somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বধূবিদ্যা : রোদেলা। সেই বালিকাবধূই এখন আমাকে ভালো রাখতে চায়, ভালো থাকতে বলে। প্রবাসী+

০৮ ই জুন, ২০১২ ভোর ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বধূবিদ্যা কোনো অর্থেই রূপক কিংবা কল্পনাপ্রসূত গল্প নয়। এ সিরিজটি সম্পূর্ণই পরকীয়াবিষয়ক আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সরল স্বীকারোক্তি। তবে এখানে সামাজিক গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে ব্যক্তি ও স্থানের নামকে বাস্তব সত্যে উপস্থাপন করা যায়নি, রূপক অর্থেই ব্যবহার করতে হয়েছে বলে দুঃখিত।


৩ মে ২০১২, রাত ৩টায় বন্ধুর নাম্বারে জীবনে প্রথমবারের মতো কল দিলাম, বন্ধ পাবো, এমন শঙ্কা নিয়েই। দুতিনটা রিং বাজামাত্রই ওপাশ থেকে রিসিভ করলো বন্ধুর নির্ঘুম জীবনসঙ্গিনী। অপরিচিত মানুষ হিশেবে ৫ মিনিটের মতো কথা হলো। তার শেষ কথা ছিলো- এতো রাতে মানুষকে বিরক্ত করেন ক্যান, রাখি।
হয়তো সে ফোনটা কেটেই ঘুমিয়ে পড়েছে, অথবা জেগে ছিলো। যাই হোক, এতে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমি ভাবছিলাম অন্যটা, অনেক দীর্ঘ অন্য জিনিশ, মেঘাচ্ছন্ন দীঘল ঘোর ...। বন্ধু তাহলে সত্যি সত্যিই বিদেশ চলে গেলো!
বন্ধু বিদেশ গেলে কারোই কিছু যায় আসে না। কিন্তু বিবাহিত বন্ধু বিদেশ গেলে আমার ভিতর বাজেসব চিন্তা খেলে যায়। এ জন্য আমার কোন আক্ষেপ নেই, অপরাধবোধ নেই। বধূটির কথা চিন্তা করলে নিজেকে বারবার ফেরেশতাই মনে হয়।
যে বন্ধুর কথা বলছিলাম, সে আমার খুব ছোটবেলাকার বন্ধু। পিচ্চিকালে একসাথে লেখাপড়া করেছি কিছুদিন, টুকটাক খেলাধুলাও করেছি, ব্যাস এটুকুই। তারপর আমি লেখাপড়াটা চালিয়ে গেছি, সে ছেড়ে কাজকামে লেগে গেছে, এ ছাড়া তার উপায়ও ছিলো না। তবে কর্মক্ষেত্রে মোটামোটি সফল। কিছুদিন চাকরীর পর নিজেই বাণিজ্য খুলেছে। তারপর বিদেশ, অনেক দূরের বিদেশ, ইউরোপ। এখন সে মাসে যে টাকাটা কামাই করে, আমরা লেখাপড়া করেটরে সেই টাকার অর্ধেকটাও কামাই করতে পারি না। মাস তিনেকেই বিদেশে অবস্থান পোক্ত করে ফেলেছে, ভাইব্রাদারকেও নেওয়ার উদ্যোগ চালাচ্ছে এখন।
দেখাসাক্ষাতহীন অবস্থায় আমরা বেশ কাছাকাছি এলাকায় বড়ো হয়েছি। আমার লেখাপড়া আর তার কাজকাম-ই আমাদের একে অপর থেকে দূরে রেখেছে। তবে খুব একটা দেখা করার আগ্রহ ছিলো না আমার, প্রয়োজনও নয়। একদিন দেখলাম সে বেশ রঙমলে শাড়ী পরিহিতা এক বালিকাবধূ নিয়ে হেটে যাচ্ছে। দেখামাত্র বললো, ভালো আছোস, দেখি না যে, বাসায় আসিস। ব্যাস, এটুকুই। মেয়েটা কে বা কারা, কিছুই বললো না, আমিও জিজ্ঞেস করিনি। ওরা চলে গেলে, দুচারদিন পর জানতে পারলাম, সেটা মুরাদের (রূপক নাম) বউ, নতুন বিয়ে করেছে। এলকায়ও শুনলাম টুকটাক রব, মুরাদ কী জিনিশ বাগাইলো, পসিবল? সেটা ২০০৩-এর কথা।
এ বছরের মার্চ মাসে একদিন মুরাদের সাথে দেখা, এপ্রিলের ১ম সপ্তাহেই বিদেশ চলে যাচ্ছে, শুনালো। মোবাইল নাম্বারও দিলো। দুচার মিনিট কথা বলেই বললো, যাই। বললাম, চলে তো যাবি, একটু দাড়া, কথা বলি। বললো, না। বউকে আনতে হবে শালির বাসায় গেছে। বললাম, ফোন করে চলে আসতে বল। চট করে বলে বসলো, নাহ, বউরে মোবাইল ব্যবহার করতে দিই না, এটা ভালো না। আচ্ছা যাই বন্ধু, ভালো থাকিস ...। ব্যাস, হাটা ধরলো, চলেও গেলো।
আবার সেই ঘোর, আবার সেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভেতরের সজীব ইচ্ছা। ভেসে উঠলো, ২০০৩-এ দেখা সেই বালিকাবধূর মুখাবয়ব, শরীর এবং রঙিন শাড়ী পরে ধীর প্রকম্পিত পদক্ষেপ। শালায় তো মোবাইল ব্যবহার করতে দেয় না। কী করি, মাইয়া মানুষ। আবার বন্ধুর বউ। বন্ধুটা আবার বিদেশ চলে যাচ্ছে ...। এইসব হাবিজাবি মাথার আশপাশে ভনভন করতে লাগলো। যাকগে, কিছু একটা হবেই (জেনেশুনেই বললাম কারণ, বালিকাদের বেলায় যা চাই, কোনোদিন হতাশ হইনি, নিরাশও হইনি কখনো)।
কেমন যেন ভুলতেই বসেছিলাম বিষয়টা। এপ্রিল গড়িয়ে চলে এলো মে মাস। যখন প্রসঙ্গটি মনে এলো, ততোদিনে মুরাদের বিদেশ চলে যাওয়ারই কথা। হয়তো গেছে, অথবা যায়নি। যদি যায়, তাইলে তো গুটিলাল। না গেলে ধৈর্যের পথ খোলা, সবসময়। মাথায় একটা ইনফো এলো, তার বউ মোবাইল চালায় না, সে চলে গেলে হয়তো নিজের মোবাইলটাই বউকে দিয়ে যেতে পারে... এ কথা চিন্তা করতে ভালোই লাগলো, শুনতেও ভাল্লাগে। তারপরই সেই ঐতিহাসিক ৩ মে, রাত ৩টার উপরোক্ত প্রসঙ্গ। মনে আছে, সেদিন ফোন রেখেছিলো বিরক্তিকর স্বরে এই কথা বলে- এতো রাতে মানুষকে বিরক্ত করেন ক্যান, রাখি। পরদিন সকালে বেহায়ার মতো আবার ফোন দিলাম, টুকটাক কথা বললো বিরক্তির স্বর নিয়েই কিন্তু বিরক্তির কথাটা উচ্চারণ করলো না। দুপুরের পর আবার দিলাম কল, খোজ নিলাম, খাওয়াদাওয়া হয়েছে, ইত্যাদি। সাথে বললাম, দুপুরে খেয়ে বিকেল পর্যন্ত রেস্ট নিলে ভালো লাগবে। এবার আর বিরক্তির স্বর নেই, বিরক্ত শব্দও নেই। সন্ধ্যায় আবার, রাত ১০টার দিকে আবার, আবার রাত ১টায়। এই কলটা দীর্ঘ হলো, অনেক কথা, অনেক কতো কথা। আড়াইটায় শেষ হলো। ১৫/২০ মিনিট পর বিছানায় যাবো, এমন সময় সেই ফোন দিলো, বললো, দেখলাম, ঘুমাইছেন কী না। ২ মিনিট কথা বলে রেখে দিলো। একটু পরই আবার ফোন দিলো, দুচারটা কথা জিজ্ঞেস করলো, তারপর বললো, কল দিতাছি দেইখা কি বিরক্ত হন (ঘড়িতে তখন ৩টা বাজে, কাকতালীয়)? ... ২৪ ঘন্টায় সবকিছু বদলে গেলো, পসিবল, আমার বেলায় এমন হয়েই থাকে।
লেখাটায় আমি মেয়েটার নাম ধরছি রোদেলা (অরিজিন্যাল নাম এমন অসামসালা নয়)। এই দিনটার পর থেকে দিনে ৫/৬ বার দুচার মিনিট করে কথা বলতাম, আর রাতে বলতাম ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত। এভাবে সপ্তাহখানেক, তারপর ডেট, প্রথম দিনই ঢাকা রিজেন্সীর শীশা ওয়ার্ল্ড-এ। আমি বারবার তাকে বালিকাবধূ সম্বোধন করলেও সে আর বালিকা নেই, একদমই সম্পূর্ণা। দুনিয়াটা বুঝে, স্বামীর অনুপস্থিতি বুঝে, আমার আহ্লাদটাও বুঝে, ... নিজের শরীরমনইচ্ছার কথাটা তো বেশ করেই বুঝে। তার স্বামী মানে আমার বন্ধু মুরাদ কোনোদিন কৌতূহলবশতও সিগারেট খায় নাই কিন্তু রোদেলা প্রথম দিনই আমার হাত থেকে সিগারেট খেতে চাইলো, আমি দেইনি, বললাম শীশা খাও। বললাম সিগারেটের শেষ আছে, শীশার সহজে শেষ নেই। যার সহজ সমাপ্তি নেই, সেটাই তো আরাধ্য।
তারপর, ... তারপর, সেদিনের পর আমি বলে দিয়েছিলাম, সপ্তাহে একদিন চলে এসো, বললো চেষ্টা করবো। ... পরদিনই হাজির, বললো, ভাল্লাগে না, মুরাদ নেই, বাসায় প্রাণ নেই। তোমার কাছে যতোক্ষণ থাকি, মনে হয় মুরাদ কাছেই আছে, তুমি তো অনেক বেশি মুরাদ ...। সপ্তাহে ১দিন, অথচ সে ৫দিনই চলে এলো। নিয়ে গেলো অশেষ, কাঙ্ক্ষিত বিন্দু। ... ক্লান্তি, আবার নতুন নতুন সব উদ্বোধন। মুরাদ রোদেলাকে ছেড়ে সুদূর বিদেশ চলে গেলো অনায়াসেই। আর আমি, বিদেশ তো নয়ই, দুদিনের জন্য সিলেট গিয়েছিলাম, তার কতো মায়াকান্না। আমিও কান্না ধরে রাখতে পারিনি।
মুরাদের ভালবাসা অসাধারণ ছিলো্, গর্ব করার মতো ছেলে, রোদেলা খুশ ছিলো, এখনো তাই। বাট, আমারটাও ফেলনা নয়। অন্য অনেক বালিকাকে, বালিকাবধূকে, গৃহবধূকে যেভাবে কাছে ডেকেছিলাম, এখনও ডাকি, সেভাবেই ডেকেছিলাম রোদেলাকে, ভালবাসাটাও দিয়েছিলাম এবং এখনও দিচ্ছি সেরকমই। যে ভালোবাসা হৃদয়মনশরীরসিক্ত, সেই ভালোবাসায় প্রতারণা, ছলচাতুরি, কিছুই করা যায় না। নিরেট ভালবাসা অনেককে ছড়িয়ে দিলেও শেষ হয় না, এটা আমার বিশ্বাস।
২ বছর পর মুরাদ এলে আমার খেয়াল রাখতে পারবে না যথাযথ, ব্যাপারটি নিয়ে এখনই সে খুব চিন্তিত। বলে, তোমার কি তখন খুব কষ্ট হবে? আমি বলি, কিছুটা তো হবেই। তখন সে বলে, মুরাদ যখন এসে আবার চলে যাবে, তখন আমি তোমার সাময়িক সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবো। রোদেলার কথা শুনে চোখের পানি ধরে রাখাটা সত্যিই মুশকিল- ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো!

রোদেলাকে নিয়ে লেখা আমার একটি সাম্প্রতিক কবিতা

বালিকাবধূবিষয়ক পরকীয়ার পরবর্তী পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:২০
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×