somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ সময়ের পড়াশোনার বিষয় ফার্মেসি

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রফিকুল আমীন খান (আরিফ)
অসুস্থ হলে সুস্থ হতে আমরা ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার রোগের ধরন বুঝে ওষুধ দেন। রোগ ভালো হওয়ার জন্য এই ওষুধের যেমন কোন বিকল্প নেই। তেমনি রোগ ও রোগীর ধরণ অনুযায়ী যারা মাথা খাটিয়ে ওষুধ তৈরি করেন তাদেরও বিকল্প নেই। ওষুধ তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এ ব্যক্তিরাই হলেন ফার্মাসিস্ট। সুতরাং ডাক্তার ও ফার্মাসিস্ট দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। এখনতো মেডিকেলে চান্স না পাওয়া হতাশ ছেলে-মেয়েকে উদ্দেশ্য করে অনেকে অভিভাবককেই বলতে শোনা যায়- ‘মেডিকেলে চান্স হয়নি তাতে কি, ফার্মেসি পড়’।

কিন্তুফার্মেসি-তে চান্স পাওয়া কি সহজ ব্যাপার? মোটেই না, বরং অত্যন্ত কঠিন। তবে এ কথা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রজোয্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি পড়া হাতের মুঠোয়ই বলা চলে। এ জন্য কিছু টাকা খরচ করতেই হবে। শখের বিষয়ে পড়তে কিছু টাকা খরচ করলেন বইকি। আখেরে এতে আপনারই লাভ।

তাই বলে ভাববেন না, যাদের টাকা নেই তারা ফার্মেসি পড়তে পারবেন না।

টাকা না, আসলে ফার্মেসি পড়তে হলে দরকার মেধা অর্থাৎ ভালো রেজাল্ট। এসএসসি ও এইসএসসিতে পর্যায়ে ভালো রেজাল্ট থাকলে কোন কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি-তে ১০০ শতাংশ পর্যান্ত ছাড়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। বুঝেশুনে আপনার সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।


কেন পড়বেন ফার্মেসি ?
বর্তমানে পেশাভিত্তিক পড়াশোনার মধ্যে বিশ্বব্যাপী ফার্মেসির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। কারণ এর সম্পর্ক জীবনের সঙ্গে। জীবনকে সুন্দর, সুঠাম ও নিরোগ রাখতে প্রয়োজনীয় ও মান সম্পন্ন ওষুধ তৈরি করেন ফার্মাসিস্টরা। আর ফার্মাসিস্ট হতে ফার্মেসি পড়া ছাড়া বিকল্প নেই। সুতরাং বুঝতেই পাড়ছেন ফার্মেসি ও ফার্মাসিস্টদের চাহিদা।

এক কথায় পড়াশোনার বিষয় হিসেবে ফার্মেসি আধুনিক, উন্নত ও যোগোপযোগী ও রুচিশীল তরুণ-তরুণীর বিষয়। মেধার জোর থাকলে এ বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করার আগেই অনেকের চাকরি মিলে। বেতনও ভালো। মেধা, মননশীলতা, উদ্যম ও পরীশ্রমের গুণে উন্নতীর শিখরে ফার্মেসি গ্রাজুয়েটরা যত তারাতারি পৌঁছতে পারেন তা অনেক বিষয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষেই কঠিন বইকি।


উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি তালিকাভূক্ত ৮৫০টি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা ও ২৬৯টি এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠান দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করছে সুনামের সঙ্গে। প্রতি নিয়ত আমাদের দেশের ওষুধের চাহিদা বেড়ে চলেছে। চাহিদার সঙ্গে তার মিলিয়ে উৎপাদন বাড়াতে কোম্পানিগুলো পণ্য উৎপাদন, বিপণন, ব্যবস্থাপনা, পণ্য উন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা-সহ বিভিন্ন বিভাগে প্রতি বছর প্রচূর ফার্মেসি গ্রাজুয়েটদের চাকরি দিচ্ছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও।


বিশ্ববিদ্যালয়গুরো ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট তৈরির লক্ষ্যে চালু করেছে ফার্মেসি বিভাগ। মেধার জোরে আপনিও হয়ে যেতে পারেন এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকদেরকে ভালো বেতন দিয়ে থাকে। এর বাইরে ফার্মেসি পড়ে বিসিএস দিয়ে জনপ্রশাসনের ক্যাডার হতে পারবেন। মোট কথা ফার্মেসির গণ্ডি পেড়িয়ে আপনি চাইলে যে কোন পেশায়ই কেরিয়ার গড়তে পারেন ফার্মেসি পড়া শেষে। সব মিলে এ যুগের তারুণ্যের পছন্দের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ফার্মেসি।


কোথায় পড়বেন ?
ফার্মেসি শিক্ষা ও পেশার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে ১৩ টি সরকারি ও ২৮ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি চালু রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বপ্রথম ১৯৬৪ সালে স্নাতক পর্যায়ে ফার্মেসি শিক্ষা চালু করে। এর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিষয়ে পড়াশোনা চালু করে।


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আশা ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাষ্ট ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইষ্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথ ইষ্ট ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ষ্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ষ্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজী এন্ড সাইন্সেস (ইউ.আই.টি.এস), ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগং, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।


খরচ কেমন ?
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে পড়েন, খরচ সামান্যই। তাই এ নিয়ে আলোচনা না করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফার্মেসি পড়াশোনার খরচ নিয়ে আলোচনা করাই যুক্তিযুক্ত। বর্তমানে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি পড়িয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। এখানে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিষয়ে পড়াশোনার খরচ দেয়া হলো :



নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি :
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে চার বছরের বি.ফার্ম প্রোফেসনাল ডিগ্রি শেষ করতে ভর্তি ফি, টিউশন ফি-সহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক মিলে খরচ পড়বে ১২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এখানে প্রতি সেমিস্টারে গড়ে ৯৮ হাজার ৮৪৬ টাকা খরচ পড়বে। দেশের প্রথম সারির এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এসএসসি ও এইচএসসি এবং ভর্তি পরীক্ষার ফল, সেমিস্টার ভিত্তিক রেজাল্ট, সিবলিংস-সহ (ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে পড়লে) বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে টিউশন ফি-তে ছাড় দিয়ে থাকে।


ইউনিভার্সিটি অব এসিয়া প্যাসিফিক :
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে স্নাতক শেষ করতে সব মিলে খরচ পড়বে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি সেমিস্টারে গড়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা খরচ পড়বে। এখানেও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এসএসসি ও এইসএসসি এবং সেমিস্টার রেজাল্টের ওপর ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ ছাড় রয়েছে টিউশন ফিতে। এছাড়া দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ১০ থেকে ১০০ শতাংশ ছাড়ে ফার্মেসি পড়ার সুযোগ রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।


মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি :
আশুলিয়ার খাগানে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফার্মেসি বিষয়ে চার বছরের ¯œাতক প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করা বহু ছাত্র-ছাত্রী দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশবিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও ছাত্র বিষয়ক বিভাগের উপ-পরিচালক আবদুল মতিন। এখানে চার বছরে ভর্তি ফি, টিউশন ফি, সেমিস্টার ফি সব মিলে খরচ পড়বে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ১০০ টাকা। এ টাকার ওপর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এসএসসি ও এইচএসসি রেজাল্টের ভিত্তিতে ৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়। এছাড়া এখানে সেমিস্টার রেজাল্টের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত স্কলারাশিপ দেয়া হয়। দরিদ্র ও মেধাবী এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকার নির্ধারিত ৬ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীকে বিনা টিউশন ফিতে পড়ানো হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।


আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়:
বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রামের কুমিরায় অবস্থিত। এখানে ফার্মেসিতে চার বছরের ¯œাতক শেষ করতে ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা লাগবে। এখানে চতুর্থ বিষয় বাদে জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের ১০০ শতাংশ ছাড় দেয়া হয় টিউশন ফি-তে।


ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি :
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি পড়তে চার বছরে সব মিলে ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা খরচ পড়বে। প্রতি সেমিস্টারে গড়ে ৯৫ হাজার টাকা খরচ পড়বে। এখানেও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল ও সেমিস্টার রেজাল্টের ভিত্তিতে টিউশন ফি-র ওপর ১০ থেকে ১০০ শতাংশ ছাড় দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের।


ইষ্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটি:
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি প্রোগ্রামে চার বছরের টিউশন ফি ৮ লাখ ১৬ হাজার ৯২০ টাকা। এ ছাত্র- সেমিস্টার রেজাল্টের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি-তে স্কলারশিপ রয়েছে।


গণ বিশ্ববিদ্যালয় :
এখানে ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক শেষ করতে চার বছরে মোট ৫ লাখ টাকা খরচ হবে। ভর্তির সময় এককালীন ৭০ হাজার টাকা দিতে হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত আর্থিক সুবিধা ছাড়াও বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিরা গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় সহযোগীতা করেন।


ষ্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ :
এ ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসি পড়তে চার বছরে খরচ পড়বে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ টাকা। ভর্তির সময় এক কালীন ১৫ হাজার টাকা গুণতে হবে।

ষ্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ :
এ ভার্সিটিতে চার বছরের ফার্মেসি পড়তে খরচ হবে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৯৫০ টাকা। এখানে এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের ভিত্তিতে টিউশন ফি’র ওপর ১০ থেকে ১০০ শতাংশ ছাড় দেয়া হয়।

নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ :
এখানে ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক শেষ করতে চার বছরে খরচ পড়বে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা। ভর্তির সময় এককালীন ১৬ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে। এখানেও এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি’তে ছাড় রয়েছে। এখানে উপজাতী সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ছাড় রয়েছে।

অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চার বছরের ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক শেষ করতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭০০ টাকা, সিটি ইউনিভার্সিটিতে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮০০ টাকা, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে ৬ লাখ ৪ হাজার ১০০ টাকা, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স-এ ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭০০ টাকা, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে ৫ লাখ ৫০ হাজার, অতিশ দীপাঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬০ টাকা, আশা ইউনিভার্সিটিতে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৫১০ টাকা খরচ পড়বে।


ভর্তির যোগ্যতা :
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পর্যায়ে যে কোন বিষয়ে ভর্তির নূন্যতম যোগ্যতা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ঠিক করে দিয়েছে। ইউজিসি’র নিয়ম অনুযায়ী ফার্মেসিতে ভর্তি হতে হলে এসএসসি ও এইসএসসি পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আলাদা আলাদভাবে জিপিত্র ২.৫ নিয়ে পাস হলেই হলো। কোন একটিতে জিপিএ ২ এর উপরে ও জিপিএ ২.৫ এর নিচে হলে সেক্ষেত্রে ওই দুই পরীক্ষার ফল জিপিএ ৬ হতে হবে।
তবে ফার্মেসি বিষয়ে পড়াশোনা ও পেশার নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেহেতু বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিল সেহেতু সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে ভর্তির জন্য আলাদা যোগ্যতা বাতলে দিয়েছে। তা হলো-

১। ফার্মেসিতে ভতিচ্ছু শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের দুই পরীক্ষা মিলে জিপিএ ৬.৫ থাকতে হবে।

২। এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে চতুর্থ বিষয় বাদে আলাদা আলাদা ভাবে জিপিএ ৩.০ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।

৩। এইচএসসি পর্যায়ে রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে নূন্যতম জিপিএ ৩.০ এবং গণিতে নূন্যতম জিপিএ ২.০ থাকতে হবে।

৪। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে বর্তমান বছর কিংবা আগের বছর এইচএসসি বা সমপর্যায়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

৫। এইচএসসি বা সমপর্যায়ে কারো গণিত না থাকলে তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন সেখানে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের কারিকুলাম অনুযায়ী গণিতে অতিরিক্ত ৩ ক্রেডিট কোর্স করতে হবে।

উপরোক্ত যোগ্যতার আলোকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তীর জন্য নিজ নিজ বিভাগের পক্ষ থেকে ভর্তির তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলে দরখাস্ত করতে হবে। ফার্মেসিতে ভর্তির বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের ওয়েব সাইট থেকে অ্যাক্রিডিটেশন গাইডলাইনটি ডাউনলোড করে পড়ে নিতে পারেন।
http://pcb.portal.gov.bd/sites/default/files/files/pcb.portal.gov.bd/files/0403294d_9621_42b0_973f_3a7370d57a11/Guidelines for Accreditation.pdf

বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, উপরোক্ত সব নির্দেশিকা ও অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কেউ ফার্মেসি প্রোগ্রামে ভর্তি হলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোন রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয় না। ফলে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মনে মনে দীর্ঘ দিন ধরে লালন করা ফার্মাসিস্ট হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। তাই ফার্মেসি-তে ভর্তি হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের স্বীকৃতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও পড়াশোনার মান সম্পর্কে জেনে-বুঝে ভর্তি হওয়াই শ্রেয় হবে বইকি।

পড়া শেষে কাজের ক্ষেত্র :
ফার্মেসি পড়া শেষে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোতে ওষুধের ফর্মুলেশন, উৎপাদন, মানোন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিতকরণ, স্থিতিশীলতা, বিপণন ও গবেষণাসহ বিভিন্ন বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, আর্মড ফোর্সেস, সরকারি হাসপাতাল, ওষুধ প্রশাসনসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন উচ্চ পদে ফার্মাসিস্টদের কদর রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ফার্মাসিস্ট পদে, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি ম্যানেজার ছাড়াও বিভিন্ন প্রশাসনিক পদেও ফার্মাসিস্টদের প্রাধান্য দেয়া হয়। শিক্ষাকতা যাদের পছন্দ তাদেরও এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে বাধা নেই। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফার্মেসি বিভাগে প্রতি বছর প্রচূর সংখ্যক ফার্মেসি গ্রাজুয়েটদের নিয়োগ দিচ্ছে। বেতনও দিচ্ছে বেশ ভালো।

আয়-রোজগার :
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফার্মেসিতে চার বছর মেয়াদি বি ফার্ম প্রোগ্রাম শেষে সার্টিফিকেট নিতে হলে শিক্ষার্থীকে যে কোন ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানে এক মাসের ইন্টার্নি সম্পন্ন করতে হয়। এ ইন্টার্নিও বি ফার্ম প্রোগ্রামের সিলেবাসের অংশ। ইন্টার্নি শেষে শুরু হবে ফার্মাসিস্ট হওয়ার সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পালা। এর আগে আপনি বিশ্ববিদ্যালয় নামক ছোট্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ পর্যায়ে আপনাকে ফার্মাসিস্ট হওয়ার স্বপ্নকে ছুঁতে হলে বড় পরীক্ষায় (অর্থাৎ যেখানে সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যলয়ের গ্রাজুয়েটরা অংশ নিবে) উত্তীর্ণ হতে হবে। এ পরীক্ষায় যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলেই কাঙ্খিত চাকরি মিলবে। কেরিয়ারের শুরুতেই বেতন পাওয়া যাবে ২৫-৩০ হাজার টাকা। কোথাও কোথাও এ বেতন বেড়ে ছয় মাসের মাথায় ৫০-এ গিয়ে ঠেকে। কাজ দিয়ে দুই থেকে তিন বছরের মাথায় ১ লাখ টাকাও বেতন পাওয়া সহজ এখানে!

বিদেশেও আছে ক্যারিয়ার গড়ার ভালো সম্ভাবনা :
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে আমাদের দেশের ফার্মাসি গ্র্যাজুয়েটরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, জাপানসহ ইউরোপের নানা দেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন। এসব দেশে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটদের ভালো কদর রয়েছে। তারা সে সব দেশের বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরির পাশাপাশি ড্রাগ কনসালট্যান্ট হিসেবেও কাজ করছেন সম্মানের সঙ্গে।
সবমিলে সামাজিক মান-মর্যাদা, সঙ্গে ভালো বেতন- জীবনটাকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে ফার্মেসি ছাড়া পড়ার মতো আর কয়টি বিষয় আছে আমাদের দেশে!
########
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×