somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডন নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অরুন্ধতী

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মোদির বিজয়ে কলকাঠি নেড়েছে

বড় পুঁজির কর্পোরেশনগুলো; গরীবদের কী হবে?

প্রোবনিউজ, ডেস্ক: হুহু করে বাড়তে থাকা ভারতের জিডিপি হঠাৎ আবার নেমেও যায় হুহু করেই। ভারতের লাখ লাখ মধ্যবর্গীয় মানুষ এর একটা সুরাহার পথ খুঁজছিলেন। চাইছিলেন পরিত্রাণ। তাদের উৎকণ্ঠা এক সময় ভীতির সৃষ্টি করে। ভীতি থেকে তৈরী হয় ক্ষোভ। আর এই ক্ষোভকেই মুছে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি আর তার দল। পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডন-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেন বিশ্বখ্যাত ভারতীয় বুদ্ধিজীবী অরুন্ধতী রায়।

09-ARUNDHATI_ROY_1358767e.jpg১৯৯১ সালে প্রাইভেট সেক্টরের জন্য বাজার মুক্ত করার আগ পর্যন্ত ভারত পরিচিত ছিলো তার আপাতদৃষ্টির সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কারণে। ৯১এর পর অচিরেই বিশ্ব পুঁজির প্রবহমানতায় যুক্ত হয়ে ভারতের অর্থনীতি উচ্চশিখরে পৌঁছায়। নিও লিবারাল জাহাজে চড়া ভারতের অর্থনীতি হঠাৎ করেই ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ২০১০ সালে এসে। তবে গেলো তিন বছরে সেটা নেমে ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কর্পোরেট বিজনেস ক্লাস এ ঘটনায় দায়ী করে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস আর প্রধানমন্ত্রী মনমোহনকে। অরুন্ধতীর মতে আক্রমনাত্বক মোদি এর বিকল্প হিসেবে সামনে আসেন।

“মুসলমানদের আক্রমণের জন্য নয়, মোদিকে ক্ষমতায় আনা হয়েছে ভারতের জঙ্গলে যে প্রতিরোধ জারি আছে, তাকে দমন করে জনগণের জল-জমি-জঙ্গল কর্পোরেট খনি ও অবকাঠামো ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে।” এমনটাই বলেন অরুন্ধতী। তিনি জানান, “এ নিয়ে সব চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। কোম্পানিগুলো অপেক্ষার প্রহর গুনছে। মোদিকে পছন্দ করা হয়েছে কেননা রক্ত দেখে তিনি শিউরে ওঠেন না। না, কেবল মুসলমানের রক্ত নয়, কোনো রক্তেই মোদি শিউরে উঠবেন না।”

ভারতের জঙ্গলভূমি; যেখানে আদিবাসীরা আছেন, তাদের বাসস্থলেই উন্নয়নের প্রকল্প নিতে চায় ভারতের খনিজ আর অবকাঠামো নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো। উচ্ছেদের প্রচেষ্টা এ পর্যন্ত রুখে দিয়েছে তারা। এই অঞ্চলগুলোতে মাওবাদীরা জনগণের সঙ্গে একাত্ম। অরুন্ধতী মনে করেন, যে উন্নয়ন পরিকল্পনা কর্পোরেশনগুলোর তরফে নেয়া হয়েছে তাতে রক্তপাত অবশ্যম্ভাবী। তিনি জানান, জঙ্গলের প্রতিরোধীদের মধ্যে অন্তত এক হাজার মানুষ কারাগারে রয়েছেন। “তবে এতে কিছু হচ্ছে না। জঙ্গলের সমস্ত প্রতিরোধ ধ্বংস করতে হবে। বড় পুঁজির দরকার সেই মানুষকে, যিনি এরজন্য যা কিছু দরকার তার সবটাই করতে পারবেন। একারণেই রক্তপিপাসু নরেন্দ্র মোদিকে পছন্দ করেছে কর্পোরেশনগুলো। নির্বাচনে তার পেছনে ব্যয় করেছে কোটি কোটি টাকা।” এমনটাই বলেন তিনি।
উন্নত বিশ্বের অন্য দেশগুলোর উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে জিজ্ঞেস করলে অরুন্ধতী বলেন, যুদ্ধ এবং অন্য দেশকে উপনিবেশ বানানোর মধ্য দিয়ে তারা উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তার মতে, কথিত উন্নয়নের জন্য ভারতের নিজেকে নিজের উপনিবেশ বানানো ছাড়া আর কোনো পথ নাই।

ArundhatiRoy610px.jpgঅরুন্ধতী বলেন, ভারতের একটি উঠতি সিভিল সোসাইটি রয়েছে। রয়েছে শ্রমিক ইউনিয়ন-সহ এমন সব গ্রুপ যারা প্রতিরোধের সঙ্গে একাত্ম থাকেন। তার মতে, প্রতিরোধের এই ক্ষমতাই হতাশ করে তুলেছে ভারতীয় বড় পুঁজির কর্পোরেশনগুলোর লক্ষ্যকে।

অরুন্ধতীর মতে, এখন সামরিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই প্রতিরোধ দমন করতে চায় কর্পোরেশনগুলো। এজন্য মোদি গণহত্যাই চালাবে, এমনটা নাও হতে পারে বলে মত অরুন্ধতীর। কেবল প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্বকে টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে বলেও আশঙ্কা তার।

অরুন্ধতী আমাদের মনে করিয়ে দেন, ভারতে বাজার অর্থনীতি কৃষকের জীবনে কেমন দুর্ভোগ এনেছে। ২০১২ সালে ১৪ হাজার অসহায় কৃষকের আত্মহত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অরুন্ধতী বলেন, কৃষিভিত্তিক গ্রামগুলো সব সম্পদহীন, অনুর্বর আর শুস্ক হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “যেখানে দলিতরা বাস করে, সেইসব গ্রামাঞ্চলে রাজনীতি নেই, কেবল ভূমিমালিকদের কথায় তারা ভোট দিয়ে থাকেন।”

সম্প্রতি তার পরিদর্শন করা মহারাষ্ট্রের গ্রামগুলোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অরুন্ধতী বলেন, এখানেই সবথেকে বেশি কৃষক আত্মহত্যা করে থাকেন।
ভারতে সীমিত পর্যায়ের গণতন্ত্র আছে উল্লেখ করে অরুন্ধতী বলেন, কোনোভাবেই কেউ অস্বীকার করতে পারবে না বিশ্বের সবথেকে বেশি দরিদ্র মানুষ ভারতে বাস করে। তিনি বলেন “স্বাধীনতার পর থেকে একটা দিনও যায়নি যেদিন ভারত সরকার তার বলপ্রয়োগকারী বাহিনীকে এর জনগণের প্রতিরোধ দমনে ব্যবহার করেনি। এই দেশে রাষ্ট্র নিজেই জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।” ছত্তিশগড় আর উড়িষ্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অরুন্ধতী বলেন, সেখানে যা ঘটছে তাতে ভারতকে গণতান্ত্রিক বলতে লজ্জা হবার কথা।

অরুন্ধতী মনে করেন, ভারতের এবারের নির্বাচন ছিলো পুরোপুরি এক কর্পোরেট প্রকল্প। ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে থাকার পরও মায়াবতীর দল কোনো আসন পায়নি নির্বাচন পদ্ধতির হিসেব-নিকেশের কারণে; একে প্রহসন মনে করেন অরুন্ধতী। এতে সংসদে দলিতদের কোনো প্রতিনিধি থাকলো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টোটালেটারিয়ান এক সরকার পেলো।

ভারতের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে মূলগতভাবে একই মনে করেন অরুন্ধতী। তিনি মনে করেন, সত্যিকারের বিরোধী দল কিংবা বিরোধীতা নেই।
সবশেষে তিনি নিজেই প্রশ্ন রাখেন: ভারতের জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের রায় দিয়েছে। কিন্তু গরীবেরা কোথায় যাবে?

এই প্রশ্নের কেনো উত্তর ছাড়াই শেষ হয় ডন-অরুন্ধতী প্রশ্নোত্তরপর্ব।

প্রোব/বান/দক্ষিণ এশিয়া
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×