বাঙালি মুসলিমদের আনন্দোৎসব হিসেবে ঈদুল ফিতরনিয়ে আবুল মনসুর আহমদ সেই ১৯৬৬ সালে তাঁর ‘বাংলাদেশের কালচার’ বইতে নতুন বয়ান পেশ করেন। তাঁর বক্তব্য এই উত্তর আধুনিকতাবাদী সমাজেও কতটা প্রাসংগিকতা সহজেই অনুমেয়। তিনি লিখেছিলেননধর্মোৎসবের ধর্মটুকু উৎসবের উল্লাস-ধবনিরনিচে চাপা পড়ার নজির দুনিয়াতে মাত্র একটি। আর সেটি হল আমাদের ঈদ।
আর হাল আমলে ঈদের আগে আমরা‘শপিং’ করি, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই। ঈদের দিনেমাঠে গিয়ে দুই রাকাত নামায পড়ি, খোতবা শুনি। কিছু বুঝি, বেশির ভাগ বুঝিনা। খোতবা শেষেআশ-পাশে চেনা-অচেনা কয়েকজনের সাথে কোলাকুলি করি। বাড়িতে এসে খাওয়া-দাওয়া, টিভি দেখা,কম্পিঊটারে বসা, মোবাইল টেপা, ব্যস শেষ। মনআর মস্তিষ্কের আনন্দ দেবার মতো কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমাদের ঈদে নেই। আমাদের আনন্দখাওয়া- দাওয়া আর ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অন্যান্য জাতি থেকে আমাদের পার্থক্যএখানে।
মানুষের মনে অন্তরে ও আত্মায়এমন কোন ঘটনা ঘটে না যা তাঁর দেহে স্পন্দিত হয়না। এ অবস্থায় মানুষের ভার্চুয়াল জগতের মাধ্যমে ‘বিকৃত’ ও ‘আত্ম-কেন্দ্রিক’ আনন্দনেয়া অথবা আনন্দের ক্ষুধাকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে পেটের ক্ষুধা ও যৌন ক্ষুধা দমিয়ে রাখারমতোই প্রকৃতি বিরুদ্ধ। ইসলাম ধর্ম তাই আনন্দ-উল্লাস নিষিদ্ধ করেনি। আল্লাহর দেয়া সমস্তনেয়ামত ভোগ করা তার-ই নির্দেশ।
ঈদ উৎসবের এমনহয়ার অবশ্য কিছু ঐতিহাসিক এবং নৃ-তাত্ত্বিক কারণও আছে। সাময়িক বিপদে যেখানে মানুষউৎসব-আনন্দ বাতিল করে, সেখানে উপনিবেশবাদের সাথে এদেশের মুসলিমদের দীর্ঘ সংগ্রামতাদের কোন অবস্থায় ফেলেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিপদের দিনে মানুষ বেশীধার্মিক হয়, ঠিক এসময়ে আনন্দ-উৎসবের স্থান ইবাদাত-মুনাজাত দখল করে। এই কৃচ্ছ সাধনাশতাব্দী কালের বেশি স্থায়ী হওয়ায় মুসলমানদের সামাজিক জীবন থেকে সকল প্রকারআনন্দ-উৎসব ইবাদাতের উৎসবে পরিণত হয়। তাই বলে ইবাদাতকে বাদ দেয়ার প্রশ্ন উঠছেনা।কেননা ইতিহাস সাক্ষী, অনেক ধর্মীয় আনন্দোৎসব বীভৎস অনাচারের ভৈরবী চক্রেরূপান্তরিত হয়েছে, তীর্থস্থান ব্যভিচারেরআড্ডায় পরিণত হয়েছে। প্রতিষেধনের সাবধানতা অবলম্বন করা হয়নি বলেই এসব ঘটেছে।সেজন্য ইসলাম ঈদ উৎসবের সাথে দুই রাকাত নামাজ জুড়ে দিয়ে মুসলিমদের স্মরণ করিয়েদিয়েছে, উল্লাসের আতিশয্যে তারা যেন খোদাকে ভুলে না যায়।
এতদসত্তেওঈদের মূল মর্মকথা আনন্দ-উৎসব, রোজা-নামাযের মত ইবাদাত নয়। কিন্তুসুস্থ-স্বাভাবিকরূপে নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে না পেরে আনন্দ-পাগল জনসাধারণভার্চুয়াল জগতে একাকী আনন্দ খুঁজে, কখনো খুঁজে পাপের পথে- আর বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়মুসলিম কৃষ্টিকে। বিকলাংগ, ভিক্ষুক ছেলে-বুড়ো-নারী-পুরুষ ঈদের মাঠে-রাস্তাঘাটে ভিড়ও আর্তনাদ করে আমাদের আর্থিক সামাজিক-ব্যবস্থা আর কৃষ্টিক দারিদ্র্যকে ধিক্কারদেয়। যে সমাজে আনন্দের ব্যবস্থা নেই সেই সমাজে পাপ ও অপরাধ বেশি।
আনন্দোৎসবকেমনে উদযাপন করব? কি কি করবো? হুম এটাই মোদ্দা কথা। ঈদ রি-ইউনিয়ন, ঈদ-মেলা,ঈদ-মিছিল, পারিবারিক-প্রতিবেশিক ভোজ আর স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অধিকবিস্তারের মাধ্যমে এর একটা সমাধান খুঁজে পাওয়া যেতে পারে হয়তো!
পুনশ্চঃ ঈদমুবারাক।।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


