
আসসালামু আলাইকুম।
ওমর এবং আবু বক্করের পালিয়ে যাওয়ার কারণ হলো, তারা একটা ভুল সংবাদ পেয়েছিলেন, যে নবীজি যুদ্ধে শাহাদাৎ বরন করেছেন। এটা শুনে তাদের মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। এজন্য তারা যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ করেন। ওমর এবং আবু বক্কর ছিলেন নবীজির কাছের মানুষ। ইসলাম ধর্মে তাদের অবদান অনেক। তারা দুজনেই নিজের জীবনের চেয়ে নবীজিকে বেশি ভালোবাসতেন। ওহুদের যুদ্ধ নিয়ে আমি কিছুটা আলো করতে চাই। নবীজির যুগে যুদ্ধ অতি সাধারণ বিষয় ছিলো। তখন তো কামান, গোলা বারুদ, বন্ধুক, পিস্তল, গ্রেনেড ছিলো ন। তখন যুদ্ধ হতো, শাবল, বল্লম, তীর-ধনুক আর তরোয়াল দিয়ে। সেই যুগে যুদ্ধে জয়ী হলে গনিমতের মাল হিসেবে অনেক কি পাওয়া যেতো। অর্থাৎ সেই সময় যুদ্ধ ছিলো রুটিরুজি।
উহুদ বা ওহুদ একটা পাহাড়ের নাম।
মক্কা থেকে তিন মাইল দূরে। উহুদ পাহাড়টা নবীজি খুব পছন্দ করতেন। এই পাহাড়ের পাশ দিয়েই নবীজি উটের পিঠে চড়ে বিভিন্ন এলাকায় যেতেন। নবীজি কোথাও একা যেতেন না। তার সাথে সব সময় একটা দল থাকতো। যাইহোক, নবীজিকে রেখে আবু বক্কর ও উমর উহুদ যুদ্ধ থেকে পালিয়েছেন। কথা সত্য। কিন্তু কথা হচ্ছে, যুদ্ধের ময়দান থেকে সাহাবারা পালিয়ে যাবেন এটা হতেই পারে না। নো নেভার। এবিষয়ে একটি সূরা নাযিল হয়েছে। আল্লাহপাক ওমর এবং আবু বক্করকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কিন্তু এই যুদ্ধে নবীজির একটা দাত ভেঙে যায়। এবং নবীজি দারুণ আহত হোন। তার শরীর থেকে অনেক রক্ত ঝরেছে। নবীজি যুদ্ধ করতে করতে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় একটা গর্তে পড়ে যান। পাহাড়ের উপর থেকে ওমর এবং আবু বক্কর নবীজিকে দেখতে না পেয়ে, ঘাবড়ে যান।
৬২৫ সালে উহুদের যুদ্ধ হয়েছিল।
মুসলিম ও কুরাইশদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। (এর এক বছর আগে বদরের যুদ্ধ হয়েছিল।) এই যুদ্ধে নবীজি কিছুটা আহত হয়েছিলেন। ৬২৭ সালে আবার আরেকটা যুদ্ধ হয়েছিল। যাইহোক, মূলত মুসলিম আর অমুসলিমদের মধ্যে ওহুদ বা উহুদ যুদ্ধ হয়েছিল। নবীজির পরিকল্পনা অতি নিখুঁত। যুদ্ধের ময়দানে কে কোথায় থাকবে সেটা নবীজি আগেই বলে দিতেন। হুদ প্রান্তরে অর্থাৎ জাবালে রুমা পাহাড়ে নবীজি ৫০জন সাহাবাকে দাড় করিয়ে রাখলেন। বললেন, তীর মেরে শত্রুদের ঘায়েল করো। ভুলেও পেছন দিক যা-ও যাবে না। শুধু সামনে এগিয়ে যাবে। যুদ্ধের শেষের দিকে এই ৫০ জন সৈনিক তীর ছোড়া বন্ধ করে, গনিমতের মাল সংগ্রহ করতে দৌড় দেয়। এই সুযোগে পেছন থেকে আক্রমণ করে অমুসলিমরা জিতে যায়। অত্যন্ত দুখজনক।
যুদ্ধের ময়দানে অপর পক্ষ ইচ্ছা করে মিথ্যা রটিয়ে দেয়।
অপরপক্ষকে মানসিক ভাবে দুর্বল করার জন্য। সত্যের চেয়ে মিথ্যা দ্রুত ছড়ি পড়ে। আফসোস, একটা মিথ্যা সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মিথ্যা টা হলো, নবীজি যুদ্ধে মারা গেছেন। এই বিষয়ে আল্লাহ সূরা আল- ইমরানে বিস্তারিত বলেছেন। এই যুদ্ধটা ছিলো মূলত, আল্লাহর পক্ষ থেকে ধৈর্য্য ও ইমানের অগ্নিপরীক্ষা। ওহুদের যুদ্ধে শুধু আবু বক্কর আর ওমর না, সকলেই পালিয়ে গিয়েছিলেন। আবু বক্ককের পুত্র আবদুর রহমান ছিল অমুসলিমদের দলে। আবদূর রহমান মনে প্রানে চেয়েছিলেন, যুদ্ধের ময়দানে যেন তার বাবা আবু বক্ককরের সাথে দেখা না হয়। পুত্র হয়ে সে তার বাবাকে হত্যা করতে পারবে না। নো নেভার। অন্য দিকে আবু বক্কর বলেছিলেন, আমি পুত্র বুঝি না। আমার কাছে আগে ইসলাম, আগে আমার নবীজি। ইসলাম এবং নবীজির জন্য নিজ পুত্রকে হত্যা করা কোনো ব্যাপারই না।
ওমর ছিলেন সাহসী এবং বুদ্ধিমান।
হরযত ওমরের ইচ্ছা ছিলো যুদ্ধে অপরপক্ষের লোকদের নিহত বা আহত না করে তাদের বন্ধী করে মুক্তিপণ চাইবে। যাইহোক, আবু বক্কর নবীজির সবচেয়ে কাছের লোক ছিলেন। বলা যেতে পারে দোস্ত ছিলেন। আবু বক্কর নবীজিকে একা পেলেই নানান রকম প্রশ্ন করতেন। নবীজি বিরক্ত না হয়ে আবু বক্করের সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন হাসিমুখে। মক্কা বিজয়ের পর হজ্বের দায়িত্ব আবু বক্কর পালন করেন। ৬৩ বছর বয়সে আবু বক্কর মারা যান। নবীজির পাশেই আবু বক্করের কবর হয়। অন্যদিকে ওমর ছিলেন বেশ রাগী ও তেজী স্বভাবের। আবু বক্করের মৃত্যুর পর ওমর খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বলা যেতে পারে অর্ধেক পৃথিবী শাসন করেন হযরত ওমর। ওমর এবং আবু বক্কর এই দুই বীর ইসলামের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের মৃত্যুর সময় যেন কালিমা পড়ার তৌফিক দান করেন। বিশ্ব নবীর উম্মত হিসেবে আল্লাহ আমাদের জান্নাত দেবেন। আমরা পাপীতাপী। সারা জীবন দোষ করেছি। পরকালে আমাদের শেষ ভরসা আমাদের বিশ্ব নবী।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



