প্রবর রিপনের গানের সাথে পরিচিত হয়েছি মনোস্মরণি দিয়ে। "তোমাকে খুজেছি সরোবর থেকে সরোবর", "মানুষ না ক্রীতদাস", "জন্মান্ধের কানামাছি খেলা", "সুদর্শন রোবট" অসাধারণ সব গান আর কথা দিয়ে মন জয় করেছিলো মনোস্মরণি। কিন্তু ব্যান্ডটা টিকলো না!
এরপর জেনেছি তিনি সামহোয়ার ইন ব্লগেরই প্রবর রিপন, ব্লগে দূর্দান্ত কবিতা পড়ে যার ফ্যান হয়েছিলাম।
সম্ভবত ২০১৮ সালে হঠাৎই "সূর্যের অন্ধকার" গানটা শুনি দেশ টিভির লাইভে। খুঁজে খুঁজে শুনে ফেলি আত্মহত্যার গান, অন্ধ দেয়াল। শোনার পর থেকেই গানগুলোর স্টুডিও ভার্সনের জন্য গায়কের পোষ্টে কতবার কমেন্ট করেছি মনে নেই। স্টুডিও ভার্সনের অভাবে যা ছিলো তাই শুনতাম ঘুরে ফিরে বারেবারে। মনেমনে গানগুলোর ফিল নেয়ার চেষ্টা করতাম।
স্টুডিও ভার্সনের জন্য যেন হাজার বছরের অপেক্ষা শেষ হয়ে গেলো আজকেই। এই গানগুলো সহ আরও সাতটা গানের এলবাম রিলিজ দেয়া হয়েছে Shonar Bangla Circus থেকে। প্রবর রিপনেরই গড়ে তোলা ব্যাণ্ড।
সূর্যের অন্ধকার এবং আত্মহত্যার গানের লিরিকের কিছু অংশ দিয়ে দিচ্ছি:
"মৃত্যু উৎপাদন কারখানা"
সূর্যকে দেখে মনে হয়
ফেরেশতাদের তাক করে রাখা কামানের গোলা
আমরা মৃত্যু উৎপাদন করি
**সূর্যের অন্ধকার**
আমাকে ছেড়ে তুমি যেখানে যাবে সেখানে সূর্য অন্ধ
আমাকে ছেড়ে তুমি যেখানে যাবে সেখানে সময় বন্ধ
আমাকে ছেড়ে তুমি যেখানে যাবে সেখানটা চোরাবালি
তোমার শরীর গিলে নেবে, তোমাকেই গিলে নেবে
শোনো গভীর কোনো ষড়যন্ত্রে
পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে সব রেলপথ, জলপথ, আকাশ পথ
রেলপথ, জলপথ, স্থলপথ
বলো কোন পথে তুমি যাবে
"আত্মহত্যার গান"
পাহাড়ের চূড়ো থেকে পাথর
গড়িয়ে পড়ছে তোমার পায়ে
যেন সূর্যের হৃদয় চুরি করে
কে যেন ছড়িয়ে দিয়েছে গায়ে
পাথর ঘষে ঘষে যে আগুন জ্বেলেছিলে
তারই শিখায় পুড়ছ তুমি নিজে
এমনকি যে বৃষ্টির অপেক্ষায় বেঁচে আছ
আগুনের আঁচে সেই মেঘ বাষ্প হয়ে
মিলিয়ে গেছে হৃদয় শুণ্য নভোনীলে
"অন্ধ দেয়াল"
দেয়ালের ছায়ায় দেখো বাড়ছে দেয়াল একা
নিজের দেহ রেখে ছায়াতেই লেপ্টে থাকা,
ভাঙতে তোমার ব্যাথা হলাম জীবনের সখা
প্রেমের বিরাট দামে শুধু মৃত্যুকে কিনে আনা
গানগুলো প্রসঙ্গে প্রবর রিপন বলেন, ‘একটা জার্নি রয়েছে পুরো অ্যালবামে। হায়েনা এক্সপ্রেসের মাধ্যমে কেউ একজন জন্ম নিয়ে পৃথিবীতে আসে। এসে সে হায়েনা এক্সপ্রেসে উঠে। ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’ বলতে সময় বা মানুষের গতি এই জিনিসটাকে আমরা বুঝাতে চেয়েছি। যেমন আমরা জন্মগ্রহণ করি-তারপর পড়াশোনা করি, এক সময় আমরা দাসত্বমূলক কাজের ভিতর ঢুকি। সেভাবে মৃত্যু উৎপাদন কারখানায় সে ঢুকে। তারপর বুঝতে পারে যে আসলে এখানকার মানুষ না সে। তখন সে অন্ধ দেয়াল গানের মাধ্যমে ভেঙে বের হয়ে আসে। এসে সে মানব প্রেম বা যেকোনো প্রেমের দিকে যায়; তারপর সে আসলে টের পায়, যা অবস্থা এটাও ঠিক তার জন্য যাচ্ছে না। তার ভেতরে মজ্জাগত একটা অসুখ তাকে খোঁচা দেয় অনেক বেশি। সবকিছু যেমন স্বাভাবিক হওয়ার ছিল তেমনটা হয় না। তারপর পৃথিবীর সমস্তকিছু নিয়ে বিরক্ত শুরু হয় ‘ক্রমশ’ গান দিয়ে। এরপর সে জাহাজে চড়ে একটা দ্বীপে যায়, যে গানটা হল ‘পারফিউমের ফেলে দেয়া বোতল’। এভাবে ‘এপিটাফ’ দিয়ে সমস্ত ঘটনার শেষ হয়।’
‘মূলত অ্যালবামটি হল কনসেপ্টচুয়াল। পুরো একটা গল্প। অ্যালবামের গানগুলো একটানা শুনলে এই অভিজ্ঞতাটা পাওয়া যাবে।’ গানগুলোর লিরিক এবং সুরও করেছেন প্রবর রিপন।
সর্বশেষ কোন গানের এলবামের জন্য এরকম হাজার বছরের অপেক্ষা ছিলো আমার মনে পড়ে না। বড় হতে হতে ভেবেছিলাম পৃথিবীর সব ভালো গান গাওয়া হয়ে গেছে। এরপর আচমকাই আবিষ্কার করেছি প্রবর রিপনের গান। তার কন্ঠের কোন তুলনা নেই, শুধু আসক্তি আছে।
প্রবর রিপন গীতিকার এবং গায়ক পরিচয়ের আগে একজন কবি। তিনি আমার প্রিয় গায়ক, প্রিয় কবি।
সবগুলো গান পাওয়া যাবে ইউটিউবে অফিসিয়াল চ্যানেলে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:১৬