somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"মরিচিকা" (টুকরো গল্প)

০৫ ই মার্চ, ২০১৪ ভোর ৪:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজকে কি বার? আজকাল বার, টারের কথা ঠিক মত মনে রাখতে পারিনা। কি যে হচ্ছে দিন দিন? জানিনা। ফ্যামেলির এতো চাপ! নিতেও আর পারছিনা। খুব শীঘ্রই একটা কাজ ম্যানেজ করতে হবে নইলে যে মুক্ত বিহঙ্গে নিঃশ্বাস নেওয়ার মত অবস্থাটাও আমার থাকবেনা।
সময় কারো জন্য থেমে থাকেনা। ঠিকই তাঁর নিজের নিয়মে চলতে থাকে। একসময় কত টাকায় না ইনকাম করেছি!! আহ! আজ তাঁর একটু কানাকড়ি পর্যন্ত আমার কাছে নেই। বাবা-মা কত বলেছে কিছু গুছিয়ে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে!
কে শোনে কার কথা? আমার মত আমি ঠিকই উড়িয়ে বেড়িয়েছি। কারো কথায় তখন গায়ে লাগাইনি। ভেবেছিলাম আস্তে আস্তে ঠিকই গুছিয়ে নেবো। কিন্ত তা আর হলো কোই? তাঁর আগেই তো...থাক এসব ভেবেই বা এখন কি লাভ? যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে। যা যাওয়ার তাতো চলেই গেছে।

এই বৌদি! একটা চা দাও তো? একটা গোল্ডলিফ দিয়ো।
তোর কাছে আগে কত টাকা পাই মনে আছে?
হুম... ৫৪০ টাকা! আমার হিসেব আছে তুমি দাও।

বেনসন খাইনা প্রায় ১ বছর হয়ে গেলো! একসময় বেন্সন ছাড়া তো কিছুই খেতাম না। সব নবাবী চাল এখন বন্ধ হয়ে গেছে। গোল্ডলিফ টায় দুদিন পর কপালে জুটবেনা আর আমি কি সুন্দর বেন্সনের কথা চিন্তা করছি! বাবার পেনশনের টাকা প্রায় শেষ! তাঁর নিজের চিকিৎসার পেছনেই সব টাকা শেষ হয়ে গেলো। ২ বছর ধরে এখনো বিছানায় পড়ে আছে। কবে যে সুস্থ হবে!? পেনশনের সব টাকা শেষ হয়ে গেলে তখন?
তখন তো আমাকেই হাল ধরতে হবে!!
চাকরীর জন্য এপ্লাই তো আর কম করলাম না!
আহ! কেমন যেনো জীবনটা খাপ ছাড়া , খাপ ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
এই নে চা!
সিগারেট?
নে ধর।

দোকানদার মহিলা যদি তুই তামারি করে, কেমন লাগে?
বেশী প্রশ্রয় দিলে যা হয়!
আর তুই তামারি করবেই না বা কেন? নিয়মিত এতো বাকী খেলে যে কেউই আতিষ্ট হয়ে যাবে।

রাস্তা কেটে রাখার আর সময় পাইনি! সব ধুলো ময়লা গুলো এখন আমার পেটে! গালের মধ্যে কিচকিচ করছে। চায়ের মধ্যেও মনে হয় এক মন বালি জমে আছে! সরকারী কাজ কর্মের কোন ঠিক ঠিকানা নাই! একটা প্রধান সড়ক! যেখানে ব্যাস্ততার কোন শেষ নেই, দিন রাত বিজি একটা সড়ক গত এক সপ্তাহ আগে কেটে রেখেছে! এখন কবে খুয়া ফেলবে? কবে বালি ফেলবে, পিচ দিবে কোন শিওরিটি নাই। বেখাপ্পা অবস্থা।
ট্র্যাক্টারের ভেতরে লোকটা আরামছে ঘুমাচ্ছে। দুনিয়ার কোন টেনশন তাঁর মাথায় নাই বললেই চলে। সিগারেট টানবো কি? গাড়ির উড়িয়ে দেওয়া ধুলো বালিতেই তো পেট ভরে যাচ্ছে। আমার আবার এগুলো সহ্য হয়না। অ্যালার্জির সমস্যা। তবুও কিছু করার নেই। আশ পাশে বসার মত কোন প্লেস অবশ্য দেখতে পাচ্ছিনা যে সেখানে যেয়ে বসবো।

হাই সৌরভ! কি করো? একা একা চা খাইতেছো দোস্ত? আমারে চা খাওয়াবা না? জলদি একখান চায়ের অর্ডার দাও। তোমার লগে বসে বসে আমি একটু চা, সিগ্রেট খায়!

পাগলা ফ্রেন্ড তারেকের আগমন!

হুম, দোস্ত কি বলো খাওয়াবো না কেন? বসো।
এই বৌদি! আরেকটা চা আর সিগারেট দাও তো!

তা দোস্ত! কিতা খবর তোমার? আজকাল দেখিইনা যে! কোই থাকো তুমি?

এইতো বন্ধু আসিই তো। তুমি হইতো দেখোনা।
দেখুম ক্যাম্নে? আমার কি সারাদিন ঘুইরা বেড়নের মত টাইম আচ্ছে? আমি তো সারাদিন ডিউটি করি তুমি জানোনা।
ও আচ্ছা! বুঝেছি দোস্ত। তুমি তো অনেক ব্যাস্ত থাকো, এজন্য বোধহয় তোমার সাথে একটু কম দেখা হয়। এই যে চা এসে গেছে আগে চা খেয়ে নাও।
এক মিনিট একটা ফোন আসছে,
হ্যালো!
হ্যালো, সৌরভ! কোথায় তুমি? দুই ঘণ্টা আগে তোমাকে লাস্ট ফোন দিয়েছি। আরো এক ঘণ্টা আগে তোমার পৌঁছানোর কথা। এখনো তুমি পৌঁছাও নি! বললাম, খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। কোথায় দ্রুত দ্রুত চলে আসবে! তা না, তুমি এখনো আসোইনি! তুমি কি লাইফে কখনো সিরিয়াস হবেনা??
আমি অপেক্ষা করছি। দ্রুত আসো।।

কোন সাড়া শব্দ ছাড়াই ফোন টা রেখে দিলো সৌরভ।
মনে মনে ভাবছে,
কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে সপ্না?
ভালভাবেই জানা আছে কি বলবে। সেই পুরনো ক্যান, ক্যান!
বাবা-মা ছেলে দেখছে বিয়ে দিয়ে দেবে। তুমি কবে বিয়ে করবে? এবারই কিন্ত শেষ দেখা আমাদের। দ্রুত একটা ব্যাবস্থা না নিলে আর হয়তো আমাকে পাবেনা! এই বলেই চলে যাবে।

দোস্ত তুই থাক, আমি যাচ্ছি।

কোথায় যাস?

একটা কাজ আছে। পরে দেখা হবে। চা, সিগারাটের বিল আমি দিয়ে দিবো। আচ্ছা গেলাম।

পুরনো সেই "ছাতি পার্কে" দীঘির পানে মুখ ফিরিয়ে ছুই ছুই পানিতে পা রেখে সূর্যের আলোয় ঝিলমিল করা জলের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে সপ্না।

কিছুক্ষনের মধ্যেই সৌরভ এসে পৌছালো।
সপ্নার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুচকে দীঘির জলের দিকে চেয়ে আছে।

সৌরভের উপস্থিতি এতক্ষনে টের পেয়েছে সপ্না। বাতাসে উড়তে থাকা চুল গুলো এক হাত দিয়ে সরাতে সরাতে সপ্না পিছের দিকে তাকালো।
কি? এখন আসার সময় হলো?
এতো দেরী!!
যাও আজ তোমার উপর রাগ করবোনা! আজ মনটা ভালো।

কেন? এতো ভালো হয়ে গেলে কবে থেকে? বিশ্বাস হচ্ছেনা! তুমি ঝগড়া করবেনা, তুমি?
হ্যাঁ, আমি। আর ঝগড়া করবোনা তোমার সাথে আমি। কারন আজকের পর থেকে তোমার সাথে তো আর কখনো দেখা হবেনা! তাই ভাব্লাম শেষ দেখা হওয়ার দিনটা একটু হাঁসি খুশিতেই কাটিয়ে দেই। এ মাসেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আমার!!

বরাবরের মত এক টুকরো হাঁসি দিয়ে,
হুম, ভালো।
ছেলে কি করে?

আমেরিকা থাকে। এ সপ্তাহেই আসছে। ছেলের বাবা-মা দেখতে এসেছিলো। তাদের পছন্দ হয়েছে। এখন ছেলের যদি পছন্দ হয় তবে এ মাসেই বিয়ে হবে। বিয়ের পরপরই আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে!

সৌরভ চোখ থেকে চশমা টা এক হাত দিয়ে খুলল। মুখের মিচকি মিচকি লেগে থাকা হাঁসিটা মুহূর্তের মধ্যে মিইয়ে গেলো। যেভাবে দীঘির ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ গুলো সপ্নার পায়ের কাছে এসে মিলে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেরকম ভাবেই মুখে লেগে থাকা হাঁসিটাও হারিয়ে গেলো। চশমাটা শার্টের নিচের দিকটায় মুছতে মুছতে সপ্নার পাশে গিয়ে বসে পড়লো সৌরভ।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জলতরঙ্গের দিকে তাকিয়ে আছে। সাঝের শেষে দল বদ্ধ বকেরা নীড়ে ফিরছে। শেষ বিকেলের রক্তিম সূর্য ডুবু ডুবু প্রায়। একদল ছেলেরা কোনার দিকটায় বসে গল্প গুজব করছে। সেই পরিচিত ছাতি পার্কটা আজ কেমন রংচটা, মলিন হয়ে পড়ে আছে। স্বপ্ন ভঙ্গের চাপা চাপা মৃদু ব্যাথা বুকের বাম দিকটায় একটু আধটু অনুভব করছে।

হুম, তুমি দেখতে তো আর কম সুন্দর না! এতো সুন্দর চেহারার একটা মেয়েকে দেখলে আবার পছন্দ হবেনা? ছেলেটার প্রথমবার দেখলেই পছন্দ হবে। আমি হলফ করে বলতে পারি।

সৌরভের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে আবার অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো সপ্না। মাথা নিচু করে দীঘির জলের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে বিন্দু বিন্দু হাঁসি লেগে আছে।
আমি চলে গেলে আমাকে মিস করবেনা?

যে যায়! একটু হলেও মায়া রেখে যায়! সেই মায়ার টানে হইতোবা কিছুদিন তোমার কথা মনে পড়বে।

মাত্র কিছুদিন? পরে তাহলে আর মনে পড়বেনা, তাই তো?

মানুষ মরে গেলে ১ সপ্তাহ বা এক মাস খুব মনে রাখে তাঁকে সবাই। ধীরে ধীরে এক সময় তাঁর অস্তিত্ব কেমন যেনো বিলীন হয়ে যায় সবার ভেতর থেকে।

আমি কি মরা মানুষ? কি সব আবোল তাবোল বকছো? যায় হোক আজ আর তর্কে যাবোনা। সন্ধ্যে হয়ে আসছে চলে যেতে হবে। আর হইতো কখনো দেখা হবেনা তোমার সাথে। ভেবেছিলাম তোমার হতে পারবো। তবে নিয়তি আমাদের সাথে ছিলোনা। মাঝে মাঝে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবো। ভালো থেকো। আর একটা কিছু করার চেষ্টা করো।
লাইফে একটু সিরিয়াস হও। আসি!

সপ্না চলে যাচ্ছে। বহুদুরে চলে যাচ্ছে। বড়লোক ছেলের হাত ধরে আমেরিকা চলে যাবে। ওকে তো বলা হলোনা একটা চাকরীর ইন্টারভিউ কার্ড এসেছে। মনে হয় এই চাকরীটা হয়ে যাবে! ওকে বলতে পারলাম না তুমিও ভালো থেকো.........
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। অন্ধকারের ঘনঘটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বেল বাজিয়ে লোকটা সাইকেল চালিয়ে চলে গেলো। টনক নড়েছে! বাবার ঔষধ নিয়ে যাওয়া লাগবে দ্রুত।
নিয়ন আলোয় সপ্নার অবস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা। ঘোলাটে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে বেঁচে থাকার রঙ্গিন সব স্বপ্নগুলি।।
একটু পরই আধার নামবে...শান্ত শহরটা অশান্ত হয়ে উঠবে!

ধীরে ধীরে মুছে যাবে সব কিছুই। শুধু থেকে যাবে কিছু অতৃপ্ত স্মৃতি।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×