স্কুলের দিনগুলো ছিল মজার, প্যারাময় পড়াশুনো স্যারের মাইর, আব্বু-আম্মুর বকাবকি অথচ সুন্দর। তখন আসলে বকাবকি বা মাইর এসবের হিসাবের কোনো বালাই ছিল না, শুধু ছিল আনন্দ, খুনসুটি আর কিছু ছোট ছোট মুহূর্ত, যা এখনো মনে পড়লে হাসি পায়। আমার এক বন্ধু ছিল, যার সঙ্গে প্রতিদিন স্কুল থেকে বাসায় আসা-যাওয়া করতাম। বন্ধুত্বটা এতটাই গভীর ছিল যে, একজন অন্যজনকে ছাড়া কোথাও যেতাম না। আমরা প্রায়ই একসঙ্গে খেতে যেতাম, কখনো আমি খাওয়াতাম, কখনো ও। টাকার হিসাব কখনোই কষতে হয়নি, কারণ আমাদের বন্ধুত্বে কোন লাভ-লস নাই।
একদিন আমরা খেতে গিয়েছিলাম, তবে সেদিন টাকা একটু টানাটানি ছিল। তাই আমাদের রাজার ভোজ করার জন্য অর্ডার দিলাম পরটা আর ডালভাজি। বের হওয়ার সময় দেখি, আমার বন্ধু দাঁতে টুথপিক দিয়ে খোঁচাখুঁচি করছে, যেন সে কোনো রাজকীয় ভোজ শেষে বের হচ্ছে! যেন কত বড় একটা ভারী কালাভুনা খেয়ে বের হচ্ছে। ওর এমন ভাব দেখে আমি হাসতে হাসতে বললাম—
— কি রে, খাইলাম ডালভাজি আর তুই এমন ভাব নিচ্ছিস, যেন গরুর কালাভুনা খেয়ে বের হচ্ছিস?
বন্ধু তখন ঠোঁটের কোণে একটু রহস্যময় হাসি এনে বলে,
— শোন, ডালভাজি খেয়েছি, এটা তুই আর আমি জানি। কিন্তু বাহিরের কেউ তো জানে না! কেউ যদি জিজ্ঞেস করলে বলবো—
‘কালাভুনা খেয়ে বের হচ্ছি, তাই দাঁত খুঁটছি!’
ওর কথা শুনে আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। সত্যি, কিছু বন্ধুত্ব এমনই হয়— যেখানে সামান্য ডালভাজির মধ্যেও পাওয়া যায় রাজকীয় ভোজ
সেই দিনের কথা এখনও মনে পড়ে হাসি পায়। আসলে বন্ধু মানে খাবার থাক বা না থাক বন্ধু থাকাটাই জরুরী। বন্ধুত্ব মানেই—
"টাকার অভাব থাকলেও আনন্দের অভাব ছিল না!"

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


