somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লটারী

৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লটারীর টিকিট কিনে যে বড়লোক হওয়া যায়? এটা প্রথম বুঝেছিলাম ছোট বেলাতে
"বাংলা ছায়াছবি" দেখার মাধ্যমে।

কয়েকটা ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভাগ্য পরিবর্তন হতে দেখা যায়,
জসিম, আলমগীর, রাজ্জাক আরো কিছু নায়ক কে। এরা প্রথমতো গরীব থাকে।
লটারী লাগার কারণে রাতারাতি ভাগ্যের চাকা "একশত ত্রিশ " ডিগ্রীতে ঘুরে যায়!
এসব দেখার পর হঠাৎ করে আমারও বড়লোক হবার স্বাদ জাগলো।
বয়স তখন বারো তেরো।
ওইটা কোন ফ্যাক্ট না। বড়লোক হইতে হবে এটাই লক্ষ্য। কি করার? বুঝিও না কিছুই। কোথায় লটারীর টিকিট বেচেঁ তাও জানি না।
তখন মাথায় এলো প্রতিবেশী "জালাল" চাচার কথা। উনি একজন রিকশা চালক ছিলেন। প্রতি মাসেই 20/25 টা লটারীর টিকিট কিনতেন।
কিন্তু কখনোই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরলো না। পেপারে নাম্বার মিলাতেন আর মাঝে মধ্যে চিৎকার দিয়ে উঠতেন,

"ইয়া খোদা! একটুর জন্য মিললো না!

আমি প্যান্টের গিট্টুতে আব্বুর পকেট থেকে চুরি করা "একশো " টাকার নোট গুজে নিয়ে জালাল চাচার কাছে চলে গেলাম। ওনাকে টাকা দিয়ে বললাম,
-লটারী আইনা দেন।
উনি সকাল বেলা মেছওয়াক দিয়া দাত খিলাইতে ছিলেন। মুখ ভরা ছ্যাপ্ মাটিতে ফেইলা বললেন,
-বিকালে আহো।

বিকালের দিকে গিয়ে দেখলাম সে দশ' টা লটারীর টিকিট নিয়ে এসেছেন। টিকিট গুলো আমার হাতে দিয়ে বলল, আট দিন পর ড্র হবে!
আট দিন পর দশ টাকা নিয়ে চলে এসো। পেপার কিনে দুজনে বসে মিলিয়ে দেখবো।

আমি তো খুব খুশি। ক'দিন রাতেও ঠিক মতো ঘুম হতো না। কখন লটারীর ড্র হবে এই চিন্তায়।
অপেক্ষার অবসন ঘটিয়ে এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। আমি খুব ভোর বেলা জালাল মিয়ার বাড়ির উঠানে গিয়ে উপস্থিত হলাম। তাঁর ঘরের দরজা গুতিয়ে ঘুম ভাঙ্গালাম। দশ টাকা তাঁর হাতে তুলে দিলাম। সে খাওয়া দাওয়া করে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। আমি তাঁর ঘরেই বসে আছি। দুপুর 12 টা পর্যন্ত তাঁর বাড়িতে বসে তাঁর দুই স্ত্রী, কন্যা এদের সাথে গল্প করছিলাম। হঠাৎ জালাল মিয়া চলে আসে। এরপর দুজনে বসে সিরিয়াল নাম্বার মেলানোর চেষ্টা করছি। আঙ্গুল কামড়াচ্ছি টেনশনে আর নাম্বার দেখছি। অবশেষে চোখে অশ্রু। একটু একটুর জন্য মিললো না। আমার দশ টা আর জালাল মিয়ার "ত্রিশ টা টিকিটের অপমৃত্যু হইলো!

সেই যে লটারীর টিকিটের প্রতি আমার এল্যার্জি ধরলো আর ছাড়ালো না কখনোই।

একটু বড় হলাম।
বুঝতে শিখলাম। বুঝলাম লটারীর টিকিটে কারো ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না! আরো বুঝলাম এসব কাজ যারা করে তাদের আগের থেকে নাটক সাজানো থাকে। কেউ একজন যেতে সেটাও এদের সাজানো নাটক। লটারি বিক্রি করা সম্পদ সব এরা লুটে পুটে খায়। দু একজন বাইরের মানুষকে দেয় যাতে বিশ্বাস্ততা
থাকে মানুষের। নইলে পরবর্তীতে ব্যবসা করবে কিভাবে?

আরেকটু বড় হলাম,
বুঝতে শিখলাম। গরীবেরা শুধু স্বপ্ন দেখে। অল্পতে বড় হবার স্বপ্ন দেখে। যেটা তাদের ভুল। আলেয়ার পিছে ছুটে শুধু হতাশায় পাওয়া যায় প্রকৃত সুখ না। প্রকৃত সুখ লুকিয়ে আছে পরিশ্রমের আড়ালে।

এই শহরের লাল নীল আলোর মাঝে, মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে আছে কিছু মানুষের আসল চেহারা। অর্থ সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে বিত্তশালীরা গরীবদের লুটে লুটে।
পরিশ্রমী মানুষেরা কখনো ধোকায় পড়তে পারে না। অলস মানুষেরা অল্পতে অনেক বেশী কিছু পেতে গিয়ে জীবনের সব থেকে বড় ভুল করে বসে।

স্বপ্ন উড়ছে। টাকা উড়ছে। ভুল ফাদে পা বাড়িয়ে অনেকের গচ্ছিত অর্থ গুলিও শেষ হচ্ছে।
স্বপ্ন দেখুন ছোট ছোট। যেটা আপনি সহজে পুরন করতে পারবেন।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘরে আগুন, মন্দীরে হামলা, মাজার ভাঙ্গা, পিটিয়ে মানুষ মারা এমন মেধাবী এদেশে দরকার নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৩২



২০০১ সালে দেলাম ঘরে আগুন দেওয়া ও মন্দীরে হামলার জঘণ্য কাজ। ২০০৪ আবার দেখলাম ঘরে আগুন, মন্দীরে হামলা, মাজার ভাঙ্গা, পিটিয়ে মানুষ মারার জঘণ্যতম ঘটনা।জাতি এদেরকে মেধাবী মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষাঙ্গনে অপ্রীতিকর ঘটনার মুল দায় কুৎসিত দলীয় লেজুরভিত্তিক রাজনীতির

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৫

সোস্যাল মিডিয়ার এই যুগে সবাই কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবি সাজতে চায়। কিন্ত কেউ কোন দ্বায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে রাজী নয়। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটা মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে । এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোমলমতিদের নিয়ে আমি কি বলেছিলাম?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



আমি বলেছিলাম যে, এরা ভয়ংকর, এরা জাতিকে ধ্বংস করে দেবে।

ড: ইউনুসের সরকারকে, বিশেষ করে ড: ইউনুসকে এখন খুবই দরকার; উনাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, কোমলমতিদের থামাতে হবে; কিভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিটিয়ে মানুষ মারার জাস্টিফিকেশন!

লিখেছেন সন্ধ্যা প্রদীপ, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩

এদেশে অনেক কিছুই সম্ভব।বর্তমান এলোমেলো সয়য়ে যা সম্ভব না বলে মনে করতাম তাও সম্ভব হতে দেখেছি।তবে মানুষকে কয়েক ঘন্টা ধরে পিটিয়ে মারাকে ইনিয়েবিনিয়ে জাস্টিফাই করা যায় এটা ভাবিনি।তাও মেরেছে কারা?
একদল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আহা তোফাজ্জল

লিখেছেন সামিয়া, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৪




মৃত্যু এখন এমনি সহজ
ভিডিও করতে করতে;
কথা বলতে বলতে
ভাত খেতে দিতে দিতে;
কনফিউজড করতে করতে
মেরে ফেলা যায়।

যার এই দুনিয়ায় কেউ অবশিষ্ট নাই
এমন একজনরে!
যে মানসিক ভারসাম্যহীন
এমন একজনরে!
যে ভবঘুরে দিক শূণ্য
এমন একজনরে!
যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×