'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের ভীড় এবং ফুটপাতে প্রচুর দোকানপাট। রাগে দুঃখে পথচারী দুই মেয়র কে কুৎসিত গালি দিয়ে বলল, দুই মেয়র করে কি? সামান্য ফুটপাত আজও দখল মুক্ত করতে পারলো না? আমি বললাম, আরেহ ভাই মানিয়ে নিতে হবে। সমস্যা তো আপনার একার হচ্ছে না, সকলের হচ্ছে। ফুটপাতের দোকান থেকে তো আর মেয়র সাহেব কেনাকাটা করেন না। আপনারাই করেন। ফুটপাতে দোকানদারি করে অসংখ্য মানুষের সংসার চলে। সব কিছু নেগেটিভ ভাবে নিবেন না।
প্রতিদিনের মতো মগবাজার মোড়ে গজব জ্যাম।
একটা এম্বুলেন্স সামনে যেতে পারছে না, পেছনেও যেতে পারছে না। বিকট শব্দে সমানে হুইসেল বাজিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে অন্যান্য বাস, গাড়ি আর বাইকের হর্নের শব্দ। এদিকে এম্বুলেন্সের ভেতরে রোগী। এম্বুলেন্স থেকে রোগীর আত্মীয় নেমে রাস্তায় হাহাকার ভরা কন্ঠে গালাগালি করছেন দেশের এমপি মন্ত্রীদের। লোকটা খুব কাদছে। মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে সে দুনিয়ার সবচেয়ে অসহায় মানুষ। আমি বললাম, চাচা শুধু শুধু কেন গালাগালি করছেন? লোকটা বলল, আমার ছেলেকে হাসপাতালে নেওয়া দরকার। আজ যদি এম্বুলেন্সে শেখ হাসিনার ছেলে থাকতো। তাহলে শেখ হাসিনাও এরকম গালাগালি করতো। লোকটা বলল, এই দেশে জম্ম নেওয়াটাই কি আমাদের পাপ? আল্লাহ, আল্লাহ গো! সহসা এই জ্যাম ছাড়বে না। আমি মনে কনে বললাম, আল্লাহ ছেলেটা যেন বেচে যায়।
এক মুরুব্বীকে দেখলাম, চারপাশের পরিবেশ দেখে-
ফুটপাতে দাড়িয়ে দেশের নিয়ম কানুনকে গালি দিচ্ছে। রাস্তার ধারে একটা গাড়ির গ্যারেজ। গ্যারেজে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। তাই ফুটপাতের উপর গাড়ি উঠিয়ে গাড়ির কাজ চলছে। লোকটা যে রাস্তা দিয়ে যাবে সেই উপায়ও নেই। রাস্তায় গাড়ি, বাস, বাইক আর রিকশার গিট্রু লেগে গেছে। চারিদকে বিকট হর্ন বেজেই চলছে। কারো ধের্য্য সহ্য নেই। মুরুব্বী রেগে গিয়ে সমানে গালিগালাজ করছে। আমি বললাম, চাচা ধরে নেন, গাড়িটা আপনার। তাহলে কি আপনি এরকম গালি দিতেন? শান্ত হোন। একটু মানিয়ে নিন চাচা। দরিদ্র দেশ, মানুষ বেশি। একটু সমস্যা তো হবেই। মানিয়ে নিন চাচা। চাচা বলল, শালা তুই আওয়ামীলীগের দালাল। তোরাই দেশটারে খাইলি। আমি বললাম, চাচাজ্বী আমি তো রাজনীতির মধ্যে নাই।
আমাদের দেশের মানুষ গুলো ঘর থেকে বাইরে বের হলেই কেমন অমানুষ হয়ে যায়।
বিবেক, মনুষ্যত্ব কিছুই থাকে না। কাওরানবাজারে একলোক বলছেন, হাসিনা শুধু তার বাপের স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যস্ত। কিন্তু দেশ নিয়ে আমার বাপেরও তো কত স্বপ্ন ছিলো, সেসব স্বপ্ন পূরণ কে করবে? আমার বাবা যুদ্ধ করেছেন। দেশ নিয়ে তার কত শত স্বপ্ন ছিলো! আমি বললাম, শেখ হাসিনা দিনরাত দেশের জন্য কাজ করছেন। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এসব কি আপনার চোখে পড়ে না? লোকটা গরম চোখে আমার দিকে তাকালো। লোকটা বলল, তুই ছাত্রলীগ করিস। শোন, দেশটা তোরাই খাইলি, হারামজাদার দল। পা চাটার দল। ঈশ্বর তোদের ক্ষমা করবে না।
ট্রাফিক রিকশার চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়ে ভাবে-
অনেক বড় কাজ করে ফেলেছি। এবার জ্যাম না ছুটলে আমার আর কিছু করার নাই। বাসের ভিতরে লোকজন অকথ্য ভাষায় মন্ত্রী, এমপি, সরকারি আমলা এবং দুই মেয়েরকে সমানে গালাগালি দিচ্ছে। বলছে, এই দেশে কোনো কিছুতে শান্তি নাই। সব কিছুতেই গজব অবস্থা। আমি বললাম, যাদেরকে গালি দিচ্ছেন তারা তো শুনছে না। তারা তো দেশের জন্য কাজ করছেন। আপ্রাণ চেস্টা করছেন ভালো কিছু করতে। গালাগালি দিলে লাভটা কি? রোজা রমজান মাসে কি কেউ গালাগালি করে? একজন যাত্রী বলল, কেউ এই দালালকে বাস থেকে নামিয়ে দে। আমি ক্যাচালে না গিয়ে বাস থেকে নেমে গেলাম। উত্তেজিত জনতা রেগে গেলে ভয়ংকর হয়ে যায়। আমাদের দেশের মানুষ নিজের দোষ ত্রুটি দেখে না। এবং কুৎসিত সব গালি দিতে খুব পছন্দ করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০