুধ পান করেন।
বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী।
ইরাকের 'জিলান' নামক স্থানে জন্মগ্রহন করেন। এজন্য তার নামের শেষে জিলানী শব্দটা ব্যবহার করা হয়। পিতার দিক দিয়ে তিনি ছিলেন হজরত ইমাম হাসান (রা.)–এর বংশধর আর মায়ের দিক থেকে ছিলেন হজরত ইমাম হুসাইন (রা.)–এর বংশধর। (সুবাহানাল্লাহ) আব্দুল কাদের জিলানী ছিলেন সহজ সরল ভালো মানুষ। তিনি মানুষে মানুষে কোনো পার্থক্য করতেন না। বাদশাহ-ফকিরকে দেখতেন একই নজরে। এমনকি গরিবকে দিতেন তিনি প্রাধান্য। আমির লোকদের হাদিয়া তিনি গ্রহণ করতেন না। তবে গরিবের হাদিয়া গ্রহণ করতেন। অপরের সালামের অপেক্ষা তিনি করতেন না। সব সময় নিজে আগে সালাম দিতে পছন্দ করতেন। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলতেন। লোকজন আগ্রহ নিয়ে তার কথা শুনতেন।
আল্লাহর এই অলির জন্ম ১০৭৬ সালে।
আব্দুল কাদের জিলানী ইরাকের বিভিন্ন মরুভূমিতে কমপক্ষে পঁচিশ বছর তপস্যা করেন। বহু বিধর্মী তার বক্তব্য শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। জিলানী অনেক গুলো বই লিখেছিলেন। তার একটি জনপ্রিয় বইয়ের নাম হচ্ছে- 'জান্নাত ও জাহান্নামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ'। আব্দুল কাদের জিলানী আমৃত্যু আমাদের নবীজির দেখানো পথে চলেছেন। এই বড়পীর আব্দুল কাদের চারটি বিবাহ করেন। কথিত আছে তিনি সর্বমোট ১৭টি বিবাহ করেন। তাঁর চার স্ত্রীর গর্ভে ২৭ পুত্র ও ২২ কন্যা জন্মগ্রহণ করেন। তার পুত্র কন্যারা কেউ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে নাই। নানান অসুখ বিসুখে অল্প বয়সেই তাদের মৃত্যু হয়। আব্দুল কাদের জিলানী ধর্ম প্রচারের কাজে এতোই ব্যস্ত ছিলেন যে তার সংসারের কোনো খোঁজ খবর রাখতেন না।
৯১ বছর বয়সে আব্দুল কাদের মারা যান।
তার মৃত্যুতে পুরো বাগদাদের মানুষ কষ্ট পায়। বর্তমানে ইরাকের বাগদাদ শহরে তাঁর মাজার শরীফ রয়েছে। প্রতিদিন বহুলোক তার মাজার দেখতে আসেন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে তিনি 'গাউসূল আজম' বড় পীর হিসেবে পরিচিত। আব্দুল কাদের যৌবনের অধিকাংশ সময় রোজা রেখে কাটিয়েছেন। ৪০ বছর পর্যন্ত এশার নামাজের ওজু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন তিনি। ফযরের নামাজ পড়ার জন্য তিনি স্ত্রীদের কাছে পর্যন্ত যেতেন না। বাগদাদ শহরে পানির খুব ভাব ছিলো। বর্তমান পৃথিবীতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জালাল উদ্দীন রুমীকে নিয়ে নাচানাচি করে। অথচ রুমী আল্লাহর অলী ছিলেন না। একথা সত্যি আমাদের ফলো করতে হবে আমাদের নবীজিকে। কোনো অলি আউলিয়াকে নয়। কারণ আল্লাহকে পেতে হলে আগে নবীজিকে পেতে হবে।
আব্দুল কাদের জিলানী মায়ের পেটে থাকতেই কোরআন মুখস্ত করেছেন।
জিলানী গর্ভে থাকাকালীন জিলানীর মা প্রতিদিন তিনবেলা উচ্চস্বরে কোরআন পড়তেন। গর্ভ থেকে তিনি মায়ের কাছ থেকে প্রায় ১৮ পাড়া কোরআন মুখস্ত করে দুনিয়াতে আসেন। (সুবাহানাল্লাহ) কিশোর বয়সে মক্তবের শিক্ষক জিলানীকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে বৎস! তুমি কিভাবে কোরআন মুখস্ত করেছো! হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) বলেন, আমি যখন মায়ের গর্ভে ছিলাম, তখন আমার মাতা ১৮ পাড়ার পর্যন্ত কোরআন মুখস্ত করেছিলেন। আমি গর্ভে থাকাকালীন সময় মা প্রতিদিন কোরআন পাঠ করতেন। আমি মায়ের তেলাওয়াত শুনে শুনে ১৮ পাড়া পর্যন্ত মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময়ে মুখস্ত করে ফেলেছি। এটা অবশ্যই আল্লাহর অলৌকিক কুদরত।
জিলানী দেখলেন লোকজন নামাজ পড়ে না।
নামাজের সময় ঘুরে বেড়ায়। এদিকে মূর্তি পূজা অনেক বেড়ে গেছে। মদ খাচ্ছে। নারী নিয়ে রঙ তামাশা করছে। মানুষের অধঃপতন দেখে জিলানীর চোখ ভিজে যায়। তিনি ধ্যান করেন। তপস্যা করেন। আল্লাহর দরবারে দুই হাত তোলেন। চোখের পানি ফেলেন। একদিন জিলানী তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লেন। তারপর বিছানায় গেলেন। ঘুমিয়ে পড়লেন। নবীজি স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন, জিলানী তুমি মানুষকে কেন আল্লাহর পথে আহ্বান করছো না? যাও হিজরত করো। মানুষের দ্বারে দ্বারে যাও। তাদের বুঝাও। আল্লাহর ভয় দেখাও। জাহান্নামের ভয় দেখাও। জান্নাতের লোভ দেখাও। দেখবে মানুষ লাইনে এসে যাবে। জিলানীর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তারপরই মসজিদ থেজে ফযরের আযান ভেসে এলো। জিলানী তার চার স্ত্রীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ধর্ম প্রচারের কাজে মন দিলেন।
জিলানী শুরু করলেন ধর্ম প্রচার।
ইসলাম ধর্মের প্রচার। লিখতে থাকলেন একের পর এক গ্রন্থ। পুরো মধ্যপ্রাচ্য তিনি ঘুরে বেড়ালেন। ধর্ম প্রচার করলেন। জিলানী শিক্ষিত মানুষ। মাদ্রাসায় পড়েছেন। এছাড়া তিনি বড় বড় পন্ডিতের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহন করেছেন। তিনি কথা বলতে জানতেন। জিলানীর ইচ্ছা ছিলো ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি ইউরোপ যাবেন, আফ্রিকা যাবেন, এমনকি এশিয়াও যাবেন। কিন্তু তার মনের আশা পূরন হয়নি। বয়স হয়ে গিয়েছিলো। অনেক শারীরক সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। রোগে শোকে ভূগে ৯১ বছরে তিনি দেহ ত্যাগ করেন। মুসলিম দেশ গুলিতে প্রতিবছর এই মনীষীর মৃত্যুর দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। আমাদের দেশে ওরস হয়। গানবাজনা, জিকির, মাহফিল ও খানা দানার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



