somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

# উল্টো-স্রোতের কুল-ঠিকানা: সর্বগ্রাসী অপ-‘বাদ’ বনাম একজন আরজ আলী ... [০৪]

১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্নের হুমকী

প্রশ্ন কি হুমকী হয় কখনো? হয়; প্রশ্ন হুমকী হয় মিথ্যার কাছে। কেন? মিথ্যার কোন সত্যনিষ্ট ভিত্তি থাকে না। প্রশ্নের শক্তির কাছে মিথ্যার ফানুস টিকতে পারে না, চুপসে যায়। বাইরের চকমকি চেহারার ভেতরে ভিত্তিহীন অবলম্বনগুলো মুহুর্মূহু প্রশ্নের ধাক্কায় ভেঙে গেলে মিথ্যার সৌধটা হুড়মুড় করে ধ্বসে পড়ে। তাই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত কোন তত্ত্ব বা মতবাদ সমূহ প্রশ্নকেই বেশি ভয় পায়। তার অস্তিত্বের উপর হুমকী বলে প্রশ্নকারীকেই সে সবচেয়ে বড় শত্র“ মনে করে। এসব মিথ্যা-বাদের অনুসারীরা তক্কে তক্কে থাকে প্রশ্নকারীর মুখটাকে রুদ্ধ করে দিতে। তার প্রমাণ সেই সক্রেটিস থেকে শুরু করে লিওনার্দো ব্রুনো, গ্যালিলিও হয়ে আমাদের আরজ আলী মাতুব্বর এবং হালের হুমায়ুন আজাদ। তাঁদের অপরাধ তাঁরা চলমান ও প্রতিষ্ঠিত মিথ্যা মতবাদকে প্রশ্নের মুখোমুখি করে মিথ্যা অস্তিত্বে নাড়া দিয়েছেন।

এই যে প্রশ্নকে এতো ভয় তাদের, প্রশ্নের শক্তিটা কী? প্রশ্নের শক্তি হচ্ছে উত্থিত যুক্তি। এটা সেই যুক্তি, যে কোন সীমানা মানে না। সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে আরোহ ও অবরোহ পদ্ধতির এসিড টেষ্টে গলিয়ে গলিয়ে কার্যের পেছনে কারণ এবং তারও পেছনের সূচনা-বিন্দুকে খুঁজে বের করতে সদা উদ্যত সে পিছপা হয় না। কেবল যুক্তিই তো পারে সব ছিঁড়ে ফেড়ে জগতের সবচেয়ে নির্মম ও মৌলিক প্রশ্ন-দুটো নির্দ্বিধায় ছুঁড়ে দিতে- কী, এবং কেন?

মানবগোষ্ঠীর সূচনালগ্ন থেকেই প্রাথমিক বিস্ময় নিয়ে সৃষ্টির উৎস খোঁজায় উদ্যোগি হয়েছেন আমাদের বুদ্ধিমান পূর্বসূরিরা, যাঁদেরকে আজ আমরা জ্ঞানী ও দার্শনিক হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি। জ্ঞানে বিজ্ঞানে অগ্রগামী এসব গুণী দার্শনিক বিজ্ঞানীদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানই মানব সভ্যতাকে সেই আদি থেকে পর্যায়ক্রমে এগিয়ে নিতে ব্রতী হয়েছে। তাই গতকাল পর্যন্ত যে জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন এসে মানুষের সমকালীন অভিজ্ঞতায় যুক্ত হলো, এই সর্বশেষ অর্জনও পরবর্তি অন্বেষায় হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক সূত্র। এভাবে যে কোন যুগে বা কালে সমকালীন জ্ঞানস্তরই সে সময়ের চিন্তারাজ্যে কোন তত্ত্ব বা মতবাদ প্রচার ও বিশ্লেষণের যৌক্তিক মানদণ্ড হিসেবে গৃহিত হয়েছে।

তাই বিভিন্ন সময়ে জন্ম নেয়া ধর্মতত্ত্বগুলো সে সময়কালের বাস্তবতা ও কল্পনাকেই ধারণ করেছে শুধু। যেহেতু বিজ্ঞানের পথ সর্বদাই চলমান, যৌক্তিক ও পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়, তাই বিজ্ঞান সাধারণত কোন পরম সত্যে বিশ্বাসী নয়। বস্তুর ভেতরের কার্যকারণ সম্পর্কের প্রাথমিক ব্যাখ্যাকে বিজ্ঞান প্রথমে হাইপোথিসিস হিসেবেই প্রচার করে। পরবর্তি পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের প্রেক্ষিতে সেটা যাচাই বাছাই হতে হতে এক পর্যায়ে তা বৈজ্ঞানিক সত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ধর্মতত্ত্বে পরীক্ষা নিরীক্ষার কোন বালাই নেই। এটা কেবলই এক যুক্তিহীন বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। ধর্মগ্রন্থগুলোর কাহিনী বর্ণনায় এর জন্ম বা বর্ণনাকালীন সময়ে বিজ্ঞাননির্ভর সত্যের যেটুকু দেখা পাওয়া যায়, সময়ের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞানধর্ম অনুযায়ী পরবর্তিতে তাও হয়তো মিথ্যা হয়ে গেছে নতুবা নতুন সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু অনড় ধর্ম যেহেতু যুক্তিহীন কিছু বিশ্বাস মাত্র, তাই পরবর্তি বাস্তবতায় এসে ধর্মীয় সত্যগুলো কিছু গাজাখোরি কাহিনীর মতো বিকলাঙ্গ হয়ে গেলেও ধর্মধ্বজাধারীরা সেটাকেই ধ্রুব সত্য জ্ঞানে কতকগুলো অন্ধসংস্কারকে জীবনধারায় মিশিয়ে ‘ইহাই পরম সত্য’ বলে নিজের সাথে সাথে অন্যকেও প্রতারিত করে যাচ্ছেন। ফলে পরবর্তিকালে এসে ধর্মীয় সত্য আর বৈজ্ঞানিক সত্যের মধ্যে বিপরীতমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে। আরো স্পষ্ট করে বলা যায় ধর্ম এখন সত্যের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে নিশ্চিতভাবে। এ প্রসঙ্গে ধর্মীয় সত্য বনাম বৈজ্ঞানিক সত্যের প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন ও নমূনা পাশাপাশি রেখে নিজস্ব কাণ্ডজ্ঞানটুকু খরচ করে যাচাই করলেই আমাদের কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যায়। আর এ কাজটাই বিস্ময়করভাবে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় করে দেখিয়েছেন একান্তই মাটিলগ্ন সাধাসিধে এক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি আরজ আলী মাতুব্বর। আমাদের শহুরে-শিক্ষিত ভাষায় তিনি নিতান্তই একজন ব্রাত্যজন। কিন্ত জানার অদম্য কৌতূহলে শিক্ষা দীক্ষা জীবন যাপনে জাগতিক সমস্ত প্রতিকূলতায় আষ্ঠেপৃষ্টে জড়িয়ে থেকেও অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র স্বীয় পরিচর্যায় কীভাবে জ্ঞানচেতনায় দার্শনিক বিভার উদ্ভাস ঘটাতে হয়, তা-ই দেখিয়েছেন আমাদের আরজ আলী মাতুব্বর। চোখ থাকলেই কি চক্ষুষ্মান হয়? প্রাতিষ্ঠানিকতার বড় বড় সার্টিফিকেটধারী তথাকথিত শিক্ষিত জন্মান্ধদের অবিমৃষ্য মূর্খতাকে দূর করার উপায় দেখানো জন্যে তিনি ‘সত্যের সন্ধান’ ও ‘সৃষ্টি রহস্য’ নামের যে দু’টো জাজ্জ্বল্যমান চোখ দান করে গেছেন, তুলনা বিচার হঠকারি হলেও, আমাদের মনে পড়ে যায় সেই সক্রেটিসের কথাই। তাই বুঝি এই আরজ আলী মাতুব্বরকে উদ্দেশ্য করে আরেক পণ্ডিতজন শ্রদ্ধেয় সরদার ফজলুল করিমের আবেগ-সঞ্জাত উক্তি- ‘আমাদের সক্রেটিস’ একটুও বাহুল্য মনে হয় না।


চলবে.....
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:২৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×