somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার প্রাণরসায়ন ১

০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসলেই তো, ভালোবাসা জিনিসটা যে কী! কবি-সাহিত্যিকরা তো ভালোবাসা ভালোবাসা করতে করতে জীবনটাই শেষ করে দিলেন। গীতিকার-সুরকারদের অবস্থাটাও দেখুন একটু! শত শত বছর ধরে এই একটা বিষয় নিয়ে এত অসংখ্য অগণিত গল্প কবিতা উপন্যাস আর গান লেখা হয়েছে যে, আমরা ভালোবাসাকে কবি আর গীতিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কিন্তু নিরেট বিজ্ঞান কী বলে? বিজ্ঞানীরা মানুষের আর দুটো অনুভূতি- ক্রোধ আর ভয় নিয়ে গবেষণাগারে অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন। কিন্তু ভালোবাসা? দুর্ভাগ্যজনকভাবে খুব বেশি কাজ হয়নি এ নিয়ে। হয়তো বিজ্ঞানীরাও মনে করেছেন যে এটা কবি-সাহিত্যিকদেরই কাজ। তাঁদের যথেষ্ট সময় আছে ভাষা দিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রকাশ করার। যাহোক শেষ পযর্ন্ত তাঁরা আর বসে থাকতে পারেননি। গত কয়েকটি বছর ধরেই বেশ কজন পিএইচডি ডিগ্রীধারী প্রাণরসায়নবিদ আর নৃতাত্ত্বিকরা ভালোবাসার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজতে যে পরিশ্রম করে চলেছেন, একটা ভালোবাসার কবিতা বা গান লেখার পরিশ্রমের চেয়ে তা কোন অংশে কম নয়! কী পেলেন তাঁরা এ পযর্ন্ত? চলুন দেখি ভালোবাসাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে ফেলে একটু জেনে নিই এমন কী রহস্য লুকিয়ে আছে এর মাঝে!

ভালোবাসা কি শুধুই আবেগ? অথবা রিরংসার অন্য নাম? জন্মায় কোথায় এটা? হৃদয়ে? নাকি অন্য কোথাও? প্রচুর গবেষণার পর এসব প্রশ্নের যে উত্তরগুলো বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, সাধারণভাবে সেগুলোকে কিছুটা উদ্ভট ও বিস্ময়কর বলে মনে হয়। বিজ্ঞানীদের দোষ নেই, তাঁরা ভুল কোন কিছু বের করেননি। আমরা বিজ্ঞানমনষ্ক চোখে ভালোবাসাকে দেখতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করিনা বলেই এমন হয়, যেহেতু ওভাবে দেখলে ভালোবাসাকে বেশি একটা ভালো নাও লাগতে পারে! যাহোক বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভালোবাসা আসলে বিবর্তন বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান আর রসায়নশাস্ত্রের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ভালোবাসা আসলে হাজার বছর ধরে বয়ে চলা মানুষের একটি পুরোপুরি অন্তর্গত প্রচেষ্টার বহমান স্রোতধারা। আর এ স্রোতধারাটি হচ্ছে মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখার প্রকৃতি-নির্ধারিত শক্তি ও কৌশল। লস অ্যাঞ্জেলেসের লয়োলা ম্যারিমাউন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল মিলস একটিমাত্র বাক্য দিয়ে এর ব্যাখ্যা করেছেন, “Love is our ancestors whispering in our ears.” এখন প্রশ্ন হলো- কবে, কোথায়, কেন শুরু হয়েছিল এই ফিসফিসানি? বিজ্ঞানীরা মনে করছেন খুব সম্ভবত মানব প্রজাতির উন্মেষের প্রাথমিক লগ্নেই ভালোবাসা নামের ফুলটি মানুষের অনুভবে পুষ্পিত হতে শুরু করেছিলো; মস্তিষ্ক থেকে রক্তস্রোতে অসাধারণ কয়েকটা নিউরোকেমিক্যাল বা হরমোনের অবিরাম বা সবিরাম প্রবাহের কারণেই এটা শুরু হয়েছিলো। এই হরমোনগুলো পুরুষ ও নারী শরীরে একধরনের রোমাঞ্চিত অনুভূতি বা ‘Thrilling feeling’ জাগিয়ে তোলে মস্তিষ্ক থেকে শিরা- উপশিরায় প্রবাহিত হওয়ার মাধ্যমে। এই অনুভূতিটাই আরো বিস্তৃত হয়ে মিলনের লিপ্সা জাগায়, রোমান্টিক সংঘাত সৃষ্টি করে। এটা যে শুধু উৎপাদনের লিপ্সা তা নয়, বরং এর বাইরেও আরো বেশি কিছু। আর এই ‘বেশি কিছু’টাই হচ্ছে ভালোবাসা, চলতি ভাষায় আমরা একে প্রেম বা Affair বলে থাকি। ভালোবাসার এই নতুন দ্যোতনা নারী-পুরুষকে এক দীর্ঘস্থায়ী বন্ধনে আবদ্ধ করে, অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে যা খুব একটা দেখা যায়না। বিখ্যাত আমেরিকান নৃতাত্ত্বিক ড. হেলেন ফিশার তাঁর “Anatomy of Love” বইতে পুরো বিষয়টাকে বলছেন প্রকৃতি-নিয়ন্ত্রিত (nature-controlled)। আমরা যাকে ‘মন’ বলে থাকি, তিনি মনে করছেন বিশুদ্ধ বিজ্ঞানে এর কোন অস্তিত্বই নেই। তাঁর বক্তব্য পড়ে ভড়কে যাবেননা যেন, “Love can preferably be outlined as the synthesis and secretion of certain magic chemical compounds from the brain to the bloodstream, stimulating some sort of physical responses (for example, an increase of blood pressure in the heart).” প্রেমে পড়া মানুষ সবসময় না হলেও প্রায়ই বলে, তাদের অনুভূতিতে এমন একটি শিহরণ বিচ্ছুরিত হয় যেন তারা ‘ভেসে যাচ্ছে’। খুব একটা ভুল বলেনা কিন্তু তারা। গবেষণায় সত্যিই প্রমাণ মিলেছে, মস্তিষ্কনিঃসৃত রাসায়নিক যৌগে তাদের শরীর অন্তসলিলায় ভাসছে। কেন নিঃসরণ ঘটে এই যৌগগুলোর? আবারো ড. ফিশার, “Only a little touch from the lover, or the scent of the lover, or even just looking at the lover can increase the synthesis and secretion of the hormones to such a great extent that the subject feels an irrepressible thrill.” এরপর শারীরিকভাবে যা ঘটে তার কিছু থাকে দৃশ্যমান, কিছু অদৃশ্য। পরিচিত ও দৃশ্যমান ফলাফল হচ্ছে- ত্বক (বিশেষ করে মুখমন্ডল) রক্তিম হয়ে ওঠা, হাতের তালু ঘেমে যাওয়া, নিশ্বাস ভারী হয়ে ওঠা। এসবই কারো প্রেমে পড়া বা কাউকে ভালোবাসা বা কারো প্রতি আকর্ষণ অনুভব করার লক্ষণ। বলা যায় এটাও একধরনের Stress বা চাপ। অবশ্য প্রচলিত অর্থে Stress বলতে যা বোঝায়, এটা একদমই সেরকম কিছু নয়। একে বরং বলা যেতে পারে ‘Exceptional stressed condition’, যা কিনা একজন মানুষকে করে তোলে উচ্ছ্বসিত, করে তোলে সুখী।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×