somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমি তোমাকে ভালোবাসি (রিপোষ্ট)

২৪ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফ্রিজ খুলে দেখি আমার স্ত্রীর গলা কাটা মাথাটা কে যেন সাজিয়ে রেখেছে।
বড় একটা তরমুজ দুই ভাগ করে কেটে ঠন্ডা করার জন্য আমি যেভাবে ফ্রিজে রাখি ঠিক সেইভাবে আমার স্ত্রী'র কাটা মাথাটা সেভাবে সাজিয়ে রাখা। কি সুন্দর শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হাসিমুখ। ঠোটের কোনায় যেন একটুকরো হাসি লেগে আছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি কি ভুল দেখছি? হেলুসিনেশন হচ্ছে আমার! আমি মদ্যপান করি সপ্তাহে একদিন শুক্রবার। আজ তো রবিবার। স্ত্রী'র গলা কাটা মাথা কোলে নিয়ে আমার কি এখন কান্না কাটি করা উচিত। নাকি আত্মীয় স্বজন সবাইকে খবর দিব। অথবা কাটা মাথাটা নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারকে বলব- আমার স্ত্রীকে বাঁচিয়ে দেন।

প্রতিদিন আমি অফিস থেকে ফিরে- এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাই।
এটা আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আজও অফিস থেকে ফিরে ফ্রিজ খুলেই দেখি আমার স্ত্রী কুসুম এর গলা থেকে কাটা মাথাটা। কেন যেন আমি একটু ভয় পাইনি। তবে প্রচন্ড অবাক হয়েছি। এটা কিভাবে সম্ভব? আমার দম বন্ধ লাগছে। ঘরে ঢুকে বিছানায় বসলাম একটা সিগারেট ধরালাম। পরপর তিনটা সিগারেট শেষ করলাম। মাথা কাজ করছে না। মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আমি কি পুলিশে খবর দিবো? পুলিশ এসে আমাকেই ধরে নিয়ে যাবে এটা নিশ্চিত। তবে পুলিশকে বিপুল পরিমান টাকা দিতে পারলে পুলিশ আমাকে কিছু করবে না। বিপুল পরিমান টাকা আমার নেই। নাকি মাথাটা বাজারের ব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দিব। না, ডাস্টবিনে ফেলা যাবে না। তাতে মানুষ জানাজানি হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং বাজারের ব্যাগে মাথাটা এবং আরও দুই তিনিটা দশ ইঞ্চি ইট ভরে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেই। কেউ জানবে না, কেউ টেরও পাবে না। বাশি থাকবে না, বাশি বাজবেও না।

হঠাত আমার মনে হলো- মাথা তো আছে।
তাহলে শরীরের বাকি অংশ গুলো কোথায়? সাথে সাথে আমি আবার ফ্রীজের সব চেম্বার গুলো ভালো করে খুঁজে দেখলাম কুসুমের শরীর অন্য অংশ গুলো খুঁজে পাওয়া যায় কিনা। না, কোথাও খুঁজে পেলাম না। ঠিক এই সময় আমার ক্ষুধা লাগে। অফিস থেকে ফেরার পর কুসুম আমাকে চা নাস্তা দিত। কোনোদিন নুডুলস বা বেশি করে মরিচ দিয়ে মুড়িমাখা অথবা কাবাব ভেজে দিত। একেকদিন একেক খাবার। সব শেষে চা। কুসুমের হাতের চা খেতে খুব ভালো হতো। আমি কসম খেয়ে বলতে পারি, এই শহরের কোনো মেয়ে কুসুমের মতো চা বানাতে পারবে না। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা চিঠি পড়ে আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে চিঠি আমার একটুও পড়তে ইচ্ছা আমার নেই। ক্ষুধা লাগছে- কিছু খেতে হবে। আমি হাতমুখ ধুয়ে বাইরে বের হলাম- গ্রীল চিকেন এবং নান রুটি খাবো। শেষে এক কাপ দুধ চা। ক্ষুধার্থ পেটে কিছুই ভালো লাগে না। মাথাও কাজ করে না।

পেট ভরে খেলাম। খুব আরাম পেলাম।
মাত্র সিগারেট ধরিয়েছি ঠিক তখন আমার কুসুমের কথা মনে পড়লো। কুসুমকে নিয়ে এই হোটেলে অনেক বার খেয়েছি। গত তিন বছরে কম করে হলেও একশো বার এই হোটেলে খেয়েছি। কুসুমকে আমি অনেক ভালোবাসি। যদিও সে গ্রামের মেয়ে। কিন্তু চালচলন কথা বার্তায় খুব আধুনিক। সব সময় খুব হাসি খুশি থাকত। মুখটা খুব মায়াময়। কত দিন যে আমি মধ্যরাত্রে ঘুম থেকে উঠে কুসুমের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এই মায়াময় একটা মুখের দিকে তাকিয়ে একটা জীবন পার করে দেয়া কোনো ব্যাপার'ই না। আমার সামান্য মাথা ব্যথা করলেই কুসুম অস্থির হয়ে পড়ত। সারারাত আমার মাথার কাছে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। আমাদের তো কোনো শত্রু নেই। তাহলে কে আমার কুসুমকে খুন করলো। আজ সকালে অফিসে যাওয়ার সময় প্রতিদিনের মতো আজও আমি আমার স্ত্রী কুসুমের কপালে চুমু দিয়েছি। সেও আমাকে চুমু দিয়েছে।

প্রতিদিন দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় কুসুম আমাকে ফোন দেয়।
জিজ্ঞেস করে- ভাত খেয়েছো? যদিও আমি অফিসে কাজের চাপে ভাত খাইনি তবুও আমি মিথ্যা করে বলি- হুম ভাত খেয়েছি। তুমি খেয়ে নাও। যদি সে শুনতো আমি ভাত খাইনি তাহলে সেও না খেয়ে বসে থাকতো। মেয়েটা সাঁজতে খুব পছন্দ করে। মাঝে মাঝে মধ্যে রাত্রে সেজে আমাকে চমকে দিত। দুই হাত ভরতি কাঁচের চুড়ি পড়তো। চোখে কাজল দিল। কপালে একটা বড় টিপ পড়তো। কি যে ভালো লাগতো আমার! দুই মগ চা বানিয়ে বলতো ছাদে যাই চলো, গল্প করি আর চা খাই। ছাদে গেলে নানান বিষয় নিয়ে গল্প করতো। মাঝে মাঝে আমাকে গানও শুনাতো। সেই সব গল্প শুনতে আমার খুব ভালো লাগতো। মনে হতো জীবনটা আনন্দময়।

রাত ৯ টায় আমি বাসায় ফিরলাম।
এখন আমি ফ্রিজ খুলবো। এবং মনে ভাবলাম ফ্রিজ খুলে দেখব সেখানে আমার স্ত্রী'র গলা কাটা মাথা নেই। এবং ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা চিঠিতে লেখা দেখব- কুসুম লিখবে আমি ছোট খালার বাসায় যাচ্ছি। রাতে খেয়ে ফিরব। তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসবো। কিন্তু না ফ্রিজ খুলতেই দেখলাম আমার স্ত্রীর গলা কাটা মাথা। চোখ খোলা এবং মুখে হাসি। ঠোটে লিপস্টিক দেয়া। এত সুন্দর লাগছে ইচ্ছা করছে- ঠোটে অনেকক্ষন ধরে চুমু খাই। কুসুমের সাথে আমার শেষ কথা হয়- দুপুর দুই টায়। একবার বিকেলে ভেবেছিলাম কুসুমকে ফোন দেই কিন্তু কাজের চাপে আর ফোন দেয়া হয় নাই। যদি বাসায় ডাকাত পড়তো- তাহলে একটা কথা ছিল। ভাবতাম ডাকাতরা সব নিয়ে গেছে এবং কুসুমকে খুন করেছে।

কে বা কারা এবং কেন খুন করলো কুসুমকে।
আমার কুসুমকে। কুসুম বা আমার আমাদের কারো'ই কোনো শত্রু নেই। আচ্ছা, এমন কি হতে পারে- আমার বন্ধুরা এসে কুসুমের গলা কেটে ফ্রিজে সাজিয়ে রেখে গেছে। নাকি আমি'ই অফিসে যাওয়ার আগে আমার স্ত্রীর গলা কেটে ফ্রিজে রেখে দিয়েছি। আমার খুব অস্থির লাগছে। ঠিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। আমার হাঁপানির সমস্যা আছে। না, কুসুমকে আমি খুব করিনি। তাকে আমি অনেক ভালোবাসি। আমি ব্যলকনিতে গিয়ে সিগারেট ধারালাম। ভাবছি, এখন আমি কি করবো? এই ছয় তলার ছাদ থেকে লাফ দিব। মরে যাব। না, আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। আমার স্ত্রী'র খুনীকে খুঁজে বের করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:০০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×