somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুয়াকাটা ভ্রমন

০২ রা অক্টোবর, ২০০৭ ভোর ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের কুয়াকাটা

নগরের ইট কাঠ পাথরের তৈরী বড় বড় বাক্সের মত বড়ি গুলোতে বাস করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে নগরের মানুষ। প্রকৃতিকে একটু কাছে থেকে দেখার সুযোগ কম। সেজন্য একটু অবসর পেলেই মানুষ ছুটে যায় কোন সবুজের পাশে, কোন নদীর পাশে অথবা কোন সমুদ্রের ধারে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হলেও এখানে দেখার আছে অনেক অখ্যত ও বিখ্যাত স্থান। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মাত্র সমুদ্র সৈকত আছে যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এক সাথে দেখা যায়। দেখতে মনে হবে সমুদ্রের পেট চিরে সূর্য উদয় হওয়া এবং সমুদ্রের বক্ষে সূর্যকে হারিয়া যাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করা নিসন্দেহে ভাগ্যের ব্যপার।

যাবার পথঃ
ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস এখন সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে সাকুরা পরিবহন ছাড়াও বিআরটিসি পরিবহনের বাস সরাসরি কুয়াকায় যায়। আপনি এসব বাসে গেলে আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ২০০ মিটার দূরে নামিয়ে দিবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে মোট সময় লাগে প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা। আর হাতে একটু বেশী সময় থাকলে আপনি ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে খুলনায় আসার অনেক ভালো বাস পাওয়া যাবে। খুলনা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে সকাল ৭ টায় একটি বিআরটিসি বাস ছাড়ে। খুলনা থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় ৭/৮ ঘন্টা। খুলনা থেকে বাসভাড়া ২৭০ টাকা। আর উত্তরবঙ্গ থেকে আসতে চাইলে সৈয়দপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত রূপসা অথবা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে করে আসতে পারবেন। রাত্রের টেনে আসলে সকাল ৭ টার বিআরটিসি বাসে করে কুয়াকাটা যেতে পারবেন।

থাকা ও খাওয়াঃ
বাস থেকে নামার সাথে সাথে আপনার আশেপাশে অনেক দালাল ঘোরঘুড়ি করবে। তারা তাদের পরিচিত হোটেলে উঠিয়ে দিতে চাইবে। এর বিনিমিয়ে তারা সেখান থেকে কমিশণ পায়। আপনি তাদের কাছে অনেক হোটেলের তথ্য পাবেন। অবশ্যই নিজে গিয়ে হোটেল কক্ষ দেখে যদি পছন্দ হয় তবেই নিবেন। ভূলেও দালালদের হাতে অগ্রিম টাকা দিবেন না। কুয়াকাটা বীচের পাশের বাধের রাস্তার দুপাশে এবং মেইন রোডের আশে পাশে অনেক হোটেল, মোটেল ও বাংলো পাবেন। আপনার সুবিধামত যে কোন একটিতে উঠতে পারেন। সেখানে প্রায় ৫০/৬০টি ব্যক্তি উদ্যোগের হোটেল ও মোটেল আছে। এসকল হোটেলে ও মোটেলে ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও সেখানে দুটি সরকারী ডাকবাংলো আছে। একটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অপরটি এলজিইডি মন্ত্রানালয়ের অধীনে। সরকারী কর্মকর্তারা আগে থেকে যোগাযোগ করলে পেয়েও যেতে পারেন এই দুটোর একটি।

কেনাকাটাঃ
কুয়াকাটায় সীমীত সংখ্যক দোকান আছে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ও সৌখিন জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারবেন সেসব দোকান থেকে। দাম অপেক্ষাকৃত একটু বেশি হলেও অনেক নতুন নতুন আইটেম পাবেন। তবে এখানে শুটকির দোকান আছে সৈকতের পাশেই। কুয়াটায় শুটকি পল্লী থাকায় এখানে অনেক কম দামে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের শুটকি পাবেন।

পিকনিক স্পটঃ
কুয়াকাটায় সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। সেগুলিতে রান্না করার সকল ব্যবস্থা আছে। চুলা, খড়ি, হাড়ি, পাতিল থেকে বাবুর্চি পর্যন্ত। তবে সবকিছুর জন্য টাকাতো লাগবেই।

সমুদ্র সৈকতঃ
কুয়াকাটা দেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ প্রায় ১ কিলোমিটারের বেশি। সমুদ্র সৈকতে গেলেই দেখতে পাবেন সারি সারি কাঠের বেড আর রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার ছাতা। এসকল বেড ভাড়া প্রতি ঘন্টা ২০ টাকা।

রাতের সমুদ্রঃ
সমুদ্র দিনের বেলা সাধারণত আশে পাশের শব্দের কারনে গর্জন শোনা যায় না। সমুদ্রের যে একটা ভয়ংকর রূপ আছে তা বোঝা যায় রাতে। রাতেও বেড গুলি ভাড়া পাওয়া যায়। যদি রাতে সমুদ্রের গর্জন শুনতে চান তবে অবশ্যই যেতে পারেন সেখানে। নিরাপত্তা জনিত কোন ভয় নেই সেখানে। তবে সাবধানে থাকাই ভালো। সত্যি কথা বললে রাতের সমুদ্রের গর্জন সত্যিই ভয়ংকর। বুকের মধ্যে ছ্যাদ করে ওঠে। সৈকতের কাছাকাছি কোন হোটেলে থাকলে গর্জন হোটেল থেকেও শোনা যেতে পারে।

সাইকেল ও ঘোড়ায় ভ্রমণঃ
দর্শণার্থী ও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এই সৈকতে আছে ভড়ায় চালিত মটর সাইকেল ও ঘোড়া। এগুলিে ভাড়া তৎক্ষণাত ঠিক করে নিতে হয়। ভাড়া সাধারণত দূরত্ব ও সময় অনুযায়ী হয়। ভাড়া ২০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত হয়।

¯িপ্রডবোট ও ট্রলারঃ
কুয়াকাটার আশে পাশের বেশ কয়েকটি চর আছে। সেগুলি দেখতে আপনি যেতে পারেন ¯িপ্রডবোট ও ট্রলার কিংবা ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকায় করে। ¯িপ্রডবোট ভাড়া ২ হাজার টাকা ও ট্রলার ভাড়া প্রায় ১৫শ টাকা। তবে দূরত্ব ও সময়ের সাথে টাকার পরিমান কমবেশি হতে পারে।

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তঃ
কুয়াকাটায় সূর্যোদয় দেখার জন্য ঝাউবনে যাওয়াই ভালো। সেখান থেকেই সূর্যাস্ত ভালো দেখা যায়, সমুদ্রের পেট চিড়ে কিভাবে সূর্য উঠে তা দেখার জন্য আপনার মতো আরও অনেক লোকই আপনার আগে চলে যাবে সেখানে সন্দেহ নেই। সকাল বেলা হেটে হেটে ঝাউবনে যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিট। আর ভ্যানে বা রিকশায় গেলে লাগবে ১০ মিনিটি। সেখানে সারি সারি গাছ নিঃসন্দেহে আপনার ভালো লাগবে। এই বনটি সরকার বনায়ন পরিকল্পনার অধীনে তৈরী করেছে। সূর্যোদয়ের চেয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্যটা বোধহয় বেশি চমৎকার। অথবা আমার কাছে ভালো লেগেছে। সুর্যটা সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার সময় রংয়ের পরিবর্তনটা আপনি স্পষ্টই দেখতে পাবেন।

বৌদ্ধ মন্দিরঃ
দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দিরটির অবস্থান কুয়াকাটা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে রাখাইন পল্লীতে। মন্দিরটি বাইরে দেখে বোঝার উপায় নেই। ভিতরে গেলে বোঝা যায় কত বিশাল গৌতম বুদ্ধু। কুয়াকাটা থেকে সেখানে যাওয়ার জন্য মটর সাইকেল প্রধান বাহন। প্রতিটি মটর সাইকেল ভাড়া ১শ থেকে ডের শ টাকা।

মহুয়াঃ
কুয়াকাটায় যারা যাবেন তাদের মধ্যে অনেকেরই মহুয়া নামক শব্দটির সাথে পরিচয় ঘটতে পারে। এটি রাখাইন উপজাতিদের তৈরী একপ্রকার দেশি মদ। অধিকাংশ রাখাইনদের বাড়িতে এটি পাওয়া যায়। পরিবারের সাথে গেলে ভূলেও এটি খাবেন না। আর সমুদ্র সৈকতে খাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ। প্রতি লিটারের দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।



স্বপরিবারে বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরে আসুন কুয়াকাটা। সমুদ্র সৈকতে ফুটবল খেলার জন্য ফটবল ভাড়াও পাওয়া যায় এখানে। শামুক-ঝিনুকের তৈরী বিভিন্ন সৌখিন দ্রব্যাদি, রাখাইনদের তৈরী চাদর, কাপড়, ওড়না ইত্যাদিও পাবেন একটু কম দামে। তবে আর দেরি নয়, দেশের এই স্থিতিশীল অবস্থা থাকতেই সময় করে ঘুরে আসুন কুয়াকাটা।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×