somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"হাদীসে কুদুসী" পর্ব-১

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসুন প্রথমেই আলোচনা করা যাক হাদীসে কুদুসী বলতে আমরা কি বুঝি?
কুদুস শব্দের অর্থ পুতঃপবিত্র, যেমন 'বাইতুল মাকদাস' এখানে মাকদাস অর্থ পবিত্র। যেমন হাদীসে এসেছেঃ সুব্বুহুন কুদ্দুসুন- এখানে কুদ্দুসুন শব্দের অর্থ পুতঃপবিত্র, আর হাদীসের সাথে "কুদুস" যোগ করার অর্থ হলো এটি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত, এই 'কুদুস' তাঁর আসমাউল হুসনা- উত্তম নামসমূহের অন্তর্ভূক্ত। যেহেতু তিনি সকল প্রকার দোষত্রুনি ও অসম্পূর্ণতা থেকে পুতঃপবিত্র। অতএব হাদীসে কুদুসীর সংজ্ঞা হলোঃ আল্লাহ সুবহানাহুর বাণী তাঁর নাবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর নিকট ইলহাম বা স্বপ্নের মাধ্যমে বা জীবরীল (আঃ) এর মাধ্যমে যা এসেছে তাই হাদীসে কুদুসী।

কুরআন ও হাদীসে কুদুসীর মধ্যে মৌলিকভাবে ছয়টি পার্থক্য পাওয়া যায়ঃ

০১) কুরআন মু'জিযা, হাদীসে কুদুসী তা নয়।
০২) সালাত আদায়ে কুরআন তিলাওয়াত শর্ত, হাদীসে কুদুসী শর্ত নয়।
০৩) কুরআন অস্বীকারকারী কাফির, হাদীসে কুদুসী অস্বীকারকারী কাফির নয়।
০৪) কুরআন নাযিল অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার এবং নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে জিবরীল (আঃ) হওয়া শর্ত। হাদীসে কুদুসীতে তা নয়।
০৫) কুরআনের শব্দ ও অর্থ উভয়ই আল্লাহর নিকট থেকে, কিন্তু হাদীসে কুদুসী তা নয়।
০৬) অপবিত্র ব্যক্তি যেমন বাচ্চা প্রসবকারিনী মহিলা, ঋতুবতী মহিলা ও যার উপর গোসল ফরয এ সকল মানুষের জন্য কুরআন স্পর্শ করতে পারে না, তবে হাদীসে কুদুসী স্পর্শ করা বা পাঠ করা হারাম হবে না।

এই হল সংক্ষেপে হাদীসে কুদুসী নিয়ে আলোচনা। এবার পাঠকগণের খেদমতে হাদীসে কুদুসী থেকে ক্রমান্বয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদীস পেশ করছি।

০১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাবারাক ওয়া তা'আলার একদা ভ্রাম্যমান অতিরিক্ত মালায়িকা/ফিরিশতা রয়েছেন, তারা যিকরের মাজলিসসমূহ অনুসন্ধান করে বেড়ায়। তারা যখন কোন যিকরের মাজলিস দেখতে পায় তখন সেখানে তাদের (যিকর কারীদের) সাথে বসে যায়। আর তারা একে অপরকে তাদের পাখা দিয়ে বেষ্টন করে রাখেন, এমন কি তারা তাদের এবং পৃথিবীর আকাশের ফাঁকা স্থান পূর্ন করে ফেলেন। যিকরকারীগণ যখন আলাদা হয়ে যায় তখন তারা আকাশে আরেহণ করেন। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ সুবহানাহু জিজ্ঞেসা করেনঃ তোমরা কোথা থেকে এলে? অথচ তিনি তাদের ব্যপারে সর্বাধিক অবহিত। তখন তারা বলতে থাকেনঃ পৃথিবীতে অবস্থানকারী আপনার বান্দাদের নিকট থেকে এসেছি যারা আপনার তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পাঠ করে, তাকবীর (আল্লাহু আববার) পাঠ করে, তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর যিকর করে, আপনার প্রশংসা করে এবং আপনার নিকট তাদের কাংখিত বস্তু কামনা করে। তখন আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দারা আমার নিকট কি চায়? তারা (ফিরিশতাগণ) বলেনঃ তারা আপনার নিকট জান্নাত কামনা করে। তিনি বলেনঃ তারা কি জান্নাত দেখেছে? তারা বলেনঃ না, হে আমাদের রব্ব! তিনি বলেনঃ যদি তারা আমার জান্নাত দেখতে পেত তাহলে কী করত? তারা বলেনঃ তাহলে তারা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করত। তিনি বলেনঃ কিসের থেকে তারা আমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করত? তারা বলেনঃ হে আমাদের রব্ব! আপনার জাহান্নাম থেকে। তিনি বলেনঃ তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে? তারা বলেনঃ না, তারা দেখেনি। তিনি বলেনঃ যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখতে পেত তাহলে কী করত? তারা বলেনঃ তাহলে তারা আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলেনঃ আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তারা যা চেয়েছিল আমি তা প্রদান করলাম; আর তারা যা থেকে আশ্রয় চেয়েছিল, আমি তা থেকে তাদেরকে নাজাত প্রদান করলাম। এরপর তারা বলবেঃ হে আমাদের রব্ব! তাদের মধ্যে তো অমুক পাপিষ্ঠ বান্দা ছিল যে তাদের (যিকরকারীদের) সাথে মাজলিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বসেছিল। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলেনঃ আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম, তারা তো এমন এক সম্প্রদায় যাদের সাথে তাদের সাথীরা দুর্ভাগ্যবান হয় না। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুয যিকরি ওয়অদ্দুয়া, অনুচ্ছেদ-যে স্থানে যিকর করা হয় উহার ফযীলাত)

পাঠক গণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এ যিকির হতে হবে চুপিসারে বা মৃদুস্বরে, উলঙ্গ হয়ে মাথা এদিক ওদিক করে পাগলের মত নয়। যাহা মাজারে গেলে দেখা যায়।

যিকির করার নিয়ম সহীহ হাদীসে বর্ণনা করা আছে। যারা হাদীস বহির্ভূত পন্থায় যিকির করে তারা গোমরাহী এবং তারা আল্লাহর দ্বীন তথা ফযীলতের ব্যপারেও বাড়াবাড়ি করে। সুতরাং আল্লাহ আমাদের সঠিক নিয়মে যিকর করার তৌফিক দান করেন। আমীন.......
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×