somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়…………….

২৬ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টা। তারপরেই আমার জীবনের কয়েকটি প্রিয় দিনের একটির আগমন। যার আগমনী গান আমার কানে বাজতে থাকে এই মাসটির শুরু থেকেই।:#>



স্নৃতিটা বোধহয় কোনদিন ম্লান হবেনা। এখনো মনে পড়ে প্রতিটা মুহূর্ত। বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০০৭, রাত ১০টা। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। প্রচন্ড রাগে থরথর করে কাঁপছি আমি……বৃষ্টির মতোই। ও আমার সামনে দাঁড়িয়ে….মুখটা ফ্যাকাশে। শুধু ভাবছি কি করে ওকে কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দেয়া যায়। কোন কিছু না ভেবে এক কথায় আলটিমেটাম দিয়ে দিলাম….”বিয়ে করলে এখুনি করতে হবে। অন্যথায় আজকের পর আর কোনদিন আমার সামনে এসে দাঁড়াবেনা।“ ওই মুহূর্তে ওটাই মনে হয়েছিলো উপযুক্ত শাস্তি। কারণ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাসায় না জানিয়ে আমরা বিয়ে করবোনা। ও অস্থির হয়ে বললো…’প্লিজ, শান্ত হও। যা ভাবছো তার কিছুইনা। এখুনি বিয়ে করবো। কোন সমস্যা নেই।“ ও যত নরম করে কথা বলে আমার রাগ তত মাথায় ওঠে।X(( বন্ধুকে ফোন করতে যাবো তখন বললো…”এখন রাত সাড়ে দশটা বাজে। ওরা আসতে আসতে রাত ১২টা বাজবে। বৃষ্টি পড়ছে। কাজী অফিস খোলা থাকবেনা। আমরা কাল সকালে বিয়ে করি?” রাগের মধ্যেও ভেবে দেখলাম কথায় যুক্তি আছে। বললাম “ঠিক আছে। পালিয়ে যেওনা আবার।“X( যদিও ওর চাইতেও বেশি করে আমি জানতাম পালাবেনা সে কখনোই।;)



সারাটা রাত নির্ঘুম। কেঁদে বালিশ ভিজেছে। শুধু ভেবেছি আমার সমস্ত অহংকার ভেঙ্গে চূর্ন হয়েছে। সারারাত আমি ছটফট করেছি। ২৬ জুলাই, ২০০৭…….পুরোটা রাত আমার শুধু মনে হয়েছে আমি হেরে গেলাম। বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম জেতার জন্যে নয়। ওকে শায়েস্তা করার জন্যে।:-/ ভেবে রেখেছিলাম বিয়ের পর ওর সাথে আর যোগাযোগ করবোনা। হারিয়ে যাবো আমি। আমার সযতনে লালিত অহংকারকে ধুলিস্বাৎ করে দেয়ার শাস্তি তিলে তিলে ভোগ করতে হবে ওকে।X(



সেই নির্ঘুম রাত আমার পার হয় ভাবনার সাগরে ডুবোডুবি করে। মনে পড়ে যায় অনেক কথা………হারিয়ে যাই স্নৃতির অরন্যে। মনে পড়ে আমাকে প্রপোজ করার স্টাইল।;)….. সালটা মনে নেই। তবে তারিখটা ১৪ ফেব্রুয়ারী। বিকেলে অফিস শেষ করে দাড়িয়েঁ আছি মেডিনোভার সামনের ধানমন্ডি লেকটাতে। ওর আসার কথা। বন্ধুত্ব তারও আগে থেকেই। বন্ধুত্বের শুরু থেকেই দেখেছি প্রচন্ড কেয়ারিং আমার প্রতি। তাই ভালো লাগতো ওকে। একটা নির্ভরতা খুঁজে পেতাম। তবে তেমন কোন ভাবনা আমার মধ্যে হয়নি কখনোই। ও এলো। অনেক্ষন চুপচাপ থাকার পর ছোট্র লাল টুকটুকে একটি হৃদয় আমার হাতে দিয়ে বললো…”আমারটা তোমাকে দিলাম; তোমারটা দেবে কিনা বলো।“:P আমি ওর হৃদয় হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কি বলবো?.... কোনদিন বলা হয়নি কিছুই। সম্পর্কটা গড়িয়েছে সময়ের হাত ধরেই।



২৭ জুলাই ২০০৭….সকাল ১০টা…….কাজী অফিসে বসে আছি। দুজনের মনটাই খারাপ। যারা এসছে স্বাক্ষী দেয়ার জন্যে তারা খুব মজা করছে।/:) তারা জানেনা এই সিদ্ধান্তের কারণ কি। কাজী অফিসে বিয়ে, তার উপর পাত্র-পাত্রী আমরা… এই মজাতেই তারা বিভোর। মিষ্টি কেনা হলো; নাস্তা করা হলো। সেদিনও বৃষ্টি পড়ছিলো…. ঝিরিঝিরি। মনের আকাশে জমেছিলো মেঘ। কবুল বলা হয়ে গেলো। মনের মধ্যে বিয়ের কোন আমেজ ছিলোনা। ছিলো অভিমান, কষ্ট, রাগ।:((

ভেবেছিলাম…দূরে অনেক দূরে হারিয়ে যাবো আমি।….পারিনি। ভেবেছিলাম….ওকে কষ্ট দেবো অনেএএক।…..পারিনি সেটাও। ওর ভালোবাসা, আর সম্পর্কের শুরু থেকেই আমার প্রতি প্রচন্ড কেয়ারনেস আমাকে টেনে এনেছে ওর আরো কাছে। আরো কিছুদিন পর পারিবারিকভাবে অনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়েছে। কাজী অফিসের বিয়ের খবরটা আমরা বাসায় জানাইনি।;) তাই আবারো তিন কবুল। এইবার একটু নার্ভাস লেগেছিলো। শ্বশুরকুলের ভীড়ে আমার মা-কে আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কেঁদেই দিচ্ছিলাম…….প্রিয় বান্ধবী এসে শক্ত করে ধরে বসলো আমাকে।:)

দেখতে দেখতে তিনটি বছর কেটে গেল।….হাসি, আনন্দ, মান, অভিমান সবকিছু নিয়ে। মনের আকাশের সবটুকু মেঘ ওর ভালোবাসার স্পর্শে বৃষ্টি হয়ে ঝড়েছে। রংধনুর সাত রঙে সেজেছে আমার সংসার। ২৭ জুলাই তারিখটা শুধুই আমাদের দুজনের। এদিনটা আমরা আমাদের মত করে কাটাই। এখন আমাদের দুজনের এই আনন্দে গুটি গুটি পায়ে মুক্ত ছড়ায় আমাদের রাজকন্যা; রংধনুর বিস্তৃতি ঘটায় দিগন্ত জুড়ে।

তেমন করে কিছুই আর চাওয়ার নেই। শুধু বলবো……….এমনি করে যায় যদি দিন যাকনা।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:০৫
৮৩টি মন্তব্য ৮০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×