
আজ ভূমিকম্প হয়েছে!
যদিও আজ শুক্রবার। কিন্তু আমার কাজ আছে। আমি সকাল সাত টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই গোছল করেছি। গোছল করতে গিয়ে দেখি পানি অনেক ঠান্ডা। গিজার নষ্ট। সুরভিকে বললাম, গরম পানি করে দাও। অনেক সময় নিয়ে আরাম করে স্নান করলাম। ভালো লাগলো। শীত প্রায় এসেই গেলো। এখন রাতে এসি ছাড়তে হয় না। ফাজ্জা ঘুমে। আজ আমার কাজ বাসা থেকে সাত মাইল দূরে। রেস্টুরেন্টে নাস্তা করলাম। তন্দুর রুটি দিয়ে স্যুপ আর বুটের ডাল। শেষে এক কাপ চা। সাড়ে দশটার দিকে ভূমিকম্প হয়। ঢাকাবাসীকে বেশ বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে আজ। ঢাকার মানুষজন হিমিসিম খেয়েছে।
আমি পাঁচ তলা থেকে দৌড়ে নিচে নামলাম।
আশেপাশের সমস্ত বিল্ডিং থেকে ছেলেবুড়ো সকলেই নেমছে। কেউ খালি গায় নেমে গেছে, কেউ খালি পায়। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। ঢাকাবাসী আজ খুব ভয় পেয়েছে! সবাই দৌড়ঝাঁপ করেছে। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। আমার মনে পড়েছে ফারাজার কথা। আমার মেয়ে। আমার কলিজা। কন্যার কথা মনে পড়তেই আমার অস্থির লাগা শুরু হলো। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। আমি কি করবো, বুঝতে পারছি না। দিশেহারা অবস্থা। সুরভিকে ফোন দিচ্ছি, সে ফোন ধরছে না। অথচ সে দিন রাত ২৪ ঘন্টা মোবাইল হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সারা দিন মোবাইল টিপতেই থাকে। কিন্তু দরকারের সময় পাচ্ছি না। দরকারের সময় মোবাইলে কাউকে পাওয়া যায় না। এ এক আজিব রহস্য।
নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব করছে।
ফোন যাচ্ছে না। হোয়াটসআপেও ফোন ঢুকছে না। অনেকবার চেষ্টা করার পর ফোন ঢুকলো। কিন্তু সুরভি ফোন ধরছে না। আজিব!! মাকে ফোন দিলাম, মা-ও ফোন ধরছে না। ছোট ভাই, বড় ভাই কেউ ফোন ধরছে না। আমার টেনশন বাড়ছে! নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মনে মনে অনেক কিছু ভাবছি সুরভি কেন ফোন ধরছে না? সুরভির বাবা ফোন দিয়েছে। ভয়ে তার গলা কাপছে। উনি বললেন, সুরভি ফোন ধরছে না। তোমরা নিরাপদে আছো তো? বললাম, হ্যা আমরা ঠিক আছি। চিন্তা করবেন না। কিছুক্ষন পর সুরভি আপনাকে ফোন দেবে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের চিন্তা, অস্থিরতা বাড়তে থাকে। ধৈর্য্য সহ্য কমতে থাকে।
ভূমিকম্প থেমে যাবার বিশ মিনিট পর সুরভিকে ফোনে পেলাম।
ভূমিকম্পে আমার বাসার ঘটনা এরকমঃ ফারাজা ঘুমাচ্ছিলো। সুরভি ভূমিকম্প টের পেয়ে ঘুমন্ত ফারাজাকে কোলে নিয়ে দৌড়ে নিচে নামছিলো। বাসার সবাই নীচে নামছিলো। হই চই, চিল্লাচিল্লি। ফারাজার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে এমন অবস্থা দেখে ভয় পায়। আশেপাশের বাড়ি থেকে সকলে রাস্তায় নেমে যায়। ফারাজার সাথে আমার ভিডিও কলে কথা হয়। ফারাজা কাঁদছে। বলল, বাবা তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসো। আজ শুক্রবার, সবার ছুটি। সবার বাবা বাসায় আছে। তুমি বাসায় নাই কেন? ফারাজার সমানে কেদে চলেছে। আমি যতই বলছি, তুমি কি খাবে? তোমার জন্য কি আনবো? ফাজ্জা কান্না করছে। আমি ফারাজার কাছাকাছি থাকলে, সে বেশি প্রানবন্ত থাকে। আনন্দে থাকে।
যাইহোক, আজ শুক্রবার। মানে জুম্মার নামাজে যেতে হবে।
দুর্যোগের সময় মানুষ বেশি ধার্মিক হয়ে যায়। জামাত ক্ষমতায় এলে দেখা যাবে, কেউ যদি জুম্মার নামাজে না যায়, তাহলে পিঠে কিল পড়বে! সময় কম, লেখা এখানেই শেষ করছি। আজ নামাজ পড়বেন না কামাল১১। অথচ তার বাসা থেকে দশ মিনিট হাটলেই একটা মসজিদ আছে। একজন ব্লগার আমাকে জানিয়েছেন, চাঁদগাজী নিউইয়র্কের ফুতা ইসলামিক সেন্টারে জুম্মার নামাজ পড়েন। আবার মাঝে মাঝে মসজিদ-এ-জাকারিয়াও নামাজ পড়েন। চাঁদগাজী কি জানেন মসজিদ-এ-জাকারিয়া একসময় গীর্জা ছিলো। গীর্জা থেকে মসজিদ করা হয়। সরকার থেকে লিজ নিয়ে বাঙ্গালী মুসলিম কমিটি গীর্জাকে মসজিদ করে। জুম্মার নামাজের ফজিলত নিয়ে নতুন নকিব ভালো বলতে পারবেন। ব্লগার মহাজাগতিন চিন্তা'ও ভালো বয়ান দিতে পারবেন- জুম্মা নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


