---------------------- ড. রমিত আজাদ
নিঝুম রাতের নিস্তদ্ধতা ভাঙে অলুক্ষুণে হুতুম প্যাঁচা,
কার খন্ডিত মস্তক যেন আধারের আবছায়ায় ডুকরে কেঁদে ওঠে
একি মেঘের গর্জন, নাকি রাইফেলের গর্জে ওঠা?
অন্তিম নিশীথে আজ হেমন্তের রিক্ততা যেন,
অর্ধমৃত আর্ত রাত্রিতে নক্ষত্ররা কম্পমান,
নীমের শাখায় বসা ভীত শংকিত দোয়েল,
নীলান্ত আকাশের চাঁদে আজ রাহুর আগ্রাসন,
নদীও প্রসস্ত নয়, যে সেখানে গাইবে গাঙচিল,
ভাসবে কবির বজরা, কবিতার 'সোনার তরী',
পদ্মার ক্ষীণ স্রোত আজ তিস্তায় সংক্রমিত হয়,
সহস্র আঁখিতে প্রতিফলিত হয় ধুসর প্রকৃতি।
বিপন্ন জনপদ তুমি ক্ষুধা ও তৃষ্ণার অন্তহীন ঢল,
রাঙা রাজকন্যা নয়, নববধুর বেশে
কাটাতারে ঝুলন্ত কিশোরীর দেহ।
পুরনো হৃদয়ে আজ আর প্রেম জাগেনা,
নারীর নিবিড় শরীরও হয়ে ওঠে আকর্ষণহীন,
তথাকথিত ভদ্রলোকেরা উপেক্ষা করে যায়,
অশ্রুভেজা, সিক্তবসনা নারীরা প্রতীক্ষা করে।
ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের ভিতরে যে বীজ হয়েছিলো গাঁথা,
তার শিকড় আজ অনেক গভীরে,
আজ আর আমরা ব্যাথাকে ব্যাথা বুঝিনা,
প্রেমকে প্রেম বুঝিনা,অপমানকে প্রশংসা ভ্রম করি!
এক ভয়ংকর মিথ্যায় ধরা দিয়ে,
চুম্বনের স্বাদও ভুলে গিয়েছি সেই কবে!
হে অধম!
ড্রাকুলার চুম্বনে প্রেম থাকেনা,
ঐ ক্রুর চুম্বন উপহার দেয় রক্তহীন ফ্যাকাশে শরীর।
আমাদের নীরবতায় বাড়ে তাদের ধৃষ্টতা!
এগিয়ে আসতে আসতে হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়বে ।
না, ঝাঁপাতে দেয়া যাবেনা,
ঠিক তার আগেই টুটি চেপে ধরতে হবে,
এ পাপ ক্ষমাহীন! একদিন ঠিকই মাশুল গুনবে।
হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চাও?
না ব্যাথা নয়, জেগে উঠবে দ্রোহ।
এই গুমোট গরমে আর কতদিন?
ঝড় দেখবে ঝড়, রুদ্র কালবোশেখী নৃত্য!
কৃষক প্রার্থনায় নতজানু হয় স্রষ্টার কাছে,
ফসলের আকাঙ্খায়।
লুন্ঠন, চৌর্যের লোভে নয়!
কি করে আমি তাকে তুলে দেই শকুনের হাতে?
এইটুকুই তো কেবল রয়েছে আমার বাকী, আমার শেষ সম্বল,
আমার বসত-বাড়ী, পবিত্রভূমী, সে যে আমার স্বদেশ!
ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চায় আমার জন্মভূমী,
কি দুঃসাহস! কত বড় স্পর্ধা!
জেন রেখো শকুন,
সাম্রাজ্য গড়ে, সাম্রাজ্য ভাঙে,
রোম ও পারস্যও একদিন ধ্বসে গেছে,
সীজারের দেহ আজ শুধুই মৃত্তিকা,
ইতিহাস কেবলই শৃঙ্খল নয়,
সেখানে আরো রয়েছে শিকল ভাঙার গান।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৪