
আজ বৃহঃস্পতিবার। ২৪শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শরৎ-কাল।
লেখার শুরুতে আমি আমার অবস্থানটা বলে নিতে চাই। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি- মুখ ভার করেছে মহান আকাশ! হ্যা আকাশ ভরা মেঘ। যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে এমন একটা ভাব! অবশ্য আকাশের মেঘের এরকম ভাবে আমি ভয় পাই না। কারণ, এরকম আমি অনেক দেখেছি, আকাশ ভরা কালো মেঘ। চারিদিক গভীর অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। শীতল বাতাস বইছে। তুফান আসবে, তুফান। আজ সব ভাসিয়ে নেবে। তারপর দেখা যায়, মেঘ কেটে গেছে। রোদ উঠেছে, বৃষ্টির নাম গন্ধ নেই। আজ সকালেও আকাশে মেঘ দেখে আমি ভয় পাইনি। কারণ, কবি বলেছেন- "মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে"। রবীন্দ্রনাথ গ্রেট। এসএসসি পরীক্ষায় ট্রান্সলেশন এসেছিলো- 'যত গর্জে তত বর্ষে না'। The proverb says, "The more it roars, the more it rains." আরেকটা ট্রান্সলেশন এসেছিলো- তার কথায় আমার হাসি পায়।
সুরভি আজ অনেক কিছু রান্না করেছে।
আসলে সে গতকাল রাত থেকেই রান্না শুরু করেছে। ফারাজার স্কুলের গার্জনদের খাওয়াবে। রুটি পরোটা, খিচুড়ি, গরু মূরগী সবই করেছে। এমনকি সেমাই, নুডুলস, চা কফিও করেছে। ফলাফল এ মাসে আমাকে আরেকবার বাজার করতে হবে। এত খাবার রান্না করেছে বলেই আমি বাসা থেকে না খেয়ে বের হয়েছি। চা-ও খাইনি। কারণ, পুরো ঘরে খাবারের গন্ধ দিয়ে ভরে গেছে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। আমি বাংলামটর নেমে গেলাম। সুরভি আর ফারাজা চলে গেলো। আমার সময় থাকলে আমি ফারাজাকে স্কুল পর্যন্ত দিয়ে আসতাম। যাইহোক, এই মুহুর্তে আমার নিজেকে মিশরের সম্রাট বলে মনে হচ্ছে। এই মিশরের সম্রাটকে বাসায় ফেরার পথে কন্যার জন্য আপেল, আনার নিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে আইসক্রিম। কারণ, মিশরের সম্রাট জানে বিকেলের মধ্যে ফোন এসে যাবে। কন্যা ফোন দিয়ে বলবে, বাবা আইসক্রিম নিয়ে এসো। মা'র জন্যও এনো। কিন্তু বলবে না- বাবা তোমার জন্যও এনো।
আজ আমাদের নাস্তা করিয়েছেন বরকত ভাই।
প্রচুর খাবার এনেছেন। অনেক পদের খাবার এনেছেন। কোনটা রেখে কোনটা খাই! রিজিক বড় অদ্ভুত ব্যাপার! সুরভি অনেক কিছু রান্না করেছে। কিছুই খেলাম না। সুরভি মন খারাপ করেছে। সুরভি তো জানে না- আল্লাহপাকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার কোনো উপায় নাই। এই মাত্র জানালার সামনে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা খেলাম। চমৎকার চা। দুধ চিনি সব পারফেক্ট। গান বাজছে। রবীন্দ্র সঙ্গীত। 'পাগলা হাওয়ার বাদল দিন.....'। চা শেষ করার পরই মনে হলো- লাইফ ইজ বিউটিফুল। আজ কোনো কাজ নয়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ইচ্ছা করেই ছাতা ছাড়াই বের হয়েছি। বৃষ্টির দিনে সামান্য হলেও ভিজতে হবে। বৃষ্টিতে ভিজে স্কুল থেকে বাসায় ফিরেছি, বৃষ্টিতে ভিজে অফিস থেকে বাসায় ফিরেছি। এক মেয়ের সাথে দেখা করে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাসায় ফিরেছি। সেই সব অতীত আমি ভুলি নাই। সুরভি আর আমি একদিন ছাদে বৃষ্টিতে ভিজেছি। সুনীলের একটা বই আছে, বৃষ্টিতে ভেজার বয়স।
ইদানং কিচ্ছু লেখা হচ্ছে না।
অথচ মনের মধ্যে অনেক কথা জমা হয়ে আছে। লিখি। প্রতিদিনই লিখছি। লেখাটা মনের মতো হচ্ছে না। মুছে দিচ্ছি। আবার লিখছি। আবার কিছু লেখা পোষ্ট করে সরিয়ে নিচ্ছি। কেন এমন করছি আমি জানি না। অথচ সময় চলে যাচ্ছে। কত দ্রুত সময় চলে যাচ্ছে! দরকারী কাজ কিছুই হচ্ছে না। হাসান রাজার একটা গান আছে। চমৎকার গান। লোকজন বলাবলি করছে, হাসান রাজার ঘরবাড়ি ভালো না। তখন হাসন বলে, আগে যদি জানতাম কতদিন বাচবো তাহলে রঙ্গিন করে ঘরবাড়ি করতাম। কতদিন আর বাঁচবো? আয়নাতে সাদা চুল দেখা যাচ্ছে। এই গানটা আমাকে খুব ভাবায়। গানটার মধ্যে হাহাকার। এই হাহাকার বুকে এসে ধাক্কা দেয়। মনে করিয়ে দেয়- কি ঘর বানাইমু আমি/ শূণ্যেরও মাঝার! মরে গেলেই সব শেষ। থেমে যাওয়া। স্থির। শূন্য। কোথায় নিয়া রাখব আল্লায়! যাইহোক, আজ কোনো কাজ নয়। আজ বন্ধু শাহেদ জামালের সাথে সাক্ষাৎ হবে।
হুজুররা গানের বিরুদ্ধে- কিন্তু আমার গান ভালো লাগে।
সকাল থেকেই একের পর এক গান শুনছি। একমাত্র রাজাকার, জামাত শিবির শালা'রা ছাড়া সবাই গান ভালোবাসে। এদের চিরতরে বিতাড়িত করতে হবে। নইলে দেশের ভালো হবে না। সব জায়গায় জামাত শিবির ছেয়ে গেছে। ব্লগে এসেও এরা ইতরামি শুরু করছে। ব্লগটিম কেন এদের কান ধরে ব্লগ থেকে বের করে দেয় না? আমার কথা হচ্ছে- স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো রাজাকার, জামাত শিবির থাকতে পারবে না। নো নেভার। এরা থাকা মানে পুরো জাতি পিছিয়ে যাওয়া। অনেক কষ্টে পাওয়া এই দেশ। এত সহজে ছেড়ে দিবো না শকুনদের হাতে। ৭১ অনেক কষ্টের। অনেক ত্যাগের। এখানে কোনো ছাড় হবে না। ৭১ এর পরাজিত শক্তি কোনোদিন সফল হবে না। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সাহস দেয়, ভরসা দেয়। জয় বাংলা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


