somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডায় ৭০ দিন - ১৭ তম পর্ব

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাবা (তারেক-উল আলম) গত বছর কেনাডা বেড়াতে এসেছিলেন। কেনাডা থেকে দেশে ফিরে একটা বই লিখেছেন – ‘কানাডায় ৭০ দিন’। আজ পড়ুন এর ১৭ তম পর্বঃ


সানফেস্ট মেলা

৯ জুলাই, আমরা ব্রেমটন থেকে লন্ডন ফিরলাম। ডলি ও মিতুল এলো আমাদের পৌঁছে দিতে তাদের মার্সিডিজভেনজ নিয়ে। মিতুল চমৎকার চালায়। আড়াই ঘন্টার মধ্যেই সে আমাদের নিয়ে পৌঁছে গেলো লন্ডনের প্ল্যাটস্ লেনে।

হপ্তা খানেকের ওপর ধ্রুবর সাথে আমাদের দেখা নেই। আমাদের দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। একটু পরই তার সে কি ভূবন মোহন হাসি ! মনে হলো আমাদের চিনতে পেরেছে ! দাদি তাকে বুকে টেনে নিলো।

শুভ-লুসি খিঁচুড়ি রান্না করে রেখেছিলো আমাদের জন্যে। শুভ ভালো খিঁচুড়ি রাঁধে। অনেক পাকা রাধুনীও হার মানবে তার রান্না করা খিঁচুড়ির স্বাদে-গন্ধে ! আমরা তার রান্না খিঁচুড়ি খেলাম পরিতৃপ্তি নিয়ে।

বিকাল ৫টায় আমরা গেলাম সান ফেস্ট মেলায়। প্রতি বছর গ্রীষ্মে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনের বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া পার্কে। চার পাঁচ দিন ধরে চলে মেলা। আগামী কালই এর সমাপ্তি। তাই আজই আমরা মেলায় চলে এলাম। ডলি ড্রাইভ করে আমাদের মেলায় নিয়ে এলো।

সান ফস্টে অর্থাৎ সূর্যোৎসব। সূর্য দেবতার মনোরঞ্জনের জন্যেই বোধ হয় এই আনন্দ উৎসবের আয়োজন। শীতে সূর্যের আলো, সূর্যের তাপ এদেশে খুব কম। বছরের অধিকাংশ সময় বরফে ঢাকা থাকে সব কিছু। প্রচন্ড শীতে মানুষ হয়ে থাকে জবুথবু। মানুষের অনেকটা গৃহবন্দী জীবন। গ্রীষ্মে মুক্তির স্বাদ। মুক্তির আনন্দে তাই উৎসবের আয়োজন।

উৎসব মানেই আনন্দ। আর আনন্দ মানেই সুখ, সুখানুভূতির প্রকাশ, হৃদয়ানুভূতির বিকাশ, অন্যের আনন্দানুভূতি নিজ হৃয়ে ধারণ। এই আনন্দের প্রকাশ কবিতায়, গানে, নৃত্যে বাদ্যে--এসব নিয়েই তো সংস্কৃতি। আর এই সান ফেস্ট মেলা এই সংস্কৃতিরই প্রাণ ভোমরা। প্রতি বছর গ্রীষ্মে এখানে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ভোকাল এবং ব্যান্ড দল আসে লন্ডন শহরকে মাতিয়ে রাখতে। তারা তাদের নিজস্ব কালচার এবং সংগীতে মাতাবে পুরো লন্ডন শহর। পার্কের ৩টি স্থানে বৃহৎ স্টেজ বানিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্যান্ড সংগীত। আমরা একটি স্টেজের সামনে নরম ঘাসের উপর বসে গেলাম !

অনুষ্ঠান চলছে সকাল থেকে। আমাদের সম্মুখে এখন মাল্টিনেশন ব্যান্ড সংগীত দলের অনুষ্ঠান। ব্যান্ডের তালে তালে দেহ দুলিয়ে অপূর্ব ছন্দে গানের সঙ্গে নেচে চলেছে, এক মেক্সিকান ভোকাল-- মাঝারি গড়নের এক তরুনী। কি অপূর্ব তার দেহ সৌষ্ঠব, কি অপূর্ব গাওয়ার ঢং, কি অপূর্ব ছন্দময় নৃত্য, কি অপূর্ব কণ্ঠ ! তরুনীর নৃত্যে, ছন্দে, গানে মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক শ্রোতা। ল্যাটিন সংস্কৃতি আমার খুব পছন্দ বিশেষ করে তাদের ছন্দময় নৃত্য। দলনেতা এক কানাডিয়ান নারী--উচ্চতা ছয় ফুটের উপর। গানে, সুরে, মিউজিকের তালে, দ্রুতলয়ে কবিতার ছন্দে কথার বুলি--গান না কবিতা না কথা সবই একই সুরে গাঁথা ! সেক্সোফোনের সুরের দীর্ঘটানে তার শরীর কখনো ধনুকের মতো বেঁকে--মনে হয় এক্ষুনি বুঝি পড়ে যাবে ! কিন্তু না এটা নৃত্যেরই একটা মুদ্রা !

গানের সুরে নৃত্যের তালে তালে স্টেজ থেকে দর্শকের মাঝে প্রবেশ এবং দর্শক শ্রোতাকে পাগল করে নৃত্যে নৃত্যে আবার স্টেজে ফিরে যাওয়া- কি অপূর্ব উপভোগ্য দৃশ্য ! আবাল বৃদ্ধবনিতা গানের সাথে মিউজিকের তালে ছন্দে ছন্দে নেচে চলেছে। কেবল গান আর গান, নাচ আর নাচ, কেবল আনন্দ। কারো কোন দুঃখ বোধ আছে মনে হয়না। এরা আনন্দ করতে জানে, আনন্দ দিতে জানে। এরা যেটা করে দেহ মন উজাড় করে দিয়ে করে। সেলিব্রেটিরা যেভাবে দুলছে নাচছে দর্শক ও সেইভাবেই দুলছে। মনে হয় একটা যাদু মন্ত্রে মানুষ নিজকে আনন্দ সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে, হারিয়ে ফেলেছে !

একটার পর একটা গান চলছেই। গানের সব কথা না বুঝলেও সুরের মোহনীয় যাদুতে এবং ড্রামের শব্দে সমস্ত দেহমনে আনন্দানুভূতি ! ড্রামের শব্দে মাঝে মাঝে বুকে কাঁপুনি ধরে তবুও বসে আছি নরম ঘাসের উপর মুগ্ধতা নিয়ে। এই দলে রয়েছে আফ্রিকার সেনেগাল ও ঘানার, এশিয়ার লেবানীজ, মেক্সিকো, ল্যাটিন অ্যামেরিকান, যুক্তরাষ্ট্রের, আরমানিয়ান এবং কানাডিয়ান শিল্পীদের নিয়ে গঠিত দল। এরা সারাদিনই পারফর্ম করে চলেছে। গানের কথা সব না বুঝলেও সংগীতের ভাষা তো এক ! তাই আনন্দ সূধা পান করতে কোন অসুবিধা হয় না। এই সংগীতের সূর মূর্ছনা মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে পড়ে হাজারো হৃদয়ে !

আমরা দেখছি, উপভোগ করছি ব্যান্ড সংগীত। পেছনে ফিরে দেখি ডলি তার বোনকে নিয়ে উধাও ! শুভ তাদের খুঁজতে বেরিয়ে গেলো। আমি বসে সংগীত উপভোগে মন দিলাম।

সংগীতের বাইরে মেলায় আরো একটি দিক ছিলো তা হলো নানা পণ্য সামগ্রীর দোকান। বাচ্চাদের পুতুল, ঘর সাজানোর নানান ডেকোরেশন সামগ্রী, ক্যাপ, টি-সার্ট, বাঁশি ইত্যাদি। নানা রকমের পিঠার (কেক) দোকান, চা-কপি ইত্যাদির দোকান। অনেকটা বাংলাদেশের কুটির শিল্পের মেলার মতো। নানান বয়সের বাচ্চা এবং শিশুদের নিয়ে মায়েরা। বাচ্চারা খেলছে, আনন্দ করছে। বাচ্চাদের নানান রকমের ‘গেম’ এবং বয়স্কদেরো। অনেক ‘ফান’ মেলায়।

অনেকক্ষণ পর শুভ তার মা এবং খালাকে নিয়ে ফিরে এলো। ওরা মেলা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো, আনন্দ করছিলো। এসে আমাকেও নিয়ে গেলো। সব সাধারণ মানের জিনিসপত্র। খাবারের দোকান কিন্তু অত্যধিক দাম। রাস্তার পাশেই ফুটপাতে ইতালিয়ান নাস্তা-কফির দোকান। আজকের জন্যে আইন শৃংখলা বোধ হয় একটু শিথিল। যে যেভাবে পারছে খাচ্ছে ঘুরছে, আনন্দ করছে।

মেলায় সাদা-কালো, ধনী-গরীব সব একত্র হয়েছে। একত্রে খাচ্ছে, একত্রে ঘুরছে, একত্রে নেচে গেয়ে আনন্দ করছে। মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য নেই এখানে। সব ধর্ম বর্ণ গোত্র একত্রে একাকার মানুষের এই মিলন মেলায় ! সংগীত মানুষকে কতো নৈকট্যে নিয়ে যায় সানফেস্ট মেলা তারই একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

(ক্রমশ)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×