somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন বাঙালী বিদ্বেষী নেপালী!!!

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুপহাপ ধুপধাপ করে এক নেপালী বন্ধু ছুটে আসল আমার রুমে।
হাঁপাচ্ছে।
একই ব্লকে থাকি।
তারপরও এই রাস্তাটুকে আসতে সে হাঁপাচ্ছে। ঘটনা যে মারাত্মক কিছু, সেটা ভাবতে এরিস্টটল হতে হয় না। তাকে ডেকে রুমে বসালাম।
‘কিরে, ব্যাপারখানা কি? ক দেখিনি। কিছুইতো বুঝি না।’
‘ছলা তোকে বুঝতে হবে না। আমি বুঝলেই হবে।’
সে শালাকে এখনো ছলা বলে উচ্চারন করে। বাংলাদেশে যে সকল নেপালী উচ্চশিক্ষার জন্য আসে তারা বেশ ভালোই বাংলা বলতে পারে। কিছু সিনিয়র নেপালীর ভাষা দেখে মাঝে মাঝে দ্বিধায় পড়ে যাই। এরা আদৌ নেপালী কি না। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
‘তুই বুঝলেই হবে, তাহলে আমার কাছে এসেছিস কেন?’
‘তাইতো তাইতো। তাহলে তোর কাছে এসেছি কেন?’
‘এসেছিস যখন এককাপ কফি খেয়ে যা। মামা পাঠিয়েছে। ব্রাজিল থেকে। নতুন বয়ামে ভরা। এখনো খুলি নাই। তোকে দিয়েই বিসমিল্লাহ করি।’
‘বিসমিল্লাহ কি? কফি দিলেই হবে। বিসমিল্লাহ খাবো না।’
‘বিসমিল্লাহ করি’ বলতে কি বোঝালাম বুঝতে পারে নি। তার বোঝার কথা না। প্রথমত সে নেপালী। বাংলাদেশী প্রবাদ-প্রবচন সম্পর্কে তার বিন্দু মাত্র ধারনাই নাই। দ্বিতীয়ত সে হিন্দু। বিসমিল্লাহ আরবী শব্দ। পাঠক, আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি সাম্প্রদায়িকতার বিভাজন তৈরি করার চেষ্ঠা করছি না। ঘটনাটা বোঝানোর জন্য আমাকে বিভিন্ন ভাষার আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ধরি, নেপালী বন্ধুর নাম তেনজিং। বিখ্যাত হিমালয় জয়ী তেনজিং এর নামে নাম।
আমি কফির বৈয়াম খুলে দুই কাপ কফি বানালাম। তেনজিং এককাপ করে কফি কাচ্ছে আর দুইবার করে বলছে,
‘থ্যাঙ্কু, থ্যাঙ্কু। কফি ইজ টেস্টি।’
এবার আমি গলা খাদে নামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
‘দোস্ত কি বলার জন্য এসেছিলি যেন?’
তেনজিং হা হা করে হাসি দিল। কাপের কফি আমার গায়েও ছিটকে আসতে পারে। আমি সরে গেলাম। তেনজিং বলল,
‘এক বড়দাদার কাছে একটা নতুন জিনিস শিখলাম। বিবিসি এর পুর্ন রুপ।’
‘এটা আবার নতুন শেখার কি আছে? তোদের দেশে কি বিবিসি শুনিস না?’
‘শুনি। কিন্তু বিষয়টা খুব মজাদার। অনেক হাসাহাসি করলাম আমরা’
‘তাহলে আমাকেও বল আমি একটু হাসি। অনেকদিন মন খুলে হাসি না।’
তেনজিং বিবিসির পুর্ন রুপ বলে ফেলল। আমি অবাক হয়ে গেলাম। হাতের মগ পড়ে পা পুড়ে গেল। কি ভয়াবহ কথা। এই কথা নিয়ে তারা হাসাহাসি করেছে? সে কিভাবে সাহস পায় এমন কথা বলার? একবারও কি ভাবে নি তার সামনে একজন বাঙ্গালী আছে? যে বিষয়টা নিয়ে নেপালীরা হাসাহাসি করেছে, সেটা নিয়ে আমি হাঁসতে পারলাম না। কান বন্ধ হয়ে গেছে। শাঁ শাঁ করে শব্দ হচ্ছে। নাক মুখ গরম হয়ে যাচ্ছে। কপালের রগটা ফুলে গেল। তেনজিং কি বুঝল জানি না। আধ খাওয়া কফির মগ রেখে রুম থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে গেল।
আমি কি করব বুঝতে পারছি না। সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। ছটফট করতে করতেই সকাল হলো। ক্লাশে গেলাম। চোখ লাল। লাল রক্তের মতো। আমার বাঙ্গালী বন্ধু নাহিদ ভয় পেয়ে গেল। আমি মারামারি করেছি কি না, গার্লফ্রেন্ড ছ্যাকা দিয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করল। আমি কিছুই বলতে পারলাম না। কিভাবে বলব। এই কথা যে বুকের মাঝে আঘাত করছে। মুখে আনার মতো কথা নয়। তাকে কিভাবে বলব, বিবিসি মানে বাঙ্গালী বোকা ...। (পাঠক শুন্যস্থান ‘চ’ বর্গীয় শব্দে পুর্ন হবে। চালাক পাঠক মাত্রই বুঝে ফেলেছে।)
তেনজিং কি বুঝতে পারে নি? এই কথা শোনার পর বাঙ্গালী হয়ে আমি তাকে কিছুই বলিনি। সে কত নিশ্চিন্তে বের হয়ে গেল। হয়তো আমার মাঝে দেশপ্রেমের ঘাটতি আছে। অন্য কোন বাঙ্গালী হলে তাকে কি করত সে কি ভাবতে পারবে? সে কি জানে এই দেশ স্বাধীন করতে কত লক্ষ মানুষের বুকের রক্তে মাটি ভিজেছে। জানে না। বাঙ্গালীরা তাদের জন্য কি করতে পারে সেটাও সে জানে না। মাথা গরম হয়ে আছে। প্রেশার বেড়ে গেছে। যেকোন মুহুর্তে স্ট্রোক করতে পারি।
আমাদের দেশ, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাঙ্গালীরা থাকি সাধারন রুমে। গাদাগাদি করে। ছোট্ট একটা রুমে চার জন। তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে সব চাইতে সুরক্ষিত রুমগুলো। সুরক্ষিত রুমের বাসিন্দা মাত্র দুইজন করে।
বাংলাদেশে একজন সরকারী মেডিকেলের ছাত্রকে ডাক্তার বানাতে সরকার ব্যয় করে মাথাপিছু ত্রিশ লক্ষ টাকা। টাকার অঙ্ক আনুমানিক। সেখানে প্রতিবছর শতশত বিদেশী ছাত্রকে সরকার এদেশে এসে বিনামুল্যে পড়ার সুবিধা করে দেয়। ক্যাম্পাসে আমরা আমরা মারামারি করি। রক্ত ঝরায় নিজেদের। তাদের রক্ত কখনোই ঝরে না। তারা কখনোই আক্রান্ত হয় না। আমরা বোকা... হব না তো কে হবে?
একদিন কিছু নেপালীদের সাথে আমি ফুটবল খেলছি। বল চলে গেল মাঠের বাইরে। রাস্তার কিছু টোকাই সেখানে ছিল। তারা বলটা ফেরত দিতে একটু দেরী করেছে। তেনজিং গিয়ে বলটা কেড়ে নিয়ে চেঁচামেচি শুরু করল। জিজ্ঞাসা করলাম,
‘কি হয়েছে রে?’
‘কিছু হয়নি। বাঙ্গালী ছলা(শালা) হারামী। এদের উপর ফাপড় নিয়ে কথা না বললে কথা শুনতে চায় না।’
আমি অবাক হয়ে শুনছি। এই মাটিতে দাঁড়িয়ে এমন কথা কখনো শুনতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। ইবনে বতুতা বাংলাদেশ ঘুরলেন। প্রকৃতি দেখলেন, নদী-সাগর দেখলেন। ঘরে ঘরে গিয়ে পিঠাপুলি, পান্তা-ইলিশ খেলেন। এদেশের মানুষ দেখে অবাক হয়ে গেলেন। বললেন,
‘দেখলাম। একটা দেশ দেখলাম।’
আমরা বাঙ্গালী। আমাদের চোখে জল এসে গেল। ছোট্ট একটা কথা আমাদের চোখে জলের বন্য বয়ে দিয়ে গেল। বিদেশীদের কাছে এর থেকে আমরা বেশী কিছু চাইনা। বোকা...... বলেই হয়তো চাইনা।
আমি সাম্প্রদায়িকতার কথা বলছি না। নেপালীদেরও ছোট করছি না। আমরা অতিথিদের সন্মান করতে জানি। আমেরিকান আর সোমালিয়ান, আমাদের কাছে সবাই সমান।
ঘটনা শেষ করা যাক। আমি থাকি নেপালীদের ব্লকে। সবাই নেপালী আমি একা বাঙ্গালী। তিনজন নেপালী ভাইকে আমার খুব ভালো লাগে। নাম অনুপ রাগমী, প্রিন্স ভান্ডারী, আরেকজনের নাম মানু।
প্রিন্স ভাইয়ের সাথে দেখা হলেই একটা অমায়িক হাসি দিবেন। হাসিহাসি মুখে বলবেন,
‘কি হীরু, কেমুন ছলছে? ( কি হীরো, কেমন চলছে?)
মানু ভাই আরেকজন মজাদার মানুষ। তিনি সারাদিন পড়ালেখা করেন আর বাথরুমে দৌড়ান। পড়ালেখা করবেন দশ মিনিট, বাথরুমে যাবেন একবার। তিনিও হেঁসেহেঁসে বলেন,
‘ভাই, স্ফিংটার ঢিলা হয়ে গেছে। পড়ালেখার চাপ সহ্য করতে পারে না।’
অনুপ রাগমী ভাই পড়ালেখা ছড়া কিছু বোঝেননা। মাঝে মাঝে ব্যলকনিতে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করি,
‘ভাই, দেশে কবে যাচ্ছেন?’
‘কেনরে? দেশের অবস্থা কি খুব খারাপ?’
‘হুম ভাই, ভয়াবহ খারাপ। সময় থাকতে কেঁটে পড়েন। জীবনহানির সমুহ সম্ভাবনা আছে।’ অনুপ ভাইয়ের মুখ ভয়ে ছাই আকার ধারন করে। এগুলো প্রতিদিনের দৃশ্য।
আজকের দৃশ্য অন্যরকম। এ,এফ,সি চ্যালেঞ্জ কাপ খেলতে নেপাল গিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল টিম। প্রথম ম্যাচে যুদ্ধবিদ্ধস্ত ফিলিস্থিনীদের কাছে হেরে গেছে। সিরিজে টিকে থাকতে হলে পরের ম্যাচগুলোতে জেতার বিকল্প নাই। প্রতিপক্ষ নেপাল। নেপালের সাথে বাংলাদেশের অতীত রেকর্ড অসম্ভব খারাপ। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের দিনগুলো রেকর্ড দেখে চলে না। পরিস্থিতি রেকর্ডকে বদলে দেয়। বাংলাদেশ বদলে গেল। নেপালের মাটিতে হারিয়ে দিল নেপালকে। এভারেস্টের মতো নেপালে আরেকবার উড়ল বাংলার লাল-সবুজ পতাকা।
পরের ম্যাচ নর্দান মারিয়ানা আইল্যান্ডের বিপক্ষে। তুলনামুলক সহজ প্রতিপক্ষ। তাতে কি? বাঙ্গালীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে নেপালের ললিতপুর সামরিক প্রশিক্ষন মাঠে। বুকে তাদের লাল-সবুজ। ওই যে দেখ, পতপত করে করে উড়ছে আমাদের বাংলাদেশ...

Written By: রাজীব হোসাইন সরকার
ফেসবুকেঃ (https://www.facebook.com/nillchokh)
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×