ক্যামেরা বন্দী মানুষ-মানুষ ঢল, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক কর্মী, দল-মত নির্বিশেষে সবাই ছুটে আসছেন একজন মানুষকে দেখতে। ঠিক পরের দিনের পত্রিকায় এর অনুবাদ ঘটতে দেখেছি।কিন্তু খটকা লেগেছে অ্যাপোলো হাসপাতালের একটি বিজ্ঞাপনে।বিজ্ঞাপনটির মাস্ট-হেড ছিল:
“Touching lives is what we do! Care to join us?” (পৃষ্ঠা ৫, প্রথম আলো, ৬ জুন, ২০১১)
সকলেই ব্যাপারটা সয়ে গেছেন দেখে ভালো লাগলো না। একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যখন কোন দেশে তার উদ্যোগটি পরিচালনা করেন তখন তার দায়বদ্ধতা নয় বরং দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় সে দেশের ভাষা ও কৃষ্টিকে বহন করা। প্রাসঙ্গিক ভাবেই বলা যায়: টেলিনর বা ওরাসকমের মতন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনের ভাষা বাংলা। এর মানে কিন্তু এই নয় যে বাংলাদেশের কেউই ইংরেজি জানেন না। অবশ্য আমি যে মোটেই জানি না সেটা আমার বন্ধুরাই বেশ ভালো জানেন, কিন্তু বন্ধুরাই’বা এ ব্যাপারে চুপ থাকেন কি করে সেটা ঠিক বোধগম্য হল না।
দেশের একজন প্রতিথযশা সংগীতশিল্পী যখন মারা গেলেন তখন অ্যাপোলো হাসপাতালের পক্ষ থেকে সমবেদনার ভাষা কই। এ তো এক ধরণের নীতিহীন প্রচারণা দেখা গেল। আমরা সকলেই জানতাম রোগটি দীর্ঘদিনের কিন্তু “ডাক্তার আসিবার পর রোগী মারা গেল, এবং তাহাতেও কাহারো ঠিক প্রত্যয় হইতেছিল না বলিয়া হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের সৌজন্যের এহেন বিচ্যুতি ঘটিল যে মৃতের তরে সমবেদনা দেখাইবার পরিবর্তে তাহাদের ট্রেডমার্ক মার্কা চক্ষু উল্টানোরূপ মার্কেটিংটাই আসল হইয়া গেল! হায়!”
বিশ্বর অন্যান্য দেশের খ্যাতিমান কেউ যখন চিকিৎসার জন্য কোন হাসপাতালে ভর্তি হন তখন লাইভ-আপডেট দিতে দেখা যায় টেলিভিশন চ্যানেলের টিকার গুলোতে। এমনকি প্রেস-ব্রিফিং এ উপস্থিত থাকেন ডাক্তাররা। মৃত্যু ব্যাপারটিকেও মানুষ সাধারণ ভাবেই দেখতে শিখেছে, আর শোককে শক্তিতে রূপান্তরের প্রয়াস নিতে শিখেছে, কিন্তু একটা নিছক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান একজন মুক্তিযোদ্ধাকে যতটা অসম্মান করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল সে ব্যাপারটা আমাদের প্রচল-ভাবনাবলয়ে বেশ আঁচড় কেটে যাচ্ছে। আসলেই যাচ্ছে কি?
অ্যাপোলো হাসপাতালের বিজ্ঞাপনটি পড়ে ভুলেই যাচ্ছিলাম প্রায়, শুধু ফিলিপ কটলারের উক্তি ঠিক ভুলে যেতে দেয়নি ব্যাপারটাঃ
“ Every business is a service business. Does your service put “a smile” on the customer’s face?”