লেবুবাগানের কথা দিয়ে শুরু করি। ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে লেবুবাগানের অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ বলা চলে। লেবু বাগানের দলু মুন্সী নিজেই আমাদের শোনালেন সেদিন সকালের কথা। বৃষ্টির পানি শুরু থেকেই পাহাড় থেকে মাটি ধুঁয়ে আনছিল, তাই তিনি একটা কোদাল হাতে করে নালা কেটে পানি যাবার পথ করার চেষ্টা করছিলেন। এমনসময়ে তার শালা কালামের চিৎকার শুনে তিনি সেদিকে ছুটে যেয়ে দেখেন, পাহাড়ের এক পাশ দিয়ে ঢল নেমেছে আর সেই মাটিতে চাপা পড়েছে কালাম। কোনমতে কোদাল দিয়ে মাটি সরিয়ে কালামকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন পাশের ঘরটিতে, যেখানে বেলায়েত বাস করতেন তার সাত মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে। বাকি দুই মেয়ের একজন থাকতেন স্বামীর সাথে, কদিন আগেই স্বামী আর সন্তানসহ এসেছিলেন বাবার বাড়ি বেড়াতে। কালামকে ঘিরে সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠে। দলু মুন্সীর স্ত্রী আর ছেলেরা ছুটে আসে মামার কি হয়েছে দেখতে। সেই সঙ্গে আসে দলু মুন্সীর ছোট বোন, যে কিনা বরিশাল থেকে এস. এস. সি. পরীক্ষা দিয়ে এসেছিলো ভাইয়ের বাড়ি বেড়াবে বলে। এমন সময়ে দলু মুন্সী দেখেন পাহাড় সমুদ্রের ঢেউয়ের মতন ছুটে আসছে তার দিকে। চিৎকার দিয়ে কাউকে সাবধান করার আগেই, মুহূর্তের মধ্যে চাপা পড়ে সবাই। নিজে কোনমতে বেঁচে যান তিনি। আরও বেঁচে যান বেলায়েত যিনি সেই সময়ে মসজিদে গেছিলেন নামায পড়তে, বেলায়েতের স্ত্রী, বড় মেয়ে আর তার ছোট্ট বাচ্চাটা। একই সাথে সাত সন্তান হারিয়ে তারা এখন পাগল প্রায়। হঠাৎ দলু মুন্সী তার ছোট বোনের ডাক শুনতে পান, "ভাইয়া, আমি মরতে চাইনা, আমাকে বাঁচান!" , তাকিয়ে দেখেন ছোট বোনটার প্রায় পুরোটাই চাপা পড়েছে মাটিতে। তিনি ছুটে যেয়ে মাটি সরাতে শুরু করতেই দেখেন আরেকদিক থেকে পাহাড় ভেঙ্গে আসতে শুরু করেছে। অগত্যা জীবন বাঁচাতে ছুটে রক্ষা করেন নিজেকে। এখনও তাঁর মনে হয় ওই বুঝি বোন ডাকছে... সারা জীবন এই বোঝা বয়ে নিয়েই কাটবে বাকীটা জীবন...
এখন কি নিয়ে বাঁচবেন বেলায়েত? এক মেয়েকে এক বাসায় দিয়েছিলেন কাজ করতে, সে বেঁচে গেছে। বেঁচে আছে সদ্য বিধবা বড় মেয়ে আর তাঁর অবুঝ শিশু। কিভাবে কাটবে তাদের বাকী জীবন?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০০৭ দুপুর ১২:০১