somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুজিবনগর সরকারের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৭ ই মে, ২০০৭ রাত ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন৷ এই ঐতিহাসিক দিনে মেহেরপুরের সীমানত্মবতর্ী গ্রাম বৈদ্যনাথ তলার (যা ঐ দিন থেকে মুজিবনগর হিসেবে খ্যাত) আমবাগানে বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নবগঠিত মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়৷
বস’তপক্ষে সরকার গঠনের ভিতর দিয়ে ২৫ মার্চ দিবাগত রাত থেকে শুর” হওয়া সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ৩ সপ্তাহের অধিককালের স্বতঃস্ফূর্ত পর্যায় অতিক্রম করে সংগঠিত রূপে আত্মপ্রকাশ করে৷ পাকিসত্মানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা, সশস্ত্র আক্রমণ-অগি্নসংযোগ, নৃশংসতা-বর্বরতার তাণ্ডবে মুক্তাঞ্চল যখন ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে; স্বতঃস্ফূর্ত সশস্ত্র প্রতিরোধ যখন সত্মিমিত ও বিধ্বসত্ম; রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন ছত্রখান ও সংযোগহীন তখন মুজিবনগর সরকারের প্রতিষ্ঠা ও শপথ গ্রহণ ছিল অত্যনত্ম এক সাহসী, যুগানত্মকারী ও সময়োচিত পদক্ষেপ৷
এই পদক্ষেপের ফলেই দখলদারমুক্ত স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিজয় ত্বরান্বিত হয়৷ প্রকৃত বিচারে প্রথম স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠার কাজটি খুব কঠিন ও জটিল ছিল৷ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, যা হলো আমাদের ম্যাগনাকার্টা বা স্বাধীনতার সনদ, তা প্রস’ত করা হয় এবং নিজস্ব রেডিও স্টেশন না থাকায় তা শিলিগুড়ির এক অনিয়মিত বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম প্রচার করা হয়৷ এই ঘোষণার ভিতর দিয়ে প্রথমেই সুস্পষ্টভাবে ঘোষিত হয় কেন, কোন ক্ষমতাবলে, কোন পরিস্থিতিতে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রটি গঠন করা হয়৷ এটা প্রস’তে জাতীয় মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল৷ তখনকার বিশ্ব পরিস্থিতিতে যৌক্তিক ও আইনসম্মত ভিত্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিশ্ববাসীর সহানুভূতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমবেত করা বাসত্মবে অসম্ভব ছিল৷
যতোটুকু জানা যায়, ৯ এপ্রিল ‘৭১ সকালে তাজউদ্দীন আহমদ কলকাতা থেকে এক পুরোনো ডাকোটা প্লেনে করে প্রসত্মাবিত মন্ত্রিসভার সদস্যদের খুঁজতে বের হন৷ মালদহ, বালুরহাট, শিলিগুঁড়ি, রূপসা, শিলচর ঘুরে মনসুর আলী, আব্দুল মান্নান ও সৈয়দ নজর”ল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ১১ এপ্রিল আগরতলা পেঁৗছান৷ সেখানে খন্দকার মুশতাক ও কর্নেল ওসমানী ছিলেন৷ আগরতলায় দীর্ঘ সময় আলোচনা ও বিতর্ক চলার পর তাজউদ্দীন প্রসত্মাবিত মন্ত্রিসভার গঠন ও আয়তন বহাল থাকে৷
বলাই বাহুল্য, অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে সরকার পরিচালনার মূল দায়িত্ব কার হাতে থাকবে এই সিদ্ধানত্মের অভাবে এবং সর্বোপরি জনপ্রতিনিধিদের সম্মিলিত সভার সিদ্ধানত্ম ব্যতিরেকে দ্র”ততার সঙ্গে সরকার গঠন ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজন ছিল নেতৃত্বের দূরদর্শিতার পরিচায়ক৷ সরকার গঠনের কাজে বিলম্ব ঘটলে পরিস্থিতি ক্রমেই প্রতিকূল হয়ে উঠতো৷ আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে প্রয়োজনটাই তখন হয়ে উঠেছিল জর”রি৷ প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার দায়িত্ব গ্রহণের বৈধতার প্রশ্নই কেবল তখন বিভিন্ন মহল থেকে তুলে ধরা হয়নি; সরকার গঠন এবং এমনকি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তিও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের মধ্যে তখন সক্রিয়৷ নানা বাধা বিঘ্ন, মতদ্বৈতার সুকঠিন ও অতিমাত্রায় জটিল বেড়াজাল অতিক্রম করে তাজউদ্দিন সরকার প্রতিষ্ঠা করে যে প্রতু্যত্‍পন্নমতিতা, দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন, তা জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে৷ ইতিহাস বিকৃতকারী স্বার্থান্বেষী মহল নেতৃত্বের এই অবদানকে আড়াল করে অস্বীকার করতে চায়৷ কিন’ চলমান গতিধারা প্রমাণ করছে, যতো দিন যাবে নিঃসন্দেহে এই অবদানের ঔজ্জ্বল্য চারদিকে আলোকিত করবে৷
স্বাধীনতার ৩৬ বছরের মাথায় দাঁড়িয়ে এ কথা আজ নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের সামগ্রিক অবদান জাতি হিসেবে আমরা যথাযথ মর্যাদা ও সম্মানের আসনে বসাতে অপারগ হয়েছি৷ মুজিবনগর সরকারের যথাযথ মূল্যায়ন আমরা করতে পারিনি৷ কোনো কোনো মহল থেকে সৈয়দ নজর”ল ও তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত মুজিবনগর সরকারকে অকার্যকর ও উদ্যোগহীন এক সরকার হিসেবে পরিচিত করাতে চায়৷ কোনো কোনো মহল মুক্তিযুদ্ধকে সর্বব্যাপী রাজনৈতিক গণসংগ্রাম হিসেবে না দেখে সেনাযুদ্ধ হিসেবে চিত্রায়িত করে মুজিবনগরের রাজনৈতিক সরকারকে মূল্যয়ণে প্রয়াসী হয়৷ কোনো কোনো মহল থেকে মুজিবনগর সরকারকে ভারতের পুতুল সরকার হিসেবে কালিমা লেপন করতে সচেষ্ট থাকে৷
বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব প্রচার করা হয় বিশেষ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য৷ প্রকৃতপক্ষে মুজিবনগর সরকার ছিল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সফল এক সরকার৷ ঠাণ্ডা যুদ্ধ যুগে জাতীয় ও আনত্মর্জাতিক জটিল ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা জনগণের সশস্ত্র গণসংগ্রামকে এই সরকার স্বাধীনতার চূড়ানত্ম লক্ষ্যে পেঁৗছাতে সক্ষম হয়েছে৷ এই সরকার প্রবাসে থেকে এমন কোনো সমস্যা ও জটিলতা সৃষ্টি করেনি কিংবা দানা বাঁধতে দেয়নি যা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাসত্মবায়নের পথে বিঘ্ন ঘটেছে৷ বাধা-বিঘ্ন ও জটিলতা সামাল দিয়ে ৯ মাসের মধ্যে হানাদার বাহিনীমুক্ত স্বাধীন দেশ এই সরকার উপহার দিয়েছে৷ এই নিরিখেই মুজিবনগরের প্রবাসী সরকার পূর্ণাঙ্গরূপে সফল ও সার্থক৷
বাসত্মব বিচারে মুজিবনগর সরকারের অবদান নিয়ে যথাযথ মূল্যায়ন ও প্রচার হয়েছে বেশ কম৷ এই সরকার কোনো দলীয় সরকার ছিল না; যথার্থ অর্থেই তা ছিল একটি জাতীয় সরকার৷ জাতীয় সরকারের চরিত্র বজায় রাখার জন্য যথাযথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল বলেই এই সরকার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাসত্মবায়নে সফল হতে পেরেছিল৷ এই সরকারের বিভিন্নমুখী কাজ পর্যালোচনা করলেই বুঝতে পারা যাবে, ছত্রখান অবস্থা থেকে কিভাবে এই সরকার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যাভিমুখী এক পরিকল্পনার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে গিয়ে সফলতায় পেঁৗছে দিয়েছে৷
রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন গ্র”পকে যথাসম্ভব ঐক্যবদ্ধ করা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের ছিল অন্যতম প্রধান শর্ত৷ এই সরকার সুকৌশলে এই ঐক্যের একটা রূপ দেয়৷ এই সরকারের প্রচেষ্টায় গঠিত হয় প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ৷ আওয়ামী লীগ একক দল হিসেবে সবকটি আসনে বিজয়ী এবং অপর দলগুলোর কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই, এই যুক্তি দেখিয়ে আত্মম্ভরিতা ও দলীয় সংকীর্ণতার পথে যায়নি মুজিবনগর সরকার৷ যদিও এমন মনোভাব আওয়ামী লীগের মধ্যে ছিল তবুও মুজিবনগর সরকার তাকে আমল দেয়নি৷ র”শপন্থী, চীনপন্থীসহ সকল দল ও গ্র”পকে দল-ধর্ম-মতনির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়েই মাওলানা ভাসানী, মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ও মনোরঞ্জন ধরকে উপদেষ্টামণ্ডলীতে নির্বাচিত করা হয়৷
প্রবাসে সীমাবদ্ধতা ও আর্থিকসহ নানাবিধ সংকটের মধ্যে থেকেও মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তত্‍পরতা ছিল অসামান্য৷ চীন-মার্কিন-পাকিসত্মান অক্ষশক্তির চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও বিশ্ববাসী ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন ও সহানুভূতি আদায় ও সাহায্য প্রাপ্তি ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের অন্যতম প্রধান শর্ত৷ এই কাজটি অত্যনত্ম পরিকল্পিতভাবে সুচার”রূপে অগ্রসর করে নেয় মুজিবনগর সরকার৷ একদিকে মার্কিন-চীন চাপ সামলানো আর অপরদিকে ভারত-সোভিয়েত ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন ও সাহায্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত করতে মুজিবনগর সরকার যে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছে, তা অতিমাত্রার প্রশংসার দাবি রাখে৷ কৌশলগত কারণে কুচক্রী খন্দকার মুশতাককে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেখে মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য ছিল সত্যিকার অর্থেই বিস্ময়কর৷
মুজিবনগর সরকারের গঠন, কাঠামো ও কার্যাবলী পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, প্রবাসে নানা সীমাবদ্ধতা ও সংকটের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও সরকার সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনকে সুচার”রূপে পরিকল্পিতভাবে গুছিয়ে তোলে৷ যথাযথভাবেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা গঠন এবং তা সক্রিয় করা হয়৷ পরিকল্পনা কমিশন, শিল্প-বাণিজ্য বোর্ড, ত্রাণ পুনর্বাসন কমিটি, শরণাথর্ী কল্যাণ বোর্ড সবকিছুই চালু করে পূর্ণাঙ্গ সরকারের রূপ প্রদান করা হয়৷ বিশ্ববাসীর সমর্থন আদায়ে ও জনগণের আস্থা সুরক্ষায় তা প্রভূত ভূমিকা রাখে৷ আঞ্চলিক প্রশাসনকেও তখনকার সময়ের উপযোগী ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য থেকে চালু করা হয়৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়, তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের তত্‍কালীন ছোট-বড়ো কাজগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে কতোই না দেশপ্রেম, একাগ্রতা ও সততা নিয়ে নানা বাধা-বিঘ্ন ও সংকট সত্ত্বেও মুজিবনগর সরকার সুপরিকল্পিত কাজ অগ্রসর করেছিল৷
এ ক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রচারের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়৷ শব্দসৈনিকদের একত্র ও উত্‍সাহিত করে দেশবাসী মনোবল দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ রাখতে এই কেন্দ্র যে ভূমিকা পালন করেছে, তা মুজিবনগর সরকারের অক্লানত্ম প্রচেষ্টার ফলেই সম্ভব হয়েছে৷ সার্বিক বিচারে বলতেই হবে, মুজিবনগর সরকার যদি সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনকে গুছিয়ে কার্যকর না রাখতো তবে ডিসেম্বরে বিজয়ের পর আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে প্রাথমিক পুনর্বাসন ও পুনর্বাসনের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না৷ লাখ লাখ শরণাথর্ী আর সেই সঙ্গে ভিটেমাটি ছেড়ে দেশের অভ্যনত্মরে থাকা লাখো-কোটি জনগণকে পুনর্বাসিত করার প্রাথমিক কাজটা ছিল মুজিবনগর সরকারের ধারাবাহিক কাজেরই সাফল্য৷
পাকিসত্মানি কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন রক্ষা এবং তাকে মুক্ত স্বদেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা ছিল প্রবাসী তাজউদ্দীন সরকারের বিশাল এক সাফল্য৷ আগস্টের প্রথমদিকে খবর প্রকাশ হয় যে, পাকিসত্মানের সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিচার শুর” হবে৷ সঙ্গে সঙ্গে মুজিবনগর সরকার শুর” করে কূটনৈতিক তত্‍পরতা৷ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ১৫০ জন সদস্য তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে৷ যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস পাকিসত্মানে সাহায্য বন্ধ করার প্রসত্মাব পাস করে৷ ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহও বিশ্ববাসীকে এই বিচারের বির”দ্ধে দাঁড়ানোর জন্য মুজিবনগর সরকার সর্বোতভাবে তত্‍পরতা পরিচালনা করে৷
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর বিচারকে কেন্দ্র করে ত্রয়ী কুচক্রী খন্দকার মুশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও মাহবুব আলম চাষী ষড়যন্ত্র-চক্রানত্মের জাল বিসত্মার করে৷ স্বাধীনতা চাও নাকি মুজিবের প্রাণরক্ষা ও মুক্তি চাও_ এই প্রচারণা দেশবাসী বিশেষত প্রবাসী বাঙালিদের ভিতর ছড়ানো হয়৷ এমনকি বঙ্গবন্ধুর প্রাণ ও মুক্তির বিনিময়ে সমঝোতা করার প্রসত্মাব দিয়ে ঐ ত্রয়ী কুচক্রীর উদ্যোগ ও প্ররোচনায় প্রচারপত্র বের করা হয়৷ এই অবস্থায় মুজিবনগর সরকার দৃঢ় অবস্থান নিয়ে ঘোষণা করে যে, বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেওয়া হলে, মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী পাকিসত্মানি সব সৈন্যকে খতম করা হবে৷
মুজিবনগর সরকারের উপরোক্ত কাজগুলো ছিল ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে এবং একটি ছিল অপরটির পরিপূরক৷ কোনো এক ক্ষেত্রে যদি দুর্বলতা কিংবা ব্যর্থতার ছিদ্র সৃষ্টি হতো তবে এই ছিদ্র দিয়ে বিষধর সাপ ঢুকে সবকিছুকে লণ্ডভণ্ড করে দিতো৷ ভারত-সোভিয়েত অক্ষশক্তির আস্থা ও অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করা তখন বাসত্মবেই সম্ভব হতো না৷ যথাসময়ে যথাযোগ্য সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া এবং তা কাজে লাগানো যেমন আর্ট, তেমনি বিজ্ঞানসম্মত৷ দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাসত্মবায়নে একাগ্রতা ও দৃঢ়তা, আনত্মর্জাতিকভাবে শক্তির ভারসাম্য পক্ষে রাখার অপূর্ব নীতি ও কৌশল, জনগণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার নমনীয়তা ও দক্ষতা, শক্তি সংহত রাখতে ধৈর্য ও মেধার সম্মিলন প্রভৃতি মুজিবনগর সরকারকে সাফল্য এনে দিয়েছিল৷
ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ ঐ সরকারের ছিল না৷ সীমাবদ্ধতা-দুর্বলতা যদি কিছু থেকেও থাকে তবে তা ছিল পরিস্থিতির অনুষঙ্গ৷ যথাসাধ্য ভালোই যথার্থ ভালো আর আরো ভালো থাকে অকর্মণ্য ও দাম্ভিকের অক্ষম ঈর্ষায়৷ মুজিবনগর সরকার সত্যিকার অর্থেই আমাদের দেশের ইতিহাসের স্রষ্টা জনগণের চেতনা ও তত্‍পরতার তাত্‍পর্যমণ্ডিত ফসল৷ যাকে কখনো বাংলাদেশের জনগণের গৌরবমণ্ডিত মুক্তিযুদ্ধ থেকে পৃথক করা যাবে না৷ আমাদের জাতি-রাষ্ট্রের উত্‍সে তা সদাসর্বদা স্বগৌরবে সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে৷
মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে আসীন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একানত্ম ও বিশ্বসত্ম সহযোগী জাতীয় চার নেতা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক সৈয়দ নজর”ল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও অপর দুই মন্ত্রী মনসুর আলী ও কামার”জ্জামান ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটে জেলখানায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ দুর্ভাগ্যের পরিহাস হলো, মুজিবনগর সরকারের অপর মন্ত্রী খন্দকার মুশতাক ছিলেন এই ৪ নেতা হত্যার হুকুমের পরিকল্পনা ও আসামি৷ মুশতাক মীরজাফর বিশ্বাসঘাতক এটা আজ স্বীকৃত কিন’ তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতার যোগ্য মর্যাদা ও সম্মান জাতি হিসেবে এখনো আমরা স্বীকার করে নিতে পারিনি৷ এই স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদান করা ছাড়া রক্তঋণ আমরা শোধ করতে পারবো না৷ জাতীয় বীরদের সম্মানিত না করে কোনো জাতি মের”দণ্ড সোজা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয় না৷ কাউকে বড়ো কিংবা ছোট করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া যায় না৷ মুজিবনগর সরকারকে জাতীয় ইতিহাসের সঠিক ও যথার্থ স্থানে বসানোর সংগ্রাম অব্যাহত থাকুক_ এটাই আজকের দিনের কামনা৷
১৬ এপ্রিল, ২০০৭

শেখর দত্ত : রাজনীতিক, কলাম লেখক৷
২৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×