
ভোরবেলা আমি হাতিরঝিলে দাঁড়িয়ে আছি।
একজন আসার কথা। সে এলে তাকে নিয়ে পান্থপথ যাবো। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক রিকশাচালক বলল, কই যাইবেন? চলেন। আমি বললাম, যাবো না। তুমি যাও। বিরক্ত করো না। আমার এইটুকু কথায় রিকশা চালক রেগে গেলো। রেগে গিয়ে বলল, রাস্তা কি আপনার? আমি শান্ত হয়ে বললাম, রাস্তা আমার না। সরকারের। রিকশাচালক বলল, পারলেন শুধু আমাদের সাথেই। আমি বললাম, তোমাকে তো কোনো মন্দ কথা বলি নাই। রাগ দেখাচ্ছো কেন? রিকশাচালক রিকশা থেকে নেমে এসে কোমরে গামছা বাধতে বাধতে বলল, আগের দিন নাই। এমন ভাব যেন এখনই আমাকে মারবে। এবার আমার খুব রাগ হচ্ছে। চ্যাংড়া বলে কি? আমি একটা থাপ্পড় দিলে সোজা হয়ে দাড়াতে দশ মিনিট সময় লাগবে। থাপ্পর আমি দিলাম না। যাইহোক, আমি রাগ দমন করলাম। আমি জানি বাংলাদেশের মানুষ গুলো ইতর শ্রেনীর। সব জায়গায় ইতর। ব্লগে বেশ কয়েকজন ইতর আছে। এদের মধ্যে দুইজন আবার নারী ইতর। এদের একজন আবার কবিতা নাম দিয়ে অতি অখাদ্য লিখেন।
এটা গতকালের কথা।
ভরসন্ধ্যায় আমি ঝিগাতলা গলির ভিরত দিয়ে হেটে আসছি ফুটপাত দিয়ে। দুপুরবেলা খাওয়া হয় নাই। প্রচন্ড ক্ষুধা লাগছে। মেজাজ খারাপ। হঠাত আমি থেমে গেলাম। সামনে যাওয়ার উপায় নেই। এক রিকশা ফুটপাত উপর। রিকশা চালককে বললাম, তোমার কি কোনো আক্কলজ্ঞান নেই? ফুটপাতের উপর রিকশা রেখেছো? একটু সরিয়ে রাখো। এখান দিয়ে তো মানুষ যাবে আসবে। আমার এই কথায় রিকশা চালক খুব বিরক্ত হলো, খানিকটা রেগে গেলো। বলল, রিকশার পাশ দিয়ে যান। আমি বললাম, পাশ দিয়ে কিভাবে যাবো? ময়লা পানি জমে আছে, দেখছো না। আমার জুতো ময়লা হয়ে যাবে। রিকশা চালক বলল, নবাবজাদা আইছে। কতলোক গেলো আইলো- কারো কোনো সমস্যা হইলো না। এর সমস্যা হইছে। আমি বললাম, তুমি এইভাবে কথা বলছো কেন? আমি তো তোমাকে কোনো মন্দ কথা বলি নাই। বলেছি, ফুটাপাত হাটার জন্য। রিকশা রেখে দেওয়ার জন্য না। রিকশাচালক রেগে গিয়ে বলল, পারেন শুধু আমাদের সাথেই। পাজারো আলার সাথে পারবেন? আমাদের দেশের মানুষ গুলো নিজের ভুল গুলো দেখে না। স্বীকারও করে না। ব্লগে এরকম মানসিকতার অনেক লোক আছে।
কয়েকদিন আগের কথা।
মিরপুর ছয় নম্বর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। রাস্তার ওই পাড়ে বিশাল এক মাদ্রাসা। নিচ তলায় বাজার। রাস্তায় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। ধার্মিক বিক্রেতা চিৎকার করে বলছে কড়া লাল। চিনির মতো মিষ্টি। একছেলে তরমুজ কিনলো। ৮০ টাকা কেজি করে। ওজন মাপার পরে তরমুজের দাম দাড়ালো- ৩৮০ টাকা। বেশ বড় তরমুজ। ক্রেতা বলল, তরমুজ আমাকে কেটে দাও। লাল না হলে আমি নিবো না। বিক্রেতা তরমুজ কাটলো। দেখা গেলো তরমুজটা লাল না। একদম সাদা। ক্রেতা বলল, এই তরমুজ আমি নিবো না। আমাকে অন্য তরমুজ দাও। বিক্রেতা বলল, তরমুজ ফেরত নেবো না। এইটাই নিতে হবে। ক্রেতা নিবে না। লেগে গেলো কথা কাটাকাটি। এরপর শুরু হলো মারামারি। বিরাট মারামারি। ক্রেতা ভালোই মাইর খেয়েছে। তার ঠোট কেটে গেছে, শার্ট ছিড়ে গেছে। একটু পর ক্রেতা ফোন দিয়ে তার লোকজন ডেকে আনলো। এবার দুইপক্ষ তুমুল লেগে গেলো। আমার চা খাওয়া শেষ। এখন আমি মারামারির দৃশ্য ভিডিও করছি। অতি সাধারন, অতি তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে ভয়াবহ অবস্থা। আমাদের দেশের মানুষের সহ্য ধর্য্য একেবারেই নেই। সব শালা বদমাশ।
আমার এক আত্মীয়র বাসা বনশ্রী।
মানুষের ভিড়ে আমি গলির ভিতরে যেতে পারছি না। ঘটনা কি? কেউ মারা গেলো? নাকি কোনো গন্ডগোল? না কেউ মারা যায়নি, কোনো গন্ডগোলও নয়। গলির ভিতরে সবাই চা খাচ্ছে। তিনটা চায়ের দোকান। দোকানের ভিতরে বসে চা খাওয়ার জায়গা নেই। লোকজন দলবেধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। আড্ডা দিচ্ছে। সিগারেটের ধোয়ায় চারপাশ অন্ধকার। দূর থেকে দেখলে মনে হবে আগুন লেগেছে। দুই পাশ দিয়ে গাড়ি, রিকশা, বাইক আসা যাওয়া করতে বেগ পেতে হচ্ছে। আমি নিজেও হাটতে পারছি না। আমার দুই হাতে ফলের ব্যাগ। সাথে কন্যা ফারাজা। আমার খুবই রাগ লাগলো। বললাম, পুরো রাস্তা আপনারা নিয়ে নিয়েছেন। মানুষজন চলাচল করতে পারছে না। গাড়ি রিকশা বাইক চলাচল করতে পারছে না। আর আপনারা হাসছেন, আড্ডা দিচ্ছেন চা খাচ্ছেন। আজিব!! চায়ের দোকানদার মুখ ভেংচি দিয়ে বলল, যান ফুটেন। এখানে মাস্তানি দেখাইয়েন না। আমাদের দেশের মানুষের ব্যবহার ভালো না। এরা বড় অবুঝ, বড় নাদান। বড় শয়তান। বড় খচ্চর। বড় অমানুষ। এদেরকে সকাল বিকাল দুইবেলা চাবকানো দরকার। ব্লগেও এরকম কয়েকজন আছে। চাঁদগাজীর মতো গ্রেট ব্লগারকে তারা সামুতে থাকতে দিলাম না।
মানুষের যখন বয়স হয়ে যায়, তখন মানুষ লাইনে আসে।
আমাদের এলাকায় ৭/৮ জনের একটা গ্রুপ আছে মহিলাদের। ছোটবেলা থেকেই এদের দেখছি। এরা নাচছে, গান গাইছে। প্রেম ভালোবাসা করেছে, ফষ্টিনষ্টি করেছে। সবই করেছে। রাস্তায় আমার সাথে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করেন- কি খবর রাজীব সাহেব? আমি এদের সব সময় এড়িয়ে যাই। এরা বড় ভয়ংকর। এরা সারাদিন থাকে গীবত নিয়ে। কার ছেলে কি করবো? কার মেয়ে কি করলো? অথচ তাদের ছেলেমেয়েরা একটাও লাইনে নাই। যাইহোক, এই ৭/৮ জন আপারা এখন বুড়ি হয়ে গেছেন। এখন তারা বোরকা পড়েন। নিয়মিত নামাজ পড়েন। বোরকা কি বুড়ি বয়সে এসে পড়তে হয়? সারাজীবন রঙ ঢং করে ধর্মীয় নিয়মকানুন কি বুড়ি বয়সে এসে মানতে হয়? নাকি বুড়ি বয়সে এসে ধর্মীয় বোধ জাগ্রত হয়? আমার এক ক্লোজ ভাবি। সে হঠাত ধার্মিক হয়ে গেলো। অথচ ভাবি নাচ গান করতো। এলাকায় কোনো বিয়ে হলে সে নাচতো গান গাইতো। এখন সে পুরোপুরি ধার্মিক। বোরকা, হিজাব, নেকাব কিছুই বাদ দেই। আজিব!! নব্য ধনীরা যেমন সমাজের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি নব্য ধার্মিকেরাও সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
আমি একটা স্বপ্ন প্রায়ই দেখি-
একটা ঘোড়ায় করে আমি বের হয়েছি। আমার হাতে চাবুক। যেখানে অন্যায় হচ্ছে, যারা অন্যায় করছে- তাদের আমি চাবুক মারছি। চাবুক মেরে মেরে আমি বেলাইনে চলে যাওয়া লোকদের লাইনে আনছি। এই জাতি চাবুক ছাড়া লাইনে আসবে না। মুখের কথায় এদের কাজ হবে না। আমি জানি সবাইকেই আমার চাবুক মারেত হবে। হোক সে সাংবাদিক, হোক সে শিক্ষক, হোক সে মন্ত্রী, হোক সে উপদেষ্টা, হোক সে সমন্বয়ক, হোক সে বৈষম্যবিরোধী, হোক সে ব্লগার, হোক সে কবি। হোক সে রিকশা চালক বা বাইকার। আমার এক শিক্ষক সব সময় ছাত্রদের বলতেন, বাবারা লাইনে থাকিস। ঘর থেকে বাইরে বের হলেই মানুষ গুলো কেমন বদলে যায়। কেমন অমানুষ হয়ে যায়। অথচ ঘরে হয়তো তার- শ্রদ্ধেয় বাবা মা আছেন, মমতাময়ী স্ত্রী আছেন, আদরের ছেলেমেয়ে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



