
ফাঁসির আগ মূহুর্তে কালিমা পড়ানোর জন্য জেলের ইমাম এগিয়ে এলেন।
আসামী ইমামকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী জন্য এখানে এসেছেন হুজুর?
ইমাম বললেন, আমি আপনাকে কালিমা পড়াতে এসেছি। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে আসামীকে কালিমা পড়ানো আমার দায়িত্ব।
এই দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে?
ইমাম বললেন, সরকার দিয়েছে।
আসামী বললেন, বিনিময়ে কি আপনি বেতন পান?
ইমাম বললেন, হ্যাঁ আমি সরকার থেকে বেতন-ভাতা পাই।
আসামী বললেন, কি আশ্চর্য! যেই কালিমা পড়ানোর কারণে আপনি বেতন-ভাতা পান, সেই কালিমার ব্যাখ্যা মুসলিম উম্মাহকে জানানোর অপরাধেই আমাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে!
'তোমার কালেমা তোমার রুটি যোগায়,
আর আমার কালেমা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলায়! আফসোস! বিরাট আফসোস!'
সময় তখন ১৯০৬ সাল।
মুসলিম দেশ গুলোর মধ্যে মিশর বেশ উন্নত। কায়রো'তো বেশ জমজমাট শহর। মিশরের 'মুশা' নামক গ্রামের এক কৃষক 'হাজী ইবরাহীম কুতুব'। তার ঘরে এক শিশুর জন্ম হয়। বাবা মা দুজনেই খুশি। তাদের ইচ্ছা এই সন্তানকে একদম ধার্মিক করে বড় করবেন। বাবা মা অনেক ভেবে চিনতে- ছেলের নাম রাখলেন- 'সাইয়েদ কুতুব'। সাইয়েদ কুতুব মাত্র ১১ বছর বয়সে কোরআন মুখস্ত করে ফেললেন। সুবাহান্নাহ! ভালো মাদ্রাসার খোজে সাইয়েদ কুতুবের বাবা হাজী ইবরাহীম গ্রাম থেকে শহরে আসেন। শহরের নাম কায়রো। মিশরের রাজধানী। কায়রো'তে এসে কুতুব নামকরা এক মাদ্রাসায় ভরতি হন। কুতুব মাদ্রাসায় ভালো রেজাল্ট করেন। এবং এই মাদ্রাসাতেই শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়ে যান। কিছুদিন চাকরি করার পর কুতুব আমেরিকা যান উচ্চতর ডিগ্রী নিতে। সময় তখন ১৯৪৮ সাল। দুই বছর আমেরিকা থেকে ফিরে এসে কুতুব নিশ্চিত হোন ইসলাম ধর্মেই রয়েছে সকল সমস্যার সমাধান।
১৯৪৮ এর নভেম্বর মাস।
আটলান্টিকের বুক চিরে এগিয়ে চলছে একটি জাহাজ। জাহাজের নাম সিলভন। এই জাহাজেই আছেন- সাইয়েদ কুতুব। বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্র যেতে অনেক সময় লাগবে। কুতুবের সাথে অনেক বই আছে। সবই ধর্মীয় বই। বই পড়ে সময় চলে যাবে। টানা তিন দিনের বেশি জাহাজে থাকলে বিরক্ত লাগতে শুরু করে। মাথা ঘুরায়, বমি পায়। পুরো শরীর অবস্বাদে ভরে যায়। একদিন রাতে কুকুবের কেবিনে দরজায় এক মেয়ে এসে দাঁড়ায়। দারুন সুন্দর মেয়ে। উন্নত বক্ষ, উন্নত নিতম্ব। মেয়েটা বলে কুতুব আজ রাতে আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। তুমি দারুন কিছু উপভোগ করতে পারবে। আমি অভিজ্ঞ। তবে বিনিময়ে সামান্য কিছু টাকা দিবে আমায়। কুতুব বললেন, বিদায় হও, নির্বোধ নারী। মেয়েটা দারুন অপমানিত বোধ করে।
কুতুব ২০ টা বই লিখেন।
বাচ্চাদের জন্য নবীদের জীবনী সহজ করে লিখতেন। কুতুবের শিষ্য ইউসুফ আল আযম লিখেছেন, 'সাইয়েদ কুতুবের ওপর বর্ণনাতীত নির্যাতন চালানো হয়। আগুন দ্বারা সারা শরীর ঝলসে দেওয়া হয়। পুলিশের কুকুর কামড়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তার শরীরে গরম পানি ফেলে দেওয়া হয়। একটা চেয়ারে টানা ৪ দিন বসিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। আল্লাহর উপর ছিলো কুতুবের এক আকশ বিশ্বাস। এত এত অত্যচারের কারন, কুতুব যেন আর না লিখেন। কিন্তু কারাগারে বসেই তিনি তার সেরা লেখা গুলো লিখেন। তাকে অনেক রকম লোভ দেখানো হয়েছে। তাকে শিক্ষামন্ত্রী করা হবে। সেই সময় মিশরের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, জামাল নাসের। ১৯৫৫ সালের ১৩ জুলাই, গণআদালতের বিচারে তাকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। সরকার বলেছে, তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে, তাহলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমাদের ভাষায় সাইয়েদ কুতুব 'গাড় ত্যাড়া' মানুষ। উনি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে নতি স্বীকার করার লোক নন। জনাব কুতুব ইসলাম ধর্মের বাইরে কিছু লিখতেন না। আমি বুঝি না একজন লেখক কেন শুধু মাত্র একটা বিষয় নিয়েই লিখবেন?
যেদিন কুতুবের ফাসি হলো-
এর আগের দিন রাতে কুতুব নবীজিকে স্বপ্নে দেখেন। নবীজি একটা সাদা ঘোড়ায় করে আসেন। চারপাশ তীব্র আলোয় আলোকিত। ঘোড়ায় পাখা ছিলো। ঘোড়া থেকে নবীজিকে নামতে দেখেই কুতুবের চোখ ভিজে উঠলো। নবীজি কুতুবের সাথে হ্যান্ডশেখ করেন। তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। তাকে অভয় দেন। যাইহোক, সাইয়েদ কুতুবকে যদি তার বাবা মা মাদ্রাসায় ভরতি না করাতেন তাহলে তাকে ফাসিতে ঝুলে মরতে হতো না। ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে মিসরে সামরিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিলো। কুতুব কারাগার থেকে তার ভাই বোন এবং আত্মীয়দের চিঠি লিখতেন নিয়মিত। মামলা চলাকালীন সময়ে তার ভাই বোনেরা কোর্টে আসতো। কুতুব তাদের দেখে মুচকি হাসতেন। আমাদের নবীজিও মুচকি হাসি দিতেন। নবীজি কখনও হা হা, হো হো করে হাসেন নাই। কুতুবের সাথে তার দুই সহকারীকে ফাসি দেওয়া হয়। কুতুবের লেখা বই গুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।
সাইয়েদ কুতুব তার জীবনে কিছু ভুল কি করেন নাই?
সাইয়েদ কুতুব লিখতে জানতেন। অথচ উনি সাহিত্যের সকল শাখায় হাত দেননি। উনি শুধু ধর্ম নিয়েই লিখেছেন। কোরআন হাদীস সহজ করে অনুবাদ করেছেন। অথচ উনি চাইলে- দারুন সব লেখা লিখতে পারতেন। অথচ উনি একটা বিষয়ের উপর লিখে জীবন পার করে দিলেন। উনি ইসলাম ধর্মের কথা লিখেছেন। এর বাইরেও তো কত কিছু লেখার আছে। এছাড়া ইসলাম ধর্ম নিয়ে লেখার কি আছে? আল্লাহর কোরআন আছে আমাদের জন্য। আছে নবীজির হাদীস। হাদীস এবং কোরআন ছাড়া আমাদের আর কিচ্ছুর দরকার নাই। কুতুব সাহেব যদি একটু নমনীয় হতেন, তাহলে তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হতো না। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হতো না। কারাগারে সীমাহীন অত্যচার সহ্য করতে হতো না। আমেরিকা গিয়ে উনি আমেরিকার কিছুই নিজের মধ্যে ধারন করতে পারেননি। ধর্মীয় গোঁড়ামির আঁধার ছিলেন তিনি। ছেলেবেলাতেই তার মাথায় ধর্মের বীজ পুতে দেওয়া হয়েছিলো। এজন্যই তাকে করুন ভাবে মৃত্যু বরন করতে হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


