অভিধানে ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কে যথার্থ বর্ণিত হলেও একশ্রেণীর কুপ্রবৃত্তির জনগোষ্ঠী ডিকশনারিবহিভর্ূত অর্থ প্রচার করে ফায়দা লুটছে। বাংলাদেশী সমাজকে বিনষ্টকারী এসব অপসংস্কৃতির কুশীলবদের আইন প্রয়োগ করে এই মুহূর্তে প্রতিহত করতে না পারলে ভবিষ্যতে বাঙালি এবং বাংলাদেশ ঠাঁই পাবে শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায়।
সংসদ ডিকশনারির 1258 পৃষ্ঠার ডান দিকের কলামে সর্বনিম্নে লেখা রয়েছে ভ্যালেন্টাইন অর্থ দি নেম অফ টু সেইন্টস। 2 জন খ্রিস্টান ধর্মযাজকের নাম। এদের মৃতু্য তিথিতে (14 ফেব্রুয়ারি) পাখিরা নিজ নিজ সঙ্গী নির্বাচন করে বলে রূপকথায় বর্ণিত আছে। সেখানে আরো উল্ল্লেখ আছে যে, 'ভ্যালেন্টাইন অর্থ 1 (এক) বছর ধরিয়া বর কনে হিসেবে খেলিবার জন্য নির্বাচিত বর বা কনে।' সম্মানিত পাঠকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই যে, এই নির্বাচিত বর বা কনে নিশ্চয় 1 বছর ধরে এক্কাদোক্কা, লুডু, কাবাডি, ফুটবল, ক্রিকেট বা কম্পিউটারে ভিডিওগেম খেলবে না। 1 বছরে তারা যে খেলাটি খেলবে তার পরিণতি হবে একটি আদম সন্তানের জন্ম। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তার পরিচয় হবে একটি বাস্টার্ড বা জারজ সন্তান হিসেবে। গর্ভধারিণী স্বীকৃত হবে কুমারী মাতা হিসেবে। পাশ্চাত্যে কুমারী মাতা হওয়া কোনো ঘটনা নয়, কিন্তু দক্ষিণে-পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশে বিয়ের আগে কোনো মেয়ে সন্তানসম্ভবা হলে লজ্জায় আত্মহত্যা করে। সংবাদপত্রের পাতায় এই ধরনের ঘটনার খবর প্রায়শই পাওয়া যায়। পিতৃ পরিচয়ের জন্য শিশু কোলে কুমারী মাতা দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েছে। তাছাড়া পৃথিবীতে কোনো ধর্মই বিয়ের আগে দৈহিক মিলনকে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশী হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আর মুসলমান সমপ্রদায়ের মধ্যে তো নয়ই। বাংলাদেশের সমাজে বিয়ের আগে দৈহিক মিলন আইনের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই যদি হবে তাহলে কোন সাহসে এ দেশের যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী 14 ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডেতে বেল্লোপনা করে বেড়ায়?
সম্মানিত পাঠকবৃন্দের সামনে এই ক্ষণে একটি ঘটনা তুলে ধরার প্রয়াস অনুভব করছি। 2001 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের কট্টর হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন 'শিবসেনা' প্রধান বালথ্যাকারে ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কে তার লিখিত বক্তব্যে দিলি্ল্লতে সাংবাদিকদের জানান যে ভ্যালেন্টাইন ডে হিন্দু ধর্মের নয়, সেই সঙ্গে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতিবিরোধী। এর ফলে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী অবাধ মিলনের সুযোগ পায়। এই পশ্চিমা অপসংস্কৃতি ভ্যালেন্টাইন ডে যেন এ দেশের যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী পালন না করে সে জন্য আমার দলের কর্মীরা তাদের প্রথমে বোঝাবে, এতেও যদি কাজ না হয় তাহলে প্রয়োজনে আইন হাতে তুলে নেবে।'
ভালোবাসা দিবস নিয়ে কিছু কিছু প্রশ্ন আমাকেও ভাবিয়ে তুলে না যে তা নয়। যেমন- ভ্যালেন্টাইন ডে অর্থ যদি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হয় তাহলে এই দিনে গরিব-দুখী-অনাহারীদের জন্য ভ্যালেন্টাইন ডে পালনকারীরা সাহায্যের হাত প্রসারিত করে না কেন? মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচানোর জন্য রক্তদান কর্মসূচি কেন গ্রহণ করা হয় না? পাশ্চাত্যের ভ্যালেন্টাইন ডের প্রবক্তারা এই দিনেও কেন দুর্বল রাষ্ট্রের নিরীহ জনগণের দেহকে বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন করে? ভ্যালেন্টাইন ডে যদি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসই হয় তাহলে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কেন এটার স্বীকৃতি দেয়নি? "
সুতরাং ভালোবাসা দিবস অবশ্যই হতে পারে কিন্তু তা কখনোই ভ্যালেন্টাইন ডে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



