somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যকা
রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

বিচার না চাওয়া দোষ কিন্তু বিচার না হওয়া দোষের নয় !

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলে দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পর বিচার চাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ! অজ্ঞাত খুনীদের শাস্তি দাবি করে তিনি কেন বিচার চাননি সেটা নিয়ে চলেছিল ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা । সর্বত সুযোগসন্ধানী বুদ্ধিজীবিদের একাংশের ঘুমহীন আলোচনায় মিটারে বিদ্যুতের বিল হু হু করে বেড়েছিল বটে তবুও সন্তান খুন হওয়ার পর পিতা কেন খুনীদের বিচার দাবী করেননি তার কোন কিনারাই তারা আবিষ্কার করতে পারেনি ! তবুও তারা আলোচনার একটি বিষয় পেয়েছিল এটাই বা কম কীসে ! সে আলোচনার বিষয় বা ধরণে কারো কারো তীর্যক মন্তব্য শুনে সহজেই মনে হয়েছিল জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার চেয়েও তার বাবার বিচার না যাওয়ার বিষয়ইটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ! অথচ বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে জাতি বন্দি হলেও সেটা গুরুত্ব পায়নি কখনো । সরকারী দলের কারো কারো মুখ ফসকে প্রকাশ পেয়েছিল, ‘বাবা খুনীদের আদর্শে হওয়ায় তিনি সন্তান হত্যার বিচার চাননি’ ধরণের বাক্যও । এমন কথা যারা বলেছিল কিংবা এমন বক্তব্যের যারা সমর্থন দিয়েছিল তাদের কাছে যদি সে খুনের দীর্ঘদিন পর উল্টো জানতে চাওয়া হয়, গত আড়াই বছরে যে পাঁচজন ব্লগার-লেখক খুন হয়েছে তাদের পরিবার তথা গোটা দেশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ তথা সরকারের কাছে কাকুতি-মিনতি করে বহুবার ন্যায় বিচার চেয়েছিল কিন্তু তাদের কি ধরণের বিচার উপহার দেয়া হয়েছে ? শুধু দীপনের বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক নন বরং কিছুদিন আগে শুনলাম রাফিদা আহমেদ বন্যাও তার স্বামী অভিজিৎ হত্যার বিচার চায় না । তবে কি অভিজিতের স্ত্রীও খুনীদের আদর্শে বিশ্বাসী ! দীপনের বাবা কিংবা অভিজিতের স্ত্রী বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন কেবল অতীতের ঘটনাগুলোর বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে । রাষ্ট্র বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে এমনভাবে নিমজ্জিত হয়েছে যার কারণে উদারনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা দীপনের বাবা রাষ্ট্র থেকে বিচারের আশা যতটুকু পাবেন বলে ভেবেছেন তার চেয়ে হয়ত বেশি সম্ভাবনা দেখছেন খুনীদের শুভ বুদ্ধি উদয়ের । নয়ত কলিজার টুকরোর মৃত্যুর বৈধ প্রতিশোধের আশা একজন বাবা ছেড়ে দিতে পারেন না; তিনি যতই মহৎ হোন । সুষ্ঠু বিচারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সম্ভাবনার চেয়ে শঙ্কাই বেশি কেননা অতীতে মুক্তমনা ব্লগাদের মধ্যে যে কয়জন হয়েছে কিংবা যারা হুমকি পেয়ে আইনের সহায়তা চেয়েছে তাদের কেউ এ যাবৎ প্রত্যাশা মাফিক আইনের সহায়তা পাননি ।

গত ৩১ অক্টোবর জাগৃতি প্রকাশনার মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপন ও শুদ্ধস্বর প্রকাশনার মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ আরও দুইজন লেখক-ব্লগার দুর্বৃত্ত্বদের দ্বারা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন । যাদের মধ্যে দীপন তার কার্যালয়েই মৃত্যু বরণ করেছিল এবং টুটুল ও অন্য দুইজন গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার পর দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়েছে । তবে সেদিনের ভয় আজও তাদের তাড়িয়ে বেড়ায় । তাদের অপরাধ তারা অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক, তাদের অপরাধ তারা মুক্তমনা লেখকদের প্রকাশক । তবে ধরা যায়, লেখক ও ব্লগার অনন্ত, রাজিব, বাবু, নিলয় ও অভিজিতকে খুন করার পর এবার উগ্রপন্থীদের টার্গেট প্রকাশক ও অন্যান্য চিন্তাশীল পেশার মানুষ । খুনীদের কে শুধু উগ্রবাদী বলা চলে কিনা তা নিয়েও জেগেছে প্রশ্ন । কেননা উগ্রবাদের সাথে যখন ধর্মাবন্ধতা জড়িয়ে যায় তখন খুনী-সন্ত্রাসীদের যে অর্থে পরিচয় দেয়া চলে সেভাবে পরিচিত করা যায়না যখন এটাকে রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা হয় । প্রকাশক খুন ও জখম হওয়ার পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেমন অনায়াসে বলেছিলেন, এ হত্যায় বিএনপি-জামাত জড়িত তেমনি তখন লন্ডনে চিকিৎসারত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, জঙ্গিবাদের উত্থানে আওয়ামীলীগ দায়ী । সুতরাং নিশ্চিতভাবে বলা যায়, লালমাটিয়া এবং আজিজ সুপার মার্কেটের ঘটনাদু’টি রাজনৈতিক তর্কেই স্থান পেয়েছে এবং প্রকৃত খুনীরা আড়ালে চলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে । আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা এ বিষয় নিয়ে সরকার ও তাদের রাজনৈতিক বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি শুনতে থাকব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখে আনসারুল্লাহ বাংলাটীম কিংবা এদের স্বজাতীয় কোন জঙ্গী দল এ ঘটনায় জড়িত বলে শুনব । নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যানুযায়ী, ‘আল কায়েদা ইন দ্যা ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’ ঘটনা পরবর্তী সময়ে জানিয়েছিল তারাই এ কাজ ঘটিয়েছে ।

আমাদের দেশ তথা আমরা কেমন আছি, কতটুকু নিরাপদে আছি তা সহজেই বোঝা যায় কিছুদিন আগ প্রদত্ত তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে । তার মতে, গোপন অতর্কিত হামলা থেকে কেউ নিরাপদ নয়, এমনকি তিনিও । আমরা দেশবাসী তো এমন পরিস্থিতি কোনভাবেই কামনা করিনি তবুও কেন এতটা অনিশ্চয়তা-অনিরাপত্তায় আমাদের সময় পাড় হচ্ছে ? যারা এমন অতর্কিতভাবে লেখক-ব্লগার খুন করছে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে রাষ্ট্রে ক্ষতের পরিধি বিস্তৃত হতেই থাকবে । ইসলাম এমন জঘন্য হত্যাকান্ড কোনভাবেই সমর্থন করে না । কাজেই যারা ধর্মের ব্যানার ব্যবহার করে ধর্মান্ধতা ও উগ্র মনোভাব পোষণ করে মানুষ হত্যা করছে তারা ধর্মের কেউ নয় । এদের শিকড় কতটা গভীরে তা পুরোপুরি উপলব্ধি করা না গেলেও খুনের ধরণ ও তাদের সফলতা দেখে বোঝা যাচ্ছে এরা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত । কাজেই এদের মূল খুঁজে বের করার চেষ্টা করা রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য । সরকারের সকল উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে যদি এরা মাথাচাড়া দেয়ার সুযোগ পায় । সরকারকেও দু’টো দিকের কোন একটিকে বেছে নিতে হবে । প্রথমতঃ ধর্ম নিরপেক্ষতা কিংবা সাপেক্ষতা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্ত এ ভূমির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর আদর্শিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় বিশ্বাসকে কোনভাবে আঘাত করার সুযোগ কাউকে দেয়া যাবে না । এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বক্তৃতা দিয়েছেন তা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য । । মুক্তমত প্রকাশের নামে যদি কেউ অসত্য অভিযোগ ধর্মের বিরুদ্ধে আরোপ করে তবে তা দমনে রাষ্ট্রকেই ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে । কেননা বর্তমান সময়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ কথা চিরন্তন বাস্তব যে, কেউ কেউ মুক্তমত প্রকাশের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ও অবৈধ যুক্তি উপস্থাপন করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত দিচ্ছে । যা রাষ্ট্রকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে । দ্বিতীয়তঃ বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা অচিরেই বন্ধ করতে হবে । বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করা না গেলে শুধু ব্লগার-মুক্তমতাদর্শীদের হত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না বরং সকল ধরণের অপরাধ ক্রমাগত বেড়ে রাষ্ট্রকে বিশৃঙ্খল করে ফেলবে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×