আমি একজন হুজুরকে চিনি।
ধরে নিলাম হুজুরের নাম জহির। জহির হুজুর। বয়স ৩৫ হবে। জহির হুজুর একটা স্কুলের মসজিদের হুজুর। হুজুর কাজ সময় মতো আযান দেওয়া। এই জন্য সে মাস শেষে সেলারি পায়। মসজিদে আযান দেওয়া ছাড়াও জহির হুজুর বাড়ি বাড়ি গিয়ে কায়দা, আমপাড়া আর কোরআন শিক্ষা দেয়। জহির হুজুরের ইনকাম ভালো। জহির হুজুরের প্রিয় সূরা হচ্ছে- সূরা মুলক। হজুর বিয়ে করেছেন। তার দুই ছেলে। কিছুদিন আগে আরেকটা ছেলে হয়েছে। তিনি আকিকা দিয়েছেন।
জহির হুজুরের একটাই চিন্তা।
মৃত্যুর পর কবরের আযাব। কবরের আযাব নিয়ে জহির হুজুরের চিন্তার শেষ নেই। এজন্য সে নামাজ শেষে দু হাত তুলে খুব কান্না করেন। সুযোগ পেলেই হুজুর সবাইকে কবরের আযাবের কথা বলেন। আর কান্না করেন। নবী কবরের আযাব থেকে বাচার জন্য সূরা মূলক বারবার পড়তে বলেছেন। কবরের আযাব নিয়ে সুন্দর একটা হাদীস আছে। হুজুরের মুখে কবরের আযাবের কথা শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত। একদিন বললাম, হুজুর আপনি কি খুব পাপ করেছেন? হুজুর বললেন, সেই হিসাব আমার কাছে নাই।
একদিন নবীজি মসজিদের উঠানে বসে আছেন।
মাত্রই নবীজি আছরের নামাজ শেষ করেছেন। বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন নবীজি। নবীজির আশেপাশে সব সময় একদল লোক থাকতো। নবীজি তাদের বললেন, আজ তোমাদের একটা জিনিস শিখিয়ে দিচ্ছি। লোকজন সবাই নবীজির দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকালো। নবীজি বললেন, কবরের আযাব খুবই ভয়াবহ হবে। খুব। তাই কবরের আযাব থেকে বাচতে তোমরা সূরা মূলক বেশি বেশি করে পড়ো। উপস্থিত লোকজন নবীজিকে ধন্যবাদ দিলেন। আর বললেন, ইহকাল আর পরকাল দুটাই আপনি সহজ করে দিচ্ছেন।
জহির হুজুরের সাথে আমার কঠিন তর্তাতর্কি বেধে গেলো একদিন।
জহির হুজুর কাদো কাদো হয়ে আমার কাছে কবরের আযাবের নিষ্ঠুর সব বনর্না দেন। মুনকার আর নকির আসবে। তারা প্রশ্ন করবেন। সেই প্রশ্নের জবাব না দিতে পারলে, একটা মাইর মাটিতে পড়বে না। কবর ছোট হয়ে এসে চাপ দিবে। ভয়ঙ্কর বিষাক্ত সব সাপ খুবলে খুবলে খাবে। বাচার কোনো উপায় নাই। জহির হুজুরকে আমি বললাম, আমার একটা বুদ্ধি আছে। সেই বুদ্ধি মতো চললে কবরের আযাব থেকে বাঁচা যাবে। সেটা হচ্ছে। কবর না দেওয়া। লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া। আপনি মরে গেলে আপনাকে কবুর দিবো না। আপনার লাশ পানিতে ভাসিয়ে দিবো। মুনকার আর নকির আপনাকে খুজে পাবে না। অথবা আপনি চাইলে আপনাকে আগুনে পুড়িয়ে দিতে পারি।
একটু টেকনিক করলে শাস্তি থেকে বেচে যাওয়া যায়।
সব সমস্যার সমাধান আছে। ধরুন, আমি মারা গেলাম। আমাকে কবর না দিয়ে আমার লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হলো। মুনকার আর নকির আমাকে পাবে না। তারা পানিতে নামবে না। তারা সাঁতার জানেন না। আমাদের নবীজিও সাঁতার জানেনতেন না। কাজেই আমাকে কোনো শাস্তি পেতে হবে না। জহির হুজুর আমার কথা শুনে রেগে গেলেন। জহির হুজুর যত রাগেন, আমার তত হাসি পায়। কবরের আযাব থেকে বাচার জন্য হুজুরকে কি সুন্দর বুদ্ধি দিলাম। অথচ হুজুর রেগে গেলো। এই জন্যই কারো উপকার করতে হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:১০