ওইদিন এর পরে আমি আর নীল এর মুখে কখনো মেয়েটির কথা শুনিনি। জিজ্ঞেস করেও তেমন কিছু জানতে পারিনি। তাই জিজ্ঞেসও করিনি , কারন আমি জানতাম জিজ্ঞেস করে লাভ নেই । হয়তো নিজের ইচ্ছে হলে নিজ থেকেই আমাকে বলবে অথবা খুব সিগ্রিই মেয়েটির কাছ থেকে আমিই হয়তো কল পাবো “ ভাইয়া নীল এর কোন খোঁজ আছে আপনার কাছে?” :V
এত্ত বছর ওকে চিনি আমি, ৪ বছরে জেনেছিও অনেক। কিন্তু দুইটা জিনিস কোন দিন জানতে পারিনি।
ও আমাকে সব বলে নিজের ব্যাপারে কিন্তু ফামিল্যর ব্যাপারে শুধু এতুকুই জানি ওরা ৪ ভাই-বোন বাবা মাও আছে, আর বাবা মা ওর হোম টাউনে থাকে।
নীলকে দুই ঈদ ছাড়া ওর হোমটাউনে বাবা মা এর কাছেও খুব কমই যেতে দেখেছি আমি, আর গেলেও এক দিন, ম্যাক্সিমাম দুই দিন এর বেশি থাকে না, আর ফিরে আসার পর ২ , ৩ দিন ওর মেজাজ খুব করকরা থাকে, তবে এই রকম ক্যানো তার রহস্য আজো আমার অজানা, যদিও আমি ওর হোম টাউনে ওর বাসায় বেড়াতেও গিয়েছিলাম, তবে ওর এই অস্বাভাবিকতার কনো স্বাভাবিক সমাধান আমি খুজেও বের করতে পারিনি, কারন এরকমটা হওয়ার কোন কারন আমার চোখে পড়েনি।
ফ্যামিলির চেয়ে ওর বন্ধু বান্ধব আর নিজেকে নিয়ে বেশি ব্যাস্ত থাকে নীল, এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলে মুচকি হেসে বলে “ আরে বাবা মা ভাই বোন তো আল্লাহর দলীল করে দেয়া আপন জন ,এদের সময় দেই আর না দেই এরা কোন দিন ছেড়ে যাবে না আমাকে ... তাই আসে পাশের মানুষ গুলোকে একটু সময় বেশি দেই যাতে করে এরা আপন ভাবতে পারে আমাকে ”
নীল আমাকে সব শেয়ার করার পরেও এসব কারনে ও আমার আছে অনেকটা রহস্যময় ছিলো।
আর এক হলো ওর এত্ত বন্ধু , মেয়ে বন্ধু , পরিচিত মানুষ থাকা সত্তেও কেন ও কোন মেয়েকে বন্ধু থকে প্রেমিকার স্থান ক্যান দেয়না। অনেকবার দেখেছি অনেক মেয়েকে ওর খুব কাছাকাছি আসতে ... নীলকেও দেখেছি ওঁদের সাথে খুব আপন ভাবে মিশতে। তবে সবার বেলাই উপসংহার একটাই।
যেহেতু আমি ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু তাই ওর বেশীরভাগ বন্ধু বান্ধব আমকে চিনে। সেই সুবাদে ওর অনেক বান্ধুবির কলও পেয়েছি আমি , কারো কারো সাথে দেখাও করতে হয়েছে তাদের রিকুয়েস্টে, বাধ্য হয়ে।আর এদের সবার কাছে একটা কমন কথাই শুনতে হয়েছে আমাকে “ ভাইয়া নীল এর সাথে আপনার যোগাযোগ আছে , প্লিজ ওকে একটা কল করতে বলবেন; একটিবার দেখা করিয়ে দিন ওর সাথে, হুট করে ওর কি হয়েছে যানি না কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে পাড়ছি না’’
আর নীল এর কাছে এর প্রতিউত্তর একটাই পেয়েছি আমি “ দোস্ত, মেয়েটা আমার বন্ধু ছিল, কিন্তু ইদানিং ও বন্ধুত্বকে অন্য কিছু ভাবতে শুরু করেছে, তাই বড় কোন দুঃখ দেয়ার চেয়ে দূরে সরে থাই ভালো মনে করছি , তাই যোগাযোগ করছি না’’
দু একটা মেয়ের কথায় এতটাই মায়া লেগেছিল যে নীল এর সাথে ঝগড়া করেছি আমি , বোঝানর চেষ্টাও করেছিলাম আমি “ দোস্ত অতীতের জেদ ধরে রেখে লাভ কি, একটা মেয়েকে নিজের সঙ্গি করে নে , ভালো থাকবি’’
তার একটাই কথা দোস্ত আমি কোন জেদ-তেদ নিয়া বসে নেই ... আমি ওকে সুধুই বন্ধু ভাবতাম, কাউকে ভালো লাগলে অবশ্যই জীবনসঙ্গী বানিয়ে নিবো।
তার বিখ্যাত এক নীতি আমার কান পচিয়ে ফেলছে “একটা ছেলে আর মেয়ের বন্ধুত্তর মধ্যে যতদিন ভালবাসার বিষাক্ত ছোঁয়া না লাগবে ততো দিন সম্পর্ক ভালো থাকবে, ভালবাসা জিনিসটা আসলেই সম্পর্ক খারাপ হতে থাকবে’’
তার এই উক্তির পেছনে অনেক হযবরল যুক্তিও সুনিয়ে, তার নীতি সুন্দর ভাবে প্রমান করে ছেড়েছে।
তার মতে ভালবাসা দুজনের একসাথে হয়, এতে বন্ধুত্ব লাগে না।
এসব কারনে নীল এর খুজে বেড়ানো এই মেয়েকে নিয়ে আমরও একটু ইন্টারেস্ট ছিল সত্যিই
ভেবেছিলাম এবার বুঝি নীল এর মনে ভালবাসা জেগেছে ।
তবে একটা সঙ্কা ও ছিলো মনে
“ নীল কাউকে ভালবাসছে , ধরলাম মেয়েটাও নীল কে ভালবাসল , কিন্তু এক মাস এর বেশি নীলকে সহ্য করতে পারবে তো ? ” যে ছেলে কথা নেই বার্তা নেই মন চাইলো আর সারা রাত হেটে বেড়ালো রাস্তায় রাস্তায়, ইচ্ছা মতো ড্রিংক করে , প্রায় কোন বিরতি ছাড়াই একটার পর একটা সিগারেট পুড়িয়ে ছাই এর স্তূপ বানায় তাকে কোন মেয়ের পক্ষে এক মাসের বেশি সহ্য করা আমার ধারনা অনুযায়ী অসম্ভব।
যদিও আমার মনে হয় মেয়রা এরকম ছন্যছারা ছেলে বেশি পছন্দ করে, আর পছন্দটা করার কারন এটা মেয়েদের সহজাত প্রব্রিতি। মেয়েরা চেষ্টা করে ছেলেটাকে ভালো করার , এগুলো থেকে দূরে সরানোর। অনেক মেয়ে ব্যাপারটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে নেয় মনে মনে। আবার অনেক মেয়েকে দেখেছি তারা এরকম কোন একটা ছেলেকে ভালো করতে সক্ষমও হয়েছে, তবে যারা ব্যাপারটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে থাকে , ছেলেটি ভালো হয়ে যাওয়ার পর তারা ওই ছেলের প্রতি ইন্টারেস্ট হড়িয়ে ফেলে। কিন্তু নীল এর বেলায় এসকল থিওরি অপ্রযোজ্য, কারন নীল কারো কথা শোনার মানুষ না ।
নীল আর আমি হল ছেড়ে দেয়ার সময় নীল একটু বেশিই অসুস্থ ছিল, এর পরেও ওর বাবা যখন ওর মর্জি মতো ওকে একা একা বাসা নিয়ে থাকতে দিলো তখন আঙ্কেল এর রিকুয়েস্টে ও সব নেশা ছেড়ে দিলো, যদিও না ছেড়েও কোন উপায় ছিল না, কারন নেশা সাপোর্ট করার মতো ক্ষমতা তখন ওর শরীর এর ছিল না । মাসে মাসে ডাক্তার দেখাচ্ছে একটু একটু করে ইম্প্রুভ করছিলো। তবে সব নেশা ছেড়ে দিলেও একটু সুস্থ হওয়ার পর থেকে ও আবার ড্রিংক এর প্রতি ঝুকে পরে ... ধরতে গ্যালে প্রায়ই ড্রিংক করে। মজার ব্যাপার হল আঙ্কেল ওর ড্রিংক এর টাকাও দিত আবার মাসে মাসে ডাক্তার দেখানোর টাকাও দিতো। কখনো একটু বেশি সুস্থ বোধ করলে ও ডাক্তার এর কাছে যেত না বরং সে টাকা দিয়ে ড্রিংক করত। আমিও মাঝে মাঝে ওর সাথে দু এক পেগ গিলে ফেলতাম
এর মাঝেই নীল সেকেন্ড ইয়ার পাশ করে থার্ড ইয়ার এ উঠলো আর আমি সবে স্নাতক শেষ করে মামা চাচার জোরে একটা ছোট্ট চাকরীতে ঢুকে পরলাম, আর বাইরে এম এস করতে যাওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। বলতে গ্যালে একটু বেশিই ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম, দেখছিলাম নীলও কিছু একটা বা কেউ একজনকে নিয়ে একটু ব্যাস্ত। তাই দেখা সাক্ষাত একটু কম হয় এখন। তবে ইদানিং ফাসবুকে নীলকে একটু বেশিই দেখছিলাম।
এক শুক্রবার আমারও অফিস নেই, জি আর ই ক্লাসও নেই আবার নীলও ফ্রিই ছিল... তাই নীল বলল “আজ আমার বাসায় চলে আয় দুজন মিলে গল্প করবো ”
প্ল্যান কনফার্ম হলো। দুজন মিলে আমার বাসায় ডিনার সেরে চলে গেলাম নীল এর বাসায়।
রাত ১১ টার দিকে ঢুকলাম ওর বাসায় , দুজনে ফ্রেশ ট্রেস হয়ে বসলাম হুররা পানে আর আড্ডায়। ভালই আড্ডা দিচ্ছিলাম , তবে ওইদিন আড্ডার বিষয়টা কিভাবে জেনো ক্যারিয়ার বেইসড হয়ে গিয়েছিলো। কিভাবে বাইরে অ্যাপ্লাই করবো , স্কলারশিপ কিভাবে পেতে পারি , কোথায় গিয়ে উঠবো প্রবাশে গিয়ে, এম এস শেষ করে দেশে এসে কি করবো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিলো। আর নীলের পরিচিত মানুষ বেশি থাকার কারনে ওর থেকে অনেক ভালো ভালো ইনফর্মেশনও পাচ্ছিলাম। একটা পর্যায় ও আমাকে ফেসবুক এ বেস কিছু গ্রুপ দেখালো , যেখান থেকে বাইরে পড়াশুনার ব্যাপারে অনেক ইনফর্মেশন পাওয়া যাবে , লিংক গুলো আমাকে দিলো ,আবার ওর বেশ কিছু পরিচিত মানুষের ফেসবুক লিংকও আমকে রিকমান্ড করে দিলো যারা বাইরে বিভিন্ন দেশে পড়াশুনা করছে, বলল এদের থকে অনেক সহযোগিতা পাবি। এগুলো দিতে দিতে আর কথা বলতে বলতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল, আমি ততক্ষণে কাবু হয়ে পড়লাম হুড়ার তারানায় । তাই আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তবে ফেসবুক থকে এসব লিংক নেয়ার সময় একটা জিনিশ লক্ষ করেছিলাম ওর ফেসবুকে একটা ম্যাসেজ ট্যাবএ একটু পর পর ছোট্ট ছোট্ট টেক্সট আসছিলো আর নীলও কাজের ফাকে ফাকে ছোট্ট ছোট্ট রিপ্লে দিচ্ছিল।
আমি সুয়ে পড়লাম নীলও ঘুমাবে বলে ল্যাপটপ টা রেখে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে গেলো।নীল যেতে না যেতেই দু তিনবার টেক্সট এর সাউন্ড বেজে উঠলো ল্যাপটপে। আমি ভাবলাম ও হয়তো ভুলে ফেসবুক ওপেন করে চলে গ্যাছে তাই ল্যাপটপ অফ করার জন্য আমি উঠলাম।তখন ফেসবুক লগউট করতে গিয়ে কিছু টেক্সট আমার চোখে পড়লো, আর ম্যাসেজ ট্যাব এর ওই ফ্রন্ড এর নাম টাও চোখে পড়লো।
আইডি টার নাম ছিল “অপরাজিতা ” আর টেক্সট গুলো ছিলো “ #ঘুমাবে কখন? # সকালে আব্বুর সাথে অফিসে যেতে হবে # আমি ঘুমাবো # আমি লগউট করবো # শুভ রাত্রি ”
নীল ফিরে আসলে আমি বললাম “ নীল তোর ফেসবুক ওপেন করা ছিল , অপরাজিতা নামে কেউ একজন টেক্সট করছিল আমি পিসি অফফ করে দিয়েছি”
নীল তেমন কোন রিয়্যাক্ট করলো না , বলল আচ্ছা ঠিক আছে। তারপর দুজন সুয়ে পড়লাম।
শুয়ে শুয়ে ঘুমের আগ পর্যন্ত দুজন কথা বলছিলাম। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম দোস্ত এখন আর ওইদিকে হাটতে যাস না? আমিতো অফিস নিয়ে আর ক্লাস নিয়ে ব্যাস্ত তাই তোর সাথে দেখাও হয় কম । তুইও তেমন একটা কলও করিস না। কোন খোঁজ পেলি মেয়েটার ?জানতে পারলি কিছু?
নীলঃ হুম, তুই অফিস নিয়ে ব্যাস্ত, কদিন বাদে দেশের বাইরে যাবি, স্কোর খারাপ করলে অ্যাডমিশনে ঝামেলায় পরে যাবি তাই ডিস্টার্ব করিনা। খোঁজ পেয়েছি।
আমিঃ কোথায় থাকে? কি করে? নাম কি? দেখা করেছিস? পছন্দ হয়েছে মেয়েটাকে?
নীলঃ মেয়েটা ইউ আই ইউ তে এম বি এ করছে , ফার্স্ট সেমিস্টারে পরে।
আমিঃ ব্যাস এটুকুই :O , আর কিছু জানতে পারিশনি? আচ্ছা বাদ দে , “অপরাজীতা” মেয়েটা কে ? আগেতো কখনো এর কথা তোর কাছে শুনিনি ? কে সে?
নীলঃ আহ, ঘুমাতো, আর কিছু যানলে বলবো তোকে, “অপরাজীতা” আমার একটা বন্ধু। নে হইসে এখন ঘুমিয়ে পর, আমার ঘুম পাচ্ছে , শুভরাত্রি।
নীল এর মুখে গুড নাইট এর পরিবর্তে শুভরাত্রি কথাটা ওইদিন প্রথম শুনেছিলাম আমি।কি আর করার ঘুমিয়ে পড়লাম মনে সেই পুরনো কৌতহল নিয়ে , ভাবলাম হয়তো সময় হলে জানতে পারবো।
To be continued ………………….
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৫ ভোর ৫:২৫