somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ "বৃষ্টি"

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বৈশাখ চলে এলো প্রায় তবুও বৃষ্টির যে এখনো কোন দেখা নাই!
শহরের বিভিন্ন জায়গাতে বৃষ্টি হয়েছে তবু এই বাড়ির উঠনে এখনো পর্যন্ত বৃষ্টি নামেনি। সবখানেই নাকি শিলা বৃষ্টি হচ্ছে!
এখানেও একটু শিলা বৃষ্টি হতে পারতো। আপাতত শুধু বৃষ্টিটা হলেও বা কি ক্ষতি ছিল?
একটু বৃষ্টির অপেক্ষায় যেনো দিন ফুরিয়ে যায়।
খনিকের একটু ভালো লাগার অপেক্ষায় অবাক চাহিয়া রয় রুদ্র।
রৌদ্রের তিব্রতা কাটিয়ে আকাশে ঘন বর্ষণের মেঘ ভেসে উঠবে সেই অপেক্ষায় অপার দৃষ্টিতে দুরপানে চেয়ে রয় রুদ্র। সময় গড়িয়ে চলেছে,
রৌদ্রের তাপদাহ বাড়ছে তবুও রুদ্রের মন থেকে কেমন যেনো বলছে খুব শীঘ্রই আজ তুমুল আঁকারে বৃষ্টি শুরু হবে। বাড়ির পেছনের জামগাছ তলার সাথে মিশে থাকা দেয়ালটার ওপর প্রায় ২ ঘণ্টা যাবত বসে আছে রুদ্র। ওর মনটা
কখন ভালো হয় আর কখন খারাপ হয় ও নিজেও ঠিক মত বুঝতে পারেনা।
এখন ওর মনটা বেশ খারাপ এটা ওর চেহারার এক্সপ্রেশন দেখলেই বোঝা যায়।
অতীতের কিছু স্মৃতি আজ গভীর ভাবে ঘিরে আছে ওকে তাই অনেকটা আবেগে চোখের কোনে জ্বল টসটস করছে। কিশু স্মৃতি হাত বাড়িয়ে ডাকে। কিছু কথা মনের আড়ালে চাঁপা পড়ে যায়। একাকীত্বের জন্ত্রনা বিষণ্ণ মনকে কুড়ে কুড়ে খায়।
ভীষণ কষ্ট হয় যখন আপন কেউ সুখের দিনের সাথী হয়, অথচ দুঃখের দিনে সে জীবনের কোন অংশে থাকেনা! বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসছে, নাকি রুদ্রের শ্বাস কষ্ট বাড়ছে! বেশী কষ্টের কোন স্মৃতি মনে পড়লে রুদ্রের বুকের বাম পাশে চাঁপা ব্যাথা হয় আর তখনই শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এজন্য ডাক্তার "ইনহেলার" দিয়েছে সর্বদা কাছে রাখার জন্য। শ্বাস কষ্ট হলেই এটা খুব কাজে আসে। কিন্ত রুদ্র সহজে পাম্প ব্যাবহার করেনা! ওর কষ্ট সহ্য করাটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। চোখে ভাসছে পুরনো দিন গুলির স্মৃতি, বন্ধুদের স্মৃতি। বিশেষ করে "নীলা" নামের মেয়েটার স্মৃতি! কেন চলে গেলো ওভাবে?
কিছু প্রশ্ন মাথার মধ্যে চক্কর দেই রুদ্রের। প্রশ্নের জালে ইলুশনে ভুগতে শুরু করে। মাথা স্থির থাকেনা রুদ্রের। রাতে ঘুম হয়না কত বছর তাঁর কোন হিসেব নেই। মাথার মধ্যে সব সময় গরম হয়ে থাকে। মনে হয় আগুন বের হচ্ছে মাথা থেকে!
চারিধার কেমন নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। সুমনের দেখা করতে আসার কথা সেই অপেক্ষা, আবার বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা! বৃষ্টি নাম মনে পড়াতে কলেজের সেই "বৃষ্টি" মেয়েটার নাম মনে পড়ে গেলো রুদ্রোর। কতই না পাগলের মত পছন্দ করতো রুদ্রকে! শুধু নীলার কারনে মিষ্টি চেহারার বৃষ্টি নামের মেয়েটাকে দূরে ঠেলে দিতে হলো রুদ্রকে।
এখন বুঝতে পারছে জীবনে আসলেই ভুল পথে দৌড়িয়েছে রুদ্র। লাজ লজ্জা ভেঙ্গে লাইব্রেরির ভেতরে কমপক্ষে ২০ জন মানুষের সামনে প্রপোজ করেছিল বৃষ্টি নামের সেই মেয়েটা। সবাই কি না হাসাহাসি করেছিলো। আমি কিছু বলার আগেই নীলা ওকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
তখন শুধু বৃষ্টি না, কলেজের প্রায় সব ছেলে মেয়েই রুদ্র আর বৃষ্টির ভালোবাসার কথা জানতো।
সুমন এসে পড়েছে। গেট পেরিয়ে সামনে তাকিয়ে রুদ্রকে ওয়ালের পরে বসে থাকতে দেখে সামনে এগিয়ে গেলো।
কি ব্যাপার? এখানে বসে আছিস যে?
এতক্ষনে রুদ্রের চোখের জ্বল শুকিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গেছে। সুমনের দিকে তাকিয়ে ওকেও ওপরে উঠে বসার ইঙ্গিত দিলো রুদ্র।
সুমন দেয়ালের উপরে চেপে বসলো। আকাশে এতক্ষনে মেঘ জমতে শুরু করেছে। অলৌকিক ভাবে রুদ্রের মনের আশা পুরন হতে চলেছে আজ। অচিরেই মেঘ ফেটে বৃষ্টি নামবে! রুদ্র আজ বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টির জলের সাথে একাকার হয়ে যাবে। কিছু দুঃখ কষ্ট আজ এই বৃষ্টিতেই বিসর্জন দেবে।
অতীত ভুলে যাবার ব্যার্থ চেষ্টা আজো চালাবে রুদ্র। বৃষ্টির ফোঁটা টিপটাপ পড়তে শুরু করেছে। সুমন উঁচু থেকে নেমে বৃষ্টি থেকে বাঁচার আশ্রয় স্থান খুজছে। পা ঝুলিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে বৃষ্টিকে স্বাগত জানাচ্ছে রুদ্র। আজকের দিনটা একটু অন্য রকম দিন।
আজকের এই বৃষ্টিটা একটু অন্যরকম! , আজ "বৃষ্টি" নামের সেই মেয়েটার মৃত্যুর দিন!
আজকে যে বৃষ্টিটা বড়ই দরকার ছিল। সেদিন হাঁসি হাঁসি মুখে রুদ্র, নীলা লাইব্রেরি থেকে বেরিয়েই হতভম্ব হয়ে যায়। পাঁচতলা থেকে নীচতলা ঘিরে মানুষের ভিড়। কলেজের ঠিক মাঝখান টায় পড়ে আছে বৃষ্টি নামের মেয়েটার মরা দেহ! যেনো দেহ ছিড়ে আত্মা বেরিয়ে গেছে। মুক্ত হয়ে গেছে জীবন থেকে। চিরমুক্ত করে দিয়ে গেছে রুদ্রকে। আজো এই দিনটায় আকস্মিক ভাবে বৃষ্টি চলে আসে। বৃষ্টিতে" বৃষ্টির স্মৃতি যেনো আরো গভীর হয়ে উঠে রুদ্রর মনে!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:১৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

উৎসব মণ্ডল বেঁচে আছেন: সে সেনা তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন। (সাময়িক)

লিখেছেন মিথমেকার, ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৩৩



খুলনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে উন্মত্ত জনতার হা’মলায় আহত উৎসব মন্ডল সামরিক হাঁসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
উৎসব মন্ডল এর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বেশ ভালো। চিকিৎসকরা খুব আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসা দিচ্ছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গল্পের শেষ নাই.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪

যে গল্পের শেষ নাই.....

পাসের সীটের যাত্রী সাথে আলাপচারিতায়- নাম জানার পর, জিজ্ঞেস করলাম- "বাড়ি কোথায়?"
ছেলেটি বলল- 'ঝালকাঠী, কীর্ত্তিপাশা গ্রাম।' কীর্ত্তিপাশা শুনেই বুকের ভিতরে উথাল পাথাল ঢেউ- এক কিশোরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাই গণহত্যায় শেখ হাসিনার বিচার সরাসরি সম্প্রচার করা হবে!

লিখেছেন মিথমেকার, ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯





"জুলাই গণহত্যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার সরাসরি সম্প্রচার করবে সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শিগগিরই এই বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) উচ্চ পর্যায়ের এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কয়েন প্লান্ট বা পয়সা পাতা (বৃক্ষ পরিচিতি)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

০১। কয়েন প্লান্ট ( Hydrocotyle vulgaris)



কয়েন প্লান্ট বা পয়সা পাতা গাছ। দেখতে আগের দশ পয়সার মত এর পাতা। গাছগুলো খুব ঝুপালো হয়। পাতা গাঢ় সবুজ রংয়ের। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট হচ্ছে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫



আজ রাতে, ট্রাম্প ও কমলার মাঝে ডিবেইট!

দেশের সর্বোচ্চ পদের চাকুরীটার জন্য ৩য় বিশ্বে ডিবেইট হয় না; ফলে, বাংলাদেশের মানুষ কঠিন রাজনৈতিক ডিবেইট দেখার সুযোগ কখনো পাননি। আজকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×