প্রথম যখন কনসেপ করে একজন মা, তার অনুভুতি কোন পুরুষ মানুষ বুঝবে না। খাবার কষ্ট, চলার কষ্ট, ঘুমানোর কষ্ট এ যেন এক নিদারুন বেদনার পথচলা। দশমাস দশদিন পর যখন সময় হয় ডেলিভারীর মায়ের বুক তখন দুরু দুরু.... যদি কোন সমস্যা হয়; যদি আল্লাহ পৃথিবী থেকে তুলে নেয়; যদি সন্তান মৃত হয়; যদি সন্তান অসুস্থ হয়; এবনরমাল হয়!!! আরো অনেক কিছু................
এমন এক মা অনেক কষ্ট সহ্য করে জন্ম দিলেন এক পুত্র সন্তানের, প্রচন্ড প্রসাব বেদনা সইতে না পেরে বেহুশ হয়ে গেলেন জন্মদাত্রী মা। সন্তান জানেও না সে বেদনার কথা এমনকি বাবাও জানেনা। যখন জ্ঞান ফিরে এলো নার্সের কাছে তার সন্তানকে চাইলো দেখার জন্য। মনে এক অজানা আনন্দ, নতুন একটা মুখ সে দেখবে, যে মুখটা এতো দিন ছিল তার গর্ভের ভিতর। নার্স সন্তানকে মা'য়ের কোলে তুলে দিলেন। ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো মায়ের সারা শরীর ঝামটা খেল কারন ছেলের দুটো কানই নাই!! হাউ মাউ করে মা কেঁদে দিল ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। অবুঝ শিশু কিছুই বুঝতে পারল না কেন তার মা কাঁদছে।
কান নাই তাতে কি; মায়ের চোখে সে আরো অন্যরকম আদরের। হতভাগা সন্তানকে দেখলে তার আদর আরো বেড়ে যায়, নীরবে চোখের জল ফেলে। দিন দিন বড় হতে থাকে আদরের সোনামনি। একদিন মায়ের হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে স্কুলে যায়। সবাই তাকায় অবাক চোখে, মা বুঝতে পারে কেন ওরা ওকে ওভাবে দেখছে। কয়েকদিন যেতে না যেতেই সহপাঠিরা কান বিহীন দানব বলে ডাকতে শুরু করে। ও বাসায় এসে মায়ের কাছে বিচার দেয়। মা নিরবে ছোখের জল ফেলে। কিছুদিন পরে সহপাঠিরা ওকে গুই সাপ বলে ডাবে। ঘরে ফিরে মায়ের কাছে হাউ মাউ করে কাঁদে। ছেলের কন্না দেখে মা সহ্য করতে পারে না। স্বামীকে নিয়ে বড় ডাক্তারের কাছে যায়, ডাক্তার অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানায় তাকে কেউ কান দান করলে লাগানো সম্ভব। শুনে মায়ের মন আনন্দে নেচে ওঠে। সীমাহীন আনন্দ যা বলে বোঝানে যাবে না। ছেলে আনন্দে মাকে জড়িয়ে ধরে। সংগে সংগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় দুটো কান চেয়ে।
এক সপ্তাহ অপেক্ষা করেও কোন ডোনার পাওয়া যায় না। আবার বিজ্ঞাপন দেয় বাবা, কিন্তু কোন রেসপন্স পায় না। সকল আনন্দ যেন ধুলোয় মিশে যায়। ছেলে প্রশ্ন করে "মা কবে আমার কান ঠিক হবে?" হবে বাবা, খুব তাড়াতাড়ি হবে।
অনেকদিন অপেক্ষা করেও কোন ডোনার পাওয়া যায়না। অবশেষে শর্ত সাপেক্ষে একজন ডোনার পাওয়া যায়। প্রথম শর্ত কানের বিনিময়ে তিনি কোন টাকা নিবেন না এবং দ্বিতীয় শর্ত তার এই কান দানের কথা ছেলেটাকে বলা যাবে না। যথারীতি শর্ত মেনে ছেলের কান রিপ্লেস করানো হয়। সুস্থ হয়ে ছেলে তার নিজের কান আয়নায় দেখে বেজায় খুশী, সেই সাথে খুশী তার বাবা-মা। এতো খুশি তারা যেন কোন দিন হয়নি। অনেকদিন পরে ছেলে জানতে চায় তার বাবার কাছে কে সেই মহৎ ব্যক্তি যিনি তাকে কান দিয়েছে; বাবা বলতে নারাজ। সে মা-কেও প্রশ্ন করে, মাও কথা ঘুরিয়ে অন্যদিকে চলে যায়। ছেলে আর জোরাজুরি করে না। দেখতে দেখতে ছেলে বেশ বড় হয়ে যায় অর্থাৎ বুঝমান শক্তি আগের থেকে অনেক বেড়ে যায় এবং বায়না ধরে বাবার কাছে সেই মহৎ ব্যক্তির চেহারা সে দেখবেই তা-না হলে ভাতই খাবে না। বাবা হার মানে ছেলের কাছে...
ছেলের হাত ধরে বেডরুমে মায়ের কাছে যায়। মায়ের মাথার ঘন চুল সরিয়ে দেয়। ছেলে মাকে বেড়িয়ে ঘরে হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে। মা তুমি এত্তো মহৎ.............এতো দিনেও আমি ঠিক পেলাম না!!! এজন্য তোমাকে কখনো চুলে খোপা করতে দেখি না!! মা ছেলের চোখে জল মুছতে মুছতে বলে বাবা তোর হাসির জন্য আমি আমার দুই নয়নও দিতে পারিরে;;;;;; আমি যে তো মা.................
আপনার মাকে কেউ কষ্ট দিয়েন না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




