'৬৬ বিশ্বকাপে জার্মানির স্বপ্ন ভেঙেছিল যেভাবে, ৪৪ বছর পর সেভাবেই শূন্যে মিলিয়ে গেল ইংল্যান্ডের আশা। ১-৪ গোলে হারের নিছক এক স্কোরলাইনে তাই আটকে থাকবে না এ ম্যাচের আলোচনা। ইংল্যান্ডের একমাত্র সোনালি সাফল্যে যেমন অবধারিতভাবে চলে আসে জিওফ হার্স্টের গোল, সোনালি প্রজন্মের সর্বশেষ ব্যর্থতায় তেমনি ঘুরে ফিরে আসবে ফ্রাংক ল্যাম্পার্ডের 'না হওয়া গোল'টি।
ম্যাচের তখন ৩৮তম মিনিট। শুরুতেই দুই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ড আগের মিনিটেই ফিরিয়ে দিয়েছে এক গোল। এরপর আবার ঝাঁপিয়ে পড়া। ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে ল্যাম্পার্ড যেন শটটি নিলেন নিজের যাবতীয় সামর্থ্য একীভূত করে। জার্মান কিপার ম্যানুয়েল নিউয়েরকে পরাস্ত করল তা। বারের ভেতরের দিকের কানায় লেগে অতিক্রম করল গোললাইনও। গো-ও-ও-ও-ল! উদ্বাহু উল্লাসে মেতে উঠলেন ফ্যাবিও ক্যাপেলো। সঙ্গে খেলোয়াড়-সমর্থকরা। দুই মিনিটে দুই গোল শোধ করে এমনভাবে সমতায় ফেরা তো চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু একি! রেফারি যে গোল দিলেন না! '৬৬-তে হার্স্টের শট গোললাইন অতিক্রম করেছিল কি না, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত নয়। কিন্তু কাল রিপ্লে যে দেখাল, ল্যাম্পার্ডের শট গোললাইন পেরিয়েও অন্তত ফুটখানেক গিয়েছিল! তবু গোল দিলেন না উরুগুয়ের রেফারি হোর্হে ল্যারিওন্দা। সমান্তরালে দাঁড়িয়ে থাকা লাইন্সম্যান মরিসিও এসপিনোসাও নির্বিকার। এ শোক কিভাবে সামলে ওঠে ইংল্যান্ড! গোলের পেছনে ছুটতে গিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে খেয়ে বসে আরো দুই গোল। ১-৪ গোলে হেরে আফ্রিকায় ইংলিশ সিংহদের গর্জন তাই থেমে গেছে জার্মান যন্ত্রের কাছে।
জার্মান যন্ত্র! এ উপমা (অপবাদও কি নয়) বাদ দেওয়ার সময় বোধ করি চলে এসেছে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো শিল্পপূজারি তারা নয়। ওই বল-স্কিল নেই জার্মানদের পায়ে। কিন্তু চার বছর আগের মতো এ বিশ্বকাপেও তারা যে ফুটবল খেলছে, সেটিকে যান্ত্রিক বলবেন কিভাবে! বরং প্রেসিং ফুটবলের চূড়ান্ত উৎকর্ষে ফলনির্ভর অথচ দৃষ্টিনন্দন এক ফুটবল-ধারা রপ্ত করছে জার্মানরা। তাতেই কাল ছিন্নভিন্ন ইংল্যান্ড।
জার্মানি এগিয়ে যেতে পারত চতুর্থ মিনিটেই। মেসুত ওজিলের শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে সেই যাত্রা ইংল্যান্ডকে বাঁচান গোলরক্ষক ডেভিড জেমস। ২০তম মিনিটে আর পারেননি। নিউয়েরের গোলকিক পড়তে পারেননি জন টেরি। তাঁর মাথার ওপর দিয়ে আসা বলে মিরোস্লাভ ক্লোসাকে রুখতে পারেননি আরেক সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ম্যাথু আপসন। ডান পায়ের টোকায় বল জালে জড়িয়ে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদোর আরেকটু কাছাকাছি গেলেন এ জার্মান স্ট্রাইকার। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার সিংহাসন থেকে মাত্র তিন গোল দূরে তিনি।
৩২তম মিনিটে ইংল্যান্ডকে হতভম্ব করে লিড দ্বিগুণ করে জার্মানি। ক্লোসা থেকে মুলার হয়ে লুকাস পোডলস্কির পায়ে বল। জেমসের পায়ের ফাঁক দিয়ে বুলেট শটে তাকে গন্তব্যে পাঠাতে ভুল হয়নি গত বিশ্বকাপের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের। ম্যাচ তো সেখানেই শেষ! আসলে শেষ নয়। মিনিট পাঁচেক পর নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন আপসন। শর্ট কর্নার থেকে জেরার্ডের ভাসানো বলে দারুণ হেডে ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরান এ ডিফেন্ডার। এর মিনিটখানেক পরই ল্যাম্পার্ডের হার্স্ট বনে যাওয়া; ফ্রি স্টেট স্টেডিয়ামে ওয়েম্বলির স্মৃতি ফিরিয়ে আনা; ২০১০ সালে থেকেও টাইম মেশিনে চড়ে ৪৪ বছর আগে ফিরে যাওয়া!
হতোদ্যম ইংলিশরা বিরতির পরও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাড়া করছিল তাদের! তাই কি না ৫১তম মিনিটে ল্যাম্পার্ডের ফ্রি-কিক ফিরে আসে বারে লেগে। সর্বস্ব দিয়ে, সব ফলা এক করে আক্রমণ করতে গিয়ে রক্ষণে মনোযোগটা আর ধরে রাখতে পারেনি ইংল্যান্ড। আত্দবিশ্বাসে টগবগিয়ে ফোটা জার্মানরা সেই সুযোগ কাজে না লাগিয়ে পারে! ৬৭ ও ৭০ মিনিটে চোখধাঁধানো দুটি কাউন্টার অ্যাটাক, যার পরিণতি থমাস মুলারের দুটি গোল; আর ম্যাচটি ইংলিশদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া। শূন্য দৃষ্টি শূন্যে মেলে শূন্য হাতেই তাই শেষ হলো টেরি-ল্যাম্পার্ড-জেরার্ডদের সোনালি প্রজন্মের অভিযান।
ব্লুমফন্টেইনকে বলা হয় গোলাপের শহর। তবে কাল ম্যাচ শেষে ফুলের রানির সৌরভে মাতোয়ারা হওয়ার কথা শুধুই জার্মানদের। ইংলিশদের স্মৃতিতে দীর্ঘদিন তা কেবল বিঁধে থাকবে কাঁটা হয়ে!
আলোচিত ব্লগ
আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন
মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।