
প্রিয় কন্যা আমার-
ফারাজা আমার কাছে মনে হচ্ছে- হুহু করে দিনগুলো চলে যাচ্ছে। তুমি ব্যস্ত, আমিও ব্যস্ত। সকালে তুমি আমি বাসা থেকে একসাথেই বের হই। তুমি স্কুলে চলে যাও। আমি আমার কাজে চলে যাই। সারাদিন তোমার সাথে আর দেখা হয় না। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে তুমি গোছল করে ঘুমিয়ে যাও। আমি ফোন দিয়ে তোমাকে পাই না। এদিকে আমি বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। গল্প করার জন্য তোমাকে খুব একটা পাই না। তুমিও আমাকে সময় দিতে পারছো না, আমিও তোমাকে সময় দিতে পারছি না। হ্যা, তোমার মা তোমাকে সময় দিচ্ছে। আমি তোমাকে কিছুই শেখাতে পারছি না। সেদিন সকালে স্কুলে যেতে যেতে তুমি প্রশ্ন করলে, বাবা- 'আল্লাহ দেখতে কেমন'? তোমার বয়স মাত্র সাড়ে বছর। অথচ তুমি প্রশ্ন করে বসলে- আল্লাহ দেখতে কেমন? প্রশ্নটার উত্তর আমি কিছুটা জানি। কিন্তু সময়ের অভাবে আমি তোমাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে পারিনি। আর আমার কিছু বলারও প্রয়োজন নেই। তুমি বড় হবে, লেখাপড়া করবে, জ্ঞান অর্জন করবে- তখন তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর নিজেই পেয়ে যাবে। ছোট বেলায় মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খায়।
ফারাজা তাবাসসুম খান-
শুধু লেখাপড়া করো, জ্ঞান অর্জন করো। জ্ঞানের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। যত পড়বে তত জানবে। জানার মধ্যে আনন্দ আছে। সেই আনন্দকে তুচ্ছ করো না। চারিদিকে মিথ্যা ও ভুলের ছড়াছড়ি, তাই তোমাকে সঠিক সত্যটা জানতে হবে। কারো মুখ থেকে কিছু শুনে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই। মানুষ পুরোপুরি সত্য বলে না। সত্যের সাথে মিথ্যা মিশায়, মিথ্যার সাথে সত্য মিশায়। আসল সত্য জানার জন্য তোমাকে পড়তে হবে। পড়ার কোনো বিকল্প নেই। মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করবে- তোমার সমস্ত জ্ঞান দিয়ে, সমস্ত্য সততা দিয়ে, সমস্ত মেধা দিয়ে, সমস্ত ভালোত্ব ও মহত্ব দিয়ে। খারাপ মানুষ থেকে সব সময় দূরে থাকবে। সে যদি তোমার নিকট আত্মীয়ও হয়, তবু তার কাছ থেকে দূরে থাকবে। দূরে থাকবে সকল কুসংস্কার থেকে। কুসংস্কারের মধ্যে কোনো মঙ্গল নেই। আলো নেই। আছে শুধু ভ্রান্তি। তুমি সম্পূর্ন ভ্রান্তি থেকে দূরে থাকবে। যত জ্ঞান অর্জন করবে- ভুল, ভ্রান্তি, মিথ্যা, রুপকথা এবং কুসংস্কার তোমার কাছ থেকে বিদায় নেবে। জ্ঞান অর্জন না করলে সমস্ত খারাপ কিছু তোমায় ঘিরে ধরবে। আমি চাই- তুমি আধুনিক হও। তোমার চিন্তা- চেতনা- ভাবনা আধুনিক হোক। তাহলে সকল বাধা বিপত্তি পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারবে।
ফাজ্জা, মাঝে মাঝে মনে হয়-
শিশুদের ছোটবেলায় ধর্মীয় বীজ মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া ভুল হবে। শিশু বড় হোক, তারপর সে যদি মনে করে ধর্ম জানতে হবে, মানতে হবে- তাহলে সে জানুক, মানুক। কিন্তু সে যখন অবুঝ তাকে জোর করে ধর্ম শিক্ষা না দেওয়াই উত্তম। আমার এক বন্ধু বলে, বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিলো- আমি যেন আল্লাহর পথে থাকি। বাবা মা মারা গেছেন। আল্লাহর পথে থাকতে গিয়ে এখন আমি গরীব জীবনযাপন করছি। আসলে বাবা মায়ের ভুলের খেসারত দিতে হয় ছেলেমেয়েকে। আমি মনে করি, শিশুকে ধর্ম নয়, মানবিক শিক্ষা দিতে হবে আগে। জানতে হবে বিজ্ঞান। জানতে হবে টেকনোলজি। মানুষের আসল সম্পদ হলো- শিক্ষা। সঠিক শিক্ষা। ধর্ম শিক্ষা নয়। যারা আলোর সন্ধান করবে তারা উন্নতি করবে। যারা ধর্মের সন্ধান করবে তাঁরা পেছনে পড়ে থাকবে। জ্ঞান, বিজ্ঞান আর মেধার চর্চা করতে হবে। চিন্তার পরিবর্তন আনতে হবে। তুমি মানুষ তোমার ভালো কাজ করতে হবে- ব্যস এইটুকু বুকে ধারণ করতে পারলে আর কিছুর প্রয়োজন নেই।
ফাজ্জা তাবাসসুম-
মাদ্রাসা থেকে যে ছেলেমেয়ে গুলো বের হয়েছে এবং হবে এরা জাতির জন্য তেমন কোন সম্পদ সৃষ্টি বা উন্নয়ন করতে পারবে না। এই ছেলেমেয়ে গুলো চাকুরীর ইন্টারভিউ দিতে এসে বুঝবে এরা বাকি বিশ্ব থেকে কত পিছিয়ে আছে। সরকারের অবহেলা ও অদূরদর্শীতার কারনে জনসংখ্যার বিশাল একটা অংশ মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। ধর্ম অল্প বুদ্ধিমান মানুষকে নিয়ন্ত্রনে রাখার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বেশিরভাগ বাবা মা সন্তানের কাঁধে ভর দিয়ে জান্নাতে যেতে চায়- তাই তাদের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়। আমি বিশ্বাস করি ধর্ম জানার চেয়ে বিজ্ঞান জানা বেশি জরুরী। কোরআনে হাফেজ হওয়ার চেয়ে মাস্টার্স পাশ করা বেশি জরুরী। ধার্মিক হওয়ার চেয়ে মানুষ হওয়া বেশি জরুরী। পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেয়ে মানবিক ও হৃদয়বান হওয়া বেশি জরুরী। ধর্মের বই পড়ার চেয়ে বিজ্ঞান, অংক এবং ইতিহাসের বই পড়া জরুরী। ইহকালে জীবনযাপন করে, পরকালের চিন্তা করা বোকামী।
প্রিয় কন্যা আমার-
এক সময় বেচে থাকা কিংবা মরে যাওয়া নিয়ে ভাবতাম না। বিষয়টা এরকম ছিলো, মরন এলে মরে যাবো। কিন্তু এখন আমার মরতে ইচ্ছে করে না। দীর্ঘদিন বেচে থাকতে ইচ্ছে করে। এর কারণ- তুমি। আমি যদি এখন মরে যাই, তাহলে তুমি আনন্দ নিয়ে বড় হতে পারবে না। যতই মামা চাচা খালা খালু থাকুক। সন্তানকে বাবার মতো করে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। তোমার জন্য আমি দীর্ঘদিন বেচে থাকতে চাই। তুমি বড় হও, লেখাপড়া শেষ করো। দেশ, সমাজ, মানুষ এবং জীবনকে বুঝতে শিখো। ভালো মন্দ বুঝতে শিখো। ফারাজা মিথ্যা বলব না- দুনিয়াতে আমার এক টুকরো আনন্দ হচ্ছ- তুমি। বড় আদরের তুমি। যতক্ষণ বাইরে থাকি, অস্থির থাকি। কখন বাসায় ফিরবো। তোমাকে দেখব। সারাদিন পর আমি বাসায় ফিরলে- তুমি বাবা বাবা বলে চিৎকার করে ছুটে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে। বড় ভালো লাগে। মনে হয় জীবন সুন্দর। জীবন আনন্দময়। জীবনে একটা সময়ে এসে সব মানুষ ভাবে, জীবনের উদ্দেশ্য কি? কেন আমাদের জন্ম হলো? জীবনে এত দুখ কষ্ট কেন? সুখ দুঃখ কষ্ট এবং আনন্দ সব কিছু তোমাকে মানিয়ে নিতে হবে। মেনে নিতে হবে। তুমি শুধু ভালো থাকতে চেস্টা করবে। সত্যের অনুসন্ধান করবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



