somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

অবহেলার ঋষি: পাগলা

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি: ছবি এঁকেছে আমার কন্যা ফারাজা। ঘরের সব দেয়ালে সে আঁকাআঁকি করেছে। তার অনেক গুলো ছবি আকার খাতা আছে। তবু সে দেয়ালে আকবে। আকুক। আমি কিছু বলি না, সুরভিও কিছু বলে না।


এই লেখাটা লিখেছে হাছান। হাছান একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। হাছান ভালো ছেলে। সহজ সরল। মানবিক ও হৃদয়বান। হাছান একদম জটিলতা কুটিলতা মুক্ত। আধুনিক এবং কুসংস্কার মুক্ত। একদিন সে অনেক বড় হবে। দেশ ও সমাজের জন্য অনেক কিছু করবে, এই বিশ্বাস আমার আছে।

পাগলরা আমাদের জীবনের আয়না।
তাদের দরিদ্র বেশে লুকিয়ে থাকে এক গভীর বোধ আর দার্শনিকতা, যা আমরা কখনো উপলব্ধি করি না। আমাদের জীবনের প্রতিদিনের পথচলায় নানান মানুষের সাথে দেখা হয়—কেউ পরিচিত, কেউ অপরিচিত। কিন্তু এদের মধ্যে কিছু কিছু পাগলের সাথে দেখা হলে কিছু স্মৃতি সহজে ভুলে থাকা যায় না। তাদের ছেঁড়া কাপড়, ময়লা প্যান্ট, এলোমেলো চুল আর অপলক দৃষ্টিতে লেগে থাকা অদ্ভুত শূন্যতা যেন এক রহস্যময় জগতের দরজা খুলে দেয়।

কিছুদিন আগে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ইসিবি চত্বরে একটা পগল দেখলাম।
পাগলটির পরনে বহুদিনের ময়লা পাঞ্জাবি। মাথাভর্তি চুলগুলো জট পাকিয়ে গেছে, যা দেখে মনে হয়, সময়ের ভারে চুলগুলো নিজেই হাল ছেড়ে দিয়েছে। নোংরা ময়লার ভারে বড় বড় নখগুলো নেতিয়ে পড়েছে। গায়ে ময়লা আর ধুলোর স্তর জমে গেছে, যেন সে ঢাকা শহরের সব ধুলোকে আপন করে নিয়েছে। তার পরনে ছেঁড়া প্যান্ট, আর হাতে সিগারেটের একটা অবশিষ্টাংশ। তার পুরো চেহারায় দরিদ্রতার এক বিশাল গল্প যেন লেখা ছিল।

ভার্সিটি যাওয়ার সময় পাগলটিকে আমি প্রতিদিন দেখি।
সে সবসময় শহরের মোড়ে বড় বড় গাছগুলোর নিচে বসে থাকে। কখনো কৃষ্ণচূড়া, কখনো বকুল, কখনোবা শিমুল গাছের নিচে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস—তার বসে থাকা থামে না। মাঝে মাঝেই দেখি আটোশাটো হয়ে শুয়ে থাকতে। কখনো দেখি তার সাড়া শরীর বকুল ফুলে ভরে গেছে, কখনো বা লাল কৃষ্ণচুড়া। এমনকি বকুল গাছ থেকে খসে পড়া শুকনো পাতাগুলো তার গায়ে জমে থাকে, কিন্তু সেই পাতাগুলোর প্রতি কোনো বিরক্তি নেই যেন তার। বরং কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলগুলো কুড়িয়ে সে এক পাশে জমা করে, যেন সেগুলো তার একমাত্র সঙ্গী। কেন সে ফুল গুলো জমা করে রাখে কে জানে!!? এরপর সে খোলা জায়গায় সে প্রাকৃতিক কাজ সারে, যা দেখলে হয়তো শহরের মানুষ বিরক্ত হয়। কিন্তু সে এটা নিয়ে কোনো ভাবনা করে না, কারো ধার ধারে না। যেন পুরো ঢাকা আমাদের বানানো নিয়মে চলছে, আর পাগলটার জীবন চলছে তার নিজের নিয়মে।

একদিন দেখি পাগলটা নেই।
আগ্রহ নিয়ে বাস থেকে নামলাম। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে পাগলটা যেখানে শুয়ে থাকে সেই বড় গাছটার নিচে বসে পড়লাম। তারপর খেয়াল করে দেখলাম একটু দূরে সে প্রাকৃতিক কাজের ডাকে সাড়া দিচ্ছে। কেন জানি আমার সেদিন তাকে খোলা জায়গায় টয়লেট করতে দেখে খুব রাগ হয়েছিল। রাগ নিয়ে দুটো ইটের টুকরো ছুঁড়ে মেরেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে পাগলটি ক্ষেপে গিয়ে দুই হাত ভরা গু নিয়ে আমাকে তাড়া করেছিল। তখন আমি দৌড়াচ্ছি, পাগলও দৌড়াচ্ছে। সেদিন আমার আত্মসম্মান যায় যায় অবস্থা। এরপর হটাত সে থমকে দাঁড়ালো বকুল গাছটার নিচে! যাক এই যাত্রায় বাঁচা গেল।

পরদিন ভার্সিটি যেতে দেখি পাগলটা একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি গতকালের কথা স্মৃতিচারণ করে ওর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাসলাম। অমনি সে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচিয়ে উল্টো হাসতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে বাস থেকে নেমে গিয়ে ধমক দিয়ে বললাম, এই ব্যাটা, হাসছিস কেন? পাগলটা আমার কাছে এসে বলল, "সবাই আমাকে দেখে হাসে, কারণ আমি সবার থেকে আলাদা। আর আমি সবাইকে দেখে হাসি কারণ সবাই এক রকম।"

আমি সেদিন পাগলের কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকে এককাপ চা খাওালাম।
চা খেতে খেতে সে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করলো, "আপনি কি ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ পড়েছেন?" তার এমন প্রশ্নে চমকে উঠলাম। সাধারণ মানুষ পাগলদেরকে যতই অবজ্ঞা করুক, তাদের কথায় যেন দার্শনিকতার ছোঁয়া থাকে। আমি বললাম, "হ্যাঁ, কপিলা চরিত্রটি আমার ভীষণ প্রিয়।" পাগল স্পষ্ট গলায় বলল, "আমার ভালো লেগেছে হোসেন মিয়া। অনেক রহস্যময় চরিত্র।" তার কথায় মনে হলো, পাগলদের মধ্যে এক অদ্ভুত গভীরতা আছে, যা আমরা সাধারণত দেখিনা। আমার ধারণা, ঢাকা শহরের বেশিরভাগ পাগল ও ভিক্ষুকরা দার্শনিক শ্রেণীর। তারা হয়তো জীবনের মানে আমাদের চেয়ে ভালো বোঝে।

সমাজের চোখে তারা পাগল, কিন্তু তারা হচ্ছে প্রকৃতির সন্তান।
কেননা বেশিরভাগ সময়ে পাগলরা আমাদের চোখে অসহায়, অবহেলিত কিংবা লাঞ্ছিত। তবে প্রকৃতি তাদের প্রতি সদয়। শহরের মানুষ তাদের দিকে তাকায় না, কেউ তাদেরকে পাত্তা দেয় না, কিন্তু গাছের ছায়া আর ঝরে পড়া ফুলগুলো তাদের আশ্রয়। তাদের জীবন সরল, তাদের প্রয়োজন সামান্য! হা হা

সব ভিক্ষুক ও পাগলরা আমাদের সমাজের এক রহস্যময় চরিত্র।
আমরা হয়তো তাদের বাহ্যিক অসহায়ত্ব দেখে তাদেরকে অবজ্ঞা করি, কিন্তু তাদের ভেতরেও এক বিশাল জগৎ লুকিয়ে থাকে। তারা আমাদের মতো ব্যস্ত জীবনের দৌড়ে অংশ নেয় না। তারা শুধু বসে থাকে, পৃথিবীর দিকে চেয়ে থাকে, আর কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলগুলো কুড়িয়ে জমা করে। হয়তো তারা জানে, জীবনের আসল মানে কী?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৭
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×