somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিক্ত কিছু অভিজ্ঞতা (গল্প নয়, সত্যি) (বাকী অংশ)

১২ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার দূর্ভাগ্যই বলতে হবে, আমার লেখার প্রথম অংশটি সম্পর্কে কেউ কোন মন্তব্য করেননি এবং যেখানে আমি আমার অভিজ্ঞতার কথা লিখা শেষ করেছিলাম, সে সম্পর্কেও কেউ কোন মন্তব্য করেননি। সুতরাং ধরে নিতেই হবে, আমার লেখাটি কোন লেখাই হয়নি। তারপরও লেখাটি আমি শেষ করবো। এ বিষয়ে আমার ধৈর্যের কোন কমতি নেই। কমতি থাকলে এই পর্যন্ত আসা আমার পক্ষে সম্ভবই হতো না।
তো অভিজ্ঞতার কথাটি শেষ করি।
প্রায় এক সপ্তাহের বিরতিতে আমি গেলাম বেতারে সেই প্রযোজকের কাছে। আমাকে দেখলেন, চিনলেন না। মনে করিয়ে দিলাম। মনে করার ভান করলেন। নাটকের পাণ্ডুলিপিটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। বললেন, এতো ব্যস্ততা যে, ওটার কথাও তার মনে নেই। অগত্যা স্ক্রিপ্ট বের করে চোখ বুলাতে লাগলেন এবং লাল কালিতে আন্ডারলাইন করতে থাকলেন। তারপর স্ক্রিপ্টটি আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, মফস্বল থেকে এসেছো তাই, তাই লেখার মধ্যেও মফস্বলের গন্ধ রয়ে গেছে। ওটা ঝেড়ে ফেলতে হবে। খারাপ লাগলো কথাটা শুনে। মনে মনে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‌ব্যাটা, তুই কি লন্ডন থেকে এসেছিস নাকি?' কিন্তু মুখে সলজ্জ হাসিটা ধরেই রাখলাম। হাসিটা স্বীকারোক্তিমূলক। সত্যিই তো মফস্বল শহর থেকে সদ্য এসেছি। যাই হোক, উনি যে দয়াপরবশ হয়ে আমার স্ক্রিপ্টটি লালকালিতে দাগিয়েছেন, তাতেই আমি ধন্য। বললেন, কারেকশন করে নিয়ে আসুন। তারপর দেখবো। মনে মনে ভাবলাম, যে পরিমাণ লাল কালি লাগিয়েছিস বাবা, তাতে কারেকশন করার কোন উপায় নেই। পুরো স্ক্রিপ্টটা আবার নতুন করে লিখতে হবে। কি আর করা। আবারও সাতদিন সময় নিয়ে স্ক্রিপ্টটা কেটেকুটে নতুন করে লিখলাম। তারপর আবার গেলাম। এবারও উনি লাল কালিতে দাগালেন, তবে আধাআধি। আবার নিয়ে এলাম। ঠিকঠাক করে আবার গেলাম। এবারও উনি কাটাকাটি করতে দ্বিধা করলেন না। বললেন, আমার ডিরেকশন মতো না লিখলে আপনার নাট্যকার হতে অনেক সময় লাগবে। তৃতীয়বার দীর্ঘ সময় নিলাম। প্রায় একমাস। তবে ক্রিপ্ট-এ আর হাত দিলাম না। বরং আমার প্রথম স্ক্রিপ্টটা, যেটি নিয়ে আমি প্রযোজক মহোদয়ের কাছে প্রথম গিয়েছিলাম, হুবহু সেই ক্রিপ্টটি নিয়েই আমি উনার কাছে গেলাম দীর্ঘ একমাস পর। গিয়েই ইনিয়ে-বিনিয়ে বললাম, ভাইজান, আপানর সাজেশান আমার খুব কাজে লেগেছে। আপনার পরামর্শমতো দীঘ এক মাস সময় নিয়ে প্রাণান্ত পরিশ্রম করে ক্রিপ্টটি নতুন করে সাইজ করেছি। আপনার পরামর্শ না নিলে এটা সম্ভবই হতো না। এবার দেখুন হয়েছে কিনা। মজার ব্যাপার হলো, এবার উনি স্ক্রিপ্টটা যত্ম করে উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখলেন এবং ভূয়সী প্রশংসা করে বললেন, বাহ, বাহ! দারুণ সংলাপ। ঘটনারও ধারাবাহিকতা চমৎকার। খুব সুন্দর একটা নাটক হয়েছে। তারপর উনি পাণ্ডুলিপির ওপর লিখে দিলেন, ‌‌‌নাটকটি প্রচারোপযোগী হয়েছে, প্রচার করা যেতে পারে'।
প্রিয় পাঠক, হাঁসছেন? আর আমার কান্না পাচ্ছে এই ভেবে যে, বেচারা প্রযোজক মহোদয় তবে কেন শুধু শুধু আমাকে প্রায় দু,মাস ঘোরালেন? কর্তব্যক্তিদের আচরণ বোধ করি এমনই হয়ে থাকে।
পাঠক, এবার আসি বাংলার বাণী পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের ঘটনায়। কবিতা তো দিয়ে এলাম। কি হলো না হলো জানতে গেলাম ৭ দিন পর। সাহিত্য সম্পাদক মহোদয় কবিতাগুলো ড্রয়ার হাতড়ে অনেক কাগজ-পত্রের নীচ থেকে বের করলেন। তারপর একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন, আপনাদের কবিতায় কোন কাব্যময়তা নেই। কোন উপমা নেই, উৎপ্রেক্ষা নেই। শব্দ চয়নও সেকেলে। আধুনিক কবিতা পড়ুন, তারপর লিখুন, যান।
ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এলাম। লাগলাম আধুনিক কবিতার পেছনে। ওই পত্রিকার বেশ ক'মাসের সাহিত্য সাময়িকী যোগাড় করে পড়লাম। তারপর সেই অনুযায়ী লিখলাম। নিয়ে গেলাম। এবার তিনি বললেন, চেষ্টা করেছেন বোঝা যাচ্ছে, তবে হয়নি। এতো সরল বর্ণনায় কবিতা হয়না। কিছুটা প্রচ্ছন্ন ব্যাপার থাকতে হয়। ফিরে প্রচ্ছন্ন ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম। কিন্তু কিছু কুল কিনারা পেলাম না। রাগ হলো খুব। কঠিন কঠিন শব্দ চয়ন করলেই কি শুধু কবিতা হয়। রেগে দিয়ে একটা কাজ করলাম। পত্রিকায় প্রকাশিত দশ-বারোটা কবিতার প্রতিটি শব্দ কাঁচি দিয়ে কেটে আলাদা করলাম। কয়েকশত শব্দ হলো। এবার এলোমেলোভাবে শব্দ নিয়ে পাশাপাশি সাজাতে লাগলাম। এভাবে অর্থহীন কয়েকটি লাইন বানালাম। মাত্র দুটি লাইনের চিত্র আপনাদের দেখাই, ‌‌দৈবাৎ হরেক বিচিত্র কুহরে কিম্ভূত ক্ষয়িষ্ণু জল/অতনু রিক্ত ঘুর্ণি সফল পাথুরে মাকাল ফল'। আমার মনে হয়, স্বয়ং কবি কেন, কবির চৌদ্দ গোষ্ঠী এলেও কবিতাটির পাঠোদ্ধার করতে পারবেন না। কারণ, আদতে কবিতাটির কোন মানেই নেই। কবিতাটির শিরোনামও দিয়েছিলাম ‌অর্থহীন পংক্তিমালা। যাই হোক, কবিতাটি (!) নিয়ে গেলাম এবং সাহিত্য সম্পাদক মহোদয়কে বললাম, অনেক যত্ন করে আপনার কথামতো আধুনিক শব্দচয়ন করে কবিতাটি লিখেছি দাদা। একটু যত্ম করে দেখবেন। উনি দেখলেন এবং পরবর্তী সংখ্যায় কবিতাটি ছাপাও হলো। আমার একটি কবিতার স্বীকৃতি মিললো। কিন্তু ছাপার অক্ষরে কবিতাটি দেখে সেদিন হতাবাক হয়ে বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকেছি আর ভেবেছি, হায় কাব্য সাহিত্য তুমি কোথায় গিয়ে দাঁড়ালে!
পাঠক, একবারও হাঁসছেন? আমার কান্না কিন্তু যথারীতি। এই ভেবে চক্ষু সজল হয়ে ওঠে যে, এমন কাব্যবোদ্ধারা যদি বড় বড় দায়িত্বশীল জায়গায় বসে থাকেন তাহলে কাব্য-সাহিত্যের ভবিষ্যত কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে?
পাঠক, আমার দুটি অভিজ্ঞতার একটিও কি তিক্ত মনে হয়নি আপনার কাছে? যদি হয়ে থাকে, তবেই আমার এই লেখার সার্থকতা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×