১
শেষ রাত।
গ্রামের বাইরে একটা মাটির ঘরে টিমটিম করে কুঁপি জ্বলছে।
কয়েকজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে আছে। বৃত্তের মাঝখানে একটা পলিথিনের বিছানা। বিছানায় গরম চালভাজা ছড়ানো।
ভাজা চালে সরিষার তেল, পেঁয়াজ-মরিচ মাখানো। তেল মাখা ভাঁজা চালের গন্ধে সবার জিহব্বায় জল আসছে। কুঁপির আলো প্রতিফলিত হচ্ছে সেই জলে।
জিহ্বায় জল নিয়ে পুরুষগুলো তাকিয়ে আছে নারীদের চোঁখের দিকে। নারীরা বিহব্বল হয়ে তাকিয়ে আছে পুরুষদের চোঁখের দিকে।
এবার সত্যিকারের পর্ব শুরু হবে। মোকতার হুজুর সবক দিবেন। মোকতার হুজুরের আস্তানার নাম সবক মঞ্জিল।
২
শীতকাল।
সবক মঞ্জিলের বাইরের টানা ঝুল বারান্দায় ভক্তরা বসে আছে। প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা নিয়ে তারা শীতে কাঁপাকাপি করছে। ঘরের ভেতরে কি হচ্ছে তারা দেখতে পারবে না।
ঘরের ভেতরের মহামানুষগুলো এখন ঈশ্বরের সান্নিধ্যে চলে যাবে। মহিলারা রোগমুক্ত হবে। সান্নিধ্য থাকবে ভোর পর্যন্ত। ভোর হলে ঘরের মহিলারা বাইরের ভক্তদের হাত ধরে চলে যাবে।
ঘরের ভেতর থেকে অস্পষ্ট শব্দ বাইরে আসছে। জিকিরের গুনগুন আওয়াজের মতো। গুরুরা সবক পর্ব শুরু করেছে।
ভক্তকুলের সদস্য ইট-ভাটার শ্রমিক মন্টু মিয়ার বাম চোঁখ দিয়ে জল পড়ছে। তার শরীরের অনেকগুলো খুঁত আছে। এক চোঁখে জল পড়া একটা খুঁত।
বারান্দায় কাঁপতে কাঁপতে দেয়ালের দিকে পীঠ লাগিয়ে বসল মন্টু। লুঁলা পা দুইটা টেনে ছেড়া কাঁথার নিচে ঢোকাল। ইট ভাটায় মাটির স্তুপে চাঁপা পড়ে তার মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। কোমরের নিচের দিকটা অসাড়। দুইটা পা লুলা। লুলা পা নিয়ে প্রথম দিকে খারাপ লাগত। এখন লাগে না।
খারাপ লাগার বহুবিধ কারন ছিল। পা লুলা হওয়ার পর বউ হাসনা বেগম স্বামীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। স্বামীর বাড়ী ছেড়ে টানা বাপের বাড়ীতে থাকা শুরু করল। মন্টূ মিয়া লোক পাঠালো। হাসনা বেগম মুখের উপর বলে দিল,
‘লুলার সাথে ঘর না করো মুই।’
মাধবপুরের মোকতার হুজুরের বদৌলতে হাসনা বেগম আবার ঘরে ফিরেছে।
মোকতার হুজুর লোকটা খবিশ টাইপের। মন্টু কিছু বলার সাহস পায় না। হাসনা বেগমের নিষেধ। মোকতারকে কিছু বললে এই মহিলা আবার বাপের বাড়ী চলে যাবে। অতি সাধারন ভালো ছেলেদের মেয়েরা পছন্দ করে না। তাদের খবিশ টাইপের ছেলেদেরর প্রতি কিঞ্চিত পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়। এটিই জগতে চরম সত্য।
শুভ্র দাড়িতে মোকতার হুজুরকে দরবেশ দরবেশ লাগে।
লোকটার চিকিৎসার পর থেকে হাসনা বেগম আর বাপের বাড়ী যায় না। হাসিমুখে সারাদিন বাড়ীতে পড়ে থাকে। কিছুদিন থেকে ঠোঁটে উগ্র লিপস্টিক মাখামাখি করছে। কিশোরী মেয়েদের মতো ‘কুটকুট’ করে সারাদিন হাসাহাসি করছে। মন্টু মিয়ার কপাল মাশাল্লাহ। ঘরের বউ ঘরে আছে, নাচানাচি করছে, এটায় বড় কথা। বউ ছাড়া বাড়ী আর চাকা ছাড়া গাড়ী এক কথা। মন্টু মিয়ার কোমর ভাঙ্গতে পারে কিন্তু বউ হারাই নাই।
মোকতার হুজুর বলেছে,
‘হাসনা বেগম ভালো হবে মন্টু ভাইজান। চিন্তার কিছু নাই। আমি চাল ভাঁজা সবক দিতাছি। সেও ভালো হয়ে উডব, আপনেও উডবেন। শুধু সবকের ডোজ বাড়াতে হবে। রোগ কঠিন, ডোজও বেশী। দিনের বেলা মাঝে মাঝে বাসাতেও দিতে হইব। কি কন?’
মন্টু মিয়া সরু চক্ষে মোকতার হুজুরের দিকে তাকায়।
চালভাজা সবকে হাসনা বেগম ভালো হতে পারে, সে কিভাবে ভালো হবে? সেতো বন্ধ মঞ্জিলে চালভাজা খায় না। মন্টু মিয়া একটা মাত্র দিনের অপেক্ষায় আছে। তার নিজের দিনে সে মোকতার হুজুরের লুঙ্গী খুলে নিবে। শারিরীক অক্ষমতা মানসিক অসহায়ত্বের পরিমান বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। মন্টু মিয়ারও দিয়েছে। প্রচন্ড ঘৃনাভরা অসহায়ত্ব নিয়ে মন্টু মোকতার হুজুরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মন্টু মিয়ার লুলা হওয়ার একটা ভালো দিকও আছে। এখন পায়ে চিমটি দিলে ব্যাথা লাগে না। একমাত্র ছেলে বারেক আগে বাবার কাছে আসত না। এখন সারাদিন পিতৃ-পদ ধরে পড়ে থাকে। পদ-ধুলি মাথায় দেবার জন্য নয়। পা নিয়ে বারেক একটা খেলা আবিষ্কার করেছে। খেলার নাম চিমটুস। এই খেলার নিয়ম হচ্ছে বারেক বাবার পায়ে বিশাল বিশাল চিমটি দিয়ে বলবে,
‘বিষ নাগে আব্বা?’
মন্তু মিয়া হেসে বলবে,
‘না আব্বাজান।
আগে বারেক একা একা চিমাটা-চিমটি করত। তাতে মনে হয় পোষাত না। এখন পাড়ার ছেলেমেয়েরা সবাই একসাথে চিমটায়। মন্টুর খারাপ লাগে না। ফুর্তি ফুর্তি লাগে। গরু মরে মরুক ছেলেরা শকুন দেখুক। পা লুলা হোক, ছেলেরা তার সাথে সারাদিন আছে এটা কম কিসে? প্রতিবন্ধীদের একমাত্র কষ্ট একাকিত্ব। মন্টু মিয়া লুলা হলেও একা নয়। সবাই আছে।
মন্টু মিয়ার বাম চোখে আবার জল আসছে। জল না মুছেই মন্টু ভাওয়াইয়া গান ধরল,
‘ও মোর চান্দেরে মোর সোনা’
পা লুলা হওয়ার আগে হাসনা বেগম এই গান প্রতি রাতে গাইত। মহিলার গানের গলা মন্টুকে পাগলা বানিয়ে দিত। কত বিনিদ্র রজনী হাসনা বানু এই গান গেয়ে ভোর করেছে, মন্টু জানে না। সবকের পর হাসনা বানু কি এই গান ভুলে গেছে? যেতেও পারে। আগে যার পদতলে গান জলাঞ্জলি দেওয়া হত তাকে ভুলতে পেরেছে, গান কেন নয়? লুলা পায়ে চিমটুস খেলা যায়, গান জলাঞ্জলি দেওয়া যায় না।
মন্টুর ইচ্ছা করছে হাসনা বেগমেকে জিজ্ঞাসা করতে। সেটা সম্ভব নয়। সে এখন সবক মঞ্জিলের ভেতরে। সবক চলছে। সবক দিচ্ছে মোকতার হুজুর। সবক শেষ হলে কি হাসনা বেগম আর কোন দিন পাগলা করা কিন্নর কন্ঠে বলবে,
‘ও মোর চান্দের মোর সোনা।’।
হয়তো করবে না। মন্টুর দীর্ঘশ্বাস গানের সুরে ছড়িয়ে পড়ল। পাশেই শীতে জমে যাওয়া ভক্তরা কাঁপতে কাঁপতে মন্টুর দিকে তাকিয়ে রইল। মন্টু বিস্ময়ে হতভম্ভ হয়ে গেল। সবার চোখ দিয়ে জল ঝরছে। মন্টু ঘোরের মাঝে গান গাইতে গাইতে দেখতে পেল সবার বাম চোখ দিয়ে জল ঝরছে। সে কি স্বপ্ন দেখছে?
গভীর রাতে সবক মঞ্জিলের বারান্দা থেকে দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে। কুয়াশা শুধু দৃষ্টিকেই আটকিয়ে দেয় না। মাঝে মাঝে অসহায় মানুষের দীর্ঘশ্বাসকেও আটকিয়ে দেয়। কুয়াশারা আজ সবক মঞ্জিলের ভক্তকুলের দীর্ঘশ্বাস আটকে দিয়েছে। তাদের স্ত্রীরা মঞ্জিলের ভেতরে মোকতার হুজুরের কাছ থেকে সবক নিচ্ছে।
৩
মঞ্জিলের ভেতরে পুরুষরা কোরাস গাইতে শুরু করল।
''চোখের পর্দা বড় পর্দা
বাইরের পর্দা খোল রে।''
পুরুষদের গলার স্বরে অস্বাভাবিকত্ব আছে। নারীরা সম্মোহিত হয়ে উঠছে। ভাঁজা চালের গন্ধ তাদের মাতাল করছে। পরনের কাপড় খুলতে খুলতে তারাও সুর করে বলতে শুরু করল,
'মনের আলো বড় আলো
বাইরের আলো নেভাও রে।''
নারী পুরুষ একসাথে ফুঁ দিয়ে কুপি নিভিয়ে দিল। হাতগুলো পেছনে রেখে তারা সম্মুখে হামলে পড়ল। তাদের জিহ্বায় জল। খেতে হবে। এখনই খেতে হবে। সবাইকে এক সাথে খেতে হবে। তার গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করল,
'আসলেই তো বাইরের আলো-পর্দা কিছুই নয়। অনন্ত মহাকালের তুলনায় তারা কত ছোট-নগন্য।''
এই নগন্য ভাবটা তাদের কাপড় খুলে বাতি নেভাতে বাধ্য করেছে।
নারী-পুরুষ একসাথে হামলে পড়ল। অন্ধকারে কে কার সাথে মিশে যাচ্ছে কেউ জানে না। মানুষ বড় কথা, মানুষের দেহ নয়। যুবকরা মিশে যাচ্ছে-মাথায় জট লাগা বৃদ্ধার সাথে। যুবতীরা মিশে যাচ্ছে আশি বছরের বৃদ্ধের সাথে। উদ্দিপ্ত যৌবন মিশে যাচ্ছে এক পা কবরে ফেলে আসা যৌবনহারাদের সাথে।
কেউ কারো শরীরে হাত রাখছে না। হাত শয়তানের অবলম্বন। পুন্যবান কাজে শয়তান আসতে পারে না। তাকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। আবাল বৃদ্ধবনিতারা শুয়ে পড়েছে। নগ্ন দেহে তারা মাটির স্পর্শে চলে যাচ্ছে। মাটি থেকে তাদের সৃষ্টি। মাটির কান্না শুনতে হলে মাটির সাথে মিশে যেতে হবে। সবাই মিশে যাচ্ছে। অতি আশ্চর্যের বিষয় কেউ কোন কথা বলছে না। তাদের মুখ ভক্ষনে ব্যস্ত।
বৃত্তের মাঝে রাখা ঝাল চাঁলভাজা খেতে মগ্ন তারা। এই চাল মাটি থেকে এসেছে। চাল মাটি থেকে এসেছে, মানুষও মাটি থেকে এসেছে। মাটির সাথে মানুষের কি অগাধ সম্পর্ক!!!
৪
‘ঘটনা খুইলা ক মোকতার। না কইলে পিডাইয়া পায়ের মালাই ফাডাই ফালাম।’
চেয়ারম্যান সাহেব হুংকার ছেড়েছেন। সিংহের মত হুংকার। দেখে মনে হচ্ছে এখনই শিকারের উপর ঝাপিয়ে পড়বেন। তার শিকার মোকতার হুজুর। একজন দরবেশতুল্য মানুষকে গাছের সাথে বেধে রাখা যায় না।
মোকতার হুজুরকে গাছের সাথে বেধে রাখা হয়েছে। তার চেহারার শুভ্রতা দর্শক নারী-পুরুষদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। ভীড়ের মাঝে কেউ গুজব ছড়িয়েছে ‘দরবেশকে মারলে ঠাডা পরবে সবার মাথায় মাথায়’। প্রচন্ড কুয়াশা পড়ছে। আকাশে মেঘ আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। এমন দিনে ঠাডা পড়ে নি আগে। আজ পড়তেও পারে, বেশীরভাগই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে চলে যাচ্ছে। বাকীরা দ্বিধান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মন্টু মিয়া একটা মোড়ার উপর বসে গাছে বাকা হয়ে হেলান দিয়ে আছে।
পা দুইটা ঝুলে আছে। লুলা পা ঝুলিয়ে রাখা অশুভ। আশে পাশে কেউ নেই। থাকলে পাদুইটা তুলে রাখা যেত। সালিশে সে প্রধান বাদী পক্ষ। মোকতারের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিতে হবে। স্বাক্ষীর বিষয় মারাত্মক কিছু নয়। মোকতার হুজুর রহিম ব্যাপারীর বউয়ের সাথে ধরা পড়েছে। দুপুরবেলা গ্রামে কেউ ছিল না।কামলা খাটতে গিয়েছিল। মন্টু ছেলেদের সাথে খেলতে গিয়ে মারাত্মক কান্ডটা দেখে ফেলেছে।
রহিম ব্যাপারীর বউকেও মোকতারের পাশেই বেধে রাখা হয়েছে। তাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে না। খোশ্মেজাজে পাশের মহিলাদের সাথে কথা বলছে। মাঝে মাঝে মোকতার হুজুরের সাথেও কথা বলাত চেষ্টা করছে। চেয়ারম্যান সাহেবের জন্য আলাপ জমাতে পারছে না। চেয়ারম্যান সিংহের মত হুংকার ছেড়ে বলছে,
‘মাগীর মুখে দেখি সরম নাই। কয়দিন থেকে?’
রহিম ব্যাপারীর বউ হাঁসি দিয়ে বলল,
‘কি কয়দিন?
‘লটকা-লটকি?’
‘সেডে কি চেয়ারম্যান সাব?’
সালিশের সবাই হেসে উঠল। চেয়ারম্যান সাহেব নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলেন। তেলিপাড়ার মানুষ বজ্জাত। কেউ ভালো নাই। সালিশ ডেকেই ভুল হয়েছে। সবাই হাসাহাসি করছে। সিরিয়াস একটা বিষয়কে পিশাপ বানিয়ে ফেলেছে। লুঙ্গী তুলল আর পিশাপ করল। এটা হয় না। মোকতার ঘাঘু লোক। পালের গোদা। গদা টাইট হলে সাগরেদরা হরি হরি করতে করতে পালাবে। চেয়ারম্যান আবার হুংকার ছাড়লেন।
মন্তুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘তুই কি দেখছিস মন্টু? খুলে ক। সব কডারে ধইরা গাছের সাথে বাইন্ধা পিডামু। এলাকা বেশ্যাখানা বানাইছে। আতোয়ার চেয়ারম্যান যতদিন আছে এলাকা সোজা থাকবে। কাচা কঞ্চি দিয়া পিটিয়ে গায়ের ছাল তুলে ফেলাম।’
মন্টু অনেক কিছুই দেখেছে। মন্টুর পাশের বাড়ীর ঘটনা। গ্রামের সবাই দিনে কামলা খাটতে যায়। মন্টুকে কেউ গোনায় ধরেনা এখন। মন্টু একটা মাত্র দিনের অপেক্ষায় ছিল। আজ তার দিন। মোকতার হুজুরের আজ লুঙ্গী খুলে গ্রাম ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াবে। মন্টু বলল,
‘কিছু দেখি নাই চেয়ারম্যান সাব।’
চেয়ারম্যান সাহেব বিস্মিত হলেন। মন্তু মিয়া তাকে গোপনে সংবাদ পাঠিয়ে সালিশের ব্যবস্থা করেছে। এখন অস্বীকার করছে।
‘মন্টু মিয়া সত্য ঘটনা খুইলা কও। তোমার পায়ের মালাইও ফাডাই ফেলমু কল।’
‘কিছু দেখি নাই।’
‘আমাকে তাইলে খবর পাঠাইছিলা কে?
‘কিছু দেখি নাই, চেয়ারম্যান সাহেব।’
সবাই হাসাহাসি শুরু করেছে। চেয়ারম্যান সাহেব অসহায় বোধ করছে। কি অসম্ভব ভালটায় না বাসেন তিনি তেলিপাড়ার লোকগুলোকে। এরা চক্রান্ত করে তার সাথে বেইমানী করছে। চেয়ারম্যান সাহেব দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বেইমানী আর ভালোবাসার কি অদ্ভুত পাশাপাশি বিচরন।
৫
মন্টু মিয়া উঠোনে বসে আছে।
তার প্রচন্ড ইচ্ছা করছে বাড়ীর বাইরে যেতে। ছেলেরা কেউ চিমটুস খেলতে আসে নি। সবাই মানব যন্ত্র নিয়ে খেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। মন্টু মিয়া ছেঁচড়ে যেতে চেষ্ঠা করল। পারছে না। দুইটা শীর্ন হাতের শক্তি তার শরীরের অবশ অংশগুলোকে বহন করতে পারছে না। প্রচন্ড অবহেলা আর অসহায়ত্বে চোখে জল ঝরছে। আজ শুধু বাম চোখে ঝরছে না। ডান চোখ তার জলের বাধ খুলে দিয়েছে। গান শুনতে ইচ্ছা করছে। নির্ঘুম গভীর রাতের কিন্নরী কন্ঠে হাসনা বেগমের গলায়।
এই মুহুর্তে হাসনা বেগমকে কিছু বলা সম্ভব নয়। তার সবক চলছে। মঞ্জিল ছেড়ে বাড়ীতে। ঘরের দরজা বন্ধ করে মোকতার হুজুর সবক দিচ্ছে। হাসনা বেগম উচ্চ স্বরে হাসাহাসি করছে। মন্টু মিয়া ফুঁপিয়ে উঠল। তাতে কি?
‘বউ তো আছে। বউ ছাড়া বাড়ী আর চাকা ছাড়া গাড়ী ত এক কথা। লুলা লোকের সাথে কে ঘর করে? হাসনা বেগম তো করছে।
কুয়াশা ঢাকা দুপুর বেলায় মন্টু মিয়ার হাহাকার দূরে ছড়িয়ে যেতে পারছে না। কুয়াশায় জমে যাচ্ছে।
কি কষ্ট!
কি কষ্ট!!
কি কষ্ট!!!
পাদটিকাঃ
গল্পের পটভূমি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। আদিম কর্মাকান্ডটি চলত রংপুরের পীরগঞ্জের এক অজপাড়াগায়ে। কিছু বিকৃত মানুষরা একে বলত হল্কা। হল্কা নিয়ে যথেষ্ট পড়াশুনা করেও বাস্ত্ববের সাথে মিলাতে পারি নাই।
প্রচন্ড গরীব আর অসহায় পুরুষরা একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের কাছে জিম্মি ছিল। স্ত্রীদের উন্মত্ততা হোক বা অর্থের শক্তিমত্তায় হোক... ঘটনা দীর্ঘদিন চালু ছিল। অতি উৎসাহী পাঠকরা খোজ নিতে পারেন।
গল্পের মোকতার হুজুর কোন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নহে।
তত্বাবধায়ক সরকার ফখরুদীনের সময় সবক মঞ্জিল হারিয়ে যায়।
ফখরুদ্দীন সাহেবের কাছে কৃতজ্ঞ।
উৎসর্গঃ
প্রিয় ব্রাদারেষেষু,
পক্ষীমানব ডাঃ আসাদ জামান ভাই (৩৭ তম, রমেক)
আপনি মাটিতে কেন?
আপনার বিচরন স্থল আকাশ।
এতো মেধা আর সৌন্দর্য থাকলে, আমি মাটিতে পা রাখতাম না। ইকারাসের মত আকাশে-বাতাশে উড়া-উড়ি করতাম।