somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরাজিতা নীল ১

০৫ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“গল্পটাতো শেষ হল না , অনেক পাতাই বাকি ...
মলাট জমাট রঙিন বাঁধাই , শেষের পাতায় ফাকি ...”

খুব মন দিয়ে শুনছিলাম, হাঁটছিলাম একটু চাঁপা মন নিয়ে ।
পেছন থেকে একটা ডাকা ডাকি বেশ বিরক্ত করছিল।“ নীল , নীল এই নীল ... নিইইইইল ”
বাধ্য হয়ে পেছন ফিরে তাকালাম। কানের থেকে হেডফোন টা নামিয়ে পেছন ফিরে দাড়ালাম, চেহারায় বিরক্তির ভাবটা রয়েই গিয়েছিল, কাটাতে পারিনি তখনো, লক্ষ করলাম একটা মেয়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে , কিন্তু মেয়টাকে তো আমি চিনি না, বিরক্তির সাথে সাথে কিছুটা বিস্মিতও হলাম, তাও দাড়িয়ে রইলাম।
মেয়টা আমার খুব কাছা কাছি আসতেই আমি জিজ্ঞেস করে বসলাম “জী, কিছু বলবেন?’’
উনি একটু বিব্রতকর আকস্মিক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাতে তাকাতে পাশ কাটিয়ে চলে গেল সামনের দিকে। আমি তো অবাক, এই ভাবে নাম ধরে ডেকে ডেকে ক্লান্ত হয়ে আর আমকে বিরক্তির বর্ডারে পৌঁছে দিয়ে পাঁশ কাটিয়ে চলে গেল কিছু না বলেই, আর একটু বেশি বিরক্ত হলাম এটা ভেবে। সাথে সাথে ঘুরে দাড়িয়ে বলে উঠলাম “excuse me”। আমি এটা বলতে না বলতেই দেখলাম উনি কেউ একজন এর সাথে বেশ ফুরফুরে মেজাজে কথা বলছেন, আমার সম্বোধন শুনে উনি বলে উঠলেন “ জী, আমাকে বলছেন?’’
আমি ততোক্ষণে বুঝতে পারলাম , তার সাথে যে মানুষটি দাড়িয়ে তার নামও হয়তো নীল। তাই আমি আর কথা না বাড়িয়ে বললাম “ দুঃখিত, নাহ, আপনাকে না ’’
বুঝতে পাড়লাম , বিরক্তি আমার স্বাভাবিক মস্তিস্ককে বিক্রীত করছে,।
ভাবলাম আমার ছাড়াও আরো অনেকের নামই “নীল” হতে পারে। আমিতো আর নাম টা কপিরাইট করে নেই নী।
এগুলো ভেবে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।
দিন গুলো ভালো যাচ্ছিলো না , খুব বেশি একাকিত্তের মধ্যদিয়ে কাটছিল । ডিসিশন নিলাম নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার, যেটা আমি প্রতি ১২ ঘণ্টা পর পর নিয়ে থাকি ।
আর কিছু না ভেবে হাটা সুরু করলাম বাসার দিকে, বিকেল গড়িয়ে সন্ধা প্রায়। হাঁটতে হাঁটতে বাসার কাছা কাছি চলে আসলাম আর মাগরিব এর আযান পড়ল, কবির এর দকানে চায়ে চুমুক দিতে দিতেই তোর কথা মনে পড়ল, আর তোকে ডেকে আনলাম বেতার এর সুব্যাবহার করে ।

নীল এটুকুই বলেছিল ওইদিন আমাকে ।

‘’নীল” আমার বন্ধু যন্ত্রকৌশল এর ছাত্র,একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বর্ষে পড়ছে এখন। কিন্তু ওর আমার পরিচয় আজ চার বছর হল। দুজনে একসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে অপদার্থের পথ যাত্রা সুরু করেছিলাম , একসাথে ক্লাসে জাওয়া , ক্যান্টিনে খাওয়া , এক সাথে আড্ডা দেয়া , এক সাথে ৫১০ নং রুমে এক বিছানা ভাগা ভাগি করে দিন কেটে যাচ্ছিল ভালই , অল্প দিনেই খুব জিগ্রি দোস্ত হয়ে গেলাম দুজন। হুমায়ন স্যার এর কোন বিখ্যাত চরিত্র না হলেও কিছুটা আলাদা ছিল নীল , আমি ধূমপায়ী কিন্তু আমি ওকে ইউনিভার্সিটিতে ধূমপান করতে দেখিনী ১.৫ বছরে। বন্ধু দের পাল্লায় পরেও ধরেনী সিগারেট। মাঝে মাঝে আমরা ঠাট্টা করে বলতাম তুই তো ধোঁয়া নীলে নিজেই ধোঁয়া হয়ে যাবি , ও হাসত কোন প্রতি উত্তর করত না । ওর খুব একটা গুন ছিল , অল্প সময়ে মানুষের খুব আপন হয়ে যাওয়ার। কি ভাবে পাড়ত জানি না , তবে কোন স্বার্থে ওকে কারো আপন হতে দেখি নী । ওর পরিচিত মানুষ দিনে দিনে অনেক হয়ে গেল । সবাই শুভাকাঙ্ক্ষী, সবাই ভালোবাসার মানুষ।

ও অনেক টা স্বাধীন ছিল , ওর বাসা থকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিত ওকে। আমি দেড় বছরে নীল এর আব্বুকে একবার দেখেছি ক্যাম্পসে, নীল যখন জন্ডিসে পড়েছিল । আঙ্কেল নীল কে বাসায় নিয়ে যেতে এশেছিল।
ওই সময় টা আমর খুব একা একা কেটেছে , যত দিন নীল সুস্থ না হয়ে ফিরে আসছিলো। তখন খুব প্রকট ভাবে বুঝতে পেরেছিলাম ওর আমর বন্ধুত্ব টা কতটা গভীর হয়ে গিয়েছিলো এই অল্প কয়েকটা দিনে । যাক ও ফিরে আসলো , আবার সুরু হল অপদার্থের পথ যাত্রা । ২য় বর্ষ শেষ হতে না হতেই কি হল ওর জানি না , বাসায় এক দিন ফোন করে বলল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে ,... ডি.উ তে পড়বে না । যেমন কথা তেমন কাজ। HSC ইম্প্রুভমেন্ট দিয়ে
যন্ত্রকৌশল এ ভর্তি হল । ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির পড়েও ১ বছর এক সাথে ছিলাম আমরা ঢাকা ইউনিভার্সিটির হল এই । কিন্তু এই সময় কালে ওর ভিতরে অন্য আর একজন মানুষ কে দেখতে পেতাম আমি । হুট করেই হরেক রকম নেশায় জড়িয়ে পড়লো , ১ বছর যেতে না যেতেই অসুস্থ হয়ে পড়লো । ওর বাসা থকে আঙ্কেল আসলো , ওর চিকিৎসা করাল আর ওকে রিকুয়েস্ট করে হল ছাড়িয়ে একটা ফ্ল্যাট ভারা করে তুলে দিল আঙ্কেল । তবে ওর সর্ত ছিল একা থাকবে ও । আঙ্কেল কেন জানি ওর এই আবদার ও মেনে নিল। হয়তো আঙ্কেল মানতে বাধ্য হয়েছিলো অথবা আঙ্কেল চাইত ও ওর মত থাকুক। আমিও হল ছেড়ে দিলাম, নীল এর এই ঘটনার পর আমর বাবা ও হল থেকে নিয়ে গেল আমাকে বাসায় ।যদিও হল এর কোন দোষ ছিল না , কিন্তু বাবা মা ভাবে কাছে থাকলে সন্তান ভুল কাজ কম করে বা সাহস পায় না ‘’ ওর এই বদলে যাওয়ার গল্পটা অনেক পরে জানতে পেড়েছিলাম আমি ।অন্য কোন দিন সময় করে বলবো।




ওই মেয়টির “ নীল নীল নীল...” ডাক নীল এর মাথায় গেথে যায় ।ওই ছোট্ট ঘটনা মনে করে মাঝে মাঝেই হাসত একা একা । ও মাঝে মাঝেই ওই রাস্তায় হাঁটতে যেত কানে হেড ফোন লাগিয়ে। হঠাত করে থেমে গিয়ে হেডফোনে খুলে পিছু ফিরে তাকাতো নীল , কিন্তু ওই মেয় কে দেখতে পায়নি আর। আমিও মাঝে মাঝে নীল এর সাথে যেতাম
ওই মেয়ে কে খুজতে , বিকেলে যেতাম, kfc তে কফি খেয়ে আবার ফিরে আসতাম। একদিন আমারা কফি খাচ্ছিলাম kfc তে । হঠাত করে নীল এর ইউনিভার্সিটির কিছু জুনিয়র এর সাথে দেখা হয়ে যায় ওইখানে। ওদের কারো একজনের জন্মদিন ছিল , ওরা নীলকে দেখতে পেয়ে বেজায় খুসি হল , খুব আকুতি করলো নীলকে আর আমাকে ওদের পার্টিতে জয়েন করতে , উপায় না পেয়ে জয়েন করতে হল, ওই দিন আর একবার বুঝতে পাড়লাম নীল বদলালেও ওর অভ্যাসটা বদলায়নী।। ওর, আগের মত মানুষের ভালোবাসা খুব সহজে পাওয়ার অভ্যাস টা বদলায়নী।আসলে অভ্যাস বললে ভুল হবে, এটা একটা গুন , যা সবার থাকে না ।
যাক ওদের পার্টি শেষ করে রাত ৮ টার দিকে বের হলাম আমি আর নীল । হেটে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম । হুট করে থেমে গিয়ে নীল বলল “অনি” এই মেয়ে টাই শে। আমি বল্লম কোণটা ??
নীল সামনের দিকে আঙ্গুল ইসারা করে দেখাল।
আলমাস শপ এর সামনে থেকে একটা মেয়ে গাড়ি তে উঠে যাচ্ছিলো, পড়নে সাদা কালোয় মেশানো একটা ড্রেস ছিল এতোটুকুই দেখেছিলাম আমি । তবে ‘নীল’ অতটুকু সময়ে অনেক কিছুই দেখে নিয়েছিল। হাসি দেখেছিলাম ওর মুখে, বেশ স্বস্তির হাসি... মানুষ প্রপস করার পর ‘হ্যা’ সুনেও এ রকম স্বস্তির হাসি ফোটাতে পারবে না ঠোটে , এটা নীল কে দিয়েই সম্ভব । দুজনে হেটে হেটে বাসায় যাচ্ছিলাম , পথে নীল বলল “ মেয়টার হাতে এম. বি. এ. এর বই দেখলাম , মনেহয় এই ইউনিভার্সিটিতে এম.বি.এ করছে ‘’
আমি বুঝতে পাড়লাম , এই মেয়কে খুজে বের করতে আর বেশি সময় লাগবে না নীল এর, আমার ও ব্যাপার টা ভালোই লাগলো। ওর মুখে আবার হাসি দেখতে পেয়ে। হয়তো এই মেয়র বদৌলতে দিনে একটু আধটু হেঁসে নেবে ‘নীল

To be continued ………………….
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৫ ভোর ৫:৩০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×