somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মায়ের মৃত্যু : শেষ অংশ

২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা মেডিকেলের দুর্দশা দেখে আম্মাকে নিয়ে গেলাম ইবনে সিনা হাসপাতাল, ধানমন্ডিতে। প্রাইভেট হাসপাতাল, সেবা ভালো পাবো, আমার মা সুস্থ হবে, একটু হতাশা কাটলো। ডাক্তার ও দেখালাম বড় হাসপাতালের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আব্দুল আউয়াল। ইবনে সিনার জিগাতলা শাখায় ওনার চেম্বার। MRI, X-ray করলাম এখানেই। ডাক্তার আব্দুল আউয়ালকে টেস্ট গুলো দেখালাম। উনি Spinal Cord এর কি সমস্যা এবং যার ফলে তীব্র ব্যাথার কারণ বল্লো। উনি বল্লো জরুরী অপারেশন করাতে হবে, সেটা আগামীকালই। উল্লেখ্য যে ব্যাথা ছাড়া আমার মায়ের অন্যান্য কোন সমস্যা নেই। ডায়বেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ সহ কোন সমস্যাই ছিল না। খাওয়া দাওয়া ও স্বাভাবিক। শুধু ব্যাথার সমস্যা। যাক আগামীকাল অপারেশন। কিন্তু আমার কাছে ছিলো সর্বসাকুল্য ১০ হাজার টাকার মতো। ডাক্তার ৮০ হাজার টাকা অপারেশন ফি বল্লো। রিকুয়েষ্ট অনেক করলাম, এর কমে উনি করতে পারবেন না জানিয়ে দিলো।

আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে পাশে ছিলো আমার মামা, শাকির হোসাইন উনি প্রভাসক হাজীগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসার। উনি কিছু টাকা ধার নিয়ে ওই রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলেন। এও বলে দিলেন চিকিৎসা চলমান রাখতে, টাকার ব্যাবস্থা হবে। যদিও জানি ওনার বড় সংসার, জমানো কোন টাকা নেই। আজকে আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করলাম, আগামীকাল অপারেশন হবে। পরদিন সকালেই অপারেশন করার সকল পরীক্ষা গুলো রেডি করলাম, ২ ব্যাগ রক্তের কথা বলা হলো সেটা রেডি করলাম, মামাও আসলো। বিকেল ৩ টা অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার জন্য আম্মাকে রেডি করলাম। ডাক্তার ও ঠিকসময়ে আসলো। স্ট্রেচারে শুইয়ে মা'কে রুম থেকে নার্স নিয়ে যাচ্ছে। অপারেশন রুমে ডুকার আগে মা কি বুঝে আমাকে ডাকলো, স্ট্রেচারের পাশে দাড়ালাম। মা আমাকে জড়িয়ে ধরলো, চোখের পানি চেড়ে দিয়ে বল্লো ঠিকমতো থাকিস। তোর ভাই বোনের খবর নিস। তখনো বুঝি নাই মায়ের সাথে এটাই আমার শেষ কথা। আমি স্বাভাবিক ছিলাম, ভাবলাম এতো মাথা অথবা হার্টের মতো বড় অপারেশন নয়। মা এগুলো বলছে কেন? মা অপারেশন থিয়েটারে ডুকলো। অপারেশন ৩ ঘন্টা সময় লাগলো। সন্ধা ৭ টার দিকে ডাক্তার বেরিয়ে আসলো আর বল্লো অপারেশন ভালো হয়েছে। ডাক্তার চলে গেলো। পোস্ট অপারেটিভ রুমে মাকে দেখতে গেলাম। মা অজ্ঞান অবস্থায় আছে। বাহিরে আমি মামা অপেক্ষা করছি।
রাত ১০ টা বাজে দায়িত্বরত চিকিৎসক এসে বল্লেন আরো ২ ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে। সেটাও করলাম। রাত ১১ টা বাজে আবার বলা আরো ২ ব্যাগ রক্ত রেডি করতে। সেটাও করলাম। রাত সাড়ে ১২ টায় আরো ২ ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে বলে এবং একি সময় আবার ডাক্তার আব্দুল আউয়াল সহ পুরো অপারেশন টিম আসলো। আম্মাকে আবার অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হলো। আবার ৪ ঘন্টা অপারেশন। পরে ডাক্তার সহকারী থেকে শুনলাম ভুল করে আম্মার অপারেশনের জায়গা বৈদ্যুতিক বার্ন না দিয়ে ক্লোজ করে চলে আসছে মানে সেলাই করে ফেলছে যার ফলে রক্ত শরীরে থাকছে না, সব রক্ত পড়ে যাচ্ছিলো। যার কারনে ২য় বার অপারেশনে নেয়া হয়েছে। ২য় বার অপারেশন শেষ রাত ৪ টা, ডাক্তার আব্দুল আউয়াল সহ পুরো অপারেশন টিম চলে গেলো। একটু পর আমাদের বলা হলো রুগী ভালো আছে তবে রিস্ক ফ্রী থাকতে আই. সি. ইউ. লাগতে হতে পারে আমাদের বলেই ওনারা ধানমন্ডি থেকে আমার মা'কে কল্যাণপুর (ফুয়াদ আল খতিব) ইবনে সিনায় আইসিইউ তে নিয়ে গেলো। সকাল ৭ টায় কল্যানপুর আইসিইউ থেকে বলা হলো অনবরত রক্ত পড়তে থাকায় আম্মার কিডনি শাট ডাউন হয়ে গেছে। এখানে ডায়ালাইসিস নাই অন্য জায়গায় নিতে হবে। এও বলছে ভালো হবে স্কয়ার অথবা ল্যাব এইডে নিলে। আমি বল্লাম ওইসব জায়গার খরচ বহন করতে আমরা অক্ষম। তখন ওনারা যোগাযোগ করে আম্মাকে আবার নিয়ে আসলো ধানমন্ডি জিগাতলা রেনেসাঁ ক্লিনিক। এখানে প্রতি ৬ ঘন্টা পরপর রক্ত/ প্লাটিলেট দিতে হচ্ছে। পরিক্ষা নিরিক্ষা চলছে একটার পর একটা। এভাবে যুদ্ধ চল্লো ৫ দিন। এতদিন পর্যন্ত ডায়ালাইসিস করার উপযোগী হয় নাই। ৬ষ্ঠ দিন ডায়ালাইসিস করার উপযোগী হল, রাতে ডায়ালাইসিস হবে। আমরা আইসিইউর বাহিরে। সকালে বলা হলো আম্মা বেঁচে নেই। স্ট্রোক করে আম্মা মারা গেছে। রেনেসাঁ থেকে বলা হলো অনবরত রক্ত পড়ে যাওয়া এবং ২ বার দীর্ঘ অপারেশনের চাপের কারনে কিডনি এবং লিভার ২ টাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।
ডাক্তার আব্দুল আউয়ালের চেম্বার গিয়ে জানতে চাইলাম, আমার মায়ের কি হইছিলো? উনি বল্লো আসলে উনি রক্ত জমাট বাঁধার ১ টা টেস্ট দিতে ভুলে গেয়েছিলো। আর আমার কাছে ভুলের জন্য মাফ চাইলো।

১৪ই ফেব্রুয়ারী আম্মার লাশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। সবাই শাড়ি পাঞ্জাবি পড়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করছে, আমি আমার ভালোবাসাকে কাপনের কাপড় পড়িয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়েও আমি আর আমার মা'কে ফিরে পাবো না। ইচ্ছে হয় সারা শহর ফাটিয়ে কাঁদি। আমার গরীব দুঃখী মা'কে কখনো এক ফোটা সুখ দিতে পারি নাই। কত স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে, পড়াশোনা শেষ করে মা'কে সুখী করবো। না পারি নাই। এরপর আমার জিবনটাই দূর্বিষহ হয়ে গেছে। বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছে শক্তি আমার মধ্যে নাই। এই শক্তিহীনতায় আমার জীবনে আর দাঁড়াত পারিনি। আমি এখন নিয়মিত মানসিক রোগের ঔষধ খেয়ে বেঁচে আছি। চাকরী, সুখ, টাকা আমার জিবনে ছিলো না, আর আসবেও না। মৃত্যুর অপেক্ষায়....
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ২:২৩
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×