somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষন

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি – আমেরিকা ফ্রি সেক্সের দেশ ।
.
ছেলেবেলায় ফ্রি মানে বুঝতাম বিনামূল্যে । এই ধরেন হারপিক কিনলেন দুকান থিকা, মগ ফ্রি B-) । হরলিকস কিনলেন, চামচ ফ্রি :) । শ্যাম্পু কিনলেন, সাবান ফ্রি :) । ছোট মাথায় আসতোনা ব্যাপারটা, সেক্স ফ্রি হয় কেম্নে । ব্যাপারটা কি এইরকম, একবস্তা চাউল কিনলে একঘন্টা সেক্স ফ্রি ? :)
. :)
তবে দেখতাম, যারা এইটা কইতো, তারা বিশাল ‘ফিল’ নিয়া কইতো । যেন তারা ওইদেশে যাওয়ামাত্র তাগো উপ্রে কাপড়চোপড় খুইলা দুইতিনখান ব্লন্ড সুন্দরী ধামাধাম কইরা এসে পড়বে। তাদের এই ফ্যান্টাসীর জন্যই কিনা জানিনা, মানুষ লাইন দিয়া ডিভি লটারির ফর্ম ফিলাপ করতো ।
.
আমাদের মাতা-পিতারা শিশুবেলায় আমাদের বাগানের গল্প শুনাইতো । ঐ যে বাগানে একদিন তারা হাটতেসিলেন, দেখলেন বিশাল একটা গোলাপফুলের উপ্রে আমি পইড়া আছি । তারপর তারা তুইলা নিয়া আইসা আমারে পাইলাপুইষা বড় করলেন, শালা পুরাই ইলিয়াস কাঞ্চনের পার্সোনাল ভার্সন । সেই সময়ে দেশের আপামর বাচ্চাকাচ্চার ধারণা ছিলো বিসমিল্লাহ বইলা চুম্মা দিলেই বাচ্চা হৈয়া যায়।
.
আর একটু বড় হৈয়া আমরা বুঝি, মাই হোল চাইল্ডহুড ওয়াজ এ লাই।
.
আসেন একটা প্রশ্নের মাধ্যমে আসল টপিকে যাওয়া যাক । আপনি সেক্স সম্বন্ধে জানসেন কিভাবে ? আই মিন টু সে, আপনার সেক্স এডুকেশন হৈসে কেম্নে ??
.
আমি জানি, আমি খুবই শিক্ষিত ও সুসভ্য একটা ফেসবুক সার্কেল মেইনটেইন করি, আপনাদের মেধা, মনন ও মানসিকতার প্রতি পূর্ণাঙ্গ সম্মান রাইখাই বলতাসি – চটি পড়ে অথবা পর্ণ দেখে । অথবা কোন বন্ধুর কাছে যে এগুলো দেখে শিখেছে ।
.
চটি পড়ে বা পর্ণ দেখে সেক্স এডুকেশন পাওয়া মানে সুপারহিরো মুভি দেখে লাইফলেসন নেয়া ।
.
তো ধরেন, আপনি এইসব সুপারহিরো কমিক পড়ে অথবা মার্ভেলের মুভি দেখে জীবন সম্পর্কে জানসেন । তো আপনার মনে তো প্রশ্ন হৈতেই পারে, আমার সুপারম্যান ক্যান ফ্ল্যাশের মত আচরণ করে ? মাথায় আসতেই পারে, আমার হাল্ক কেন সবসময় ব্রুস ব্যানার হৈয়া থাকে ??
.
আপনার কি মনে হয়, বাংলাদেশে এতো এতো কামরুপ কামাখ্যার হাকিম ঘুরঘুর করতেসে কেন ? ঐ যে বুরখা পড়া মেয়েরা ফার্মগেটে লোকাল বাসের জানালা দিয়ে যেই লিফলেটগুলো দিতো ঐগুলার কথা কৈতেসি । বুঝো নাই ব্যাপারটা ?
.
এইযে নিজের সুপারহিরোরে নিয়ে বিষন্নতায় ভোগা , সেক্স নিয়ে অবাস্তব ফ্যান্টাসী আর পার্টনারের কাছে অসীম চাহিদা । এইটা একটা সুস্থ সুন্দর মানুষকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে ।
.
এবং একটা চরম অসুস্থ, বিকৃত সমাজে আমরা বাস করছি।
.
আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সবার হাতে স্মার্টফোন, এবং সবার স্মার্টফোন ভরা পর্ণ । এসময় লুকিয়ে মানুষ গুপ্তদার বই পড়তো, তারপর সিডির যুগ, এখন সেই বালাইটাও নাই । গ্রামীণফোনের এমবি প্যাকেজ।
.
এবং সেক্স বিষয়ক ট্যাবুটা আমরা এখনো ভাঙতে পারি নাই। এখনো কোন পরিবারে এ বিষয়ক আলোচনা নিষিদ্ধ । কোন বাবা মা তার সন্তানকে এ বিষয়ে জানতেই দিতে চান না । তারা ধরেই নেন, কোন ফেরেশতা আইসা তাদের সোনামনিদের ‘সোনা’র ব্যবহার শিখিয়ে যাবে ।
.
বেস্ট কেস সিনারিওতে হয়তো, পর্ণ দেখে, বন্ধুদের সাথে, মুভি দেখে একসময় সন্তান শিখেও ফেলে ব্যাপারটা । কিন্তু তার মাঝে বাস করে অনেক প্রশ্ন, অনেক ট্যাবু, অনেক অমূলক ভয়। আর যদি কপাল খারাপ হয়, কোন শিশু মলেস্টারের হাতে পড়ে, অথবা পর্ণ আসক্তিতে যদি আপনার সন্তান বিকৃত যৌণ আচরণকারী দানবে পরিণত হয়, তার দায়ভারও কিন্তু আপনারই ওপর বর্তায় ।
.
আমার মাথায় সবসময় একটা আজব প্রশ্ন ঘুরঘুর করে ।
.
ধরেন, যারা মেয়েদের ইনবক্সে নিজের ইয়ের ছবি পাঠান, তারা কি ভেবে সেইটা পাঠান ? মেয়েরা তার ওইটা দেখে মুগ্ধ হয়ে ‘ওয়াও’ বইলা জামাকাপড় খুলে লাফাতে লাফাতে তার কাছে চলে আসবে ? নাকি সাথে সাথে ফোন করবে – বেবি, তুমি যেইখানেই থাকো, উবার নিয়া আমার বাসায় তাড়াতাড়ি আইসা পড়ো, আমি আব্বারে কইতাসি আম্মারে নিয়া দুইঘন্টার জন্য রমনা পার্ক থিকা ঘুইরা আসতে ।
.
তারা কি মনে করেন ? ইনবক্সে আপনি মেয়েদের ডার্টি জোক্স পাঠালে মেয়েটা গালে হাত দিয়া বলবে – ওয়াও, কি জোস সেন্স অফ হিউমার মাশাল্লাহ । এই আম্মা শুনতাসো, তোমাগো জামাই পাওয়া গেসে ।
.
তাহলে এই ছেলেগুলো দিনের পর দিন যে মেগাবাইট খরচ করে নিজের শ্রীলঙ্কার ছবি মেয়েদের পাকিস্তানের কাছে পাঠাইয়া যাচ্ছে, সেটা কি কারণে?
.
কারণ, সেক্স জিনিসটা তাদের কাছে ফ্যান্টাসী । এইটা একটা ফান । খাইয়া ছাইড়া দেয়া একটা এ্যাচিভমেন্ট । রেপ করা আরো বড় এ্যাচিভমেন্ট । আর কিছুদিন পরে পোলাপান লাইফ ইভেন্ট দেবে ধর্ষন করে ।
.
দেশে রেপ বাড়তেসে । আশঙ্কাজনক হারে বাড়তেসে । সেগুলোর এক হাজার ভাগের একভাগ হয়তো পত্রিকায় আসে, ভাইরাল হয় । চলন্ত বাসে ধর্ষণ হচ্ছে, স্কুলে-কলেজে ধর্ষণ হচ্ছে, ধর্ষণের পর হত্যা হচ্ছে। পহেলা বৈশাখে, মেলায়, কনসার্টে এমনকি রাজনৈতিক মিছিলেও নারীদের উপরে যৌণ হামলা হচ্ছে। আমি আমার স্ত্রীর সাথে রাস্তায় চলি, ছেলেদের চোখ বাংলা সিনেমার ক্যামেরাম্যানের মত দুইটা জায়গায় ফোকাস হয়ে থাকে।
.
সত্যি কথাটা বলি, বাংলাদেশের রাস্তায় একটি মেয়েও আজ নিরাপদ নয়।
.
এরই মাঝে একদল মেয়ে মাথায় বাধাকপির মত কাপড় বাইন্ধা ‘মিষ্টি খোলা রাখলে মাছি’ তো বসবেই তত্ত্ব আওড়াইতেসে । আর একদল মহিলা আছেন যারা ‘ব্রা এর ফিতা দেখাবো’ আন্দোলনের সাথে যুক্ত। যেন ব্রা এর ফিতা দেখাইলেই সমাজের সকল সমস্যার সমাধার হৈয়া যাইবো । কিছু লোক এই অবস্থায় পায়জামা হাতাইতে হাতাইতে কইতেসে, বালেগ হওনের পরপর বিয়া দিলেই তো সমস্যা মিটা যায় ।
.
হালার্পো, ১৫ বছর বিয়া দিয়া ৩৫ বছর বয়সে যখন চাইর সন্তানসহ বিসিএস দিবো, তখন লাঠি নিয়া তোমারে খুজবো সেক্স এডুকেশন দেওনের লাইগা ।
.
এই সমস্যার তাৎক্ষণিক কোন সমাধান নেই ।
.
সরকারেরর উচিৎ দেশের প্রচলিত আইন সংশোধন করা । নারী নিপীড়নকারীদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জনসম্মুখে দেয়া যাতে সেটা দেখে আরো একশো পটেনশিয়াল রেপিস্টের মানসিক মৃত্যু হয়।
.
আর আপনি আপনার সন্তানকে বন্ধু বানান । নারীদের সম্মান দেয়া শেখান, এই শিক্ষা পরিবার থেকে আসে, নাহিদ চাচ্চু এইটা দিবে না কোনদিন। নারী মানেই যে খাওয়ার জিনিস না, এবং সেক্স যে কোন রকেট সায়েন্স না, এইটা বোঝান । জানি, লজ্জা লাগে । কিন্তু, আমরা এমন একটা জাতি, গুগলে কোন নারীবোধক শব্দ লিখলে সার্চ রেজাল্টের দিকে তাকাতে আরো অনেক বেশি লজ্জা লাগে । এবং লজ্জাজনক হারে এই লজ্জা বাড়তেসে ।
.
.
.
এই লজ্জার দায় কি আপনি নিতে প্রস্তুত ?
কপিড- শাহরিয়ার আজম

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:১৮
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×