এক : অনেক বছর আগে আমি যখন ক্লাস ফাইভ /সিক্সে পড়তাম তখন আমাদের বাসায় ঢাকার বাহির থেকে আমার চাচাতো বোন এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করার জন্য । তখন সিদ্ধান্ত হলো , ওই আপা আমার সাথে এক বিছানাতেই থাকবেন । আমি মহা খুশি হলাম , যাক একজন গল্প করার সঙ্গী-সাথী হলো । ওই আপার নাম নাসরিন।
রাতে বিছানায় শোয়ার পর মজার মজার গল্প কথাবার্তা চলতে থাকে । নাসরিন আপা আমাকে বললেন তুমি রাতে দুই বেনী করে ঘুমাও কেন ? আমি বললাম শুনেছি এতে নাকি চুল লম্বা হয় দ্রুত । নাসরিন আপা আমার মতো দুই বেনী করে রাতে ঘুমাতেন । নাসরিন আপা প্রায়ই মেক্সি পড়তেন । একদিন হলো কি উনি একদম অফ হোয়াইট কালার এর ওপর গোলাপী ছোট বল বল (গুলাপি নাই বললেই চলে) সেটা পড়ে ঘুমালেন।এবং ঐদিন ওনার মাথা ব্যথা ছিল এবং তিনি ঘুমানোর আগে মাথায় অনেক পানি দিয়েছেন তাইচুল আর বেঁধে ঘুমান নাই ।
রাতে আমিও কি কারণে যেনো নাসরিন আপা ঘুমানোর আগে আমি ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারিনা ।
আর ঐদিন রাতে হঠাৎ করে ঘুম ভাঙ্গার কারণে তাকিয়ে দেখি, পুরো মাথা উপর করে চুল গুলো ছড়িয়ে বসে আছেন । আমি মধ্যরাতে এতটাই ভয় পেয়েছিলাম ভূত ভূত বলে চিৎকার করে উঠলে বাসার সবাই তখন এসে আমাদের রুমে এসে জড়ো হয়েছেন।
আমার বয়স তখন অল্প অথচ আমি অনেক বকা খেলাম ।
দুই: আমরা যে বাসায় থাকি সে বাসার একটু দূরে দূরে চারতালা /পাচতালা বিল্ডিং এবং মাঝে মাঝে একটু ফাঁকা খালি প্লট পড়ে আছে । আমাদের বাসার পাশে একটা খেলার মাঠ সাথে ছোট্ট একটা দোকান এবং তার পরে আরেক টা বিল্ডিং । এটা সেই নাসরিন আপা আমাদের বাসায় থাকা সময়কার ঘটনা । নাসরিন আপার সাথে সামনের বিল্ডিং এ থাকা একজন খুব সুন্দরী তিনি আপাও( রুবা) বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করছিলেন । আমাদের বাসায় দুই-তিনবার এসেছেন মাত্র । সেই রুবা আপা আমাদের পাড়ার মধ্যে আলোচিত সুন্দরী মেয়ে ছিলো । কি কারনে যেন উনি বাথরুমের জানালার সাথে ওড়না গলায় পেচিয়ে সুইসাইড করেন । উনার কথা মনে হলে ভয় লাগতো আরো অনেক রাত ঘুমাতে পারি নাই। আমাদের বাসার সাথে নাসরিন আপার কারণে রুবা আপার পরিবারের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে । আমার মা একদিন সন্ধ্যাবেলায় আমাকে উনাদের বাসায় পাঠালেন কিছু পিঠা ও একটা নারিকেল দিয়ে যা পাঠালেন ।
মাগরিবের আজানের পর সন্ধ্যা নামলে রাস্তাঘাট একটু নীরব হয় তাই তখন আমি আর আমার ছোট ভাইই সেগুলো নিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু একটু সামনে এগুতেই দেখি যে রুবাআপা সুইসাইড করেছিলেন তিনি খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের সামনে এগিয়ে আসছেন শাড়ি পরা অবস্থায় । মৃত মানুষ এভাবে দেখে আমি আর আমার ছোট ভাই রাস্তায় পিঠা নারিকেল ফেলে দিয়ে রাস্তার ভূত ভূত বলে চিৎকার করে এক দৌড়ে বাসায় আসলাম । আমার মনে হয়েছিল আমি সেখানেই মরে যাবো । আসল ঘটনা হলো , যাকে দেখে আমরা ভয় পেয়েছি তিনি হচ্ছেন সেই মৃত আপার জমজ বোন । উনাকে কখনো দেখি নাই কারন বছরখানেক আগে উনার বিয়ে হয়ে যায় অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন । ওই দিনের অভিজ্ঞতা ছিল আমার ভয়ঙ্কর সাংঘাতিক কারণ মনে হয়েছিল মৃত ব্যক্তির আত্মা দেখতে পাচ্ছিলাম ।
উপরের উল্লেখিত দুটো ঘটনা আমার কাছের মানুষরা অনেকেই জানে তাই ভাবলাম এখানে শেয়ার করি । তখন অনেক ছোট ছিলাম তাই এই ঘটনাগুলো সেসময়ের একটা বাচ্চা মেয়ের জন্য কিছুটা ভয়ানক ই বটে কিন্তু এখন মনে হলে হাসি পায় ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪১