শাহেদ জামাল আমার বন্ধু।
খুব ভালো বন্ধু। কাছের বন্ধু। আমরা একসাথেই স্কুল আর কলেজে লেখাপড়া করেছি। ঢাকা শহরে শাহেদের মতো সহজ সরল ভালো ছেলে আর একটা খুজে পাওয়া যাবে না। শাহেদ জামাল মানবিক ও হৃদয়বান মানুষ। শাহেদ জগা (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে অনার্স করেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। শাহেদ জামাল আপাতত বেকার। আমার ধারনা শাহেদ ইচ্ছে করেই বেকার আছে। একটা চাকরি যোগাড় করা তারপক্ষে কঠিন কিছু না। তার জানা শোনা হাই লেভেলে। শাহেদ গ্রামীন ফোন কোম্পানীতে চাকরি করেছে অনেকদিন। তাও আবার হেড অফিস বসুন্ধরাতে। দারুন সেলারি ছিলো। সেই চাকরি শাহেদ ছেড়ে দিয়েছে। টাকা পয়সার গুরুত্ব শাহেদ বুঝে না। প্রচুর টাকা খরচ করে শাহেদ। যেখানে একশ' টাকা খরচ করলে হয়, সেখানে শাহেদ এক হাজার টাকা খরচ করে।
একদিন শাহেদ জামালের অফিসে গিয়েছি।
তখন শাহেদ গ্রামীন ফোনে চাকরি করে। অফিসে গিয়ে দেখি সবার প্রেশার মাপা হচ্ছে। সবাই লাইন ধরে প্রেসার মাপছে। অফিস থেকেই সকলের প্রেশার মাপার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অবাক বিষয় হচ্ছে সবার প্রেশার হাই। খুব বেশি হাই। শাহেদ বলল, বন্ধু তুমিও তোমার প্রেশার মেপে নাও, দেখবে তোমারও হাই প্রেশার। আমি বললাম, প্রেশার মাপার মেশিন নষ্ট নাকি? সবার প্রেশার হাই হয় কি করে! শাহেদ হাসলো। সুন্দর হাসি। বলল, কাজের চাপে সকলের প্রেসার বেড়ে গেছে। এই কথা সত্য সেলারি অনেক দেয়। কিন্তু কাজ করিয়ে করিয়ে তারা জীবন চ্যাপ্টা করে দেয়। অবশ্য শাহেদ কাজের চাপে চাকরি ছেড়ে দেয়নি। সে ছেড়েছে অফিস পলিট্রিক্সের কারনে। সামান্য চাকরির জন্য একপাল দুষ্টলোকের মাঝে সারাদিন থাকা শাহেদ জামালের পছন্দ নয়। জীবনানন্দও পারেননি।
একসময় শাহেদ জামালকে রমনা পার্কে গেলে পাওয়া যেত।
শাহেদ গাছপালা খুব পছন্দ করে। এখন শাহেদ রমনা পার্কে যায় না। সে নিজেই একটা আস্তো রমনা পার্ক বানিয়ে নিয়েছে। পূর্বাইলে শাহেদদের কিছু জমি ছিলো। সেই জমির চেহারা শাহেদ পুরো বদলে ফেলেছে। নিজের হাতে অসংখ্য গাছপালা লাগিয়েছে। সেইসব গাছ অনেক বড় হয়েছে। শাহেদ জামাল নিজে গাছের যত্ন নেয়। গাছ গুলো দেখলেই বুঝা যায় শাহেদ কতটা যত্ন নিচ্ছে। তার বাগানে একটা পুকুর কেটেছে। সুন্দর সাজানো গোছানো পুকুর। পুকুর ঘাট টা এত সুন্দর ইচ্ছা করে পুকুর ঘাটে বসে থাকি। কিছু হাস আছে। হাস গুলো পানিতে ভেসে থাকে। দেখতে ভালো লাগে। দুই রুমের ঘর বানিয়েছে শাহেদ। টিনের ঘর। ঘরের মধ্যে বিশাল সাইজের তিনটা জানালা দিয়েছে। একটা জানালা খুললেই পুকুর দেখা যায়। পুকুরে হাস খেলা করছে।
শাহেদ তার রমনা পার্কের নাম রেখেছে 'শুদ্ধ অভিযান'।
শুদ্ধ অভিযানে সুরভি আর ফারাজাকে নিয়ে আমি গিয়েছি। ফারাজা মনের সুখে পুরো বাগান দৌড়েছে । এত এত গাছ আর নানান রকম ফুল দেখে সুরভি মুগ্ধ। পুকুর দেখে ফারাজা খুব খুশি। ফারাজাকে পুকুরে নামিয়ে দিয়েছি। সে লাফালাফি করেছে। শাহেদ জামাল নিজের হাতে আমাদের জন্য মাটির চুলায় রান্না করেছে। শাহেদ জামালের রান্নার হাত ভালো। সে দেশী মূরগী, আলু দিয়ে করলা ভাজি আর ডাল রান্না করেছে। দুপুরে আমরা গাছের নিচে বসে খেয়েছি। আমি বলতে বাধ্য হলাম, এতদিনে শাহেদ জামাল একটা কাজের কাজ করেছে। শুদ্ধ অভিযানে জ্যাম নেই, প্রতারনা নেই, কোলাহল নেই, জটিলতা কুটিলতা নেই, নেই কোনো ইতর। অনেকে শাহেদ জামালের এই শুদ্ধ অভিযান ভাড়া নিতে চায়। পিকনিকের জন্য, নাটকের অভিনয়ের জন্য। শাহেদ তাদের মানা করে দেয়।
শাহেদ তার নিজের সাম্রাজ্য নিজের মনের মতো করে বানিয়ে নিয়েছে।
আমি বলেছি, কেমন লাগছে বন্ধু শুদ্ধ অভিযানে? শাহেদ বলল, জান্নাত! জাস্ট জান্নাত। শাহেদ পড়তে ভালোবাসে। শুদ্ধ অভিযানে একটা লাইব্রেরী করা হয়েছে। আমি শাহেদ জামালকে কিছু বই দিতে চেয়েছিলাম। সে মানা করে দিয়েছে। বলেছে, আমি পুরান বই কেন নিবো? আমার লাইব্রেরীতে কোনো পুরান বই থাকবে না। শাহেদের শুদ্ধ অভিযানে একলোক থাকে। কেয়ারটেকার। নাম তার ছালামত। ছালামত সারাদিন কোনো কাজ করে না। আসলে শাহেদ তাকে কোনো কাজ করতে দেয় না। কারন ছালামত কোনো কাজ সুন্দর করে করতে জানে না। আমার ধারনা ছালামত খাজা খায়। কারন সারাক্ষন সে জ্বীন আর ভূতের গল্প বলে। তার কাছ থেকে জ্বীনের কিছু ফালতু গল্প শুনেছি। এবং যথেষ্ঠ বিরক্ত হয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪