আমার মাথা আপরার ঘারে।ভাবতেও অবাক লাগে ,তাই না ?
কিন্তু ২০১৫ সালের
ফেব্রুয়ারিতে সার্জিক্যাল
নিউরোলোজি ইন্টারন্যাশনাল
জার্নালে সার্জিও ক্যানাভেরো দাবি করেছেন তা সম্ভব হলেও হতে পারে তাদের চিকিত্সা পদ্ধতির দ্বারা ।যে পদ্ধতিতে অপারেশনটি করা হবে তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
প্রথমেই অক্সিজেন বিহীন অবস্থায় দীর্ঘ সময় বাঁচিয়ে রাখার
জন্য গ্রহীতার
মাথা এবং দাতার পুরো শরীর
ঠান্ডা করে ফেলা হবে। এরপর গলার
চারপাশের
টিস্যুগুলো কেটে ফেলা হবে এবং ক্ষুদ্র
টিউবের
সাহায্যে রক্তনালিকাগুলো জুড়ে দেয়া
হবে। এবার খুব সাবধানের
সাথে কাটা হবে স্পাইনাল কর্ডটি।
দাতা এবং গ্রহীতার মাথা কাটার কাজ
শেষ হলে এবার আসবে জোড়া লাগানোর
পালা। এক্ষেত্রে সাহায্য
নেয়া হবে পলিইথিলিন গ্লাইকল নামক
একটি বৃদ্ধি উত্তেজক রাসায়নিক
পদার্থের। ইতোপূর্বে ইঁদুরের স্পাইনাল
কর্ডজনিত আঘাত সারাতে এই
পদার্থটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখায়
এর উপরই ভরসা রাখছেন
ক্যানাভেরো। এরপর ক্ষতস্থান সেলাই
করে দেয়া হবে।
এবার রোগীর অপারেশন
পরবর্তী যেকোনো নড়াচড়া বন্ধ
রাখার জন্য তাকে ৩-৪ সপ্তাহ
কোমায় রাখা হবে। এই অবস্থায়
ইলেকট্রোডের সাহায্যে নিয়মিত
স্পাইনাল কর্ডে ইলেকট্রিক্যাল
স্টিমুলেশন দেয়া হবে কারণ গবেষণায়
দেখা গেছে যে এটি নতুন স্নায়ু
সংযোগকে সুদৃঢ় করে।
প্রায় এক মাস পর যখন
গ্রহীতা জেগে উঠবেন তখন,
ক্যানাভেরোর ভাষ্যমতে,
তিনি আবারো নড়াচড়া করতে, নিজের
মুখমন্ডল অনুভব করতে এবং আগের
স্বরেই কথা বলতে পারবেন।
পরবর্তীতে নিয়মিত ফিজিওথেরাপির
সহায়তায় এক বছরের
মাঝে তিনি আবারো হাঁটাচলা করতে
পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো,
ক্যানাভেরোর এই অভিনব (!)
প্রতিস্থাপনে সাড়া দিয়েছেন বেশ
কয়েকজন। তারা প্রত্যেকেই
একটি নতুন শরীর পাওয়ার জন্য
স্বেচ্ছাসেবী হতে রাজি হয়েছেন!
আশঙ্কার কথা হলো যে পলিইথিলিন
গ্লাইকলের উপর ক্যানাভেরো এত
আস্থা রাখছেন সেটি যে মানুষের
ক্ষেত্রে তার আশানুযায়ী কাজ
করবে এমনটা কখনোই বলা যাচ্ছে না।
ক্যানাভেরোর এই আকাশ-কুসুম
কল্পনা সম্পর্কে পারড্যু
ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর
প্যারালাইসিস রিসার্চের পরিচালক
রিচার্ড বর্গেন্স তাই বলেছেন,
“মাথা প্রতিস্থাপনের পর স্পাইনাল
কর্ড এবং ব্রেনের সংযোগ
যে একজনকে পুরোপুরি অনুভবক্ষম
করে তুলবে এমন কোনো প্রমাণ নেই।”
যদি পলিইথিলিন গ্লাইকল কাজ
না করে তবে বিকল্প চিন্তাও
ক্যানাভেরো মাথায় রেখেছেন। এর
মাঝে আছে স্টেম সেল
অথবা ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশনের
সাহায্য নেয়ার মতো বিষয়গুলো।
গ্রহীতার দেহের ইমিউন সিস্টেম
কি আরেকটি দেহের টিস্যুকে গ্রহণ
করবে? রবার্ট হোয়াইটের বানর কিন্তু
এই সংযোগ ঠিকমতো স্থাপিত
না হওয়ার কারণেই মারা গিয়েছিলো।
তবে AANOS-এর সভাপতি উইলিয়াম
ম্যাথিউসের মতে ওষুধের সাহায্যে এই
সমস্যাটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
মাথা প্রতিস্থাপনের নতুন এই
ধারণা আদৌ বাস্তবায়িত
হবে কিনা এমন প্রশ্নের
জবাবে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যালিনাস
ভ্যালি মেমোরিয়াল হেলথ কেয়ার
সিস্টেমের নিউরোলোজিস্ট ও
বায়োএথিসিস্ট
প্যাট্রিসিয়া স্ক্রিপকো মজা করে
বলেছেন, “যদি মাথা প্রতিস্থাপন
কখনো সম্ভবও হয়
তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুর্লভ।
এটি আসলে ঘটতে যাচ্ছে না কারণ
তাহলে কেউ বলে বসবে, আমার বয়স
বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে বাতের সমস্যাও
আছে। সম্ভবত আমার একটি নতুন
শরীর দরকার যা দিয়ে ভালো করে কাজ
করা যাবে আবার আমাকে সুন্দরও
দেখাবে!”
চিকিৎসকেরাও ক্যানাভেরোর এই
প্রস্তাবনা নিয়ে বেশ দ্বিধান্বিত।
কেউ কেউ যেমন এই ব্যাপারে মুখ
খুলতে একেবারেই নারাজ তেমনি কেউ
কেউ পুরো ব্যাপারটিকে অদ্ভুত
রকমের হাস্যকর বলেও
উড়িয়ে দিচ্ছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির
নিউরোলোজিক্যাল সার্জারির
প্রফেসর হ্যারি গোল্ডস্মিথ বলেছেন,
“এটা এতটাই আকাশ-কুসুম
কল্পনা যে এর বাস্তবায়নের
সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আমি বিশ্বাস
করি না যে এই পদ্ধতিটি কখনো কাজ
করবে। এতে অনেক ধরণের
সমস্যা আছে। কোমাতে কাউকে ৪
সপ্তাহ ধরে সুস্থ রাখা!
এমনটা কখনোই হতে পারে না।”
চারদিকে এত বিরোধীতার মাঝেও
ক্যানাভেরো নিজেকে বেশ সংযত
রেখেছেন। ঠাণ্ডা মাথায় তিনি উত্তর
দিয়েছেন, “এজন্যই আমি দু’বছর
আগে প্রথম এই সম্পর্কে কিছু
বলেছিলাম যাতে মানুষজন
বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে।
যদি সমাজ না চায়
তাহলে আমি এটা করবো না। কিন্তু
আমেরিকা অথবা ইউরোপের মানুষজন
যদি এটা না চায় তার মানে কিন্তু এই
না যে এটা আর কোথাও হবে না।
আমি এই ব্যাপারে সঠিক পথেই
এগোতে চাইছি। কিন্তু চাঁদে যাওয়ার
আগে আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত
করতে হবে যে মানুষজন
আপনাকে অনুসরণ করবে।”
কী মনে হয় আপনার? ক্যানাভেরোর
এই কল্পনা কি আসলেই বাস্তবায়িত
হতে যাচ্ছে? নাকি তা কেবল সায়েন্স
ফিকশনপ্রেমীদের জন্য আরো এক
নতুন আইডিয়া হিসেবে আসতে যাচ্ছে?
আর এটি যদি কখনো সম্ভব হয়েও যায়
তাহলে বলুন তো- “আপনি কি আপনার
নিজের শরীর নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতেন?
নাকি চাইতেন অন্য কোনো শরীর?”
তথ্যসুত্রঃ
(১) en.wikipedia.org
(২) http://www.nlm.nih.gov
(৩) http://www.foxcrawl.com
(৪)www.newscientist.com
(৫) http://www.sciencealert.com
(৬) http://www.popsci.com