somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ কষ্টের পুরষ্কার

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সানমুন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সুইং সেকশনে সবাই নারী। এই সেকশনের কাজ হলো জামা কাপড় সেলাই করা, আর এই গার্মেন্টসে এখানে নারীদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এই সেকশনটিকে সাধারণত নারীরাজ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আজকে এই নারীরাজ্যের সবাই একত্রিত হয়েছে। সারাবছরে নিজেদের কাজকর্মের মূল্যায়ণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সভার ডাক দিয়েছে সুইং সুপারভাইজার সুমাইয়া। সুমাইয়া তাঁর নোটবই খুলে বললো, 'আমাদের সেকশনের কিছু কিছু মেয়ে এ বছরের "সেরা কর্মী" হিসেবে আমিনা বেগম আয়াশের নাম প্রস্তাব করেছে। আমিনাকে একটা কাজে অন্য জায়গায় পাঠানো হয়েছে। এখন এই প্রস্তাব সম্বন্ধে তোমাদের যার যা মতামত তাই বলো।'

আফিফা চিটাইংগা উচ্চারণে জানায়, 'আমিনা? হ, ঠিক আছে। হেতি খুব ভোরে গার্মেন্টসে আসি যন্ত্রপাতি চালু করে, আবার অপিস থিকা যায়ও হগলের শেষে। অনেক খাটে মাইয়াটা।'

লিমা নামের একজন বয়স্কা বললেন, 'হেই গেলো বছর আমিনা ফ্যাক্টরির সিঁড়িতে একটা ঘড়ি কুড়ায় পাইছিলো। হেরপর মাগগোমা আমিনা হেইখানেই দাঁড়ায় থাইকা পা ফুলায় ফেলছে। ঘড়ির মালকিন ঘড়ি খুইছতে খুইছতে হেই জায়গায় আসি হেরপর আমিনা জায়গা ছাড়ছে।"

আমিনা যে কাজের প্রতি কতোটা আত্মনিয়োগী সেটা চাঁদনী নামের ষোড়শি মেয়েটির উৎফুল্ল গলায় বোঝা গেলো। সে জানালো, আমিনার মেয়ের গায়ে গরম পানি উলটে পড়লে তাঁর গায়ের অনেক জায়গা পুড়ে গিয়েছিলো, কিন্তু সে সময়েও আমিনা ছুটি না নিয়ে প্রতিদিন গার্মেন্টসে এসে কাজ করেছে।

আরও একটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিলো ফারজানা। তাদেরই প্রাক্তন সহকর্মী শিউলির যখন জলবসন্ত রোগ হয়েছিলো তখন আমিনা রোজ হাসপাতালে গিয়ে তার দেখাশোনা করেছে।

সুপারভাইজার সুমাইয়া এবারে বললো, 'বেশ তা হলে দ্বিমতের সম্ভাবনা কম বলেই মনে হচ্ছে। তবু প্রত্যেকের মতামত শোনার পর আমাদের সেকশনের সুপারিশ ফ্যাক্টরির ইউনিয়নের কাছে জমা দেবো। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেফাত সাহেব বলেছেন, এবার যাদের "সেরা কর্মী" বলে বেছে নেয়া হবে তাদের প্রত্যেককে একটি করে মাইক্রোওভেন দেয়া হবে।'

সবাই সমস্বরে অবাক হয়ে গেলো, "মাইক্রোওভেন!"

সবার মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো। গুঞ্জন থামিয়ে কোনায় চুপচাপ বসে থাকা দেখতে ছিপছাপ গড়নের রেহানা এসে বললো, 'এই ধরণের বাছাইয়ের কোন মানেই হয় না। আগের মতোই শুধু গুটিকয়েক লোকের মধ্য থেকে একজনকে ঠিক করে রাখা হয়।'

বয়স্কা লিমা এবার রাগান্বিত স্বরে জানাচ্ছে যে একমাত্র আমিনাই আদর্শ ব্যক্তি এ কথা সে বিশ্বাস করে না। হতে পারে সে ঘড়ির মালিককে ঘড়ি ফিরিয়ে দিতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো, কিন্তু তা না করে সে সেটা ফ্যাক্টরির অফিসে জমা দিয়ে দিলেই পারতো। লিমার আরও জানায় তাঁর মনে হচ্ছে এটা হলো আমিনার একটা লোক দেখানো ব্যাপার। মহৎ কাজের নামে ঐখানে দাঁড়িয়ে থেকে সে আসলে ফ্যাক্টরির কাজে ফাঁকি দিয়েছে।

চাঁদনীও গলা অনেকটা অন্ধকার করে বলছে, 'আমিনার মেয়ের পুড়ে যাওয়া দেখেই ওনাকে আমার আর বুঝতে বাকী নেই। আমি স্পষ্টই বলেছিলাম, ওনার কোন আবেগ নেই। আমার যদি মেয়ে হতো আর তার এরকম দশা হলে আমি মেয়েকে বাড়িতে ফেলে ফ্যাক্টরিতে আসতাম না। বরং আমি অফিসের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতাম!'

হঠাৎ কৌতুহলী ভাব নিয়ে ফারজানা আরও বলে, 'আচ্ছা জলবসন্তের মতো ছোঁয়াচে রোগের পরোয়া না করে কেউ কারও পাশে থাকে? যেখানে সে নিজের মেয়েকেই বাড়িতে রেখে অফিস করেছে! আমারতো মনে হচ্ছে এটা বানানো গল্প।'

সবার কথা শুনে যারপরনাই দ্বিধায় পড়ে গেলেন সুপারভাইজার সুমাইয়া। তিনি বললেন, 'তাহলে? আমরা কি এখন অন্য কারও নাম সুপারিশ করবো? সময়তো কম! আমাদের সুপারিশ জানার পর তবেই ইউনিয়ন ওদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারবে। কাজ কি কম!'

'টাকা নেবে! তার মানে!?'

পরিবেশ আবার অশান্ত হয়ে উঠলো। সুমাইয়াকে এবার জোরে গলায় বলতে শোনা গেলো, 'সেরা কর্মীদের প্রত্যেকের জন্য পুরষ্কার বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা, কিন্তু মোটামুটি একটা মাইক্রোওভেনের দাম ৭ হাজার টাকার উপরে। তাই বাড়তি টাকাটা সেরা কর্মীদের কাছ থেকেই আদায় করা হবে।'

গুঞ্জন থেমে গিয়ে সভার এতোগুলো নারী একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো। এরপর সবার আগে মতামত দেয়া আফিফা জানালো, 'আমার মতামততো আমি আগেই বলেছি। সেরা কর্মী যে-ই হোক আমার কোন আপত্তি নেই।'

বয়স্কা লিমা বললো, 'আমিনা'তো ভালাই।'

ষোড়শি চাঁদনি জানায়, 'ঠিকই কইছেন খালাম্মা। ছোটোখাটো ভুলভাল কার না থাকে!'

ফারজানা জানালো, 'হ, আমারও একই কথা।'

এবার নিশ্চিন্ত হয়ে সুপারভাইজার সুমাইয়া নোটবইতে আমিনা বেগম আয়াশের নাম চূড়ান্তভাবে লিখে নিলেন। আয়াশ নামের অর্থ "কষ্ট" কেউ আর সেটা জানলো না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০৬
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×