somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার প্রাণরসায়ন ২

০১ লা মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১ম খন্ড পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে )
নিউরোসায়েন্স বলছে, যখন আপনি ভালোবাসার স্বাদ অনুভব করতে থাকবেন, আপনার মস্তিষ্কে বেশ কিছু রাসায়নিকের উৎপাদন বেড়ে যাবে। এদের মধ্যে আছে টেস্টোস্টেরন, এস্ট্রোজেন, ডোপামিন, নরএপিনেফ্রিন, সেরোটোনিন, ফিনাইল-ইথাইল-অ্যামিন, অক্সিটোসিন আর ভ্যাসোপ্রেসিন। এরা অনেকে অ্যাম্ফেটামিন গোত্রভুক্ত। কাজ কী এদের? ড. অ্যান্টনি ওয়ালশ গবেষণা করেছেন এসব বিস্ময়কর রাসায়নিকের ততোধিক বিস্ময়কর শারীরিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে। তাঁর বিখ্যাত “The Science of Love: Understanding Love and Its Effects on Mind & Body” বইতে তিনি কী বলছেন দেখুন, “Higher levels of testosterone and estrogen are observed during the lustful phase of a relationship; oxytocin and vasopressin seem to be more closely linked to long term bonding and relationships characterized by strong attachments.” তবে তাঁকে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে ফিনাইল-ইথাইল-অ্যামিন (Phenylethylamine বা PEA) নামের যৌগটি। এ এমন এক রাসায়নিক যা আপনাকে পুলকিত করে, অচেনা- অজানা কাউকে দেখলে শিহরণ জাগায়, একধরনের বোকার হাসি হাসায় আর মুখমন্ডলে রক্তিমাভা উদ্ভাসিত করে। আপনাকে আকর্ষণ করে এমন কারো সান্নিধ্যে আপনি যখন আসেন, সাথে সাথেই পৌঁছে যায় খবর, আপনার মস্তিষ্কের PEA-র ফ্যাক্টরিতে। ফ্যাক্টরি তখন নব উদ্যমে PEA তৈরি করতে শুরু করে, যা একটু একটু করে আপনার রক্তে এসে মিশতে থাকে, আর আপনার মনে হয়, পৃথিবীটা কতইনা সুন্দর! অবশ্য এভাবে পৃথিবীটাকে আপনার আর বড়জোর চার বছর রঙ্গিন মনে হবে। এই সময়কালটাকে ড. ফিশার রসিকতা করে বলেছেন ‘Four-year itch’ বা ‘চার বছরের চুলকানি’! কেন থেমে যায় এই চুলকানি? ব্যাখ্যা দিয়েছেন ড. ওয়ালশ- PEA নিঃসরণের ফলে যে শারীরিক প্রতিক্রিয়া হয় তা যে সবসময় একইরকম থাকবে তা নয়। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় Tolerance বা খাপ খাওয়ানো বলে একটা কথা আছে। যে কোন রাসায়নিকই প্রাথমিকভাবে কোন প্রাণীর শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণে যতটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সময়ের ব্যবধানে তা আর করতে পারেনা; শরীর প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। তখন মাত্রাটা বেশি লাগে। কিন্তু এর নিঃসরণের একটা সীমা তো আছে। দেখা গেছে ভালোবাসা শুরুর বা প্রেমে পড়ার মোটামুটি চার বছরের মাথায় যে পরিমাণ PEA অনুভূতি চাঙ্গা করার জন্য প্রয়োজন, সে পরিমাণ PEA নিঃসরণ করার ক্ষমতা শরীরের থাকেনা। আর এটাই হলো চরম আবেগজনিত ভালোবাসা বা Passionate love ক্ষণস্থায়ী হবার মূল কারণ। আরেকটি কারণ আবিষ্কৃত হলো এইতো সেদিন, ২০০৫ সালে। ইতালির পাভিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক দেখতে পেলেন, সদ্য প্রেমে পড়া মানুষের শরীরে Nerve growth factor (NGF)-এর মাত্রা প্রেমে না পড়া মানুষের তুলণায় অনেক বেশি থাকে, তবে বছরখানেকের মধ্যেই এর মাত্রা প্রেমে পড়ার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। তাঁরা তিনধরনের নারী-পুরুষদের নিয়ে তিনটি গ্রুপ করলেন- গ্রুপ ১ যারা মাত্রই প্রেমে পড়েছে, গ্রুপ ২ যারা এখনো প্রেমে পড়েনি এবং গ্রুপ ৩ যারা ইতিমধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে আবদ্ধ। প্রতি গ্রুপে থাকলো ৫৮ জন করে নারী ও পুরুষ। একটা নির্দিষ্ট সময় পর প্রত্যেকের শরীরে চারটি বিশেষ ধরনের Neurotrophin (NGF, BDNF, NT-3, NT-4)-এর লেভেল মাপা হলো। গ্রুপ ১-এ এই Neurotrophinগুলো অনেক বেশি মাত্রায় পাওয়া গেলো অন্য দুটি গ্রুপের চেয়ে। এর ব্যাখ্যা এটাই হতে পারে যে, Neurotrophin-এর উপস্থিতি কম থাকার কারণেই হয়তো গ্রুপ ২ এখনো প্রেমে পড়েনি আর গ্রুপ ৩-এ উন্মত্ত প্রণয়াকাঙ্ক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
(আগামী খন্ডে সমাপ্য)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১১:১০
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×