ঠিক দুপুরে বাইরে সজোরে চেচামেচির শব্দ শুনে দৌড়ে তিন তলার বারান্দায় চলে এলাম। দক্ষিণ বনশ্রীর কে-ব্লকের রাস্তায় অনেক লোকের সমগম, চিৎকার চেচামেচি কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি হয়েছে। নীচে নেমে দারোয়ানকে জিজ্ঞেসা করলাম; কি হয়েছে? দারোয়ান বলল, একটা মহিলা ব্রাক স্কুলের একটা বাচ্চাকে বালুর মাঠে ধরে নিয়ে গলা কটতেছিল এবং জনগণ দেখে ফেলায় দৌড়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে। এখন গণ ধোলাই চলছে; শুনে আতংকিত হয়ে গেলাম। বলেন কি? দিনে দুপুরে বাচ্চাকে জবাই!!
শুধু তাই না; মহিলা একটা গাড়িতে করে এসেছে তার মধ্যে আরো তিনটা বাচ্চার মাথা পাওয়া গেছে! ব্যাগের মধ্যে থেকে রক্ত ঝরতেছে। দারোয়ান গড় গড় করে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল। শুনেই আমার জামাইকে ফোন দিলাম, ও-তো শুনে আক্কেল গুড়ুম!
একটু পরে দেখলাম পুলিশ এবং জনগণের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। বাসার পাশেই আল বেরুনী হাসপাতাল, পুলিশ নাকি মহিলাকে গণ ধোলাই থেকে বঁচানোর জন্য হাসপাতালে ঢুকেছে। জনগণ ইট পাটকেল মেরে হাসপাতালের গ্লাস সব ভেঙ্গে দিয়েছে। একটু পরে সাদা পোষাক পরিহিত পুলিশ এল একটা গাড়ি নিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করতে। জনগণ এতই ক্ষিপ্ত যে ডিবির গাড়িও ভাংচুর করতে দ্বিধা করে নাই। কিছুক্ষন পরে আরটিভি, এনটিভি সহ আরো সাংবাদিক দেখা গেল, সেখানেও তাদের ক্যামেরা কাড়াকাড়ি সহ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার দৃশ্য বারান্দারয় দাড়িয়ে প্রত্যক্ষ করছিলাম। কদিন আগেও ছেলে ধরা এখান থেকে কয়েকটা বাচ্চা ধরে নিয়ে গেছে। তাই জনগণ এতোই তেতে ছিল যে মহিলাকে জিবীত উদ্ধার করা একেবারেই সম্ভব ছিল না। কপাল ভালো যে মহিলা পুলিশের হাতে পড়েছে তা-না হলে নির্ঘাত লাশ হয়ে যেত।
একটু আগে সাবের হোসেনকে দেখলাম আল বেরুনী হাসপাতে আহত পুলিশকে দেখতে এসেছেন। আসল ঘটনা জানার জন্য বেশ কয়েকবার নীচে গেলাম কিন্তু কেউই প্রকৃত তথ্য দিতে পারল না। সবার মুখে একই কথা; কোথাকার কোন ব্রীজের কাজ সম্পন্ন করতে নাকি এক হাজার বাচ্চার মাথা বলি দিতে হবে তাই মহিলারা নাকি বচ্চাদের মাথা কেটে বিক্রি করছে। এসব কথা শুনে বেশ অবাক হচ্ছিলাম। অবশেষে টিভি সংবাদে প্রকৃত সংবাদ জানতে পারলাম।
মহিলা তার বাচ্চাকে স্কুল থেকে ফেরার পথে মারতেছিলেন এবং বাচ্চাটা কাঁদছিল। হঠাৎ একলোক ছেলে ধরা বলে চিৎকার দিলে জনগণ মহিলাকে ধাওয়া করে কিন্তু উত্তপ্ত জনতাকে ছুটে আসতে দেখে মহিলা প্রাণ ভয়ে একটা লেগুনাতে উঠে পড়ে। কিন্তু জনগন উক্ত লেগুনাকে ভেঙ্গে চুরমার করে মহিলকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে বেধড়ক পিটায়। অবশেষে পুলিশ এলে মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় কিন্তু জনগণ আরো উত্তপ্ত হয়ে পুলিশ সহ পেটানো শুরু করে। কারন জনগণের ধারনা পুলিশ এসকল গ্যাংয়ের সাথে জড়িত। পুলিশ অবস্থা বেগতিক দেখে থানায় খবার দেয়, সাদা পোশাকে অন্য একট টিম এসে মহিলাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে বচ্চাটাকে জিজ্ঞেসা করে পুলিশ জানতে পারে মহিলাটি আসলেই বাচ্চটার মা। ঘটনাটি সত্যই মর্মান্তিক, পথেঘাটে আমাদের বাচ্চাদের শাসন না করাই ভাল। আল্লাহর অশেষ রহমতে মহিলাটি আজ প্রাণে বেচেঁ গেছে।
তবে পুলিশের সাথে হামলা পল্টা হামলায় এক ব্যক্তির মাথায় গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। একবার ভাবুনতো কি ভয়াবহ!!
এমন পরিস্থিতিতে কেউ যেন আর না পড়ে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




