(১ম খন্ড পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে )
নিউরোসায়েন্স বলছে, যখন আপনি ভালোবাসার স্বাদ অনুভব করতে থাকবেন, আপনার মস্তিষ্কে বেশ কিছু রাসায়নিকের উৎপাদন বেড়ে যাবে। এদের মধ্যে আছে টেস্টোস্টেরন, এস্ট্রোজেন, ডোপামিন, নরএপিনেফ্রিন, সেরোটোনিন, ফিনাইল-ইথাইল-অ্যামিন, অক্সিটোসিন আর ভ্যাসোপ্রেসিন। এরা অনেকে অ্যাম্ফেটামিন গোত্রভুক্ত। কাজ কী এদের? ড. অ্যান্টনি ওয়ালশ গবেষণা করেছেন এসব বিস্ময়কর রাসায়নিকের ততোধিক বিস্ময়কর শারীরিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে। তাঁর বিখ্যাত “The Science of Love: Understanding Love and Its Effects on Mind & Body” বইতে তিনি কী বলছেন দেখুন, “Higher levels of testosterone and estrogen are observed during the lustful phase of a relationship; oxytocin and vasopressin seem to be more closely linked to long term bonding and relationships characterized by strong attachments.” তবে তাঁকে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে ফিনাইল-ইথাইল-অ্যামিন (Phenylethylamine বা PEA) নামের যৌগটি। এ এমন এক রাসায়নিক যা আপনাকে পুলকিত করে, অচেনা- অজানা কাউকে দেখলে শিহরণ জাগায়, একধরনের বোকার হাসি হাসায় আর মুখমন্ডলে রক্তিমাভা উদ্ভাসিত করে। আপনাকে আকর্ষণ করে এমন কারো সান্নিধ্যে আপনি যখন আসেন, সাথে সাথেই পৌঁছে যায় খবর, আপনার মস্তিষ্কের PEA-র ফ্যাক্টরিতে। ফ্যাক্টরি তখন নব উদ্যমে PEA তৈরি করতে শুরু করে, যা একটু একটু করে আপনার রক্তে এসে মিশতে থাকে, আর আপনার মনে হয়, পৃথিবীটা কতইনা সুন্দর! অবশ্য এভাবে পৃথিবীটাকে আপনার আর বড়জোর চার বছর রঙ্গিন মনে হবে। এই সময়কালটাকে ড. ফিশার রসিকতা করে বলেছেন ‘Four-year itch’ বা ‘চার বছরের চুলকানি’! কেন থেমে যায় এই চুলকানি? ব্যাখ্যা দিয়েছেন ড. ওয়ালশ- PEA নিঃসরণের ফলে যে শারীরিক প্রতিক্রিয়া হয় তা যে সবসময় একইরকম থাকবে তা নয়। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় Tolerance বা খাপ খাওয়ানো বলে একটা কথা আছে। যে কোন রাসায়নিকই প্রাথমিকভাবে কোন প্রাণীর শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণে যতটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সময়ের ব্যবধানে তা আর করতে পারেনা; শরীর প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। তখন মাত্রাটা বেশি লাগে। কিন্তু এর নিঃসরণের একটা সীমা তো আছে। দেখা গেছে ভালোবাসা শুরুর বা প্রেমে পড়ার মোটামুটি চার বছরের মাথায় যে পরিমাণ PEA অনুভূতি চাঙ্গা করার জন্য প্রয়োজন, সে পরিমাণ PEA নিঃসরণ করার ক্ষমতা শরীরের থাকেনা। আর এটাই হলো চরম আবেগজনিত ভালোবাসা বা Passionate love ক্ষণস্থায়ী হবার মূল কারণ। আরেকটি কারণ আবিষ্কৃত হলো এইতো সেদিন, ২০০৫ সালে। ইতালির পাভিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক দেখতে পেলেন, সদ্য প্রেমে পড়া মানুষের শরীরে Nerve growth factor (NGF)-এর মাত্রা প্রেমে না পড়া মানুষের তুলণায় অনেক বেশি থাকে, তবে বছরখানেকের মধ্যেই এর মাত্রা প্রেমে পড়ার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। তাঁরা তিনধরনের নারী-পুরুষদের নিয়ে তিনটি গ্রুপ করলেন- গ্রুপ ১ যারা মাত্রই প্রেমে পড়েছে, গ্রুপ ২ যারা এখনো প্রেমে পড়েনি এবং গ্রুপ ৩ যারা ইতিমধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে আবদ্ধ। প্রতি গ্রুপে থাকলো ৫৮ জন করে নারী ও পুরুষ। একটা নির্দিষ্ট সময় পর প্রত্যেকের শরীরে চারটি বিশেষ ধরনের Neurotrophin (NGF, BDNF, NT-3, NT-4)-এর লেভেল মাপা হলো। গ্রুপ ১-এ এই Neurotrophinগুলো অনেক বেশি মাত্রায় পাওয়া গেলো অন্য দুটি গ্রুপের চেয়ে। এর ব্যাখ্যা এটাই হতে পারে যে, Neurotrophin-এর উপস্থিতি কম থাকার কারণেই হয়তো গ্রুপ ২ এখনো প্রেমে পড়েনি আর গ্রুপ ৩-এ উন্মত্ত প্রণয়াকাঙ্ক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
(আগামী খন্ডে সমাপ্য)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১১:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




